নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

তুমি কইলা, আর আমি মানলাম।

১২ ই জুন, ২০১৪ রাত ৮:৫৮

অ্যামেরিকায় 'সকার' (বাকি বিশ্ব যাহাকে ফুটবল নামে চিনিয়া থাকে) ভীষণ জনপ্রিয় একটি খেলা। তবে সেটি কেবলই মেয়েদের কাছে। অ্যামেরিকান দল হচ্ছে মেয়েদের ফুটবলের 'ব্রাজিল।' এখানে সকার তাদের কাছে শুধুই খেলা না, উপাসনা পর্যায়ের কিছু একটা।

বিশ্বকাপ ফুটবল এগিয়ে আসছে বলে তারাও আমাদের মতই বিভিন্ন উন্মাদনার দিকে 'পাখির চোখ' রাখছে।

ছেলেদের অবশ্য এ নিয়ে মাথাব্যথা নেই। তাদের কাছে ফুটবল মানে অ্যামেরিকান ফুটবল। (বাকি বিশ্বে যাহাকে 'রাগবি' নামে চিনিয়া থাকেন, তাহারই 'রিমিক্স' সংস্করণ।) এক ফুট সাইজের বল নিয়ে দৌড়ে প্রতিপক্ষের রক্ষণব্যুহ ভেদ করে কে কত স্কোর করতে পারে, তা নিয়েই এই খেলা। যারা খেলছে তারাতো খেলছেই, সমর্থকেরা বিয়ার আর পিৎজা খেতে খেতে চিয়ার করছে। খেলা বুঝতে পারলে, উত্তেজনায় বিশ্বের যেকোন খেলাকে হার মানাবার যোগ্যতা রাখে এই খেলা। না বুঝলে মনে হবে শুধুই হাতাহাতি কাড়াকাড়ি করছে একদল পোলাপাইন। সেদিক দিয়ে ভাবলে নব্বই মিনিট দৌড়ানোর পরেও যে খেলায় গোলশূন্য ড্র হবার সম্ভাবনা থাকে, তা নিয়ে মাথা ঘামিয়ে নষ্ট করার মত সময় কোথায়?

সে যাক, বলছিলাম যে মেয়েরা খুব তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ফলো করছে ফিফা বিশ্বকাপকে। আমার একজন কলিগের (অবশ্যই মেয়ে) ফেসবুকের একটা স্ট্যাটাস যেমন সেদিন ছিল, "তিন বছর এগারো মাস তারা অ্যামেরিকান থাকেন, কেবল একমাসের জন্য তাঁদের মনে পরে যায় তাঁদের বাপ দাদারা কয়েক দশক আগে কোন দেশ থেকে এসে এদেশে বসত গড়েছিলেন।"

স্ট্যাটাসে একটি ছেলের ছবি শেয়ার করা আছে। মুখে ইটালির পতাকা এঁকে গায়ে প্রিয় দলের জার্সি পড়ে নিজের পূর্বপুরুষের দলকে সমর্থন করছে। ছবিটা নিউইয়র্কে তোলা।

বেচারির ক্ষোভের যথেষ্টই কারন আছে। কারন অ্যামেরিকাও বিশ্বকাপে খেলছে। হতে পারে ব্রাজিল, স্পেন, ইটালি, জার্মানি, আর্জেন্টিনা, ইংল্যান্ড থেকে ইউএসএ দূর্বল দল, কিন্তু যেই দেশে থাকছো, যে পাসপোর্ট নিয়ে যাবতীয় সুবিধা ভোগ করছো, এমনকি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যে দেশে জন্মেছো, সেই দেশের সমর্থন কেন করবে না?

আমার ইংল্যান্ড প্রবাসী বন্ধুদের নিশ্চয়ই এইধরনের ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে না। তারা আরামসেই ইংল্যান্ডকে সমর্থন করতে পারে। বরাবরের মতই দুর্দান্ত দল নিয়ে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে যাচ্ছে। কিছু একটা করে দেখালেও দেখাতে পারে।

টিম ইউএসএর যে কোন আশা নেই এটাও সবাই জানে, কিন্তু ফিফা rankingএ তেরোতম দলটিকে সমর্থন করতে ক্ষতিটা কোথায়?

কিছু কি মনে পরে যায়? ক্রিকেটে আমাদের দেশের পাক-ভারত সমর্থকদের কথা?

পাকিস্তানি সমর্থকেরা দাবী করেন - "ওরাও মুসলমান, আমরাও মুসলমান। আমরা পরষ্পরের ভাই! তাই তাদের সাপোর্ট করি। আর তাছাড়া খেলায় রাজনীতি টেনে আনা ঠিক না।"

ভারতীয় সমর্থকেরা তাদের গালি দিয়ে বলে, "খেলায় রাজনীতি টানবো না কেন? অবশ্যই টানবো! আর তুই হচ্ছিস রাজাকার!"

শুরু হয়ে যায় তর্কাতর্কি। তারপর হাতাহাতি।

একই যুক্তিতে ভারতীয় সমর্থকেরাও বা ভারতকেই সমর্থন করবেন কেন? একাত্তুর পরবর্তী সময়ে, প্রায় চল্লিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে তাঁদের সাথে আমাদের সম্পর্ক ভাল যাচ্ছে না। রাজনীতি টানলেতো ওদেরও সমর্থনের কিছু নেই। তাঁদের যুক্তিও হাস্যকর, "পাকিস্তান ছাড়া আমরা বিশ্বের যে কোন দলকেই সমর্থন করি!"

না ভাই, আপনি আমি দুজনেই জানি, আপনি ভারতকেই সমর্থন করেন। এমনকি বাংলাদেশ বনাম ভারতের খেলাতেও আপনি 'বিরাট কোহলি'র সেঞ্চুরির জন্য দোয়া করেন। শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতন আপনি 'পাকিস্তান' ইস্যু টেনে আনছেন।

আমার নিজের দেশ যেখানে খেলছে, সেখানে অন্য দলকে সমর্থন করে কিভাবে মানুষ? টেন্ডুলকারের খেলা, ওয়াসিম আকরামের খেলা ভাল লাগতেই পারে; তাই বলে পুরো দল হিসেবেই কি ভারত পাকিস্তান ভাল হয়ে গেল? অস্ট্রেলিয়া, সাউথ আফ্রিকা কিংবা শ্রীলংকাও কি তাদের চেয়ে ভাল দল নয়? কই, স্টেইন বনাম কোহলির লড়াইতে আপনাকেতো কখনও দেখিনা স্টেইনের জন্য চিয়ার করতে!

দোষ কেবল একদলের সাপোর্টারদের নয়, দুই দলের সমর্থকেরাই সমান দোষী। আপনার পাকিস্তান ভারত সমর্থনে আমার কিছু যায় আসেনা। স্রেফ একজন আরেকজনকে গালাগালি করা বন্ধ করেন!

প্রসঙ্গক্রমে একটি গল্প মনে পরে গেল।

সিডনীতে আমাদের এক বন্ধু থাকে। সে একদিন তার বন্ধুদের নিয়ে বীচে আড্ডা দিতে গেছে, গিয়ে দেখে ব্রেট লীও এসেছে সাগরের পানিতে পা ডুবিয়ে হাঁটতে।

হাতের কাছে এতবড় তারকা পেয়ে কোন ছাগল সুযোগ হাতছাড়া করবে? তারা এগিয়ে গেল কথা বলতে।

লী অনেক ভাল একজন মানুষ। যাকে বলে "খাঁটি জেন্টেলম্যান।" খুবই আন্তরিকভাবে কথাবার্তা বলল।

একটা সময়ে লী তাদের জিজ্ঞেস করলো, "অস্ট্রেলিয়া আর বাংলাদেশের খেলা হলে তোমরা কাকে সাপোর্ট করো?"

বন্ধু জবাব দিল, "অবশ্যই Aussies।"

লী হাসলো। কিন্তু সেই হাসি দেখেই বুঝা গেল যে বেচারা মনে মনে বলছে, "হ, তুমি কইলা, আর আমি মানলাম।"

ক্রিকেট সাইডে থাকুক, ফেরা যাক বিশ্বকাপ ফুটবলে। আর মাত্র ছয়দিন বাকি। ব্রাজিলের সমর্থনতো করছিই, বিবেকের তাড়নায় টিম ইউএসএর জন্যও রইলো শুভকামনা। ব্রাজিলের মুখোমুখি না হয়ে যতদূর যাওয়া সম্ভব, তোমরা যেন যেতে পারো।

কেবল নক আউট পর্বে যদি দৈবাৎ ব্রাজিলের মুখোমুখি পড়ে যাও এবং আমি অফিসে থাকি, তাহলে আমি মিহি গলায় আওয়াজ দিব "Go USA!"

এরিন (আমার কলিগ) তখন আমার গলা শুনেই মনে মনে বলবে, "হ, তুমি কইলা, আর আমি মানলাম।"

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই জুন, ২০১৪ রাত ৯:০৫

এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল স্বর্ণা বলেছেন:
হুম, ফুটবল অনেক পপুলার আমেরিকায়। সকারও আছে, কিন্তু আলাদাভাবে মেয়েদের সমর্থন করতে দেখিনি।

১২ ই জুন, ২০১৪ রাত ১০:০৮

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: মেয়েদের কাছেই বেশি পপুলার। বাকি যারা সমর্থন করেন, তারা বেশির ভাগই স্প্যানিশ,অথবা ককেশিয়ান।
সাধারণ অ্যামেরিকানদের কাছে অ্যামেরিকান ফুটবল বেশি জনপ্রিয়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.