নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
টিউশ্যনি শেষে বাড়িতে ফিরে দেখি মামা গোসল করে গায়ে পাঞ্জাবি পায়জামা চড়িয়ে একদম তৈরী! গায়ের থেকে ভুরভুর করে দামী সুগন্ধীর সুবাস আসছে। মাথায় এখনও টুপি পড়েননি, চুল নষ্ট হয়ে যেতে পারে। টুপিটা ভাজ করে পকেটে ঢুকালেন।
আমাকে সামনে পেয়ে বললেন, "এই যে, আসতে এত দেরী করলি? আরেকটু হলেই আমি বের হয়ে যেতাম।"
আমি বললাম, "কোথায়?"
মামা এমনভাবে তাকালেন যেন আমার মত আহাম্মক দুনিয়ায় এই প্রথম দেখছেন।
"আজকে শবে বরাত, ভুলে গেলি?"
"ভুলবো কেন?"
"আজকে যে ইবাদত করতে হয়, জানিস না?"
আমার এই মামার "মাইরের চেয়ে অ্যাকশন বেশি" অবস্থা। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েননা, কোরআন তিলাওয়াতেরও সময় নেই। কিন্তু জুমআর নামাজ কখনই মিস হয়না। শবে বরাত, শবে মেরাজ এবং লাইলাতুল কদরের রাতে তাঁর ইবাদাত দেখলে যেকোন ধার্মিকের চোখে পানি চলে আসবে।
অনেকেই জানেন, আমার জন্ম বারো আউলিয়ার দেশ চিটাগংয়ে। মনে পড়ে, শবে বরাতের রাতে পুরো শহর জুড়ে বিপুল উত্সব পালিত হত। মসজিদে আয়োজিত হতো ইবাদত বন্দেগীর, পরিবেশিত হতো "মেজবানী" গরুর মাংস! আমাদের ছোটদের কাছে আরেকটা আকর্ষণ ছিল বাজী-পটকা ফোটানো।
শবেবরাত উপলক্ষেই রাস্তায় রাস্তায় ছোটছোট দোকান বসতো। সেখানে তারাবাতি, চকলেট বোমাসহ আরও বিভিন্ন রকমের পটকা বিক্রি হতো। আমার বন্ধুরা সেসব কিনতো এবং সবাই মিলে বিপুল উৎসাহে বোমাবাজী হতো!
প্রতিবেশীরাও একে অপরকে নিজের বাড়িতে রান্না করা হালুয়া, মাংস পাঠাতেন। বিরাট আনন্দময় রাত ছিল শবে বরাতের রাত। এ যেন আরেক ঈদ!
সিলেটে গিয়ে আমার প্রমোশন হয়ে গেল। বারো আউলিয়ার দেশ থেকে একলাফে হাজির হলাম তিনশো ষাঠ আউলিয়ার দেশে। বাংলাদেশের সবচেয়ে আধ্যাত্মিক নগরী। এখানে শবে বরাত পালিত হয়, তবে চিটাগং থেকে একটু ভিন্নভাবে।
এখানে পটকাবাজি ফোটানো ততটা জনপ্রিয় নয়। কারণ, বাজি ফোটানো হিন্দুয়ানী সংস্কৃতি। ওরা কালিপূজার সময়ে বাজি ফুটায়। দ্বিপাবলির সময়ে বাজি ফোটায়। আমরা মুসলমান! বিধর্মীর সংস্কৃতি গ্রহণ করা আমাদের নিষেধ।
সিলেটের শবে বরাতও কিন্তু উৎসবের রাত! এই রাতে পুরো সিলেটবাসী রাস্তায় নেমে আসেন। পুরো শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে শয়ে শয়ে "মাজার শরিফ!" প্রতিটা মাজারেই অসংখ ভক্তের ভিড়। লাখ লাখ, কোটি কোটি মোমবাতির আলোয় ঝলমল করছে মাজার প্রাঙ্গণ! আগরবাতির সুগন্ধে বাতাস সুবাসিত। বিশেষ করে হযরত শাহজালাল (রঃ) এবং হযরত শাহ পরাণ(রঃ)'র মাজার প্রাঙ্গণে গেলে যে কারও ভুল হতে পারে তিনি মক্কায় চলে এসেছেন কিনা! একদম হাশরের ময়দানের ভিড়! মানুষ ধাক্কাতে ধাক্কাতে মাজারে ঢুকছে, ধাক্কাতে ধাক্কাতে মাজার থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। মাঝখানে কমসে কম লাখ খানেক ফকির উচ্চস্বরে জিকির করছে, "আল্লাহ! আল্লাহ!! আল্লাহ!!! আল্লাহ!!!!"
মিথ্যা বলবো না, একটা সময়ে আমারও ধারনা ছিল শবে বরাতের রাতে ইবাদত না করলে বুঝিবা ভীষণ পাপ হয়ে যাবে! মকসুদুল মোমেনীন নামের একটা বইয়ে আমি পড়েছিলাম, "শবে বরাতের রাত্রীতে যে ব্যক্তি গোসল করবে, গোসলের প্রতিটা পানির ফোঁটার জন্য তিনি নেকি হাসিল করবেন।"
আমাকে তখন টেনেও বাথরুম থেকে বের করা যেত না।
পাক সাফ হয়ে আমরা মসজিদে যেতাম। সেখান থেকে মাজার জিয়ারতে। প্রচলিত ধারনা ছিল, "এই রাতে আল্লাহ আগামী একবছরের জন্য আমাদের ভাগ্য লিখে থাকেন।"
কাজেই আগামী একবছরের জন্য যা যা লাগবে, সব আমি এই রাতে আল্লাহর কাছে চেয়ে নিতাম।
আরেকটা ধারনা প্রচলিত ছিল যে এই রাতে আমাদের সব মৃত আত্মীয়রা, ফেরেশতারা আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসবেন। কাজেই মূর্তি, পুতুল, ছবি সব সরিয়ে ফেলা হত, অথবা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হতো।
ঘরে পোলাও, কোরমাও রান্না করা হতো। না, মৃত আত্মীয়দের আপ্যায়নের উদ্দেশ্যে নয়, এমনিতেই এই রাত সেলিব্রেট করতে।
একবারের জন্যও মাথায় আসেনি এই সবকিছুই আসলে 'বাকওয়াস' বিষয়। শিক্ষার অভাব হলে যা হয় আর কি! আত্মীয়দের, পূর্বপুরুষদের, বন্ধুবান্ধবদের এমনকি মাওলানাদের কথা অন্ধের মতন বিশ্বাস করেছি। একবারের জন্যও নিজে কোরআন-হাদীস ঘাটার প্রয়োজন বোধ করিনি। পরে দেখলাম কোরআন শরীফের কথাওই শবে বরাত নিয়ে কোন কিছুর উল্লেখ নেই। হাদীস শরীফেও নেই। এটি স্রেফ একটি প্রথা যা কয়েকশো বছর ধরে কোন শক্ত ভিত্তি ছাড়াই ইসলামের নামে প্রচলিত হয়ে আসছে। ইংরেজী ক্যালেন্ডারের ভ্যালেন্টাইন্স ডে, ফাদার্স ডে, মাদার্স ডের মত এটিও একটি উর্বর মস্তিষ্ক প্রসূত বিশেষ "রাত্রী।"
এখন সমস্যা হচ্ছে, আমাদের দেশের সংস্কৃতিতে মিশে গেছে শবে বরাত। সমাজে মিলে মিশে থাকতে হলে আমাদের অবশ্যই এটি পালন করতেই হবে। নাহলে সমাজে প্রেস্টিজ থাকবেনা।
আপনি নফল নামাজ পড়তে চান? পড়ুননা, কোনই সমস্যা নেই। কিন্তু এই আশায় পড়লে চলবে না যে এই রাতেই আল্লাহ আপনার ভাগ্য লিখছেন, কাজেই আপনি নামাজ পড়লে আপনার ভাগ্যে ভাল বিষয় লেখা হবে। আল্লাহ এইধরনের কোনই প্রতিশ্রুতি আপনাকে দেননি। কাজেই, মিথ্যা আরোপ আপনি করতে পারেননা।
মাজার জিয়ারত করতে চান? করতেই পারেন। মাজার জিয়ারত করার মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ আপনার নিজের মনকে বারবার বোঝানো যে একদিন আপনাকেও এইরকম একটি মাটির গর্তে শুয়ে পড়তে হবে। মিশে যেতে হবে মাটির সাথেই। মাজারে বাতি জ্বালিয়ে, সিজদাহ দিয়ে, কান্নাকাটি করে কবরবাসীর কাছে কিছু চাওয়ারতো প্রশ্নই আসেনা!
"বাবা! আমার সন্তান নেই বাবা! আমাকে একটা সন্তান দাও বাবা! বাবাআআআআ!" (বিকট স্বরে ক্রন্দন।)
আরে উযবুক! তোর সন্তান লাগবে তুই তোর বউর কাছে যা। তুই চেষ্টা করতে থাক, বাকি আল্লাহর ইচ্ছা। একজন মরা মানুষকে ধরে টানাটানি কেন?
"অতিভক্তি চোরের লক্ষণ" বলে আমাদের ভাষায় একটি প্রবাদ প্রচলিত আছে। আমাদের দেশের ‘চোরেরা’ হঠাৎ হঠাৎই অতি ভক্তি শুরু করে দেন। যা ফরয (ঈমান, নামাজ, রোযা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি) তা পালন না করে নফল ইবাদত করেই বেহেস্তের হুরপরী পেয়ে যেতে চান! ইসলাম যে এত সহজ একটি ধর্ম, এটিকে শুধু শুধুই জটিল বানিয়ে ফেলে।
শবে বরাতের রাত্রিতে হাজার রাকাত নফল নামাজ পড়ার দরকার নেই, আপনি কেবল রোজ পাঁচওয়াক্ত নামাজ পড়লেই যথেষ্ট।
ভিড় ঠেলে মাজারে গিয়ে অযথা কান্নাকাটি করার দরকার নেই, ফরয নামাজ শেষে পরিষ্কার মনে মোনাজাত করলেই চলবে।
দিনে রোজা রাখতে চান? রাখুন, কোনই সমস্যা নাই। নফল রোযার সোয়াব আছে। তাছাড়া আর দুই সপ্তাহ পড়েই রামাদান, একমাস রোযা রাখার 'ওয়ার্ম আপ' হিসেবে রোযা রাখতেই পারেন। কিন্তু 'এই দিনে রোযা রাখলে জাহান্নামের আগুন আপনাকে স্পর্শ করবে না,' এই ধারণা রাখতে পারবেন না। এমন ওয়াদা আল্লাহ কিংবা তাঁর রাসূল আপনার কাছে করেননি।
প্রসঙ্গক্রমেই বলছি, দেশে নিয়ামূল কোরআন নামের আরেকটা বাকওয়াস বই পাওয়া যায়। যেখানে অনেক মন গড়া বিষয় অত্যন্ত বিশ্বাসযোগ্যভাবে লেখা হয়ে থাকে। সাধারণ অবুঝ মুসলমানেরা যা বিশ্বাস করে তারউপর আমল করে থাকেন। এটি স্রেফ সময় নষ্ট হলে কোন সমস্যা ছিল না। উল্টা গুনাহর কাজ হয় বলেই এটি একটি বড় চিন্তার বিষয়।
যেমন “দোয়ায়ে গন্জল আরশ!" নাম শুনেই মানুষের কলিজা নড়ে উঠে। না জানি কি আছে! ফজিলতে নানান ফায়দার কথা লেখা আছে। এই দোয়া পাঠ করলে এই হবে, সেই হবে, ইত্যাদি। প্রশ্ন হচ্ছে, লেখক এই দোয়ার সন্ধান কোথায় পেলেন?
তেমনি আরেকটি আছে “দোয়ায়ে হাবিবি।” দুয়েকটা লাইন এইরকম:
"কুমকুম ইয়া হাবিবী কাম তানামু"
"ওঠ ওঠ আমার বন্ধু, কেন ঘুমিয়ে আছো?"
তারপর উদাহরণ দেয়া হয়, "আসমান জমিনতো কখনও ঘুমায় না।" "বিশাল সাগরতো কখনও ঘুমায় না।" "বন জঙ্গলতো কখনও ঘুমায় না।"
রাত জেগে মানুষেরা এইসব পড়ে কোন শর্টকাট মিরাকেলের আশায়। আহারে! ভাই, এত রাত জেগে দোয়ায়ে হাবিবি না পড়ে পাঠ্য বই পড়, পরীক্ষায় ভাল নম্বর পাবি।
এইসমস্ত বই বাজার থেকে উঠিয়ে দেয়া উচিৎ! কুসংস্কারমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রথম পদক্ষেপ এটাই হওয়া উচিৎ!
সবশেষে শুধু মনে করিয়ে দিতে চাই যে আমাদের নবীজি (সঃ) বারবার তাঁর খুৎবায় বলতেন, "শ্রেষ্ঠ বাণী হচ্ছে আল্লাহর কিতাব (কোরআন), শ্রেষ্ঠ উদাহরণ তাঁর রাসূলের(সঃ) জীবনী, এবং নিকৃষ্ট কর্ম হচ্ছে ধর্মে কোন কিছু সংযোজন-বিয়োজন।"
বিদায় হজ্জ্বের ভাষণেও তিনি বলে গিয়েছিলেন, ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে।
একই সাথে আল্লাহ নিজেও ঘোষণা করেছেন, “আজ তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্মকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম এবং তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ন করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের ধর্ম মনোনীত করলাম! (সুরাহ আল মায়েদাহ, আয়াত ৩)”
আল্লাহ যেদিন ইবলিসকে বেহেস্ত থেকে বহিষ্কার করলেন, সেদিন ইবলিস তাঁর কাছে একটি ক্ষমতাই চেয়েছিল। সে যেন মানুষের রক্তে মিশে গিয়ে মানুষকে আল্লাহর অবাধ্য করতে পারে।
আল্লাহ সেদিন বলেছিলেন, "তুমি যতবার আমার বান্দাদের আমার অবাধ্য করবে, আমিও ততবার তাদের ক্ষমা করতে থাকবো।"
তাঁর এতটাই বিশ্বাস আছে তাঁর বান্দাদের প্রতি যে তারা তাঁর অবাধ্য হবেনা।
আমরা তাঁর বিশ্বাসের মান এতটুকুও রাখতে পারিনি। আল্লাহ আমাদের এবং আমাদের পূর্ব পুরুষদের মাফ করুন।
২| ১৪ ই জুন, ২০১৪ রাত ১:৪৪
জীনের বাদশা বলেছেন: আল্লাহ এত বেদাত করি?? আগে জানতাম না।
©somewhere in net ltd.
১| ১৩ ই জুন, ২০১৪ রাত ১১:৩৮
রিফাত ২০১০ বলেছেন: ভালো লিখেছেন ।
শব বরাত নামের শব্দটির সাথে বাংলাদেশ আর পাকিস্তানের মানুষ ছাড়া পৃথিবীর আর কোন মানুষ পরিচিত না।
শান্তির ধর্ম ইসলামকে বেদআত ও ফটকাবাজ মুক্ত করা সবার দায়িত্ব।