নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
সব ফেভারিটদের খেলা দেখার পরে আমার ব্যক্তিগত রিভিউ। আমার মতের সাথে কারও অমত থাকতেই পারে। এটি শুধুই আমার নিজস্ব পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে লেখা। কারও কোন মন্তব্য থাকলে সানন্দে শেয়ার করতে পারেন।
সবার আগে আমার প্রিয় দল এবং এই বিশ্বকাপের হট ফেভারিট ব্রাজিলকে দিয়েই শুরু করা যাক।
ক্রোয়েশিয়ার সাথে প্রথম ম্যাচে ব্রাজিলের খেলা খারাপ হয়েছে বলা না গেলেও ঠিক চ্যাম্পিয়নদের মতও হয়নি। নেইমার এবং অস্কার দুর্দান্ত দুটি গোল দিয়েছেন, কিছু ব্রাজিলীয় স্কিলস দেখারও সৌভাগ্য হয়েছে, কিন্তু ডিফেন্সে বারবার তাঁদের দূর্বলতা চোখে লাগছিল। ব্রাজিলের ডিফেন্স সেই প্রস্তর যুগ থেকেই দূর্বল। একবারতো তাদের কিংবদন্তি পেলে রসিকতা করে বলেও ফেলেছিলেন, "আমাদের গোলকিপারের দরকার কি? ওরা কত গোল দিবে? আমাদের স্ট্রাইকাররা গুনে গুনে তারচেয়ে বেশি গোল পরিশোধ করবো।"
দাম্ভিক মনে হলেও পেলে এমনটা বলতেই পারেন। ব্রাজিলের ফরোয়ার্ড সবসময়েই ভাল। ফ্রেড সেদিন ভাল খেলেনি, তবে আশা করি তারা সামনের ম্যাচ থেকে আরও গুছিয়ে উঠতে পারবে। একটা ব্যপার মনে রাখতে হবে, এইবারের বিশ্বকাপে ফাইনালের রাস্তা ব্রাজিলের জন্য অনেক কঠিন! দ্বিতীয় রাউন্ডেই দেখা হয়ে যেতে পারে নেদারল্যান্ডস, চিলি অথবা স্পেনের সাথে! তারপর কোয়ার্টার ফাইনালে অপেক্ষা করবে আরও শক্তিশালী কোন প্রতিপক্ষ। সেমি ফাইনালতো বরাবরই কঠিন হয়ে থাকে। এত ঝড় পাড়ি দিতে পারলেই তখন কেবল ফাইনাল! নেইমার-অস্কার-লুইজরা এত ঝাপটা সামলাতে পারবে তো?
জঙ্গলে শিকারে যাবার আগে একটা প্রবাদের কথা সবসময়ে মনে রাখতে হয়। যদি কোন বন্য প্রাণীর হাতে তোমাকে মরতেই হয়, তাহলে প্রয়োজনে বাঘের থাবায় মরো, সিংহের কামড়ে মরো, কিন্তু প্রার্থণা কর যেন ভুলেও কখনও ভালুকের খপ্পরে পড়তে না হয়। ভালুক আছড়ে, দুমড়ে, মুচড়ে, ছিঁড়ে, খুবলে তারপর মারে। ঠিক যেভাবে ডাচরা স্প্যানিশদের করেছে।
স্পেনকে নিয়ে অনেকেই আশাবাদী ছিলেন। নেদারল্যান্ডস তাদের শিখিয়ে দিয়েছে কিভাবে ফুটবল খেলতে হয়। এখন পর্যন্ত যেসব দল খেলেছে, তাদের সবার চেয়ে আমার ডাচদের খেলাই সবচেয়ে ভাল লেগেছে। তাদের বডিল্যাঙ্গুয়েজ দেখেই মনে হচ্ছিল তারা এবারে চ্যাম্পিয়ন হতেই এসেছে। এবং প্রতিপক্ষকে তছনছ করেই তারা সেই লক্ষ্যে পৌছাবে। পাঁচ-এক গোলে এগিয়ে থাকার পরেও যারা আক্রমণের ধার এতটুকুও কমায় না, বরং বারবার গোলে শট নিয়ে একসময়ের বিশ্বসেরা গোলকিপার ক্যাসিয়াসের ইজ্জত নিয়ে ছিনিমিনি খেলে, তাঁদের শ্রদ্ধা না করে উপায় আছে?
ডাচদের পরেই দূর্দান্ত প্রতাপ দেখিয়েছে জার্মানরা। "শিল্প না, জার্মানরা শক্তি দিয়ে খেলে" বলে একটা বদনাম তাঁদের চিরদিনের। পর্তুগালের সাথেও তারা 'জার্মান ফুটবলই' খেলল। এবং যদি শক্তি দিয়ে খেলে চার-শুন্য ব্যবধানে জেতা যায়, তাহলে খেলায় শক্তি ব্যবহার করতে দোষ কোথায়?
ইটালি ভাল খেলেছে। সেই চিরাচরিত ডিফেন্সিভ ইটালি। একটি গোল দাও, তারপর এগারোজন চলে এসো পেনাল্টি বক্সে। তারপরও যদি বিপক্ষ দল গোল শোধ করে দেয়, তাহলে আবারও একটা গোল দাও এবং ফিরে এসো ডি-বক্সে। এই ট্রিক তাঁদের চারটি বিশ্বকাপ শিরোপা জিতিয়েছে। এই ট্রিকটা মনে হয়না তারা কখনও বদলাবে।
আর্জেন্টিনার খেলায় একমাত্র উল্লেখযোগ্য দিক ছিল মেসির গোল। একজন চ্যাম্পিয়ন প্লেয়ার চ্যাম্পিয়নের মতই গোল দিয়েছেন। আর নাহলে বলার মত তারা কিছুই করতে পারেনি। মেসি বারবার পাস দিয়ে তাঁর সঙ্গী স্ট্রাইকারদের দেন, এবং তাঁরা মিস করেন। অবশ্য ডিফেন্সিভ ফরম্যাটও আরেকটা কারণ হতে পারে তাঁদের বাজে খেলার। কোচের বোঝা উচিৎ, যে ফরম্যাটে খেলোয়াড়রা খেলে অভ্যস্ত নয়, সেই ফরম্যাট নিয়ে পরীক্ষা করার স্থান বিশ্বকাপ নয়। বসনিয়ার মত দল আরেকটু হলে ড্র করে আপসেট ঘটিয়ে দিচ্ছিল। এইরকম খেললে আবারও কোয়ার্টার ফাইনালের আগেই ধরা খেতে পারে দল। আরেকটা ব্যপার আর্জেন্টাইন সমর্থকদের ব্যপারে আমি বুঝিনা। গত দুই ওয়ার্ল্ডকাপেই তাঁদের ফাইনালে যাবার স্বপ্ন জার্মানদের হাতে ভেঙ্গেছে। অথচ তাঁরা কেবল ব্রাজিলেরই বিরোধিতা করেন! আসল শত্রুকে সনাক্ত করুন, কাজে দিবে।
ইংল্যান্ডকে নিয়ে বলার কিছু নেই। খেলার শেষ বিশ মিনিটে মনে হচ্ছিল নব্বই মিনিটের বাঁশি বাজার আগেই দুই চারজন খেলোয়াড় দম ফুরিয়ে মাঠে পড়েও যেতে পারেন। এত শক্তিশালী দল নিয়ে প্রতিবার এত জঘন্য পারফরম্যান্স তারা কেন করে এটাও এক রহস্য।
আজকের পর্তুগালের খেলাও তেমনই বাজে গিয়েছে। রোনালদো যে ফিট নেই, তা তাঁর খেলা দেখেই বোঝা যাচ্ছিল। তারউপর পেপের কান্ড! একটা ছাগলকে খেলালেও দলের এই বিপর্যয়ে সে এইরকম কাজ করে লাল কার্ড পেত না আমি নিশ্চিত।
উরুগুয়েও বাজে খেলেছে। সাউথ অ্যামেরিকায় বিশ্বকাপ হলে তাঁদেরও ফেভারিটের তালিকায় রাখতেই হয়। তারউপর তাঁরা গতবারের সেমিফাইনাল পর্যন্ত যাওয়া দল। কিন্তু প্রথম ম্যাচের পারফরম্যান্সের পর মনে হয়না এইবার সেকেন্ড রাউন্ডেও তারা যেতে পারবে।
ফ্রান্সের পরীক্ষা এখনও ঠিকঠাক মত হয়েছে বলে মনে হলো না। হন্ডুরাসের সাথে তাদের হেসে খেলেই জেতার কথা, এবং তারা জিতেছেও। সেকেন্ড রাউন্ড পর্যন্ত তাঁদের কোনই সমস্যা নাই। ব্রাজিলের সমর্থকদের জন্য একটা নোট, শুধু শুধু 'আর্জেন্টিনা' 'আর্জেন্টিনা' না করে ফ্রান্সকে নিয়েও ভাবা উচিৎ। এই দলটির জন্যই আটানব্বই বিশ্বকাপে ব্রাজিল ফাইনাল এবং ছয়ের বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বাদ পড়েছে। দুইবারই যদিও খলনায়কের নাম এক, জিনেদিন জিদান, এবং সুখের কথা যে তিনি এবারে নেই; তারপরেও, আর্জেন্টাইনদের মতই "আসল শত্রু চিনে নিন!"
যাই হোক, একম্যাচ দেখেই কে চ্যাম্পিয়ন হবে বলে দেয়া সম্ভব না। প্রথম রাউন্ড শেষ হোক, তারপর আমরা বোধয় হালকা পাতলা আঁচ করতে পারবো।
আজকে আমাদের ইউএসএর খেলা। এই টুর্নামেন্টে তারা চ্যাম্পিয়ন হবে, এমন আশা করিনা। তবু তারা ভাল খেলুক, এইটাই চাই। বাংলাদেশ নেই, কখনও খেলবে বলেও মনে হচ্ছেনা। আপাতত নিজের যে দেশটা খেলছে, তাকেই সমর্থন করা যাক!
©somewhere in net ltd.
১| ১৭ ই জুন, ২০১৪ রাত ২:৪০
প্রবাসী পাঠক বলেছেন: ভালো পর্যবেক্ষণ। এখন পর্যন্ত নেদারল্যান্ড আর জার্মানির খেলাই সবচেয়ে ভালো লেগেছে। আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিল আশানুরূপ খেলতে পারে নি। স্পেন , উরুগুয়ে এবং ইংল্যান্ড হতাশ করেছে। আর ইতালি হট ফেভারিট হয়ে কোন বারই কাপ নেয় নি। দেখা যাক নক আউট রাউন্ডে কাদের পারফরমেন্স কেমন হয়।