নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
"গাজায় কি হচ্ছে দেখেছেন?"
"হ্যা। এই শালা ইহুদিরা সব সময়ে রমযান মাসেই ফিলিস্তিনিদের খুন করতে হামলা চালায়। আল্লাহ এই শুওরের বাচ্চাদের উপর গজব নাযিল করেননা কেন?"
"ধৈর্য্য ধরেন ভাই সাহেব। আল্লাহ মুসলমানদের বিপদে ধৈর্য্য ধরতে বলেছেন।"
"আর কত ধৈর্য্য ধরবো ভাই? প্রতিদিন দেখছি বোমাবাজি হচ্ছে, ছোট ছোট বাচ্চাদের মরদেহ রাস্তায় পড়ে আছে....."
আলমগীর সাহেবের গলা ধরে এলো। চোখ চকচক করে উঠলো। অশ্রু চোখের বাঁধ ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইছে।
জালাল সাহেব তাঁর পিঠে হাত রেখে বললেন, "আল্লাহর দরবারে দোয়া করেন। আমাদের আর কিই বা করার আছে?"
"স্যার আপনের জিলাপি।"
জিলাপিওয়ালা এক ঠোঙ্গা জিলাপি জালাল সাহেবের দিকে বাড়িয়ে দিল। রমজান মাস বলে তিনি জিলাপি কিনতে এসেছেন। "শুকতারা রেস্টুরেন্টে।" এদের জিলাপি খুব ভাল হয়। কামড় বসালে খাঁটি ঘিয়ের গন্ধ নাকে আসে। এর স্বাদই আলাদা!
তিনি বললেন, "কত হয়েছে?"
"স্যার দেড়শো ট্যাকা।"
তিনি পাঞ্জাবির পকেট থেকে ওয়ালেট বের করে একটি একশো টাকার নোট এবং দুইটা বিশ টাকার নোট বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, "দশ টাকা কম রাখ।"
জিলাপিওয়ালা বলল, "হয়না স্যার।"
"আরে হইবো ব্যাটা।"
"স্যারে রাগ করবো।"
"তোর স্যাররে আমারে দেখায়া ক, তাইলেই হইবো।"
ছেলেটা টাকা হাতে ক্যাশে বসা ম্যানেজারের কাছে চলে গেল। কিছু একটা বলে তাঁর দিকে ইশারায় দেখালো। জলিল সাহেব হাত উঁচু করে নাড়লেন। ম্যানেজার তাঁকে চেনেন। তিনি হাসি মুখে হাত নেড়ে বুঝিয়ে দিলেন দশ টাকা কম হলেও ঠিক আছে।
জলিল সাহেব তবুও দাঁড়িয়ে রইলেন। আলমগীর সাহেবও ইফতারি কিনছেন।
আলমগীর সাহেব বললেন, "আমরা একটা কাজ করতে পারি, ইসরায়েলি প্রোডাক্ট বয়কট করতে পারি।"
জলিল সাহেব বললেন, "ইসরায়েলি প্রোডাক্ট আপনি এইদেশে কোথায় পেলেন? বাংলাদেশের সাথেতো ইসরায়েলের কোন কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। ওদের কোন প্রোডাক্ট এইদেশে ঢুকার কথা না।"
"আরে আমি কোক পেপসির কথা বলছিলাম।"
"কেন? কোক পেপসির সমস্যা কোথায়? ওগুলোতো অ্যামেরিকান কোম্পানি। ইসরায়েল জন্মের বহু আগেই অ্যামেরিকায় তাদের জন্ম হয়ে গেছে।"
"তাদের মালিকতো ইহুদি।"
"যতদূর জানি তারা পাবলিক কোম্পানি। মানে শেয়ার মার্কেটে শেয়ার কিনে আপনিও তাদের মালিক হতে পারবেন। ব্যক্তিগত ভাবে কোন ইহুদি এদের মালিক নয়।"
"না মানে, ইয়ে, সেগুলোর আবিষ্কারকের কথা বলছিলাম আর কি। তারাতো ইহুদি।"
"জ্বিনা। তারা খ্রিষ্টান ছিলেন। ইহুদি নয়।"
ততক্ষণে তাঁরও ইফতারির ঠোঙ্গা তৈরী। ছেলেটা তাঁর দিকে প্যাকেট বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আলমগীর সাহেব কেশে গলা পরিষ্কার করে বললেন, "কত হইছে?"
"স্যার দুইশো পনেরো ট্যাকা।"
তিনি দুইশো টাকা বাড়িয়ে দিলেন।
"স্যার, হইবো না স্যার।"
"আরে হইবো ব্যাটা। রাখ!"
"না স্যার। দশটা ট্যাকা অন্তত দ্যান।"
তিনি আরও দুইটাকা বাড়িয়ে দিলেন। ছেলেটা টাকার দিকে তাকিয়ে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, "ঠিক আছে, লাগবো না স্যার। রাইখা দ্যান।"
আলমগীর সাহেব দুইটাকার নোট পকেটে ভরতে ভরতে বললেন, "ইয়ে, তাহলে আমরা কি কিছুই করতে পারবো না?"
জালাল সাহেব পাশে হাঁটতে হাঁটতে বললেন, "অবশ্যই করা যায়। ফিলিস্তিনি দূতাবাসে অর্থ সাহায্য তোলা হচ্ছে। আমরা সেখানে গিয়ে টাকা পয়সা দিব। ইন্টারনেটে পিটিশন সাইন করা হচ্ছে। ঐ একচোখা ওবামার কাছে পিটিশন পাঠানো হবে যাতে তারা ইসরায়েলকে চাপ দেয় হামলা বন্ধ করতে। দুনিয়ার মানুষতো আর কানা না যে কেউ বুঝেনা ইসরায়েলের এত পাওয়ারের পিছনে আসলে কে ব্যাকাপে আছে।"
"বুঝলেন ভাই সাহেব। আমার এখনও আফসোস হয়, হিটলার যদি আরও পাঁচটা বছর বেঁচে থাকতো, তাইলে আর আমাদের এই দূর্দিন দেখতে হতো না।"
"ঠিকই বলেছেন। এই ইহুদিরা জাত বেইমান! শুরু থেকেই মুসলমানদের পেছনে লেগে থাকে! আমাদের এই যুগে হিটলারের মতন আরেকজন মহান নেতার প্রয়োজন।"
"আজকে আমার ছেলে আমাকে একটা ভিডিও দেখালো। একটি ফিলিস্তিনি বাচ্চা মেয়ে ভিডিও ম্যাসেজ পাঠিয়ে বলেছে, 'আমি একজন ফিলিস্তিনি মুসলিম এবং আমি সন্ত্রাসী না। প্লিজ আমাকে মেরো না।' বিশ্বাস করেন ভাই, ভিডিওটা আমি যতবার দেখেছি, ততবার কেঁদেছি।"
বলতে বলতে আলমগীর সাহেবের গলা আবারও ধরে এলো। জালাল সাহেব তাঁকে সান্তনা দিয়ে বললেন, "ইন শা আল্লাহ, আল্লাহ এর বিচার করবেন। অবশ্যই বিচার করবেন। ধৈর্য্য ধরেন ভাই। ধৈর্য্য ধরেন।"
দুই ভদ্রলোক মাথা নিচু করে হেঁটে যাচ্ছেন। গল্প করতে করতে তাঁরা কেউ লক্ষ্যই করেননি যে ইফতারির দোকান গুলোর আশেপাশে ঘুরঘুর করছে কিছু পথশিশু। সাজানো ইফতারির থালা থেকে একটি পেঁয়াজু, একটি বেগুনী অথবা আধখানা জিলাপি গড়িয়ে নিচে পরে গেলেই তারা সেসবের উপর প্রায় হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। ইফতারিওয়ালারা তখন হাতে মাছি তাড়াবার কাঠি দিয়ে তাদেরও তাড়া দেন।
"এই হারামির দল! যা ভাগ কইলাম!"
"এই শুয়ারের বাইচ্চাগুলার লাইগা দুকান খুলন যায় না!"
চিলের মত মাটি থেকে খাবার ছো মেরে কুড়িয়ে নিয়েই শিশুরা নিমিষে গায়েব হয়ে যায়। ইফতারিওয়ালার মার এড়াতে পারলেই তারা খুশি। ধুলো, ময়লা, মাটি লেগে গেছে খাবারে, তাতে কী? খাবার যে খেতে পারছে সেটাই কি যথেষ্ট নয়?
দুই ভদ্রলোকের দৃষ্টিতে এই দৃশ্য ধরা দেয়না। মনে কোন দাগ কাটে না। তাঁরা দুইজন তখন ফিলিস্তিনের অসহায় শিশুদের নিয়ে চিন্তিত। তাঁদের মন অপরদেশের শিশুদের কষ্টে ব্যথিত।
পরিশিষ্ট:
কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাঁর বান্দাকে জিজ্ঞেস করবেন, "আমি ক্ষুধার্থ অবস্থায় তোমার কাছে এসেছিলাম। তুমি আমাকে খাবার দাও নি কেন?"
বান্দা তখন অসহায়ভাবে বলবে, "ইয়া আল্লাহ! আপনি সব জানেন। আপনি কবে আমার কাছে এসেছিলেন? আপনার ক্ষুধা মেটানো কি আমার পক্ষে সম্ভব?"
"একজন ক্ষুধার্থ মানুষ তোমার কাছে খাবার চেয়েছিল। তুমি তাকে খাওয়ালে আমার ক্ষুধা মিটে যেত। তাকে তুমি কিছুই খেতে দাওনি।"
২| ১৫ ই জুলাই, ২০১৪ সকাল ১১:৩৮
শফিকফারুকী বলেছেন: ভালো বলেছেন। আশেপাশের মানুষদের উপকার করা উচিত। সেটা বেশিরভাগ সময় ই সাধ্যের মধ্যে থাকে। আর আমরা বিচলিত থাকি দুরের দু:খ নিয়ে, যেখানে আমাদের আফসোস কোরা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না।
১৬ ই জুলাই, ২০১৪ ভোর ৪:০৪
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন:
৩| ১৫ ই জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৪:১০
অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: ভালো লাগলো পড়ে।
সাম্প্রতিক যে অবস্থা হচ্ছে গাজায় সেটা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া দরকার। রাজনৈতিক এবং মানবতা যেভাবেই হোক বন্ধ হওয়া দরকার
১৬ ই জুলাই, ২০১৪ ভোর ৪:০৪
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ
৪| ১৫ ই জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৫:৪০
পাজল্ড ডক বলেছেন: পারফেক্ট নামকরণ!
১৬ ই জুলাই, ২০১৪ ভোর ৪:০৫
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ!
©somewhere in net ltd.
১| ১৫ ই জুলাই, ২০১৪ সকাল ৮:০৪
হরিণা-১৯৭১ বলেছেন: বকবক