নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

কাগজের সার্টিফিকেট - একটি ছোট গল্প

১৮ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ২:৩১

আরও একটা ইন্টারভিউ হয়ে গেল। তমাল জানে, আরও একবার তার চাকরি হবেনা।

এই নিয়ে কতটা ইন্টারভিউ সে দিল? পঞ্চাশ? ষাট? নাকি তারচেয়েও বেশি?

তমাল আর তার হিসাব রাখেনা। হিসাব রাখার প্রয়োজন নেই।

হাতে তার কাগজের ফাইল ধরা থাকে। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট। বিশ বছর পড়াশোনার একমাত্র দালিলিক প্রমাণ।

সেই যখন ক্লাস ফাইভে বৃত্তি পেয়ে বাবার পা ছুঁয়ে সালাম করেছিল, বাবা বুকে জড়িয়ে ভেজা চোখে বলেছিলেন, "আরও বড় হ বাবা! তোকে আরও বড় হতে হবে!"

এসএসসি, এইচএসসি, বিএসসি, এমএসসি.....সে আর কত বড় হবে? কাগজের ফাইলে আর কয়টা সার্টিফিকেট জমা হলে ছোটখাটো অফিসের বড় বড় সাহেবেরা বুঝতে পারবেন সে তাঁদের অফিসের হয়ে কাজ করার যোগ্য?

একজন টাইপিস্টের চাকরির জন্য আজকাল বি.এ. পাশ খোঁজা হয়! একজন সেক্রেটারির চাকরির জন্য আজকাল এমবিএ খোঁজা হয়!

হায়! উচ্চশিক্ষার এইরকম অপমান বুঝিবা কেবল আমাদের দেশেই সম্ভব!

"আপনার সবইতো ভাল কিন্তু অভিজ্ঞতা যে কম!"

ইন্টারভিউ চলার সময়ে যখন কোন মোটা ভূরিওলা লোক এইভাবে কথা বলে, তখন বারবার বলতে ইচ্ছা করে, "তুই যখন বিয়ে করতে গিয়েছিলি, তোর শ্বশুরকি তোকে জিজ্ঞেস করেছিল, আগে সংসার করার অভিজ্ঞতা আছে কিনা? তুই যদি অভিজ্ঞতা ছাড়াই বিয়ে করতে পারিস, তাহলে আমাদের চাকরির ক্ষেত্রে এমন প্রশ্ন কেন?"

তমাল মুখ ফুটে কিছু বলেনা। একটি চাকরি পেতে হলে কেবল ততটুকুই বলতে হয় যা বসেরা শুনতে চান।

লাবণ্যের বিয়ে হয়ে গেছে সেই কবেই। একটি চাকরিইতো কেবল সে চেয়েছিল তার কাছে। বলেছিল, "আমি বাড়ি ঘর, আত্মীয় স্বজন সব ছেড়ে তোমার কাছে ছুটে আসবো। তুমি শুধু আমাকে একটি চাকরি যোগার করে দেখাও।"

তমাল দেখাতে পারেনি। একটি চাকরি তার কাছে এতটাই দূর্লভ!

লাবণ্যের ঘরে এখন ফুটফুটে দুটি শিশু। স্বামী সন্তান নিয়ে এখন তার সুখের সংসার!

বন্ধুরা একএক করে বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে। প্রথমে গেল নওশাদ, অ্যামেরিকা। ডিভি লটারিতে তার নাম উঠেছিল। সাত বছর আগের কথা। এখন তার নাকি নিজের বাড়ি আছে। নিজের গাড়ি চালিয়ে সে অফিসে যায়। বিয়ে করে সংসারও শুরু করেছে। ইশ! ডিভি লটারি যদি এখনও চালু থাকতো!

মাজেদ চলে গেল ইংল্যান্ড। স্টুডেন্ট ভিসায়। কী এক দুই নম্বরী কলেজে গিয়ে ভর্তি হয়ে সে পাড়ি জমায় রানীর দেশে। তারপর সেখানকার এক মেয়েকে বিয়ে করে নাগরিকও হয়ে যায়। এখন সে এক রিটেইল শপে কাজ করে। তমাল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবে, তারওতো একটি চাকরি আছে!

শাহীনের কথা বাদ যাবে কেন? অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী চাচাতো বোনকে বিয়ে করে এখন সে সিডনীতে প্রবাসী। সেদিন ফোন করে জানালো মার্কওয়াহ, স্টিভ ওয়াহকে নাকি স্বচক্ষে দেখেছে। স্টিভ ওয়াহর সাথে তোলা ছবি এখন তার ফেসবুকের প্রফাইল পিকচার। সে সুখেই আছে।

তমালের মা সেদিন বললেন, "মন ছোট করিস না। ধৈর্য্য ধর। একদিন ঠিকই চাকরি হবে।"

বাবা বলতেন, "ফেইলর ইজ দ্য পিলার অব সাকসেস।"

বাবা ইংরেজি তেমন জানতেন না। শুধু এই একটি বাক্যই কি করে যেন মুখস্ত করে ফেলেছিলেন।

বাবা এখন আর নেই। থাকলে দেখতেন তাঁর ছেলের একের পর এক পিলারই শুধু দাঁড়িয়েছে, সাকসেস ধরা দেয়নি।

ঝুলে যাওয়া কাঁধ নিয়ে হেঁটে যেতে যেতে তমাল একবার পথচারীদের দিকে চোখ বুলায়।

অনেকের হাতেই ব্রিফকেস, গলায় টাই। কোন কোম্পানির এক্সিকিউটিভ এরা। কেউবা ব্যাংকে কাজ করে। কেউ বা সেলসম্যান।

তাদের এক আড্ডায় সে কান পেতে শুনেছিল একজনকে বলতে, "আর বলো না। এমন চাকরির মুখে লাথি মারি! মানুষে করে এমন চাকরি?"

উৎকর্ণ হয়ে তমাল শোনার চেষ্টা করেছিল ঘটনা কি।

"সকাল আটটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত গাধার খাটুনি খাটতে হয়! কোন লাইফ থাকে?"

তমালের বলতে ইচ্ছে করে, "থাকে। একটি চাকরি থাকলেই কেবল 'লাইফ' থাকে।"

হাঁটতে হাঁটতে তমালের ক্ষিধে পায় খুব। রেস্টুরেন্টে গরম গরম সিঙ্গারা ভাজা হচ্ছে। গন্ধে পেট মোচড় দেয়।

সিঙ্গারা কেনার মত বিলাসী অর্থ তার নেই। রিকশায় চড়ার মত টাকাও এখন তার কাছে নেই। টিউশ্যনি করে কতই বা আয় হয়? কত ছোট হলে মায়ের কাছে বারবার হাত পাতা যায়?

হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মাথার ঘাম মুছতে গিয়ে কাগজের ফাইলের উপর দৃষ্টি যায় তার। কাগজের সার্টিফিকেট! বিশ বছরের পড়াশোনার একমাত্র দালিলিক প্রমাণ! তাঁর কাছে মহামূল্যবান হলেও ছোট অফিসের বড় সাহেবদের কাছে যা মূল্যহীন।

রেস্টুরেন্টের উনুনে জ্বলতে থাকা তেল ভর্তি কড়াইয়ের দিকে চোখ যায় তার। সিঙ্গারা ভাজা হচ্ছে।

তমালের ইচ্ছে হয় একবার গিয়ে লোকটাকে বলে, "ভাই আমার সার্টিফিকেটগুলো একটু ভেজে দিতে পারবেন? অনেকদিন পর তৃপ্তি ভরে কিছু খেতাম!"

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১২:৪৫

অতঃপর জাহিদ বলেছেন: ভাই মনের কথা বলেছেন, বিএসসি শেষের পথে এখনই হতাশ!

১৯ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ২:৪৩

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: :(

২| ১৯ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ৩:৫৩

মুনতাসির নাসিফ (দ্যা অ্যানোনিমাস) বলেছেন: ভালো লিখেছেন...

শুভকামনা এবং শুভেচ্ছা রইলো..

আরো আরো ভালো লিখুন...

১৯ শে জুলাই, ২০১৪ ভোর ৫:১২

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ! সাথে থাকবেন।

৩| ০১ লা আগস্ট, ২০১৪ রাত ২:২১

রাজিব বলেছেন: একটি তরুনের জীবনে বেকারত্বের থেকে বাজে অভিশাপ আর নেই। তবে দেশে এখন ফ্রিল্যন্সিং নিয়ে যে ধরনের আগ্রহ দেখছি তাতে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা কমে যাবে বলে আমি আশাবাদী।

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৩২

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: কমলেই ভাল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.