নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

রুপকথার গল্প সত্যি হোক

২৩ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ৯:১১

আমার দাদির দিক থেকে চাচাতো বোন (একসাথে পড়ালেখা করায় বোন কম, বান্ধবী বেশি) সুমায়লা বরাবরই জার্মান ফুটবল দলের ভক্ত। এইবারের বিশ্বকাপেও সে নিজের দলের হয়ে চিয়ার করেছে।

কানাডায় নিজের বাড়িতে বসে জার্মানির ম্যাচ দেখতে দেখতে তার স্বামীকে (আমার আরেক চাচাতো ভাই, তবে দাদার দিক থেকে) বলল, "জানো, ওজিল এই ওয়ার্ল্ডকাপে রোজা রেখে প্রতিটা ম্যাচ খেলছে।"

যেখানে একশো ডিগ্রী ফারেনহাইট তাপমাত্রার উপরে খেলা হচ্ছে, তিরিশ মিনিট পর পর 'কুলিং ব্রেক' দিতে বাধ্য হচ্ছে, সেখানে রোজা রেখে একটা পুরো ফুটবল ম্যাচ খেলা সম্ভব?

সাদী ভাইয়া হয়তো বিশ্বাস করেনি, সুমায়লা বলল, "হ্যা সত্যিই। মানুষ ফেসবুকে শেয়ার দিয়েছে।"

আহারে বেচারির ভাগ্য! ঠিক সেই সময়েই টিভিতে দেখালো ওজিল ভাই পানির বোতলে চুমুক দিচ্ছেন।

পরে নিউজ মিডিয়া কনফার্ম করলো, ওজিল বলেছেন, কোন এক আরব দেশে নাকি কঠোর পরিশ্রম করা মানুষদের (মজুর) জন্য রোজা মাফ বিষয়ে ফতোয়া জারি হয়েছে। তাঁর ধারনা তিনিও সেই ক্যাটাগরিতে পড়েন। কাজেই তিনি রোজা রাখছেন না।



আরেকটা নিউজ, ওজিল নাকি বিশ্বকাপে প্রাপ্ত অর্থ ফিলিস্তিনি শিশুদের জন্য দান করে দিয়েছেন। এবং তার নিচেই সেই বিখ্যাত লাইন পাওয়া গেল, "লাইক ও শেয়ার দিয়ে সবাইকে জানিয়ে দিন।"

মানুষ সেই দায়িত্ব অতি নিষ্ঠার সাথে পালন করেছেন। ফেসবুকে একদম ভাইরাসের মত খবরটা ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

ওজিলের এজেন্ট বলেছেন, "কথা সত্য নয়। ওজিল ব্রাজিলের তেইশটি শিশুর চিকিৎসার জন্য অর্থ দান করছেন। গাজার শিশুদের জন্য নয়।"

পরে অবশ্য তিনি জুড়ে দিয়েছেন, "বলা যায়না। ভবিষ্যতে তিনি গাজায়ও দান করতে পারেন।"

ওজিল যদি দান করেন তাহলে আলহামদুলিল্লাহ। না করলেও সমস্যা নেই। তিনি একজন ফুটবলার, কোন ধর্মগুরু নন। কথা হচ্ছে, আমরা নিজেরা কতটুকু সাহায্য করছি?

গাজার শিশুদের সাহায্য না করে ব্রাজিলের শিশুদের সাহায্য করায় ওজিল এতটুকুও খাটো হয়ে যান না। ইসলামে বলা হয়েছে, "যেখানেই কোন দুস্থ মানুষ পাবে, তার পাশে এসে দাঁড়াও।"

ওজিল দাঁড়িয়েছেন। আমরা দাঁড়াই না।



আমাদের দেশের লোকেরা হাইপারমেট্রোপিয়ার (চোখের একটি বিশেষ রোগ, যারা দূরের জিনিস স্পস্ট দেখতে পেলেও কাছের জিনিস দেখেননা। এই নিয়ে একটা ছোট গল্প লিখেছি কিছুদিন আগে, অনেকেই নামের শানে নযূল বুঝতে পারেননি) রোগী। তাঁরা ফিলিস্তিনি শিশুদের কান্না দেখেন, নিজের দেশের লাখ লাখ শিশুর ক্ষুধার কষ্ট দেখেননা।

ফিলিস্তিনি শিশুদের সাহায্যের জন্য আমরা ফেসবুক শেয়ার, পিটিশন সাইন ছাড়া তেমন কিছুই করতে পারি না। কেউ কেউ টাকা সাহায্য করছি ঠিক, কিন্তু আপাতত আমাদের দৌড় এই পর্যন্তই সীমাবদ্ধ।

অথচ আমরা ইচ্ছা করলেই একটা পথশিশুকে একবেলার ইফতার করাতে পারি। আল্লাহ বলেছেন প্রতিবেশীর হক আদায় করতে। নবীজি (সঃ) বলেছেন আশেপাশের চল্লিশ বাড়ি পর্যন্ত সবাই আমাদের প্রতিবেশী।

আমি নিজে খেলাম, অথচ আমার প্রতিবেশী অভুক্ত থাকলো, সেজন্যও আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে।

যে শুভ কাজটা আমরা আসলেই করতে পারি, সেখানেই আমাদের কোন আগ্রহ দেখতে পাওয়া যায়না।

পথশিশুদের কিন্তু খুব বেশি চাহিদাও নেই। অতি অল্পতেই তারা তুষ্ট থাকে। নিজের জীবনের একটা উদাহরণ দেই।

একবার তিন্নির খুব মন খারাপ হয়েছিল। সে আমাকে বলল মন ভাল করে দিতে। আমি বললাম, "চল, কিছু গরীব বাচ্চাকে লাঞ্চ করাই।"

আমাদের ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস ছিল মহাখালিতে। আমরা চলে গেলাম গুলশান একনম্বর মার্কেটে। সেখানে কিছু টোকাই শিশুকে বললাম আমাদের সাথে যেতে। চার পাঁচজন জুটে গেল।

তাদের নিয়ে গেলাম গুলশানেরই এক রেস্টুরেন্টে। খালি গায়ের, ময়লার বস্তা হাতের একদল পথশিশুকে অবশ্যই রেস্টুরেন্টের গেট কিপার তাড়িয়ে দিল। আমাকে গিয়ে বলতে হলো, এরা আমাদের সাথে এসেছে।

ওয়েটার তাদের হাতে মেনু দিলে তারা বুঝলোই না কিছু। আমি জিজ্ঞেস করলাম "কি খাবি তোরা?"

তারা বলল, "ভাত, ডাল।"

তারা একটি দামী রেস্টুরেন্টে বসতে পেরেছে, এই আনন্দই তাদের রাখার জায়গা নেই। খাবার নিয়ে তারা আপাতত চিন্তিত না।

তিন্নি বলল, "বিরানি খা?"

তারা বলল, "ভাত, ডাল, ভাজি।"

তখন মনে হলো, এরা হয়তো বিরানি, মাংসের স্বাদ কেমন জানেই না। ভাত, ডাল, ভাজির সাথে গরুর মাংসের অর্ডার দিলাম। ভাত, ডাল, ভাজি তারা যে আগ্রহ নিয়ে খেল, মাংসের ক্ষেত্রে সেই আগ্রহ দেখলাম না।

এইসব শিশুর ভবিষ্যত কি আমরা জানিনা। হয়তোবা এমন রেস্টুরেন্টে তারা জীবনেও ঢুকতে পারবেনা। কিন্তু এই একটি ঘটনা তারা আজীবন মনে রাখবে। রূপকথার গল্প তাদের জীবনে একদিনের জন্য সত্য হয়েছিল। একদিন আকাশ থেকে ফেরেস্তা নেমে এসে তাদের এই রেস্টুরেন্টে খাইয়েছিল। নাতিপুতিরা চোখ বড় বড় করে তাদের মুখে এই গল্প শুনবে!



ইসলাম বলে "তোমরা ভাল কাজে একে অপরের সাথে প্রতিযোগীতা কর।"

তাবুক যুদ্ধের ফান্ড রেইজিংয়ের সময়ে হযরত উমর খুব উৎফুল্ল চিত্তে নবীজিকে(সঃ) বললেন, "আজকে আমি আবুবকরকে (রাঃ) নিশ্চিত হারিয়ে দিব!"

নবীজি(সঃ) বললেন, "কেন? তুমি কি এনেছো?"

হযরত উমর(রাঃ) খুব গর্বের সাথে বললেন, "আমার যা সম্পদ আছে, তার পুরো অর্ধেক নিয়ে এসেছি।"

নবীজি(সঃ) খুশি হলেন।

একটু পরে হযরত আবুবকর (রাঃ) এলে নবীজি তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, "তুমি তোমার বাড়ির লোকেদের জন্য কী রেখে এসেছো?"

হযরত আবুবকর সিদ্দিক (রাঃ) বললেন, "আমি ওদের জন্য কেবল আল্লাহকে রেখে এসেছি।"

তিনি তাঁর সম্পদের পুরোটাই দান করে দিয়েছিলেন।

ইসলামের প্রথম খলিফা, নবীদের পরে সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি তিনিতো আর এমনি এমনি হননি।

মেসুত ওজিল ফিলিস্তিনি শিশুদের কতটুকু সাহায্য করেছেন, সেটার উপর আপনার দান খয়রাত কেন নির্ভরশীল হবে? আপনার কাছে আবুবকর, উমর, উসমান, আলী, তালহা(রাঃ) প্রমুখ উদাহরণ আছে। আপনি কেন কষ্ট করে মিথ্যা খবর বানিয়ে প্রচার করবেন?

বরং এক কাজ করুন, বন্ধুরা মিলে যখন বাইরে ইফতার করতে যাবেন, সবাই মিলে অন্তত একটি পথ শিশুকে রেস্টুরেন্টে বসিয়ে ইফতার করান। দেখেন আপনার নিজের কাছে কেমন লাগে।

যখন বাড়িতে ইফতার করতে বসবেন, একজন ছিন্নমূল কাউকে পথ থেকে ডেকে এনে আপনাদের সাথে ইফতার করতে দিন। খুব বেশি অর্থ এতে ব্যয় হবেনা। কিন্তু মনের প্রশান্তি যেটা আপনি পাবেন, সেটা পয়সা দিয়ে কেনার যোগ্যতা কারই নেই।

রোজা রাখার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে যাতে আপনি ক্ষুধার্থের ক্ষুধার যন্ত্রণা উপলব্ধি করতে পারেন এবং তাদের ক্ষুধা নিবারণের ব্যবস্থা করেন। আপনি শুধু তাদের যন্ত্রণাই অনুভব করলেন, অথচ সেই ক্ষুধা দূর করার ব্যবস্থা করলেন না, তাতে কিছুই লাভ হবে না।



রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাবার সময়ে ভিখিরি দেখে আপনি আমাদের সমাজ ব্যবস্থা নিয়ে আফসোস করে ভাবতে পারেন সমাজ বদল বুঝিবা কেবলই সরকারের দায়িত্ব। বরং

আপনি যদি এই সত্য মেনে নেন যে, আমাদের দেশে সরকার একটি "luxury expense" ছাড়া আর কিছুই নয়, বাস্তবে যার থেকে আমাদের খুব বেশি কিছু আশা করতে নেই, এবং সমাজ বদলাতে হলে আপনার নিজেকেই এগিয়ে আসতে হবে, তাহলেই কেবল সমাজ বদল সম্ভব।



আপনার টাকা থাকলে পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়ে ঈদের পাঞ্জাবি কিনতেই পারেন।

কিন্তু সেই পাঞ্জাবি বাদ দিয়ে যদি পয়তাল্লিশ হাজার টাকা দিয়েও অন্য একটা কিনেন তাহলেও আপনার সৌখিনতা খুব বেশি হ্রাস পাবেনা।

কিন্তু যদি সেই পাঁচ হাজার টাকা অসহায় মানুষের সাহায্যে ব্যয় করেন, তাহলে সেই অনুভূতি priceless.

রূপকথার গল্পের নায়ক/নায়িকা হবার সুযোগ আপনার জীবনে প্রতিদিন আসছে। আপনি কেন সেই সুযোগ গ্রহণ করছেন না?

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ৯:৪৩

হরিণা-১৯৭১ বলেছেন: বাংগালী কি লিখে নিজেও বুঝে না।

২৩ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১১:২২

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: আপনি কি লিখলেন সেটাই বুঝিনি। একটু ব্যাখ্যা করলে উপকৃত হতাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.