নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

টিভি বিজ্ঞাপন ও রবির পান্জাবি নিয়ে অহেতুক ঘ্যানঘ্যানানি

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৪ রাত ১০:৪২

"দোস্ত, আজকে অহনাকে নিজের মনের কথা বলেই ফেলবো।"

"গ্রেট দোস্তো! কিভাবে বলবি?"

যেই বন্ধু তার আইডিয়ার কথা বলতে যাবে, তখনই শুরু হয়ে গেল বিজ্ঞাপন বিরতি।

জয়া আহসান কাপড় কাচতে কাচতে হাসিমুখে পোজ দেন। "এক ঘসাতে এত ফেনা....কেউ দিবেনা, কেউ দিবেনা...."



দীর্ঘ বিজ্ঞাপন বিরতি শেষে আবার নাটক প্রচার শুরু। দর্শককে কাহিনীসূত্র ধরিয়ে দিতেই খানিকটা পিছিয়ে প্রচার করতে হলো।

"গ্রেট দোস্তো! কিভাবে বলবি?"

"তাকে চমকে দিলে কেমন হয়? ধর সে যখন আসবে, তার সাথে তুমুল ঝগড়া বাঁধিয়ে দিব। চরম অপমান করবো। একটা সময়ে সে যখন প্রায় কাঁদো কাঁদো হয়ে যাবে, তখন একটা ফুল তার দিকে এগিয়ে ধরে হাঁটু গেড়ে বলবো, আমি তব মালঞ্চের হব মালাকর!"

"গ্রেট আইডিয়া দোস্তো! আমার খুবই এক্সাইটিং লাগছে! এই দেখ, হাতের সব লোম দাঁড়িয়ে গেছে! এই সাবধান সাবধান....ঐ যে অহনা আসছে!"

পরের দৃশ্যে অহনার জায়গায় শাবনূর এলো। তবে আরেকটা সাবানের বিজ্ঞাপন নিয়ে। সাথে আইয়ুব বাচ্চুর জিঙ্গেল।

"আনে রূপের চমক! তিব্বত বিউটি কেয়ার সোপ!"



আবারও দীর্ঘ বিজ্ঞাপন বিরতি শেষে আবারও নাটকে ফেরা হলো। এবারও কাহিনী সূত্র ধরিয়ে দেয়া হলো।

"এই সাবধান সাবধান....ঐ যে অহনা আসছে!"

অহনা আসতেই বন্ধু পালিয়ে গেল।

"এই, সাজ্জাদ আমাকে দেখে এভাবে চলে গেল কেন?"

"ইয়ে ওর একটা ইমার্জেন্সি আছে।"

"ইমার্জেন্সি?"

"হ্যা। ওর চাচা আইসিইউতে। ওনাকে ভর্তি করতে হবে।"

"আহারে! চাচা আইসিইউতে, ও এখানকে দাঁত কেলিয়ে হাসছিল কেন? আমি রিকশা থেকে নামার সময়ে স্পষ্ট দেখলাম ও খুব হাসছিল।"

"ইয়ে, আসলে ও কাঁদছিল। ওর দাঁত বড় বড়তো, তাই তুমি ভুল বুঝেছো। ওর ক্যালানো দাঁত তুমি দেখেছো, চোখের পানি দেখোনি।"

"কি জানি, ভুল দেখতেও পারি।"

"ইয়ে, আমি কিন্তু তোমার উপর খুব রাগ করেছি! আমি ঠিক করেছি তোমার সাথে কথাই বলবো না।"

"রাগ করেছো? কথা বলবে না? কেন?"

আবারও বিজ্ঞাপন বিরতি। এবারও দীর্ঘ সময় ধরে চলবে একের পর এক বিজ্ঞাপন।



একটা নাটকের প্রতি দর্শকের যাও বা খানিকটা আগ্রহ থাকার কথা, সেটা বিজ্ঞাপনের ভিড়ে পিষ্ট হয়ে ইন্তেকাল করে। মানুষ তখন বিনোদন পেতে বিদেশী চ্যানেল দেখেন। সেখানেও বিজ্ঞাপন দেখায়। কিন্তু সেটাও একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। আমাদের দেশের চ্যানেলগুলোর মত দর্শকের ধৈর্য্যের পরীক্ষা নেয় না।

কিছু বুদ্ধিমান দর্শক আছেন, যারা ইন্টারনেট থেকে শোগুলো ডাউন লোড করে অথবা স্ট্রিম করে দেখেন। বিজ্ঞাপন বিরতি ছাড়াই। তারাই অনুষ্ঠানের আসল মজা উপভোগ করেন।

টিভিতে অনুষ্ঠান চালাতে হলে বিজ্ঞাপন প্রচার করতেই হবে। এতে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু কেউ যদি বিজ্ঞাপন প্রচার করতে করতে অনুষ্ঠান চালায়, তাহলেই সমস্যা।

একটি বিজ্ঞাপন, সেটা যতই ভাল হোক, একটা নির্দিষ্ট সময় পরে বারবার দেখতে ভাল লাগেনা।

ফারুকী ভাইয়ের নতুন বিজ্ঞাপন, মেরিল স্প্ল্যাশের কথাই ধরা যাক। মেয়েদের গাত্রবর্ণ নিয়ে চমৎকার একটি বিজ্ঞাপন। গায়ের রং যে কাউকে সুন্দর-অসুন্দর ঘোষণা করতে পারেনা, চমৎকার একটি থিম নিয়ে দারুন একটি বিজ্ঞাপনচিত্র এটি। কিন্তু বারবার দেখলে কতক্ষণ ভাল লাগবে?

আর আমাদের চ্যানলগুলো বিদেশী চ্যানেলদের গালিগালাজ করে। হিন্দি সিরিয়াল দেখার জন্য দর্শকদের দোষ দেন!



বিজ্ঞাপনের কথাই যখন উঠলো, তখন 'রবির' কথাটাও বলে ফেলি।

ছিন্নমূল শিশুদের ঈদের কাপড় নিয়ে একটি হৃদয়স্পর্শী বিজ্ঞাপন প্রচার করেছে রবি। এই বিজ্ঞাপন দেখে অনেকে নিজে থেকেই কাপড় দান করেছেন রাস্তার বা বস্তির শিশুদের।

রবি বলল, একটা নির্দিষ্ট পরিমান টাকা রিচার্জ করলে তারা একটা করে ছিন্নমূল শিশুকে একটি করে ঈদের জামা উপহার দিবে।

মানুষ পরম উৎসাহে রবিতে রিচার্জ করে কথা বলল। তারপর রবি যখন ঈদের পোশাক দিল, তখন অনেক মানুষই হায় হায় করে উঠলো।

রবি নাকি কাপড় দেয়ার নাম করে নিজেদের বিজ্ঞাপন করে বেরিয়েছে। প্রতিটা শিশু একটা করে রবির বিলবোর্ড। ইত্যাদি।

বিদেশে থাকি, তাই বুঝলাম না ঘটনা কি।

ছবিতে দেখলাম শিশুদের গায়ে লাল পাঞ্জাবি। যেখানে ফুলের নকশা আঁকা, দেখেই বোঝা যায় সেটা আসলে রবির লোগো। যদিও রবি লেখা আছে নাকি বোঝা যাচ্ছেনা।

আমার কথা হচ্ছে, একটা কোম্পানি যখন এইসব দান ক্ষয়রাত করে, তখন তারা অবশ্যই তাদের নিজেদের লোগো/থিমের আশেপাশে থাকার চেষ্টা করে। যেমন রবি যদি নীল রংয়ের পাঞ্জাবি দিত, তাহলে সেটা তাদের কম্পিটিটর জিপি'র সাথে মিলে যেত। বা কমলা রংয়ের কাপড় দিলে সেটা কনফ্লিক্ট করতো বাংলালিঙ্কের সাথে। সাদা পাঞ্জাবি দিলে দোষ হতো না। কিন্তু শিশুরা সাধারণত রঙ্গিন পোশাক পড়তে ভালবাসে। লাল তাদের জন্য অবশ্যই পছন্দের একটি রং। কাজেই লাল পাঞ্জাবি দেয়ায় মর্মাহত হবার কিছুই নেই।

একই যুক্তিতে ডিজাইনেও তারা তাদের লোগো ব্যবহার করতেই পারে।

দিনের শেষে রবি একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। ইনকাম স্টেটমেন্টে নেট প্রফিট কত বড়, সেটা নিয়েই তাদের যাবতীয় চিন্তা। আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম এই কাজ করলে হায় হায় রব উঠা যৌক্তিক, রবির ক্ষেত্রে এমন এক্সপেক্টেশন রাখাটাই অযৌক্তিক।

আসল কথা হচ্ছে, পথ শিশুরা কখনই কিছু পায়না। তাদের যখন কোন কাপড় দেয়া হয়, তারা এটা পরোয়া করেনা যে সেখানে রবি লেখা, পেপসি লেখা, নাকি কোকাকোলা লেখা। একটি নতুন জামা পাবার আনন্দই তাদের কাছে মূখ্য বিষয়।

নতুন জামা পড়ে ঈদের নামাজ পড়তে যাওয়া, আত্মীয় বন্ধুদের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া - এইসব আনন্দের ভিড়ে 'রবি আমাকে বিজ্ঞাপন বিলবোর্ড বানিয়ে ফেলেছে' এই ধরনের ধারনা মনে আসতেই পারেনা। বিশ্বাস না হলে একটা দুইটা বাচ্চাকে জিজ্ঞেস করে দেখতে পারেন।

যারা এখন 'কিন্তু' খুঁজে বেড়াচ্ছেন, তাঁদের সমস্যা থাকলে তাঁরা প্রতিটা বাচ্চাকে ধরে ধরে এনে বলুক, তুমি এই পাঞ্জাবি ফেলে দাও, আমি তোমাকে কোন লোগো ছাড়া নতুন পাঞ্জাবি দিচ্ছি।

যতক্ষণ কেউ এই কাজটা করবেন না, ততক্ষণ চুপ করে থাকেন।

কেউ একজন সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে, কোথায় সবাই বাহবাহ দিয়ে চেষ্টা করবো নিজেরাও যাতে এইরকম কাজ আরও বেশি বেশি করে করতে পারি; তা না করে সেই কাজেও আমরা প্যাচ খোঁজা শুরু করি।

মানসিকতার উন্নতি হচ্ছে না। মানসিকতার উন্নয়ন দরকার।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৪ রাত ১০:৫৫

রাজিব বলেছেন: রবির ব্যাপারে আপনার সঙ্গে অনেকটা একমত। এব্যপারে অন্য পোস্টে কমেন্ট করেছিলামঃ
আমি স্বপ্নের রাজ্যে বাস করি না বলে দুঃখিত। নিজে রবির নম্বর ব্যবহার করছি ১০ বছর ধরে আর মোবাইল ফোন ব্যবহার করছি ১৩ বছর ধরে। যাই হোক আমি কখনো বাংলাদেশের কোন মোবাইল ফোন কোম্পানি মানুষের জন্য স্বার্থ ছাড়া কিছু করেছে এমনটি দেখেছি বলে মনে করতে পারছি। তাই রবি শিশুদের জামা দেবে নিজের লোগো ও নাম ছাড়া এটা আমি স্বপ্নেও দেখতে পাইনি বা চিন্তা করতে পারিনি। এজন্য আমি সত্যিই দুঃখিত। যেখানে এত মানুষ এত আবেগ দেখতে পেল এই বিজ্ঞাপনে আমি তা পারলাম না- এটি আমার খুব বড় ব্যর্থতা স্বীকার করে নিচ্ছি।
রবি যদি শিশুদের জন্য সত্যিই কিছু করতে চাইত তাহলে যে টাকা বিজ্ঞাপনের পেছনে খরচ করেছে (পত্রিকা ও টেলিভিশনে) তা দিয়ে অন্তত ১০ হাজার শিশুকে নতুন জামা এমনি এমনি দিয়ে দিতে পারতো এবং তারপর একটা প্রেস কনফারেন্স করে এগুলো দেখাতে পারতো। রবি লক্ষ লক্ষ টাকা বিজ্ঞাপনের পেছনে খরচ করেছে মানেই কিন্তু তারা এর থেকে কিছু একটা (=ব্রান্ডিং) আদায় করে নেবে এটা বুঝতে আমার কষ্ট হয়নি একটুকুও।
আর বিভিন্ন কোম্পানির নাম ও লোগো সম্বলিত টিশার্ট আমি নিয়মিতই পেয়ে থাকে বিভিন্ন সাংবাদিক সম্মেলনে। তবে তারা গরীব শিশুদের টিশার্ট দেবে এমন কোন প্রতিশ্রুতি দেয় না। আর আমি ১০ বছর ব্যবহার করে রবির থেকে ১ টাকা বোনাস বা কিছু পাইনি সেখানে রবি দেশের গরীব শিশুদের উদ্ধার করবে এমন স্বপ্ন আসলে আমি কষ্ট করেও দেখতে পারি না।

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৪ রাত ১১:২৫

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: আপনার কথা একদম ঠিক। রবির থেকে দান ক্ষয়রাত আমাদের এক্সপেক্ট করাটাই প্রাথমিক ভুল।
তারপরেও তারা যে প্রফিটের জন্য হলেও ছিন্নমূল শিশুদের অন্তত একটা করে নতুন জামা উপহার দিয়েছে, এটাই বা কম কিসে?
দেশে আরও অনেক অনেক নামজাদা কোম্পানি আছে, কয়জন কাজটা করেছে?
আমাদের উচিৎ হবেনা এর মাঝে 'কিন্তু' খোঁজা। ব্যবসায়ী ব্যবসা করবেই, সেই ব্যবসাটা কতটুকু জনকল্যাণমূলক, সেটাই আমাদের ভাবা উচিৎ।

২| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৪ রাত ১১:১২

সুমন কর বলেছেন: ব্লগার রাজিব চমৎকার বলেছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.