নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
যখন তখন যাকে তাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। রাস্তা থেকে মানুষকে তুলে নেয়া হচ্ছে, বাড়ি থেকে তুলে নেয়া হচ্ছে। কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কেউ কিছু বলতে পারেনা। বেশিরভাগের ক্ষেত্রে এই বিদায়ই শেষ বিদায়। তাঁদের আর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি।
কারও কারও ক্ষেত্রে মৃত্যুটা এসেছে আরও আকস্মিকভাবে। কথা নেই, বার্তা নেই, দুম দুম গুলি করে মেরে ফেলা হচ্ছে যখন তখন।
কেউ হয়তো মাত্রই ভাত খেতে বসেছিল, তখনই দরজায় টোকা পড়লো। দরজা খুলতেই দুম! খেল খতম!
কেউ রাতে ঘুমানোর চেষ্টা করছে। এবার দরজায় লাথি মারার শব্দ। দরজা খুলল, এবং দুম!
কেউ হয়তো বাসে করে শহর ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করছে। চেক পয়েন্টে বাস থামানো হলো। একে একে সবাইকে নামিয়ে আনা হলো। তারপর সেখান থেকে বাছাই করে আরেকটা লাইনে দাঁড়া করিয়ে দুম! দুম!! দুম!!!
মেয়েদের ক্ষেত্রে ব্যপারটা আরও নিষ্ঠুর। তাঁদের ধরে নিয়ে মিলিটারী ক্যাম্পে বন্দী করে রাখা হয়। এরপর তাঁদের ভাগ্যে কী ঘটে সেটা বলতে চাইছি না।
যারা এই কাজটি করছে তারা বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সুসজ্জিত একটি সেনাবাহিনী। সরকারের নির্দেশেই তারা কাজটি করছে। তাদের বাঁধা দিবে, এই শক্তি কোথায়?
'স্বাধীন বাংলা রেডিও' নামে একটি রেডিওস্টেশন চালু করা হয়েছে। সেখান থেকে কিছুক্ষণ পরপর দেশবাসীর কাছে আহ্বান করা হচ্ছে, "আপনাদের যা কিছু আছে, লাঠিশোঠা, দা চাকু, এমনকি মরিচের গুড়া হলেও তা নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ুন!"
মরিচের গুড়া নিয়ে লড়াই করতে বলছে অটোমেটিক মেশিন গানের বিপক্ষে? কতটুকু অসহায় হলে মানুষ এমন আর্তনাদ করে!
একদিকে যখন লড়াইয়ের প্রস্তুতি চলছে, অন্যদিকে তখন কিছু বিশ্বাসঘাতক নরপশু নিজেরই জাতির বিরুদ্ধে গিয়ে খুনী মিলিটারীদের সাহায্যে এগিয়ে যায়। এদের সাহায্যেই মিলিটারীরা বাংলার দুর্গম থেকে দুর্গমতম অঞ্চলে গিয়েও মানুষ হত্যা করেছে। এই রাজাকাররাই ছিল তাদের পথ প্রদর্শক।
সেই সময়ে কিছু মানুষ সিদ্ধান্ত নেয় এইভাবে ঘরের কোণে বসে তাঁরা মরবে না। তাঁরা লড়বে। জীবন হাতে নিয়েই তাঁরা রুখে দাঁড়াবে।
কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র থেকে শুরু করে সিনেমা হলের গেইট কিপার পর্যন্ত, আয়েশী জীবনে অভ্যস্থ ধনীর দুলাল থেকে শুরু করে খেটে খাওয়া রিকশাওয়ালা পর্যন্ত দলে দলে স্বাধীনতাকামী জনতা তখন রওনা হলেন সীমান্তের ওপারে অবস্থিত মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে ট্রেনিং নিতে।
ইন্দিরা গান্ধী যখন শরণার্থী শিবিরে ত্রাণের খিচুরী বিতরণ করতে আসতেন, তখন সেইসব যুবকেরা তাঁকে বলতেন, "আমাদের খাবার চাইনা, আমাদের অস্ত্র দেন! আমরা গিয়ে যুদ্ধ করবো!"
এঁদের নিয়েই গঠিত হয় মুক্তিযোদ্ধা দল। এঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন একেকজন গেরিলা! তাঁদের নিয়েই রচিত হয় অমর অমর কিছু গান।
"হাতে তাঁদের মারণাস্ত্র চোখে অঙ্গীকার, সূর্যকে তাঁরা বন্দী করেছে এমন অহংকার!"
সূর্যকে বন্দী করা এসব ছেলেদের একটি শক্তিশালী এবং সফল দলকে একাত্তুর সালের উনত্রিশ এবং তিরিশ অগাস্ট তারিখে বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হয় বন্দীশিবিরে। এবারও মিলিটারিদের সাহায্যে এগিয়ে আসে বিশ্বাসঘাতকদের দল।
তাঁদের বেশির ভাগই আর ফিরে আসেননি।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও তাঁদের কোন খোঁজ পাওয়া যায়না।
হাজার হাজার মানুষ ফিরে আসেন তাঁদের আপনজনদের কাছে। ভাই ফিরে পান তাঁদের বোনকে। মা ফিরে পান সন্তানদের। স্ত্রী যুদ্ধ ফেরত স্বামীর বুকে খামচি মেরে হাউমাউ কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। কিন্তু সেদিন যাঁরা হারিয়ে গিয়েছিল তাঁরা কখনও ফিরে আসেননা।
রুমীর মা জাহানারা ইমাম জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ছেলে হত্যার বিচারের অপেক্ষায় ছিলেন। আজাদের মা জীবনের শেষ চৌদ্দটা বছর একবেলার জন্যও ভাত খাননি, কেবল একটি রুটি খেয়ে কাঁটিয়েছেন। কারন তাঁর ছেলে আজাদ রমনা থানায় বন্দী অবস্থায় মায়ের কাছে ভাত চেয়েছিল। তিনি পরদিন ভাত নিয়ে গিয়ে ছেলেকে পাননি। সেটাই ছিল একমাত্র পুত্রের সাথে তাঁর শেষ সাক্ষাৎ!
এমনই কত আবেগের, কত দুঃখের, কত মহান একটি দিন এই ৩০শে অগাস্ট।
আমাদের ভাষা দিবস আছে, স্বাধীনতা দিবস আছে, বুদ্ধিজীবী দিবস আছে, আছে বিজয় দিবসও। কিন্তু আমাদের কোনই "গেরিলা দিবস" নেই। যেই সূর্যসন্তানরা বুক চিতিয়ে না দাঁড়ালে আমরা স্বাধীন দেশ পেতাম না, তাঁদের কীর্তি স্মরণ করিয়ে দেবার জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে কোন দিবসকে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি।
তাই ব্যক্তিগতভাবেই আমরা ৩০শে অগাস্ট তারিখটিকে গেরিলা দিবস হিসেবে পালন করবো।
ব্যক্তিগতভাবেই আমরা আমাদের আগামী রবিবারের "এক কাপ চা" অনুষ্ঠানের পর্বটি উৎসর্গ করতে চলেছি মহান মুক্তিযুদ্ধের সকল জীবিত ও শহীদ গেরিলাদের উদ্দেশ্যে।
আমাদের চায়ের আসরে সবার নিমন্ত্রণ।
রবিবার, দুপুর ৩-৫, ডালাস সময়।
বাংলাদেশ সময় রাত ২-৪। এবং ইংল্যান্ড সময় রাত ৯-১১।
http://www.radioazad.us
Photo Courtesy: Shimul Yousuf auntie and Club Obscure.
২৯ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ১০:৩২
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ!
২| ৩০ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ২:১০
আমিনুর রহমান বলেছেন:
ভালো লিখেছেন +++
৩০শে অগাস্ট তারিখটিকে গেরিলা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হউক।
১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:১৪
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন:
©somewhere in net ltd.
১| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ৯:৫৭
রাকিব জাভেদ মিন্টু বলেছেন: ভালোইতো লিখেছেন মশায়!