নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্রের খোঁজে অ্যামেরিকা যখন বাগদাদের পতন ঘটিয়ে দিয়েছে, সাদ্দাম হোসেন যখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, তখন কুখ্যাত জঙ্গিগোষ্ঠী আল কায়েদা একটি ভিডিও প্রচার করে, যেখানে একজন লোককে "বিসমিল্লাহ" এবং "আল্লাহু আকবার" বলতে বলতে জবাই করা হয়।
ওসামা বিন লাদেন তখন অন্তর্ধানে, আলকায়েদা নিয়ন্ত্রণ করছে জাওয়াহিরি। ভিডিওটি তারই প্রচার করা।
বলাই বাহুল্য, ভিডিওটি আমাদের দেশে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। "মুসলমান" বলে আমাদের দেশে আলকায়েদা ব্যাপক জনপ্রিয় এবং উগ্রবাদী জঙ্গিরা আমাদের চোখে জিহাদী সৈনিক!
অ্যামেরিকা তখন ইসলামের শত্রু, জর্জ বুশ হচ্ছেন "দাজ্জাল।"
তখনকার দিনে ইউটিউব আজকের মতন জনপ্রিয় নয়। দেশের অনেকের মোবাইলে এমএমএস আকারে নরবলির দৃশ্যটি সেভ করা ছিল। যাদের কাছে ভিডিওটি ছিল না, তাদেরকে দেখানো পবিত্র দায়িত্ব জ্ঞান করা হতো। সেইভাবেই ভিডিওটি আমার দেখা। একজন মুখোশধারী ব্যক্তি, আরবিতে কিছু একটা বলছে, যা ইংরেজিতে সাব টাইটেল দেয়া আছে, "আমেরিকা! তোমরা আমাদের জনগণকে হত্যা করা বন্ধ না করলে আমরাও এভাবে তোমাদের লোকেদের মারতেই থাকবো।"
বলেই বিসমিল্লাহ বলে লোকটার গলায় ছুড়ি চালিয়ে দেয়া হয়!
লোকটা ছিল একজন সাংবাদিক। সংবাদ প্রচার করার উদ্দেশ্যেই তার ইরাকে যাওয়া। তাঁর সবচেয়ে বড় অপরাধ, তিনি একজন মার্কিন নাগরিক।
ভিডিওটি আমাকে যে বন্ধু দেখাচ্ছিল, তাকে খুব উৎফুল্ল মনে হলো।
চোখের সামনে মানুষকে জবাই হতে দেখে খুব খারাপ লাগলো। সে আমার চেহারায় ঔদাসীন্য লক্ষ্য করেও বলল, "খুব ভাল হয়েছে! এইভাবেই করা উচিৎ! কি বলিস?"
আমি ততক্ষনে কল্পনা করে নিয়েছি যে লোকটার একজন মমতাময়ী স্ত্রী আছে। যে সকালে তাঁর কাজে যাবার আগে প্যানকেক এবং অমলেট তৈরী করে ব্রেকফাস্ট টেবিলে ডাকেন। আধগ্লাস কমলার জ্যুস খেয়ে কাজে বেরিয়ে যাবার আগে যিনি স্বামীর ঠোঁটে ঠোঁট ছুইয়ে বলেন, "তোমার দিন ভাল কাটুক!"
তাঁর নিশ্চই দুয়েকটা সন্তান আছে। বিকেলে অফিস ফেরত বাবার সাথে যারা প্লে গ্রাউন্ডে খেলতে যায়। বেসবলে বাবাকে হারিয়ে দিয়ে বিজয়ের আনন্দে আত্মহারা হয়। বুঝতেও পারেনা, এই হার বাবা ইচ্ছে করেই হারেন।
তাঁর হয়তো বৃদ্ধ পিতামাতা আছেন। যাঁরা তাঁদের ল্যান্ডফোনে সন্তানের ফোন এলে আনন্দে আত্মহারা হন।
লোকটার যখন ইরাকে পোস্টিং হলো, তখন নিশ্চই তাঁর স্ত্রী খুব কেঁদেছিল। তিনি নিশ্চই স্ত্রীর কাঁধে হাত রেখে খুব সান্তনার বাণী শুনিয়েছিলেন। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি ফিরে আসবেন।
অ্যামেরিকায় বসে যুদ্ধের ভয়াবহতা অনুমান করা বাচ্চাদের সাধ্য নয়। তারা বুঝতেও পারেনি বাবা কোথায় যাচ্ছে। মাকে কাঁদতে দেখে তারাও উদাস হয়ে যায়। বাবা যখন বলেন, ফেরার সময় খেলনা নিয়ে আসবেন, তখন তাদের মুখে হাসি ফুটে।
এই একটি ভিডিও চমৎকার একটি পরিবারকে ধ্বংস করে দিল। এই কাজকে কি করে 'ভাল হয়েছে' বলি?
আমি খুব আহত স্বরে বললাম, "এই লোকটাতো একজন সাংবাদিক ছিল।"
আমার বন্ধু আমাকে বলল, "তো কি হয়েছে? অ্যামেরিকাও ইরাকের সাধারন মানুষকেই মারছে। তোমার কি ধারনা, শহরে যখন বোমা হামলা হয়, তখন শুধুই সিপাহীরাই মরে? যেমন কর্ম তেমন ফল!"
কথা মিথ্যা না। তখন ইরাকেও প্রতি সেকেন্ডে এরকম শয়ে শয়ে পরিবার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। হয়তো একসাথে খাবার টেবিলে বসে সবাই নাস্তা খেতে বসেছে, তখনই বিমান হামলার সাইরেন বেজে উঠলো। তড়িঘড়ি করে নিরাপদ আশ্রয়ে পালাতে গিয়েই বিকট বিষ্ফোরনের সাথে বাড়ির ছাদ ধ্বসে পড়লো। কয়েক ঘন্টা পর যখন উদ্ধার করা হলো, দেখা গেল পরিবারের কেবলমাত্র একজন সদস্য বেঁচে আছেন। বাকি সবাই খতম। যুদ্ধ সবসময়েই ভয়ংকর একটি ব্যপার!
মধ্যযুগে মানুষ যখন বর্বর ছিল, তখনই যুদ্ধক্ষেত্রে তারা আজকের চেয়ে বেশি সভ্য ছিল।
তখন লড়াই হতো ময়দানে, সাধারণ সিভিলিয়ানদের থেকে অনেক দূরে। যার সাথে লড়াই হবার কথা, শুধু তার সাথেই যুদ্ধ হতো। তার চাকর, যে পাশে থেকে তাকে তীর কুড়িয়ে এনে সাপ্লাই দিয়ে যাচ্ছে, তাকে পর্যন্ত হত্যাকে কাপুরুষতা বিবেচনা করা হতো।
যুদ্ধের ময়দানেই জয় পরাজয় নিশ্চিত হতো। শুধুশুধু সাধারণ মানুষদের মরতে হতো না।
এখন মানুষ অনেকটা সভ্য হলেও, যুদ্ধক্ষেত্রে চরম অসভ্যতার পরিচয় দেয়। বিমান থেকে বোমা ফেলে ফেলে শহরের পর শহর ধ্বংস করে দেয়া হয়। সৈনিক থেকে সাধারণ জনগণ প্রাণ হারান বেশি।
আধুনিক সমর নায়কেরা ফাজিলের মত একটা বাক্য বুক ফুলিয়ে বলেন, "everything is fair in love and war!"
না, সাধারণ মানুষ হত্যা কিছুতেই "fair" হতে পারেনা। কিছু একটা নিয়ম অবশ্যই চালু করা প্রয়োজন। যুদ্ধ যদি করতেই হয় তাহলে আগের মতন কোন এক ময়দানেই যুদ্ধ করা হোক। সাধারণ মানুষ কেন শুধু শুধু প্রাণ দিবে?
মূল প্রসঙ্গে ফেরা যাক।
মানুষ জবাই করার ঘটনা এখনও প্রচার হচ্ছে।
অতি সম্প্রতি ইরাকের জঙ্গি সংগঠন দুইজন সাংবাদিক হত্যার ভিডিও প্রচার করেছে। তারা দাবী করছে তাদের হাতে আরও সাংবাদিক আছেন, এবং তাঁদেরকেও হত্যা করা হবে।
নিহত সাংবাদিকদের স্বজনেরা বারবার তাঁদের প্রাণ ভিক্ষা চেয়ে ভিডিও আপলোড করেছিলেন, কোনই লাভ হয়নি।
সমস্যা হচ্ছে, আমাদের দেশের অনেকেই এইসব সাংবাদিক হত্যাকে সমর্থন করেন। একজন বলেছিলেন, "ঠিকই আছে। ওরা সত্য সংবাদ প্রকাশ করেনা, তাদেরতো শাস্তি পেতেই হবে।"
ভাই, আপনাকে যদি এইরকম ছুরির নিচে শুইয়ে দেয়া হতো, তাহলেও কি আপনি একই কথা বলতে পারতেন?
সাধারন মানুষ হত্যা, সেটা যে পক্ষই করুক, কোনভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। কোন যুক্তিতেই নয়।
সেদিন আমার বন্ধু হুমায়ূন জানালো তার সাথে নাকি একজন ভদ্রলোকের পরিচয় হয়েছে, যে বিশ্বাস করে ইরাকি জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসআইএস নাকি ইমাম মাহদীর সেনাবাহিনী! তাদের প্রতিটা কর্মকান্ডে সমর্থন দেয়া প্রতিটা মুসলমানের পবিত্র দায়িত্ব!
লোকটার বাসস্থান ইংল্যান্ডে। ভদ্রলোক পাঁচটি সন্তানের জনক!
বুঝলাম, ভদ্রলোক নিজের যাবতীয় পরিশ্রম সন্তান উৎপাদন প্রকল্পেই ব্যয় করে ফেলেছেন। মস্তিষ্কের উন্নতি সাধনে এতটুকু পরিশ্রম করার প্রয়োজনীয়তা বোধ করেননি।
এদের ছেলেরাই বড় হয়ে "লাদেন" হয় অথবা "তসলিমা নাসরিন" হয়।
ধুতুরা গাছে কেবল ধুতুরা ফুলই ফোঁটে, কাঠালী চাপা ফোঁটে না।
ইমাম মাহদীর যখন প্রসঙ্গ উঠলো, তখন অবশ্যই দাজ্জালের প্রসঙ্গ আসবেই।
ইদানিং ফেসবুকে একটি একচোখা শিশুর ছবি খুবই শেয়ার হচ্ছে। যিনি শেয়ার করছেন, তিনিই লিখছেন, দাজ্জাল বা এন্টি ক্রাইস্টের জন্ম হয়ে গেছে। শেয়ার করে সবাইকে সাবধান করে দিন।
ভাইরে....দাজ্জালের বৈশিষ্ট্য আগে ভাল মত পড়ুন, তারপরে ভিডিও শেয়ার করুন। এমনিতেই বেচারা শিশুটির দুর্ভাগ্য যে সে মাত্র একচোখ নিয়ে জন্মেছে। এখন বিশ্বব্যাপী তাকে দাজ্জাল প্রচারণা করে কেন শুধু শুধু তার জীবনকে ধ্বংস করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছেন? দাজ্জাল যখন আসার, তখন আসবেই। আপনি ঠিক থাকলেই হলো। টেনশনের কিছু নেই।
মাথামোটা চিন্তাবিদের আরেকটা উদাহরণ দেই।
ডালাসে একবার একটি মিলাদ মাহফিলে একজন লোক দেরিতে পৌছানোয় খুব অভিযোগ করছিলেন, "বুঝলেন না, সব সরকারের ষড়যন্ত্র। আমরা মুসলমান না? ওরা জানে যে আমি একটা মিলাদ মাহফিলে আসছি, আমাকে দেরী করিয়ে দিতেই ট্রাফিকের প্রতিটা সিগন্যাল রেড করে দিয়েছিল।"
অনেককেই দেখলাম, "ঠিক ঠিক" বলে তাতে সমর্থনও দিতে।
ভদ্রলোককে বলতে ইচ্ছে করেছিল, "ভালইতো হয়েছে, মিলাদ মাহফিল এমনিতেই বেদাত। আপনাকে লেট করিয়ে দিয়ে সরকার উল্টা আপনার সোয়াব বাড়িয়ে দিয়েছে।"
বলা হলো না। বয়ষ্ক মুরুব্বিরা যা বোঝেন তার বিপরীতে কিছু বুঝার চেষ্টা করেননা। বুঝাতে গেলে আমরা হই বেয়াদব!
০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৩:০৬
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ! বরাবর পড়ে কমেন্ট লেখার জন্য।
২| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৩:৫২
খেয়া ঘাট বলেছেন: +++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++
০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:২৩
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন:
©somewhere in net ltd.
১| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ২:৩৭
নাইমুল ইসলাম বলেছেন: বরাবরের মতই চমৎকার লিখেছেন। আপনার লেখায় অঢেল যুক্তি পাই তাই হয়তো ভালো লাগে পড়তে