নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

"কোরবানির নামে অবলা পশুহত্যার" জবাবে...

০৭ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১২:৩৮

ছোটবেলা থেকেই দুই ঈদের মধ্যে আমার কাছে বেশি প্রিয় ছিল কোরবানির ঈদ।
কারন একটাই - এই ঈদে আমরা অতি অল্প সময়ের জন্য হলেও গরু ছাগলের 'মালিক' হতে পারতাম।
পশু জবাই করাটা আনন্দের উপলক্ষ্য ছিল না। দাম দর করে গরু-ছাগল কিনতে হাঁটে যাচ্ছি, ভূষি-ঘাস খাওয়াচ্ছি, গরুর গলায় হাত বুলিয়ে আদর করছি - এটাই ছিল আনন্দের মূল কারন।
গরুর গলায় যখন ছুরি চালানো হতো, আমার মনে পড়েনা আমি কিংবা আমার বন্ধুরা কখনও পৈশাচিক আনন্দে মেতে উঠেছি। বরং জবাই হওয়া পশুর ছটফটানি দেখে আমাদের খুবই খারাপ লাগতো। আমার বাবা কখনও জবাই করার সময়টাতে পশুর সামনে থাকতেন না। তিনি এই কষ্ট নিতে পারতেন না।
আমরা পিচ্চিরা সম্ভবত ছিলাম 'লৌহ-হৃদয় মানব।' আমরা জবাইর সময়ে স্বেচ্ছায় সামনে থাকতাম। কারন, এটাই নিয়ম। নিজের ভাল লাগা-মন্দ লাগা ছাপিয়েও কেবল আল্লাহকে সন্তুষ্ট করতেই আমরা পশু জবাই দিই।
আল্লাহ বলেন, "না পশুর রক্ত, না তার মাংস আল্লাহর কাছে পৌছে। যা পৌছে, তা হচ্ছে মানুষের 'তকওয়া।'" ইংরেজীতে যাকে বলা হয় God-consciousness.
এর মানে হচ্ছে, কোরবানির পশুর মাংস শুধু আমাদেরই খাবার জন্য। আমরা, আমাদের পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী এবং গরীবদের নিয়ে একসাথে আনন্দ উদযাপন করতে করতে মাংস খাব। আল্লাহ কোথাও বলে দেননি তাঁর উদ্দেশ্যে এক ভাগ মাংস ফেলে দিতে। মাংস অপচয়ের প্রশ্নই আসেনা।
কোরবানির সময়ে অনেককেই দেখি "ধর্মের নামে পশু হত্যার" বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। নানান যুক্তি দিয়ে প্রমান করার চেষ্টা করেন এটি একটি বর্বর প্রথা। বিয়ে বাড়িতে গেলে তাঁদেরকেই দেখি ওয়েটারকে অনুরোধ করতে যাতে তাঁকে আরেক পিস চিকেন রোস্ট বেশি দেয়। প্লেটে খাসীর রেজালার ভিড়ে পোলাও নজরে পড়ে না। গো-মাংস থাকলেতো কথাই নেই।
তাঁদের বাড়িতেও যখন দাওয়াতে যাই, তখনও দেখি টেবিলে মাংসের আইটেম শোভা পায়। তিনিও পশু পাখির মাংস দিয়েই 'উৎসব' পালন করেন।
একে কি হিপোক্রেসী বলবেন? নাকি মৌসুমী মাতবর বলবেন?
আমি কেবল বলবো, lac of knowledge. আরও সহজ ভাষায়, ignorance.

অবশ্য আরেকদিক বিবেচনা করলে ওরা খুব একটা ভুলও নয়।
ইসলামে নিয়ম হচ্ছে গৃহপালিত সবচেয়ে প্রিয় এবং নিখুঁত গবাদি পশুটিকে আল্লাহর নামে কোরবান করা।
শহরে থাকায় আমাদের গৃহপালিত পশু থাকতো না। বাজার থেকে কিনে আনা পশুই ভরসা। এবং অবশ্যই অবলা প্রাণীগুলো মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যবধানেই আমাদের 'প্রিয়' হয়ে যেত।
আমরা মাঝারি আকৃতির গরুই জবাই দিতাম। বাবার আর্থিক সামর্থের সাথেও আরেকটা যুক্তি ছিল মাঝারি বলদের মাংস খেতে মজা বেশি। গরু যত বড়, টেস্ট তত কম। প্রমাণ, অ্যামেরিকায় এসে পেয়েছি। এখানে হাতির সাইজের একেকটা গরুর মাংস বিক্রি করা হয়। টেস্ট দেশের বলদের ধারে কাছেও যায় না।
ছোটবেলায় আমারও বাজারে গিয়ে বড় বড় গরু দেখে ইচ্ছে হতো কেনার। লক্ষ্যাধিক টাকার উপরে হওয়ায় সামর্থ্যে হতো না।
গরুর সাইজের কারনে লোভে পড়িনি কখনও। আমার নিজের সাইজ দেখে নিশ্চই সবাই বুঝে গেছেন আমি কেমন ভোজন রসিক।
আসলে একটা হাদীছ শুনেছিলাম যে, কোরবানির পশুর প্রতিটা পশমের জন্য আল্লাহ সওয়াব দান করেন। যত বড় প্রাণী, তত বেশি সওয়াব।
বাজার থেকে যারা বড় বড় গরু কিনে নিয়ে যেতেন, তাঁদের এই কারনেই একটু হিংসা হতো। তাঁরা বেশি সওয়াব পেয়ে গেছেন।
বড় হবার পর একটা মজার বিষয় লক্ষ্য করলাম।
বড় বড় গরুর ক্রেতাদের অনেকেই সরকারী কর্মচারী। পুলিশের ওসি, এসপি, সরকারী আমলারা, সরকারী-বেসরকারী দলের নেতারা প্রমুখ। একেকটি গরুর দাম যাদের বার্ষিক বেতনের চেয়েও বেশি। তাঁরা কী তবে সারা বছর না খেয়ে কেবল একটা কোরবানির গরুই কেনেন?
ইসলামে কোরবানির সময়ে পশুর গলায় ছুরি চালাবার কথা বলা হলেও আসলে বলা হয়েছে নিজের ভিতরের পশুর কোরবানী দিতে। বলা হয়েছে নিজের হৃদয়ে যে শয়তানটার বাস, তার গলায় ছুরি চালাও।
যেমন, আমি সারাজীবন মিথ্যা বলে অভ্যস্ত। কোরবানির দিন আমাকে শপথ নিতেই হবে আমার এই বদভ্যাসের গলায় আমি ছুরি চালাবো - বাকি জীবনে একটাও মিথ্যা কথা বলবো না।
আমি ঘুষ খাই, আমি ইভটিজার, আমি লুকিয়ে লুকিয়ে পর্ণ ছবি দেখি, আমি মানুষে মানুষে দ্বন্দ লাগিয়ে মজা পাই - আমারতো দোষের অভাব নেই। কোরবানির ঈদে আমি কয়টার গলায় ছুরি চালাই? একটিও না। এইদিকে একশো গরু কোরবান করে ফেলেছি।
দূর্নীতির টাকায় আমি বাজারের সবচেয়ে বড় গরুটা কিনে এনে ফেসবুকে 'কাউফি' আপলোড করে দিলাম। লোকে বাহ্ বাহ্ দিল। এতেই আমি খুশি।
সেক্ষেত্রে অবশ্যই আমার কোরবানী কেবল একটি মাংস খাওয়ার উপলক্ষ্য ছাড়া কিছুই না। শুধু শুধুই অবলা প্রাণীগুলোকে ধরে ধরে এনে জবাই দিয়ে দিচ্ছি। সহজ ভাষায় হত্যা করেছি।

ওরা মানুষের গলায় ছুরি চালিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় বড় গরু কিনতে যায়। একে কি হিপোক্রেসী বলবেন? নাকি আহাম্মক?

আমি আবারও বলবো, Ignorance.


আল্লাহ আমাদের সব পক্ষকেই সঠিক জ্ঞান দান করুন। সবাই জোরে বলেন, আমীন!

উপসংহারে একটি গল্প বলি।
আমাদের পাড়ায় ফজল (কাল্পনিক নাম) নামে একটা ছেলে থাকতো। তার বাবার সামর্থ্য ছিল না পশু কোরবানী দেয়ার। ঈদের আগে আগে তারা পিতাপুত্র খুব আগ্রহ নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতেন। কেউ গরু-খাসি কিনে হাঁট থেকে ফিরলে মহানন্দে দাম জিজ্ঞেস করতেন। দাম শুনে তাঁদের চোখ আনন্দে চকচক করতো।
ফজলের বাবাকে দেখে আমার সুনীলের কবিতার সেই বাবার কথা মনে পড়ে যেত, যিনি পুত্রের কাঁধে হাত রেখে বলেন, "দেখিস, একদিন, আমরাও...."
যেসব বাড়িতে ফজলের প্রবেশের অনুমতি ছিল, সেসব বাড়ির পশুকে ঘাস খাওয়ানোর ব্যপারে ফজলের আগ্রহ ছিল অপরিসীম। দেখা যেত আমাদের চেয়েও আমাদের গরুর প্রতি তার মায়া কয়েক গুণ বেশি।
একদিকে তার ভাগ্য আমাদের চেয়েও ভাল ছিল। আমাদেরতো মাত্র একটি গরু থাকতো, পাড়ার সব গরুই যে ফজলের!
পশু জবাইর সময়েও ফজলকে দেখতাম ভীষণ ব্যস্ত থাকতে। হুজুরের সাথে এই বাড়ি থেকে ঐ বাড়ি ছুটে যাচ্ছে। গরু জবাই দেখতে।
কিন্তু যখন গরীবদের মাংস বিতরণের সময় আসতো, তখন ফজল বা তার পরিবারের কাউকেই, কখনই আমি দেখিনি থালা হাতে মাংস ভিক্ষা চাইতে।
তার বাবা নাকি সেইদিন বাজার থেকে মাংস কিনে আনতেন শুধু একবেলা মাংস খাবার জন্য। বছরের কেবল সেই দিনটাতেই নিজেদের টাকায় কিনে তাঁদের গো-মাংস ভক্ষণ হতো।
কোরবানির মাংসের তিনভাগের একভাগ ফজলদের মত প্রতিবেশীদের জন্য বরাদ্দকৃত। ফজলরা আপনার কাছে এসে হাত পেতে মাংস খুঁজবে না। আপনার দায়িত্ব তাঁদের খুঁজে খুঁজে বের করা।
আশা করি ঈদ এবং পূজার মত দেশের সবচেয়ে বৃহৎ দুটি ধর্মীয় উৎসব সবারই আনন্দে কেটেছে।

https://www.facebook.com/groups/canvasbd/

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১২:৪৭

টুম্পা মনি বলেছেন: অসাধারণ লিখেছেন।

০৭ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১:১৬

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ! :)

২| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৫৭

ইমরান আশফাক বলেছেন: অসাধারন, আমার তো চোখ খুলে দিলেন। ++++++

৩| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১৬

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: অসাধারন।

তাদের সেইসব ডায়ালগ স্রেফ মৌসুমী চেতনা।

হিপোক্রসির দিয়েইতো চলছে সমাজ। যেখানে ইসলাম বলে উন্মুক্ত মানুষ হতে। তারা হিপোক্রেসির আড়ালে মানুসের বেশ ধরা একেকটা সমাজের কীট।

ফজলের বাস্তবতা হৃদয়ে আসবে কি করে? তাদের যে হৃদয়ই নেই!!!!!

+++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.