নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমাদের দ্বারা এখন আর ভাল কিছু হবার নয়।

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:২৭

"ফিলিং প্রাউড টু বি আ বাংলাদেশী!"
একজনের ফেসবুকের স্ট্যাটাস দেখলাম।
ভাবলাম সাকিব বোধয় আবার অতিমানবীয় কোন কান্ড করে ফেলেছে। ইদানিং সে যা শুরু করেছে, তা আরও কয়েক বছর ধরে রাখতে পারলেই জ্যাক কালিস, ইমরান খানকেতো পেছনে ফেলবেই, এমনকি দ্য আলটিমেট ক্রিকেটার স্যার গ্যারি সোবার্সকেও ছাড়িয়ে যাবে বলে বিশ্বাস!
অথবা মমিনুল কোন ঘটনা ঘটিয়েছে? ব্র্যাডম্যানের পরেই যার গড় আপাতত বিশ্বসেরা! বিরাট কোহলি, হাশিম আমলাদেরও এই বয়সে এতো ইনিংসে তার চেয়ে অনেক কম গড় রান ছিল!
নাকি তাইজুল আবারও সাত-আটটা উইকেট ফেলে দিয়েছে? তামিমওতো ফর্মে ফিরেছে। সে কিছু ঘটিয়েছে?
বাংলাদেশ ক্রিকেটে এখন সুপার হিরোর ছড়াছড়ি। শুধু শুধু Avengers দেখে কী হবে? জিম্বাবুইয়ের সাথে বাংলাদেশের খেলা দেখলেই হয়।
মাথায় একবার ভাবনা এলো ওয়াসফিয়াকে নিয়েও স্ট্যাটাসটা হতে পারে। একটি বাংলাদেশী "মেয়ে" ন্যাশনাল জ্যোগ্রাফির adventurer of the year selected হয়েছে, তাঁকে নিয়েওতো গর্ব করার কথা।
স্ট্যাটাসটা বিস্তারিত পড়তে গিয়েই মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল। বিশ্বের সবচেয়ে বড় সেলফি তোলা হয়েছে বাংলাদেশে। এই আনন্দেই বন্ধু চোখের পানি ধরে রাখতে পারছে না। বাংলাদেশী হিসেবে তাঁর গর্বের শেষ নেই!
বাংলাদেশে ইদানিং নয়া ট্রেন্ড শুরু হয়েছে বোধয়। বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানব অমুক, মানব তমুক, এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় সেলফি.....
বিশ্বের অন্যতম সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশের জনশক্তির বিরাট ফায়দা তুলে ফেলা হচ্ছে! আমরাও এতে খুশি!
আরে বাংলাদেশে ভিড়ের রাস্তায় আপনি যদি হঠাৎ দাঁড়িয়ে গিয়ে আকাশের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকেন, তাহলে কম করে হলেও একশ মানুষকে আপনি আপনার পাশে পেয়ে যাবেন, যারা নিজেদের কাজ বাদ দিয়ে হা করে আপনার মতই আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকবেন। এর মধ্যে কমসে কম তিরিশ ভাগ লোকতো এলিয়েন পর্যন্ত দেখে ফেলবেন। বিশ্বাস না হলে পরীক্ষা করে দেখেন। গুলিস্তান একটা ভাল স্পট হতে পারে।
বাংলাদেশে মানব অমুক-তমুক বানানো কোন বিগ ডিল না। আজাইরা জিনিসে গর্ব করারও কিছু নেই।
আমার স্কুলের এক স্যারের ছেলের লিউক্যামিয়া হয়েছে, বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট করতে হবে। পঞ্চাশ লক্ষ টাকার প্রয়োজন। পঞ্চাশ লক্ষ মানুষ প্রত্যেকে এক টাকা করে দিলেও সেই টাকা আরামসে উঠে যাবার কথা। আমরা সেই কাজটা করে বলতে পারতাম, "ফিলিং প্রাউড টু বি আ বাংলাদেশী!"
আফসোস, খুব বেশি মানুষ এগিয়ে আসেনি স্যারের ছেলেকে বাঁচাতে। ছেলেটা এখন আল্লাহ ভরসায় চিকিৎসা নিচ্ছে। ঘড়ির একেকটা সেকেন্ড সামনে এগুয়, আর স্যারের বুক হাহাকার করে উঠে।
এমন না যে আমি বানিয়ে বলছি, অতীতে এমন একটা ঘটনা সত্যিই ঘটেছিল। কারও যদি স্মৃতিশক্তি মোটামোটি স্তরেরও হয়, তবে অনায়াসেই মনে করতে পারবেন যে ১৯৯৯-০০ সালে অনিক নামের এক শিশুর দুরারোগ্য ব্যাধি হয়েছিল। চিকিৎসা করতে প্রায় এক কোটি টাকার মতন দরকার ছিল। হানিফ সংকেত ইত্যাদিতে তাঁকে নিয়ে ফিচারও প্রচার করেন।
হতদরিদ্র পিতা তখন চারপাশ হাতড়ে টাকা সাহায্য চাচ্ছেন। ছেলে তাঁকে অভয় দিয়ে বলেছিল, "বারো কোটির বাংলাদেশে প্রত্যেকে এক টাকা করে দিলেই অনেক টাকা উঠে আসার কথা বাবা! তুমি চিন্তা করো না।"
আমরা সেদিন ঠিকই টাকা তুলে ফেলেছিলাম! কেউ ঈদের সালামির জমানো টাকা দিয়ে দিয়েছিল, কেউ একবেলা টিফিনের টাকা দিয়ে দিয়েছিল, কেউবা রিকশা ভাড়া - যে যেভাবে পেরেছে, সেভাবে টাকা দিয়েছে। অনিকের চিকিৎসা হয়েছিল। বেঁচে ফিরতে পারেনি সেটা উপরওয়ালার সিদ্ধান্ত, কিন্তু আমাদের দায়িত্বতো আমরা পালন করেছিলাম!
হুমায়ূন আহমেদকে নিশ্চই এখনও কেউ ভুলেননি।
স্যার পণ করেছিলেন তিনি বাংলাদেশে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্যান্সার হাসপাতাল গড়ে তুলবেন। টাকার অভাব হবে কেন? ষোলো কোটির দেশে আবার টাকার অভাব হয় নাকি?
তাঁর প্ল্যানটাও ছিল দারুণ! তিনি প্রথমে তিনজন ভিক্ষুকের কাছ থেকে চাঁদা তুলবেন। তারপর দেশের সবচেয়ে বড় বড় তিন কোটিপতির কাছে গিয়ে বলবেন, "ভিক্ষুক হয়ে তাঁরা এত টাকা দান করেছেন। আপনারা কত দিচ্ছেন?"
এবং তারপরে তিনি সাধারণ মানুষের কাছে হাত পাততেন।
স্যার বেঁচে থাকলে এতদিনে হাসপাতালের ফাউন্ডেশন যে দাঁড়িয়ে যেত এতে কোনই সন্দেহ নেই। তিনি মারা যাওয়াতেই সমস্যা হয়ে গেল!
সুভাষিনী মিস্তিরকে কেউ চেনেন?
সারাটা জীবন সবজি ফেরী করে জীবিকা উপার্জন করেছেন। আস্তাকুর থেকে ময়লা সংগ্রহ করেও বাড়তি উপার্জন করতেন তিনি। তবুও অভাবের সংসার চালাতে পারতেন না বলে নিজের ছোট ছেলেকে এতিম খানায় পাঠাতে বাধ্য হয়েছিলেন। তাঁকে চেনার কথা নয়।
১৯৭১ সালে তাঁর স্বামী টাকার অভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা গেলে সুভাষিনী মিস্তির শপথ নেন এমন একটা হাসপাতাল তৈরী করবেন যেখানে গরীব মানুষ বিনা খরচে চিকিৎসা পাবে।
একজন ফেরিওয়ালী কিনা স্বপ্ন দেখে একটি চ্যারিটেবল হসপিটাল দেবার! স্বপ্ন দেখার একটা লিমিট আছে। তারচেয়ে বড় কথা গরীবের কি স্বপ্ন দেখার অধিকার আছে? সুভাষিনী মিস্তির তবু এই ধৃষ্টতা দেখালেন।
একটা সময়ে এতিম খানায় বড় হওয়া তাঁর ছোট ছেলে ডাক্তারি পাশ করে। মায়ের সারাজীবনের লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নে একটি কুড়ে ঘরে শুরু করেন বিনা পয়সার হাসপাতাল। আজকে সেটা বিশাল কমপ্লেক্স। পশ্চিম বঙ্গের ‘হিউম্যানিটি হাসপাতালের’ নাম কেউ শুনেছেন? ড. অজয় মিস্তিরের নাম? ইনিই সুভাষিনী মিস্তিরের ছেলে। বছরের পর বছর ধরে আশেপাশের এলাকার গরীব দুঃখীদের বিনা পয়সায় চিকিৎসা প্রদাণ করে চলেছে এই হিউম্যানিটি হসপিটাল।
মানুষেরা ঠিকই হাসপাতালটিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
আমাদের দেশে এমন আগে হতো, এখন কেন হয় না? কেন আমরা চার পাঁচজন বন্ধু প্রতি মাসে কিছু টাকা জমিয়ে একটা পঙ্গু লোককে একটা হুইল চেয়ার কিনে দেই না?
কেন আমরা একশো জন মানুষ মিলে একজন শক্ত সমর্থ ভিক্ষুককে একটা রিকশা কিনে দিয়ে বলিনা, "চালিয়ে ভাগ্য ফেরা!"
এক হাজারজন মানুষ ঠিক মতন দান করে একটা মোটামুটি দাতব্য চিকিৎসালয় দাঁড়া করিয়ে দিতে পারি। কেন করি না?
কারণ, আমরা এক হাজার জন মানুষ একত্র হলে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অমুক-তমুক বানানোর চিন্তা নিয়েই ব্যস্ত থাকি।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় সেলফির অংশ হতে পারার গর্বে গর্বিত হয়ে আনন্দাশ্রু বিসর্জন দেই।
আমাদের দ্বারা এখন আর ভাল কিছু হবার নয়।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৪ ভোর ৫:১৮

কোলড বলেছেন: Painful read but true.

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ ভোর ৬:০০

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: :(

২| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:২৮

আমিনুর রহমান বলেছেন:




ভালো বলেছেন !
পোষ্টে +

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ ভোর ৬:০০

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: :)

৩| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১৯

আজকের বাকের ভাই বলেছেন: অন্য থেকে নয় আসুন সবাই নিজ থেকে সৎ হই। একদিন দেশে সৎ মানুষের সংখ্যাই বেশী থাকবে

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ ভোর ৬:০১

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ইন শা আল্লাহ!

৪| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:০৬

ইসতিয়াক অয়ন বলেছেন: তাঁর প্ল্যানটাও ছিল দারুণ! তিনি প্রথমে তিনজন ভিক্ষুকের কাছ থেকে চাঁদা তুলবেন। তারপর দেশের সবচেয়ে বড় বড় তিন কোটিপতির কাছে গিয়ে বলবেন, "ভিক্ষুক হয়ে তাঁরা এত টাকা দান করেছেন। আপনারা কত দিচ্ছেন?"

--------------------

চমৎকার লেখা !

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ ভোর ৬:০১

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.