নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
গুলশান একনম্বরে পিৎজা হাট তখন সদ্য যাত্রা শুরু করেছে। মানুষ দল বেঁধে পিৎজা খেতে যাচ্ছে। পত্রপত্রিকায় দুর্দান্ত মার্কেটিং করা হয়েছে। ব্যপারটা এমন দাঁড়িয়েছিল, কারও সাথে দেখা হয়ে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বললেই একটা প্রশ্ন অবধারিতভাবে উঠে আসতো, "পিৎজা হাট গিয়েছিস?"
উত্তর "না" হলে এমন প্রতিক্রিয়া আসতো যেন ওখানে পিৎজা খাওয়াটা হজ্ব করার মতই জরুরী ব্যপার। না করলে বেহেস্ত ফসকে যাবে।
আমি আর আমার মামাতো ভাই সাকিব এক সন্ধ্যায় বসে গল্প করছি। পিৎজা হাটের প্রসঙ্গ উঠতেই সে বলল, "চলো গিয়ে খেয়ে আসি।"
আমি একটু চিন্তা করে বললাম, "ঠিক আছে, চলো যাই।"
হাঁটা পথে পাঁচ-দশ মিনিট দূরের পিৎজা হাটে গিয়ে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। লোকজন যেখানে একেবারে বিয়ে বাড়ির সাজ দিয়ে এসেছে, সেখানে আমাদের গায়ে পুরোপুরি ঘরোয়া পোশাক! আমার পায়ে স্পোর্টস ট্রাউজার্স, সাকিবের পায়ে থ্রী কোয়ার্টার। একেকজনের জুতা যেখানে আলকাতরার মতন চকচক করছে, সেখানে আমাদের পায়ে স্যান্ডেল! হেঁটে আসার কারনে ঢাকার রাস্তার বিখ্যাত ধুলাবালি যেখানে লেগে আছে।
যতদূর জানি, পিৎজা হাট, ম্যাকডোনাল্ডস ইউরোপ অ্যামেরিকার "বিসমিল্লাহ হোটেল এন্ড তেহারি হাউজ।" বুঝে গেলাম, ঢাকায় এরাই শেরাটন! ঠিক যেভাবে বোম্বের সুপার ফ্লপ তারকারা ঢাকাই ছবির সুপারস্টার!
নিজেদের মনে হলো খাঁটি ব্রিটিশ ভদ্রলোকেদের ভিড়ে আমরা দুই হিপ্পি ভাই দাঁড়িয়ে আছি।
সেই সময়ে ওয়েস্টেক্স একটা বিচিত্র জিন্স প্যান্ট বের করেছিল, কোমরের দিকটাতে আন্ডারওয়ারের মতন আলগা ইলাস্টিক সেলাই করা, যা অনেকখানিই বের হয়ে থাকে। দেখলে মনে হবে আন্ডারওয়ার বের হয়ে আছে। পুরাই "ইয়ো!" একটা ছেলে সেই প্যান্ট পড়ে উপরের স্কিন টাইট শার্ট ইন করে চলে এসেছে! স্মার্ট বলে কথা!
আমাদের পাশেই এক তরুণী বসেছিল। পরিবারসহ ডিনারে এসেছে। একজন মেয়ের পক্ষ্যে একটি জিন্সের প্যান্ট যতখানি নিচে পড়া সম্ভব, সে পড়েছে। তাঁর কোমরের সাথে খুবই বিপজ্জনক ভঙ্গিতে প্যান্টটি ঝুলে আছে। এবং সেইরকমই Short গেঞ্জি পড়েছে। গেঞ্জির তলদেশ কোমরের বেল্টের স্পর্শ পাবার জন্য হাপিত্যেশ করে মরছে, কিন্তু কিছুতেই একজন আরেকজনকে ছুঁতে পারছে না।
আমাদের ওয়েটার আমাদের অর্ডার নিতে আসলো।
"Welcome to Pizza hut sir! What would you like to drink?"
কয় কী ব্যাটা? ইংলিশে কথা বলতে হবে নাকি? এই অভিজ্ঞতা এর আগে হোটেল সোনারগাঁওতে হয়েছিল। আমরা ভাইবোনরা মিলে খেতে গিয়েছিলাম, পুরোটা সময়ে বাঙালি ওয়েটার এক বর্ণও বাংলা বলল না।
এই অভিজ্ঞতা পরে বারিস্টাতেও হয়েছিল। বান্ধবীর সাথে (গার্লফ্রেন্ড না কিন্তু, হুদাই বান্ধবী) কফি-স্যান্ডউইচ খেতে গিয়েছিলাম, সেখানেও ব্যাটা একটা বর্ণও বাংলা বলল না।
"আই অ্যাম এক্সট্রিমলি স্যরি স্যার, ডু ইউ হ্যাভ অনলি টু bucks?"
আমি প্রথমেই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম, ব্যাটার "এক্সট্রিমলি স্যরি" হবার মতন কী কান্ড ঘটিয়েছি ভেবে। পরে বুঝলাম ভাংতি নেই বলেই two bucks চাইছে। আমাদের দোয়েল পাখি আঁকা দুই টাকাও ওখানে "bucks!"
এই সব সিচ্যুয়েশনে আমার মিনা আপুর কথা মনে হয়। যে স্মার্ট জায়গায় স্মার্ট লোকজনের সাথে স্মার্ট অ্যাক্ট করতে করতে হঠাৎ ইচ্ছে করেই দুয়েকটা পাঞ্চ মেরে বিভ্রান্ত করে দেয়।
যেমন খুব সুন্দর, শুদ্ধ এবং একই সাথে স্টাইলিশ বাংলায় লম্বা একটা কথোপকথন চালাতে চালাতে হঠাৎই খাস সিলেটি উচ্চারণে একটা মোচড় দিয়ে দিবে।
"আমি বুঝতে পারছি এটা খুবই সুন্দর স্কার্ফ। সিল্কটা টপ কোয়ালিটি এবং রংটাও খুব সুন্দর। আমার পছন্দ হয়েছে। আপনি এখানে একটু "উবিয়ে" থাকুন আমি এখনই গাড়ি থেকে টাকা নিয়ে আসছি।"
যারা সিলেটি বুঝেননা, তাঁদের জ্ঞাতার্থে, উবিয়ে থাকা মানে দাঁড়িয়ে থাকা।
আমার সেইরকম রসিকতার ক্ষমতা নেই। মিনা আপুকে খুব মিস করলাম!
"What would you like to drink sir?"
"Coke!"
"I am sorry sir, we don’t have coke here. We have pepsi, will that do?"
পুরো সময়টা ওয়েটারের চোখ আমাদের পাশের ঐ ঝুলন্ত প্যান্টওয়ালী মেয়েটির কোমরে স্থির রইলো। আমাদের দিকে এক পলকের জন্যেও তাকাচ্ছে না। ব্যাটা যেন অপেক্ষায় আছে প্যান্ট একসময়ে ক্লান্ত হয়ে হাল ছেড়ে দিবে এবং তার আশা পূরণ হবে।
বাংলাদেশী পেপসি আমার কাছে কখনই ভাল লাগেনি। কেমন জানি সেভলনের গন্ধ করে। যদিও অ্যামেরিকায় ব্যপারটা উল্টা। অ্যামেরিকান কোক থেকে পেপসির স্বাদ ভাল।
আমি সাকিবের দিকে তাকালাম। সাকিব মাথা নেড়ে বুঝালো আমি যা নিব সেটাই সই।
"Mountain dew will do."
"Ok sir. And do you need some appetizers to start with? We have salad bar."
আবার তাকালাম সাকিবের দিকে। এসেছি পিৎজা খেতে। সাথে কোক মোক ঠিক আছে। সালাড ফালাড আবার কী? টাকা পয়সার ব্যপার আছেতো।
ভাগ্য ভাল দুইজনেরই পকেটে তখন টাকা ছিল। সাকিব ইশারায় যা বুঝালো, তা বর্তমানের প্রেক্ষাপটে বললে, ঝাপ যখন দিয়েই দিয়েছি, তাহলে উড়ন্ত অবস্থায় কিছু সেলফি তোলা যাক!
আমরা ঝাপিয়ে পড়লাম।
কথা হচ্ছে, এই ঘটনা কিন্তু ইউরোপে ঘটবে না। আপনি ফ্রান্সে যান, সেখানে ফ্রেঞ্চ না জানলে ভালই বিপদে পড়বেন। জার্মানিতে যান, একই অবস্থা। স্পেইনেও তাই। মেক্সিকানরা নিজেদের ভাষাকে ভালবাসে বলেই অ্যামেরিকার মতন একগুয়ে দানবও নিজেদের রিটেইল ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাস্টমার সার্ভিসে দোভাষী কর্মচারী রাখতে বাধ্য হয়। ইটালির কোন ফ্যান্সি রেস্তোরায় কোন ওয়েটার আপনাকে ইংরেজিতে এক্সট্রিমলি স্যরি হয়ে কখনই বলবে না, "Do you have two bucks?"
ঘটনাটা আমাদের দেশেই ঘটবে। আমাদের দেশেই পোলাপান নিজের মাতৃভাষায় কথা বলাকে আনস্মার্ট মনে করে থাকেন। আট নয় বছরের বাচ্চারা এখন বাংলায় আমতা আমতা করলেও ফ্লুয়েন্ট হিন্দিতে কথা বলতে পারে।
"হাটোনা ইয়ার, মুঝে উধার জানা হ্যায়।"
ষোল সতের বছরের তরুণ তরুনীরা ইংরেজির ফাঁকে ফাঁকে দুই একটা বাংলা শব্দ ব্যবহার করে ফেলে, এবং সেটা নিয়েই নিজেদের মধ্যে হাসাহাসি করে।
"Dude, did you just said 'ব্যারাছ্যারা?' হাহাহা, how funny!"
একটা সময়ে বাঙালির মেরুদন্ড ছিল ইস্পাতের তৈরী। এদের মারা যেত, তবু ঝুকানো যেত না।
এখন সেই ইস্পাতে ক্ষয় ধরেছে। প্রায় ভগ্ন দশা! এখন ধরার আগেই মচকে যায়।
ফেব্রুয়ারী মাসে সাদা পাঞ্জাবি-শাড়ি গায়ে ফুল হাতে শহীদ মিনারে গেলেই ভাষার ঋণ শোধ হয়ে যায় না!
ভাষা শহীদদের জন্য যদি আসলেই শ্রদ্ধাঞ্জলি দিতে চান, তাহলে সবকিছুর আগে নিজের ভাষাকে ভালবাসুন, বাংলায় কথা বলুন। তাহলেই চলবে।
বিদেশে বড় হওয়া ছেলে মেয়েকে যদি বাংলা শিখাতে গেলে বলে "Don't wanna learn Bangla" তাহলে ঠাস করে গালে একটা খাঁটি বাংলাদেশী চটকানা দিয়ে দিন, একমাসের মাথায় সে যদি বাংলায় কথা না বলে আমার নাম বদলে দিয়েন।
এই চড় অতি বিখ্যাত চড়। এই চড় আপনার মা আপনাকে মেরেছিলেন, এই চড় আমার মা আমাকে মেরেছিলেন। এই চড় কখনই ব্যর্থ হতে পারে না।
রসিকতা না, আমি সত্যি বলছি।
আমাদের খুব কাছের এক বান্ধবী আছে, যার সবকটা ভাই বোনের জন্ম অ্যামেরিকায়। ছোটবেলায় স্বাভাবিকভাবেই সে বড় ভাইয়ের সাথে ইংরেজিতে কথা বলতে যেত। ভাই তাকে একদিন বলে দেন, "খবরদার! তোমার যদি ইংলিশেই কথা বলতে হয়, তবে আমার সাথে কথা বলতে এসো না।"
মেয়ের বাংলা উচ্চারণ শুনলে কেউ বলতেই পারবেনা এই মেয়ে জীবনেও দেশে যায়নি।
উল্টো ঘটনাও ঘটে। আজকে সেটা বলতে ইচ্ছে করছে না।
আসছে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে একবার "Go Tigers" এর বদলে "শাবাস বাঘের বাচ্চা" বলে চিয়ার করে দেখুন। ক্রিকেটারদের কথা আলাদা থাকুক, আপনার নিজের রক্তও দ্বিগুন বেগে দুলে উঠবে।
নিজের ঘরে রাজভান্ডার পড়ে আছে, তাহলে কেন শুধু শুধু আমরা অন্যের সম্পদে লোভ করি? কেন আমরা দেশের ভিতরে থেকেই দুই টাকার নোটকে two bucks বলি?
১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:৪৪
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: করবে ইন শা আল্লাহ! ধীরে ধীরে হলেও করবে।
২| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৯:২৫
নীল আকাশ ২০১৪ বলেছেন: ক্যামতে কি? আমি তো পিজ্জা হাট, কেফসি, ডমিনাস, ভিলেজ, আট্রিয়াম, ব্যাটন, র্যাডি সন - সব তাফা তাফা করলাম, কিন্তু এক্সকুজ মি বা স্যরি অথবা চেঞ্জ/প্লীজ ছাড়া কোন আংরেজী ফুটাইতে দেখলাম না - আপনাকে বোধ হয় ওরা বিদেশী ভেবেছে।
১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:৪৬
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: প্রথম-প্রথম যখন পিৎজা হাট, কেএফসি, বারিস্টা খুলে, তখন খুব ইংলিশে কথা বলতো, পরে তারা হাল ছেড়ে বাংলায় ফিরে আসে। আমারে বিদেশি ভাবার কোনই কারন নাই, গাত্রবর্ণখানাই খাঁটি দেশি।
৩| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:৪২
মাঘের নীল আকাশ বলেছেন: ভাল বলেছেন!
১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:৪৬
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ!
৪| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:৩৮
অসাদুল ইসলাম বলেছেন: এককথায় অসাধারণ। খুব ভাল লিখেছেন।
তবে বাঙালি কবে ইস্পাত কঠিন ছিল, এই ব্যাপারে সন্দিহান।
আমাদের মধ্যে ভণ্ডামি পরিমাণ শুরু থেকেই বেশি ছিল।
মাতৃভাষার জন্য আন্দোলন করে রক্ত দিল, কিন্ত গান লিখল "আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো, একুশে ফেব্রুয়ারি, কিন্ত দিনটি ছিল আটই ফাল্গুন।
জাতি হিসাবে পুরাই ভণ্ড।
১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:৪৮
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: হাহা, গুড পয়েন্ট। আমার ধারনা ছন্দের মিলের সুবিধার জন্য ফেব্রুয়ারি ব্যবহার করা হয়েছে। বেনিফিট অফ ডাউট দেয়াই যায়।
©somewhere in net ltd.
১| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৩:৪০
মেহেদী_বিএনসিসি বলেছেন: হুম দারুন লিখেছেন........কিন্তু কয়জন ব্যাপারটা উপলব্ধি করবে সেটাই আসল কথা।