নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
কিছুদিন আগে ঢাকায় ফুয়াদ ভাইর (ফুয়াদ আলমুক্তাদির - জনপ্রিয় সঙ্গীত পরিচালক) গাড়ি ভাংচুর হলে তিনি ফেসবুকে বাংলাদেশকে গালাগালি করে একটা স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি বাংলাদেশ এবং তাঁর রাজনীতিবিদদের যা তা গালাগালি করে বলেন তিনি দেশ ছেড়ে অ্যামেরিকায় ফেরত আসবেন।
তাঁর রাগের কারন হচ্ছে উইন্ডশিল্ড ভেঙ্গে ইটের টুকরা অল্পের জন্য তাঁর স্ত্রীর মাথায় লাগেনি। স্ত্রী আহত হয়েছেন। ইটটা জায়গা মত লাগলে নিহতও হতে পারতেন।
দেশের রাজনীতিবিদরা খারাপ আমরা জানি। দেশে হরতাল, পিকেটিং, পেট্রোলবোমা, গাড়ি ভাংচুর, লঞ্চডুবি, ঘুষ, দুর্নীতি, চুরি, ছিনতাই, ব্যাভিচার - এমন কোন আকাম নাই যা হয়না, এটাও আমাদের অজানা নয়। কিন্তু কথা হচ্ছে, এতকিছুর পরেও বাংলাদেশকে গালাগালি করা কী জাস্টিফায়েড?
আমি গোলাকার পৃথিবীর এমন এক দেশে থাকি যার অবস্থান বাংলাদেশের ঠিক বিপরীত দিকে। দেশে যাই না আজকে চার বছর হতে চলল। তবুও আমার দেশ বলতে আমি বাংলাদেশকেই বুঝি। আমি বাংলায় কথা বলি। এবং আল্লাহর কসম, আমার দেশকে নিয়ে কেউ উল্টাপাল্টা বললে আমার তাকে কাগজের পৃষ্ঠার মতন ছিড়ে ফেলতে ইচ্ছে করে। ফুয়াদ ভাইয়ের মতন বিশাল শরীরের মানুষ হলেও।
আমি নিশ্চিত ষোল কোটি বাঙ্গালির একটা বড় অংশেরও একই অনুভূতি হয়।
কেন?
কারন "বাংলাদেশ" মানে শেখ হাসিনার আওয়ামীলীগ বা খালেদা জিয়ার বি.এন.পি না। বাংলাদেশ মানে দুর্নীতিবাজ সরকারী কর্মকর্তা না। বাংলাদেশ মানে ডুবে যাওয়া লঞ্চের চালকের গাফিলতি না।
বাংলাদেশ মানে তাঁর সংবিধান। সেই সংবিধানে যতক্ষণ পর্যন্ত না লেখা হবে "আন্দোলনের সময়ে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপকারিগণকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হইবে" - ততক্ষন পর্যন্ত আমার দেশ ভাল থাকবে। আমি জানি সংবিধানে এমন কিছু নেই যা খারাপ। আমি জানি সংবিধানে বলা আছে অপরাধীর অপরাধের বিচার করতে হবে। বিচার হচ্ছেনা সেজন্য মানুষ দায়ী, দেশ নয়।
কাজেই কারও গালি দিতে ইচ্ছে হয়, সে অন্য যে কাউকে দিক। বাংলাদেশকে না!
যুক্তি পছন্দ হয়েছে?
তাহলে দৃশ্যপট পাল্টানো যাক।
অভিজিৎ রায়কে হত্যা করা হয়েছে। তাঁর আগেও কয়েকজনকে হত্যা করা হয়েছে। তাঁর পরেও কয়েকজনকে হত্যা করা হবে। ঘটনা শুধু চৌষট্টি হাজার বর্গমাইলেই সীমাবদ্ধ থাকছে না - ঘটনা ঘটছে পৃথিবীর প্রায় প্রতিটা দেশে। মিসরে মানুষ জবাই হচ্ছে, সিডনিতে মানুষ মারা যাচ্ছে, পেশোয়ারে শিশু হত্যা হচ্ছে। কারা ঘটনা ঘটাচ্ছে? অতি অবশ্যই মুসলিম জঙ্গিরা।
একজন "মুসলিম" হিসেবে আমরা অবশ্যই এইসব ঘটনার নিন্দা জানাই। শুধু নিন্দা না, তাদের ঘৃনা করি। তাদের ধ্বংস কামনা করি। কেন? কারন আমার "সংবিধান" আল-কুরআন অথবা সহিহ হাদিসের কোথাও নির্দেশ দেয়া হয়নি তর্কে না জিতলে কুপিয়ে মানুষ হত্যা করতে হবে। কোথাও না। উল্টো বলা হয়েছে, "একজন নিরীহ মানুষ হত্যা করা এবং গোটা মানবজাতি হত্যা করা সমান!"
যারা এইসব ঘটনা ঘটায় তারা আল্লাহ এবং রাসূলের (সঃ) নির্দেশের বিরোধিতা করে, ফলে তারা আল্লাহর শত্রু! তারা গোটা ইসলামী রাষ্ট্রের রাজাকার, এবং আমরাও প্রতিটা দেশের প্রতিটা রাজাকারের ফাঁসি চাই!
মুসলিমদের প্রতি স্পষ্ট নির্দেশ আছে, এইসব কুলাঙ্গারদের বিরুদ্ধেই জিহাদ করার। কেন? কারন এদেরই পূর্বসূরীরা আমাদের হযরত উসমান (রাঃ), হযরত আলী (রাঃ), হযরত হোসেন(রাঃ) সহ অনেক সাহাবীদের হত্যা করেছে। এরাই কিছুদিন আগে বিশ্বখ্যাত মুসলিম স্কলার মুফতি মেনকে হত্যার জন্য আক্রমন করেছে। কেন? কারন তাঁরা এমন কিছু কথা বলেছেন, যা তাদের "পছন্দ" হয়নি। জঙ্গিরা কারোর বন্ধু নয়, জঙ্গিরা কোন ধর্মের নয়। এর প্রমান জর্ডানিয়ান পাইলটকে হত্যা করে আইএস দিয়েছে। আমাদের দেশের জঙ্গিরাও স্বজাতিদের এমনকি মুসলিমদেরও (মাওলানা ফারুকী একজন উদাহরণ মাত্র) হত্যা করে বহুবার প্রমান দিয়েছে।
কিন্তু একদলকে দেখা গেল, এবং সেই দলটাও সাইজে যথেষ্টই বড়, জঙ্গিদের বিরোধিতা করতে গিয়ে গোটা ইসলামেরই বিরোধিতা শুরু করে দিল। তুমি অভিজিতের খুনিদের ফাঁসি চাও, আমরাও চাই। তুমি জঙ্গিদের ধ্বংস চাও, আমরাও চাই। কিন্তু তুমি আমার নবী(সঃ) এবং আল্লাহকে মাঝখানে টেনে আনবা, আমরা বলবো, "you better watch out buddy!" নিজের সীমানা সম্পর্কে ধারনা নেই বলেই তোমরা তোমাদের দলে আমাদের পাচ্ছো না।
"অভিজিত হত্যার প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে দেখি সেখানে এন্টি ইসলামিস্ট প্রতিবাদ চলছে। আমি কিভাবে ওখানে থাকতে পারি বল?" - কথাটা দেশ থেকে এক বন্ধু জানালো।
আরেক বন্ধু বলল, "যুক্তি একটা জিনিস, আর ফাজলামি আরেক জিনিস। তুই নাস্তিক ভাল কথা, তাই বলে তুই ইনসেস্ট (অযাচার, ভাই-বোন, মা-ছেলে বা বাবা-মেয়ের মধ্যে যৌনাচার) প্রথার পক্ষে সাফাই গাইবি কেন?"
বলে ফেলা ভাল, অভিজিতের বিরুদ্ধে অভিযোগটা করা হয়নি। আরেকটা দলের বিরুদ্ধে করা হয়েছে। তবে ইনসেস্ট নিয়ে দেশে কেউ কিছু লিখেছে কিনা আমার জানা নেই। আমি খুব বেশি পড়াশোনা করিনা কিনা। লিখে থাকলে সে কতটা বিকৃত মস্তিষ্কের অধিকারী সেটা বোঝাই যায়। এবং পাগলের কথায় কিই বা আসে যায়? ওকে পাত্তা না দেয়াটাই কী সহজ সমাধান না? কুপিয়ে মারতে হবে কেন?
যাই হোক, একই ঘটনা, মানে এন্টি ইসলামিস্ট মুভমেন্ট ঘটেছিল শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চে। তুমি কাদের মোল্লার ফাঁসি চাও, ভাল কথা। সাইদী, গোলাম আজম, নিজামীকে ঝুলিয়ে দিতে চাও - আলহামদুলিল্লাহ! আমরাও আছি। ঝোলাও শালাদের! এমনিতেও অনেক দেরী হয়ে গেছে। জঙ্গিবাদকে নির্মূল করতে চাও, সাবাস! কিন্তু তোমরা সেখানে আল্লাহ বিরোধী প্রোপাগান্ডা শুরু করে দিলে, নবীজিকে (সঃ) গালাগালি শুরু করে দিলে, এইসব কী?
ফল, একটা বড় সংখ্যার মানুষ নিজেদের সরিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছেন।
এর অর্থ কী তাঁরা তোমাদের দাবির সাথে একমত নন? অবশ্যই একমত। কিন্তু তোমাদের ফাজলামির সাথে নন।
তোমরা নিজেদের শিক্ষিত, প্রগতিশীল এবং যুক্তিবাদী দাবি কর, তাহলে কোন যুক্তিতে জামাত শিবির, রাজাকার, জঙ্গি এবং ইসলামকে গুলিয়ে এক করে ফেলছো? তাহলে ফুয়াদ ভাই যখন দেশকে গালি দিলেন, তখন তোমরা কেন ক্ষেপলে? তিনিও আওয়ামীলীগ, বিএনপি এবং বাংলাদেশকে এক করে ফেলেছিলেন বলে?
পাকিস্তানি এক বদমাইশ বাংলাদেশের জাতীয় পতাকায় আগুন ধরালে কেন তোমরা ক্ষেপে গিয়ে তার এবং তার দেশের মুন্ডুপাত করতে চাইলে? যেখানে তোমরা নিজেরাই ইসলামের পতাকা কোরআন এবং নবীজিকে যা ইচ্ছা তাই বলে আশা করছো মুসলিমরা কিছুই বলবে না?
তোমাদেরটা যেমন ফ্রিডম অফ স্পীচ অ্যান্ড এক্সপ্রেশন, পাকিস্তানিটারও অপকর্ম সেই একই যুক্তিতে "ফ্রিডম অফ স্পীচ অ্যান্ড এক্সপ্রেশন!" নিজেদের মতাদর্শেই তোমরা হিপোক্রেট প্রমাণিত হচ্ছো না?
ক্রিকেটিয় উদাহরণও দেয়া যেতে পারে।
আমরা পাকিস্তানিদের পঁচাতে "ডাকবাবা আফ্রিদিকে" শিকার বানাই। খুব মজা লাগে। কিন্তু ওরাও যদি আমাদের ডাকবাবা জনাব তামিম ডাকবালকে নিয়ে পঁচানো শুরু করে, তাহলে আমাদের ক্ষেপে যাওয়াটা কতখানি যৌক্তিক?
তোমার যদি কাউকে আঘাত করার "ফ্রিডম" থাকে, তবে তারও আহত হবার "ফ্রিডম" আছে। অথচ আমাদের সেই মানসিকতাটাই নাই।
আফসোস, আমরা "ফ্রিডম" মানেই জানি না। বাস্তবে ফ্রিডমের যে কোনই অস্তিত্ব নেই - এইটা মানতে চাইনা।
স্বাধীন দেশে থাকার মানে এই না যে আমি যাকে ইচ্ছা তাকে গুলি করে মেরে ফেলবো। অথবা কারও বাড়ির কোন জিনিস পছন্দ হলে উঠিয়ে নিয়ে আসব। কিংবা অমুকের বৌকে, তমুকের মেয়েকে আপত্তিকর স্থানে ছুয়ে দিব। স্বাধীন হলেও আমাদের নিজেদের স্বার্থেই কোথাও কোথাও পরাধীন হয়ে থাকতেই হবে। নিজের মঙ্গলের জন্য, অপরেরও মঙ্গলের জন্য।
মত প্রকাশের স্বাধীনতা মানে এই না যে আমি একজন অন্ধকে মুখের উপর কানা বলবো, একজন পঙ্গুকে লুলা বলবো, অথবা একজন মেয়েলি স্বভাবের পুরুষকে হিজড়া।
কুৎসিত মেয়েকে কখনই তাঁকে শুনিয়ে কুৎসিত বলতে নেই, নিঃসন্তান রমনীকে বাজা, কিংবা বিধবা রমনীকে কুফা! এইটা সাধারণ ভদ্রতা। মনুষ্যত্বের শিক্ষা। "মুক্তমনের" পরিচয় না।
আমাদের অতি অবশ্যই এমনভাবে মত প্রকাশ করতে হবে যাতে অন্য কারও অনুভূতিতে আঘাত না লাগে। আমার দাবির পক্ষে আমি যুক্তি দিব, অযথা গালাগালি নয়। কোপাকোপিতো অবশ্যই নয়। এইটাই মুক্তমন। এইটাই ফ্রিডম অফ স্পিচ। যা দুই পক্ষের জন্যই প্রযোজ্য।
এবং মুসলিমদেরও বলছি, কাউকে মারতে যাবার আগে, অথবা কারও খুনকে ধর্মীয় যুক্তিতে জায়েজ ঘোষণার আগে নিজেকে বাজিয়ে দেখুন আপনি নিজের ধর্ম সম্পর্কে কতখানি জানেন? যেই দেশের শতকরা নব্বইভাগ মুসলিম শুধুমাত্র জুম্মা এবং দুই ঈদের নামাজ ছাড়া আর কোনই নামাজ পড়ে না, যেই দেশে ঈদ মানে ফ্যাশন শো, যাকাত মানে শোঅফ এবং দুর্নীতি হচ্ছে সবচেয়ে জনপ্রিয় পেশা - সেই দেশেইতো এইরকম উগ্রবাদি জঙ্গি আক্রমন ঘটবে।
"ঠিকই আছে, হারামজাদা নাস্তিকটা আল্লাহর বিরুদ্ধে কথা বলেছে কেন?"
আমিওতো বলতে পারি, "আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন 'সত্যবাদী হলে প্রমান নিয়ে এসো(২:১১১)' সেতো আল্লাহর নির্দেশানুযায়ী তাঁর পক্ষের প্রমাণ এনেছিলই, তুমি কেন তাঁকে তাঁর ভুল ধরিয়ে দিতে পারলে না? উল্টো তুমি ওর সাথে তর্কে হেরে গিয়ে তাঁকে খুন করে সেই আল্লাহরই বিরুদ্ধে গেলে!"
কোন জবাব আছে আপনার কাছে? নারে ভাই, নাই।
উগ্র নাস্তিকতা এবং জ্ঞানহীন ধর্মান্ধতা দুইটাই খারাপ। পাটায় পোতায় পিশাপিশি করছে, এবং আমরা দফারফা হওয়া মরিচের মতন মরছি।
ইসলামে তর্কের নিয়ম হচ্ছে প্রতিপক্ষ যত গলা চড়াবে, তুমি তোমার গলা ততই মধুর করবে। ও গালাগালি করবে, তুমি সর্বোচ্চ ভদ্র আচরণ করবে। তুমি গলা চড়িয়েছ, তাহলেই তর্কে হেরেছো।
প্রতিপক্ষ যত যুক্তি প্রমাণ হাজির করবে, তোমাকেও ততটাই যুক্তি খন্ডন করতে হবে। যদি না পারো, অতি ভদ্রতার সাথে বলবে, "এই মুহূর্তে আমি তোমার প্রশ্নের জবাব দিতে পারছি না, তবে আমি ভালভাবে জেনে নিয়ে তোমাকে জানাবো।"
এতে নিজেরও জ্ঞান বাড়বে। আর যদি সব প্রমান দেয়ার পরেও কেউ মানতে রাজি না থাকে, তবে আপনি তাকে তার মতন ছেড়ে দিন। তাকে মুসলিম বানানো আপনার দায়িত্ব নয়। নবীজি (সঃ) নিজেও তাঁর আপন চাচাকে মুসলিম বানাতে পারেননি। যেখানে নবীজিও(সঃ) যথেষ্ট নন, সেখানে আপনি কোথাকার মহাজন?
আপনি জানেন ইসলামে কারও কথায় বিরক্ত হবার পর্যন্ত অনুমতি নেই? নবীজি (সঃ) এক অন্ধ সাহাবীর কথায় ভুরু কুঁচকেছিলেন বলে আল্লাহ স্বয়ং তাঁকে বকে দিয়েছিলেন।
আপনি কিভাবে নিশ্চিত হচ্ছেন কে ইসলাম গ্রহন করবে এবং কে না? আর গ্রহণ না করলেই বা কী? কারও বই বা ব্লগ পড়ে যদি আপনার ঈমান টলে যায় সেটাতো আপনার নিজের দূর্বলতা। এত দূর্বল ঈমান নিয়ে বেহেস্ত আশা করেন কিভাবে?
আবু জাহেল হযরত মুহাম্মদকে (সঃ) যে অত্যাচার করতো, কিংবা উমাইয়া ইবন খালাফ যেভাবে বিলালকে (রাঃ), অথবা হযরত সুমাইয়া (রাঃ) এবং ইয়াসিরকে (রাঃ) যেভাবে ওরা নৃশংসভাবে হত্যা করলো - এরপরেও নবীজি (সঃ) নিজের সাহাবীদের নির্দেশ দেননি কাউকে রাতের আঁধারে গিয়ে কুপিয়ে হত্যা করতে। হযরত হামযাহ (রাঃ) বা উমর (রাঃ) যদি প্রকাশ্যেই আবু জাহেলের ঘাড় মটকে দিত, তাহলে কার সাহস ছিল তাঁদের কিছু করার?
হযরত উমারের (রাঃ) বীরত্বের সাথে একটু পরিচয় করিয়ে দিলে বুঝতে পারবেন আমি ফাঁকা কথা বলিনি।
মক্কায় চরমভাবে অত্যাচারিত হয়ে যখন মুসলমানরা মদিনায় হিজরতে (দেশান্তরিত) যাচ্ছেন, তখন সবাই রাতের আঁধারে লুকিয়ে লুকিয়ে মক্কা ত্যাগ করছিলেন। কারন কুরাইশরা জানতে পারলে তাঁদের হত্যা করে ফেলবে। একমাত্র উমার (রাঃ) নিজের জামা কাপড় গুছিয়ে, কাবা শরিফ তোয়াফ করে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিলেন, "হে মক্কাবাসী কুরাইশগণ! আমি এখন মদিনার উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছি। যদি কেউ চাও তাঁর মা বাবা সন্তানহারা হোক, অথবা তার স্ত্রী বিধবা হোক, অথবা তার সন্তান ইয়াতিম - তবে সে যেন আমাকে মারতে আসে।"
অথচ কিছুদিন আগেও তিনি যখন মুশরিক ছিলেন, তখন এমনও কথা উঠেছিল যে তাঁর বাড়ির গাধার দল পর্যন্ত কলিমা পড়ে মুসলিম হবে, তবু উমার (রাঃ) ইসলাম গ্রহণ করবেন না।
একই উদাহরণ আবু সুফিয়ানের(রাঃ) ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। চিনেছেন? মক্কার অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাজনীতিবিদ। বদর যুদ্ধ, ওহুদের যুদ্ধ, খন্দকের যুদ্ধসহ মক্কা বিজয় পর্যন্ত যিনি কট্টর কাফির এবং ইসলামের ভয়াবহতম শত্রু ছিলেন, অথচ তিনিই কিনা একটা সময়ে মুসলমানদের জন্য কিংবদন্তি হয়ে গেলেন! আর খালিদ বিন অলিদকে কিভাবে ভুলবেন? ইসলাম গ্রহনের আগে যিনি ব্যাপক মুসলিম সাহাবীকে শহীদ করেছেন, তিনিই একসময়ে পেলেন "সাইফুল্লাহ" উপাধি! মানে আল্লাহর তরবারী।
এইটাই ইসলামের শিক্ষা। ফেসবুকীয় মুসলিমরা যা থেকে কয়েক লক্ষ আলোকবর্ষ দূরে। জঙ্গিবাদীরাতো নেইই।
এখন সমস্যা হচ্ছে আমাদের রেপুটেশনের। কেন আমাদের রেপুটেশন খারাপ? একদল মূর্খ মুখ বাঁকিয়ে মিনমিনিয়ে বলে, "যাহা রটে তার কিছুতো বটে...."
স্বীকার করে নিচ্ছি, দোষ আসলে আমাদেরই। আমরা ভালভাবেই জানি এইসব জঙ্গিরা মুসলিম নয়। তারা কোন অবস্থাতেই ইসলামী কোন কাজ করছে না। তারপরেও আমরা চুপচাপ ঘরে বসে থাকি। একটা প্রতিবাদ পর্যন্ত করিনা। যখন কেউ কোন নাস্তিককে ইসলামের নাম ভাঙ্গিয়ে কুপিয়ে মারার কথা বলে, একবারও বাঁধা দিয়ে বলিনা "you better watch out buddy!" নিজের সীমানা সম্পর্কে ওদের সাবধান করিনা।
আমি শুধু বাংলাদেশের জঙ্গিদের কথাই বলছি না। আইএস, বকো হারাম, তালিবান, কায়েদা, লষ্কর তৈয়বা সব কয়টা জঙ্গি সংগঠনের বিরুদ্ধেই আমাদের আওয়াজ তোলা উচিৎ। আপনি আমি দুইজনই বুঝতে পারছি এইসব মাথামোটা জঙ্গির দল ইসলামের যে ক্ষতি করছে, লক্ষ লক্ষ নাস্তিক তাঁদের কলমের খোঁচায় তার সিকিভাগও করতে পারছে না। তারপরেও আমরা এদের বিরুদ্ধে টু শব্দ পর্যন্ত করছি না, ব্যবস্থা নেয়াতো দূরে থাকুক।
চুপ থেকে এদের মৌন সম্মতি দেবার ফলে উল্টো আল্লাহর নির্দেশই ("ন্যায়ের জন্য নিজের বিরুদ্ধে হলেও যাও") অমান্য করছি।
মুক্তমনের নামে এন্টি ইসলামিস্ট মুভমেন্টের সাথে থাকতে অস্বস্তি বোধ হচ্ছে? থাকার দরকার কী? আপনি নিজেই সমমনাদের একটি দল বানিয়ে প্রতিবাদ করুন না। বলুন "আমি একজন গর্বিত মুসলমান, এবং আমি অভিজিতসহ অন্যায়ভাবে যেকোন হত্যার বিচার চাই। সে আস্তিক হোক, নাস্তিক হোক, অথবা বিধর্মী কাফের....আমি মানুষ হত্যার বিচার চাই! এবং আমার ধর্ম ইসলামকে কুপিয়ে হত্যাকারী খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।"
লোকজন ইসলামের আসল রূপটা দেখুক। আপনি কেন একে পর্দায় ঢেকে রেখেছেন?
আপনি যদি ন্যায়ের পথে থাকেন, তবে আল্লাহ আপনার সাথে থাকবে।
আর যার সাথে আল্লাহ থাকেন, তাঁর ভয়ের কী আছে?
জাজাকাল্লাহ খায়রান!
মানে বুঝেছেন? "আল্লাহ আপনাকে উত্তম পুরষ্কার দান করুন!"
০৪ ঠা মার্চ, ২০১৫ ভোর ৪:১০
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ। পড়ে দেখবো ইন শা আল্লাহ।
২| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৫ রাত ২:২৯
সালাউদ্দিন আহমেদ ভোর বলেছেন: অসাধারণ লেখা। ধন্যবাদ সময় করে তাৎপর্যপুণ্য লেখাটির জন্য...
০৪ ঠা মার্চ, ২০১৫ ভোর ৪:১০
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ সময় করে পড়ার জন্য।
৩| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৫ রাত ৩:৪৭
চাঁদগাজী বলেছেন:
মোটামুটি অর্থহীন
০৪ ঠা মার্চ, ২০১৫ রাত ১০:১৭
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: আপনার জন্য অর্থপূর্ণ লেখা লিখতে না পারায় ক্ষমা প্রার্থী।
৪| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৫ সকাল ১১:১০
ভূতের কেচ্ছা বলেছেন: অর্থহীন
০৪ ঠা মার্চ, ২০১৫ রাত ১০:১৮
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: বলেন কী, এত বড় আর গুছিয়ে লেখার পরে একটুও অর্থ খুঁজে পেলেন না?
৫| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৫
মাঘের নীল আকাশ বলেছেন: চমৎকার লেখা....+++++
০৪ ঠা মার্চ, ২০১৫ রাত ১০:১৬
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ!
৬| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১৯
ফাহিম বেয়াদব বলেছেন: ভাল লিখেছেন।
০৪ ঠা মার্চ, ২০১৫ রাত ১০:১৬
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ!
৭| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৫ রাত ১০:২৯
এম এম হোসাইন বলেছেন: ++++++++++++++++++++++++++
৮| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৫ রাত ১০:৩৭
পাজল্ড ডক বলেছেন: ভাল লাগলো!
৯| ০৫ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৪:৪২
বিবর্ন সভ্যতা বলেছেন: আসলে সমস্যা আমাদের বাংগালি জাতির, আমরা এমনিতই আবেগপ্রবন তারওপর আবার মুসলমান।
আমাদের পুর্বপুরুষরা আমাদের ইসলাম শিক্ষা দিয়েছেন তাদের মত করে, সেখানে শুধুই প্রাথমিক ইসলাম ছিল, এর শাখা প্রশাখার গভিরতা ছিল না, যার কারনে ইসলামের বিরুদ্ধ কোন অবস্থা হলেই আমরা উত্তেজিত হয়ে যাই।
আমাদের উত্তেজিত অবস্থাকে পুজি করেই অভিজিতরা আবোল তাবোল লেখার সুযোগ পায়।
আশা করি আমাদের জ্ঞানের গভিরতার সাথে ধীরে ধীরে অবস্থার উন্নতি হবে।
১০| ০৫ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৫:২৫
জিয়া উদ্দিন আহমেদ বলেছেন: এগিয়ে যান সঙ্গে আছি।
©somewhere in net ltd.
১| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৫ রাত ১:৩৯
সাবাব ইকবাল বলেছেন: ভাই, একেবারে মনের কথাটা বলে দিয়েছেন। আমারও একটা লেখা আছে এই নিয়ে আশা করি পড়ে দেখবেন।
" একজন নাস্তিককেও শ্রদ্ধা করা যায় কিন্তু বেহায়াকে নয় " । ধন্যবাদ লেখাটার জন্য।
http://beta.somewhereinblog.net/blog/Shabab_iqbal/30017999