নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
একটা কুকুর, একটা হাতি, একটা বানর, একটা পেংগুইন এবং ছোট একটি বয়ামে পানির মধ্যে একটি গোল্ডফিস সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে। মাছটি দাঁড়িয়ে নেই, স্থিরভাবে পানিতে ভাসছে বলা ভাল।
সামনের ডেস্কে শিক্ষক বসা। জঙ্গলের জানোয়ারদের স্কুলের পরীক্ষা হচ্ছে এবং তিনি পরীক্ষক।
প্রশ্ন এলো, "গাছে উঠে দেখাও।"
তাহলে এই পরীক্ষায় শুধু কে পাশ করবে? তারচেয়ে বড় কথা, পরীক্ষাটি কী ন্যায়সংগত হলো?
এটি একটি চমৎকার ব্যঙ্গ কার্টুন। বাস্তবের থেকে এতটুকুও বিচ্ছিন্ন নয়। প্রতিবছর বোর্ড পরীক্ষার নামে আমাদের ছাত্রছাত্রীদের সাথে এই অন্যায়ই করা হয়। এবং তারও আগে, স্কুলের প্রতিটা ক্লাসে এই ঘটনা ঘটে থাকে। বিভিন্ন স্তরের ছাত্রছাত্রীদের জন্য একক পরীক্ষার প্রশ্ন। তাই কেউ খুব ভাল করে, বেশিরভাগই মোটামুটি রেজাল্ট করে, এবং কেউ কেউ করে ফেইল। এই পরীক্ষায় ফার্স্ট সেকেন্ড হওয়া ছাত্রছাত্রীদের তখন আহ্লাদ দিয়ে মাথায় তুলে ফেলা হয়, বাকিদের করা হয় তিরস্কার।
এখন গোল্ডফিশকে আপনি যদি গাছে চড়তে বলেন, সে কী তা পারবে? অথচ সেই পরীক্ষায় ফার্স্ট হওয়া বানরকে সাঁতরে দেখাতে বলুন। মাছের কাছে সে পাত্তাই পাবেনা।
সাকিব আল হাসানের স্কুলে সাকিব কী কখনো ফার্স্ট হতেন? তাঁর ফার্স্ট বয়কে তাঁর সাথে ক্রিকেট খেলতে বলুন। কে জিতবে?
এর মানে কী?
এর মানে হচ্ছে, স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিটা মানুষই এক্সপার্ট। শুধু তাঁর প্রতিভাটা খুঁজে বের করাটা জরুরী।
আমার শিক্ষা জীবনের শুরু চিটাগংয়ের লিটল জুয়েলস স্কুলে। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল। ক্লাস থ্রি থেকে যেখানে ফ্রেঞ্চ শেখানো হতো।
আমার ফ্রেঞ্চ শেখা হয়নি। তার আগেই ক্লাস টুতে পড়া অবস্থায় বাবা বদলি হয়ে চলে এলেন সিলেট।
আমরা ভর্তি হলাম আনন্দনিকেতন স্কুলে। নামটা বাংলা হলেও, স্কুলটা ছিল পুরোদস্তুর ইংলিশ মিডিয়াম। এই স্কুলে এক সহপাঠি আরেকজনের সাথে বাংলায় কথা বললে ফাজিল সহপাঠিটা প্রিন্সিপালের কানে কথাটা তুলে দিত। পরিনাম, ইংলিশ ছাড়া ভিন্ন ভাষায় কথা বলার জন্য শাস্তি।
ক্লাস ফোরে পড়া অবস্থায় আবারও আমার স্কুল পরিবর্তন হলো। এইবারে বাংলা মিডিয়াম স্কুল। এবং এখানেই বিপত্তি ঘটে গেল।
ক্লাস থ্রিতে পড়ার সময়েই আমরা হোমারের ইলিয়্ড অ্যান্ড অডিসি মহাকাব্য পড়ে ফেলেছি। স্কুলের সিলেবাসেই সেটা ছিল। এছাড়া শেক্সপিয়ার তখন উঁকি ঝুকি দিচ্ছেন। বাংলা মিডিয়ামে এসে দেখলাম ইংলিশ ফর টুডে পড়তে হচ্ছে, যেখানে একটি কবিতা ছিল এমন “Brush brush brush your teeth, every every day,
Father mother sister brother, every every day.
Take take take a bath, every every day,
Father mother sister brother, every every day.”
Brighter Grammar যা ক্লাস টুতে পড়ে এসেছিলাম, সেই একই বই ক্লাস ফাইভ-সিক্সে পড়ানো হচ্ছে।
এবং যেখানে নজরুল-রবীন্দ্রনাথের নাম শুনলে জ্বর চলে আসতো, সেখানে সবকিছুই বাংলায় পড়তে হচ্ছে! বিজ্ঞান, সমাজ পাঠ, বাংলা দ্বিতীয় পত্র!
এবং গণিতে কতবার যে অবচেতন মন ৪ কে ইংলিশ ৮ ধরে নিয়ে ভুল হিসেবে দিয়েছে!
এর মানে হচ্ছে ক্লাস ফোরে পড়া অবস্থায় একই সাথে আমার ইংরেজিজ্ঞান ছিল ক্লাস সেভেন-এইট পর্যায়ের, আবার বাংলা ছিল ক্লাস ওয়ান-টু পর্যায়ের। ভীষণ রকমের নড়বড়ে অবস্থা।
ক্লাস নাইনে উঠে যখন একটা স্যারের বাসায় টিউশন নিতে যেতাম, সেখানে অন্য এক স্কুলের (ইসলামী স্কুল) ছেলেদের সাথে পরিচয় হলো। এরা ইংরেজিতে ভীষণ দুর্বল। কিন্তু একই সাথে বাংলা ও আরবিতে ফাটাফাটি পর্যায়ের ভাল। এদের আরবি জ্ঞান হয়তো অনার্স লেভেলের, এবং ইংরেজি জ্ঞান ক্লাস সিক্স।
এবং দেশে কোন ছাত্র যদি প্রতিবন্ধী হয়? তাহলে তাঁকে গণনাতেই আনা হবেনা। প্রতিবন্ধীদের জন্যতো আলাদা স্কুল আছেই। কেন? ওরা কী ভিন্নগ্রহের প্রাণী যে ওদের আলাদা স্কুলে পড়াতে হবে? ওরা কেন আমাদের পাশে বসে আমাদের মতই F=ma পড়তে পারবে না?
কিছুদিন আগে দেশের সবকটা বড় পত্রিকায় এক প্রতিবন্ধী ছেলের বোর্ড পরীক্ষায় অসাধারণ কৃতিত্বের খবর এসেছিল। একটি ছেলে বিরুদ্ধস্রোতে সাঁতরে তীরে পৌছেছে, এটা অবশ্যই বড় খবর। কিন্তু কেন জানি অনেককেই দেখলাম তাঁর প্রতিবন্ধী ব্যপারটাকেই বেশি হাইলাইট করছিলেন। চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দেয়া, তুমি আমাদের দলের কেউ নও। তুমি ভিন্ন কিছু।
সমস্যার সমাধান কী হতে পারে?
সেখানে যাবার আগে অ্যামেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ে কিভাবে পড়ানো হয়, সেটা নিয়ে দুয়েকটা কথা বলে নেই।
অ্যামেরিকায় এসে আমি প্রথমে কমিউনিটি কলেজে ভর্তি হয়েছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে একই ক্লাসের তিন ক্রেডিটের জন্য যেখানে দুই হাজার ডলার দিতে হয়, সেখানে কমিউনিটি কলেজে মাত্র একশ ডলারেই সেই ক্লাস করা যায়। তার উপর বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রেডিট ট্রান্সফারও করা যায়। শুধু শুধু বাড়তি $১৯০০ কেন খরচ করবো? মেজর সাবজেক্টগুলো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে করলেই হলো।
কমিউনিটি কলেজে ভর্তির আগে গণিত ও ইংরেজির উপর কয়েক ঘন্টা ব্যাপী একটা পরীক্ষা দিতে হয়েছে। TSI টেস্ট বলে ওকে। এতে করে ওরা এই দুই বিষয়ে আমার দৌড় কতখানি সেটা বুঝে নিল। এর উপর ভিত্তি করেই আমাকে ক্লাস নিতে দিয়েছে। যেমন, আমার কোন ননক্রেডিট ক্লাস নিতে হয়নি। সরাসরিই ইংলিশ ১ এবং ক্যালকুলাস ১ নিতে পেরেছি। আমার সাবেক এক বান্ধবীকে যেখানে দুইটা ননক্রেডিট ইংলিশ এবং প্রি-ক্যালকুলাস ক্লাস নিতে হয়েছিল।
কেন? কারন এই দুই বিষয়ে সে খানিকটা পিছিয়ে ছিল। তাই তাঁকে একটু মজবুত করেই তারা ক্রেডিট কোর্স নিতে দিয়েছিল।
আবার আমার এক বন্ধুর গণিত পরীক্ষা এতই ভাল হয়েছিল যে তাঁকে এই অপশন পর্যন্ত দেয়া হয়েছিল যে সে শুধু একটা পরীক্ষা দিলেই ক্যালকুলাস ক্লাস থেকে তাঁকে exempt করা হবে। মানে কষ্ট করে তিন মাসের কোর্স করা লাগবে না।
আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় পাশ ফেইল নির্ভর করে মার্ক্সের ভিত্তিতে। সেই মার্ক্সের উপর ভিত্তি করেই সাবজেক্ট ধরিয়ে দেয়া হয়। যার নাম নকুল কুমার বিশ্বাস, তাঁকেও হয়তো ইসলামিক স্টাডিজ নিয়ে পড়াশোনা শেষ করতে হচ্ছে। আবার যে ছেলে মনে প্রাণে ফিজিক্স পড়তে চায়, তাঁকে হয়তো বাংলায় পড়তে হচ্ছে। ফিজিক্স পড়ার মতন যথেষ্ট "মার্কস" সে ভর্তি পরীক্ষায় পায়নি।
আবার দেখা গেল গণিতে ও বিজ্ঞানে অসাধারন উজ্জ্বল ছেলেটি ইংরেজিতে খারাপ করায় বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়তে পারল না।
এ দেশে হলে সেই সুযোগ কিন্তু সে পেত।
যে পরীক্ষায় ভাল করেনি, সেই ক্লাসেরই এক ধাপ নিচু কোর্স পাশ করিয়ে তাঁর ভিত্তি মজবুত করে তাঁকে প্রিয় বিষয়ে পড়তে দেয়া হতো।
আমাদের দেশে স্কুল গুলোর এই ক্লাস ওয়ান টু থ্রি....সংস্কৃতির পরিবর্তন কী সম্ভব নয়? ক্লাস অনুযায়ী না, বরং কোর্স অনুযায়ী ছাত্র ছাত্রী নির্দিষ্ট সময়ে এসএসসি পরীক্ষা দিবে।
যেমন এসএসসি পরীক্ষায় বসতে হলে একজন ছাত্রকে অবশ্যই বাংলা ১০, ইংরেজি ১০, গণিত ১০, ধর্মশিক্ষা ১০ ইত্যাদি লেভেলের কোর্স সম্পন্ন করে আসতে হবে। যে ছেলে আগে থেকেই ইংলিশ ০৭ এ পড়ার যোগ্যতা রাখে, তাঁকে শুধু শুধু কষ্ট করে ইংলিশ ০৪, ০৫, ০৬ পড়তে হবেনা। আবার যে বাংলা ০৪ এ পড়ার যোগ্যতা রাখেনা, সে বাংলা ০১, ০২, ০৩ পড়ে তবেই ০৪ কোর্স সম্পন্ন করবে। এবং অন্যান্য বিষয়গুলোতেও একই ব্যবস্থা। খুব কী কঠিন হবে তাহলে?
কেউ কেউ বলবেন একেবারেই অসম্ভব!
আরে, গ্রেডিং পদ্ধতি চালু হবার আগে আমাদের "স্ট্যান্ড" "স্টার" "ডিভিশন" পদ্ধতি ছিল। তারও আগে মাল্টিপল চয়েজ পদ্ধতির আগে শুধুই ব্রড কোয়েশ্চেনের পদ্ধতি ছিল। ম্যাট্রিক বদলে এসএসসি হলো কবে ও কিভাবে?
এই কিছুদিন আগেও তো জেএসসি, পিএসসি জাতীয় পরীক্ষার চল ছিল না।
পরিবর্তন চাইলেই পরিবর্তন সম্ভব। ভাল কিছুর জন্য পরিবর্তনে ক্ষতি কী?
©somewhere in net ltd.
১| ৩০ শে জুন, ২০১৫ রাত ১০:৩০
ফারজানা ইয়াসমিন তিথি বলেছেন: ধন্যবাদ এত সুন্দর করে শিক্ষাব্যবস্থার আসল চিত্রটা তুলে ধরার জন্য।আসলেই ভাল কিছুর জন্য পরিবর্তনে ক্ষতি কি ?