নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
খলিফায়ে রাশেদিনের মধ্যে হজরত উমার (রাঃ) আমার সবচেয়ে প্রিয় খলিফা। এই নিয়ে কোনই সন্দেহ নাই যে ইসলামের প্রথম খলিফা হজরত আবু বকর (রাঃ) হচ্ছেন সেই ব্যক্তি যিনি নবী রাসুলদের পরেই পৃথিবীতে হেঁটে বেড়ানো শ্রেষ্ঠ মানব। কিন্তু তিনি জন্ম থেকেই "ভাল মানুষ" ছিলেন। জাহেলি যুগেও তাঁর কোন খারাপ কাজের রেকর্ড পাওয়া যায় না। নবীজিরও(সঃ) সবচেয়ে প্রিয় পুরুষ ছিলেন তিনি। তাঁর শ্রেষ্ঠ সাহাবী।
আর বাকি দুইজন উসমান (রাঃ) এবং আলীও (রাঃ) নিজেদের ছাড়া আর কারও সাথেই তুল্য নন। তাঁদের দুইজনের রেকর্ডও প্রথমজনের মতই স্বচ্ছ ও পরিষ্কার। উসমান (রাঃ) বরাবরই তাঁর নির্বিরোধী ও নরম স্বভাবের জন্য পরিচিত ছিলেন। সমমনা বলে সেই জাহেলি যুগ থেকেই হজরত আবু বকরের "বেস্ট ফ্রেন্ড" ছিলেন। এবং আলীরতো (রাঃ) বেড়ে উঠাই নবীজির (সঃ) তত্বাবধানে। ঠিক মতন জ্ঞান হবার আগেই ওহি নাজেল হয়ে গেল। তিনিও সেই শৈশব থেকেই দাগমুক্ত।
কিন্তু উমারের (রাঃ) জীবনী উত্থান পতনে ভরা। ঠিক যেকারনে তিনি আমার কাছে সবচেয়ে বেশি আকর্ষনীয়। তিনিই শ্রেষ্ঠ উদাহরণ, মানুষ ইচ্ছা করলে কতখানি বদলাতে পারে।
মক্কার শ্রেষ্ঠ কুস্তিগীর হজরত উমার (রাঃ) আর বাকিসব পেগান আরবদের মতই নবীজির (সঃ) ধর্মপ্রচার বিরোধী ছিলেন। মদ, জুয়া, নারী আসক্তি এমন কোন বদভ্যাস ছিল না যা তাঁর ছিল না। এক রাতে বন্ধু বান্ধবদের নিয়ে একসাথে মদ খাবেন বলে বের হন। কিন্তু কোন বন্ধুকেই বাড়িতে না পেয়ে ঠিক করলেন একবার কাবা ঘরটা ঘুরে আসা যাক।
কাবার সামনে গিয়ে শুনেন কেউ একজন গুনগুন করে কিছু একটা আবৃত্তি করছে।
অন্ধকারে সামনে এগিয়ে দেখেন মুহাম্মদ (সঃ)!
উমারের (রাঃ) হাত নিশপিশ করে উঠলো। এই সুযোগ! বহুৎ যন্ত্রনা করছে এই লোকটা। আজকেই এর থেকে নিস্তার পাওয়া যাক।
তিনি এগিয়ে গেলেন। কিন্তু কুরআনের আয়াতগুলো শুনে থমকে গেলেন। তাঁর কলিজা কেঁপে উঠলো। এই নিয়ে পরে কোন একদিন আরও বিস্তারিত বর্ণনা করা যাবে। মোট কথা, মক্কার শ্রেষ্ঠ বীর উমার (রাঃ) কুরআনের মাত্র কয়েকটা বাক্য শুনেই ভয় পেয়ে পালিয়ে গেলেন। নবীজি তখন এর কিছুই জানেন না।
এর কিছুদিন পরেই তাঁর ইসলাম গ্রহনের ঘটনা সবাই জানেন। সেটা আর বিস্তারিত বলছি না। তবে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেই বলেছিলেন, "মক্কার মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত গুজব ছড়ানো লোকটা কে?"
সাহাবীরা একজনের নাম বললেন। উমার(রাঃ) তার বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হয়ে বললেন, "শুনে নাও, এবং পারলে সবাইকে জানিয়েও দাও, উমার ইবনে খাত্তাব (রাঃ) মুহাম্মদের (সঃ) ধর্ম গ্রহণ করেছে। আজ থেকে সেও মুসলিম।"
তারপর আবার নবীজির(সঃ) কাছে ফিরে এলেন। মুসলিমরা তখন এক সাহাবীর বাড়িতে লুকিয়ে নামাজের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। উমার(রাঃ) বললেন, "ইয়া রাসুলাল্লাহ (সঃ)! আমরা কী সঠিক পথে নেই?"
নবীজি (সঃ) জবাব দিলেন, "নিশ্চই।"
"তাহলে আমরা লুকিয়ে লুকিয়ে কেন নামাজ আদায় করবো? চলুন কাবা ঘরে গিয়ে নামাজ পড়ি। আমিও দেখি, কে বাঁধা দিতে আসে।"
মুসলিমরা সুশৃঙ্খলভাবে দুইটা লাইন তৈরী করে বেরিয়ে এলেন। এক লাইনের সামনে হামজা (রাঃ) আরেক লাইনের মাথায় উমার(রাঃ)। আবু জাহেলের মাথায় হাত। ওদের বাঁধা দিবে এমন বীর কে আছে মক্কায়?
সেই প্রথম প্রকাশ্যে আজান হলো, প্রকাশ্যে নামাজ হলো।
বলছিলাম খলিফা উমারের (রাঃ) কথা। আমিরুল মু'মিনীন। যিনি মৃত্যুর আগেই বেহেস্তের সুসংবাদ পাওয়া দশ সৌভাগ্যবানদের একজন। বয়স বেড়েছে, চুল-দাড়ি পেকেছে, তবু বীরত্ব এতটুকু হ্রাস পায়নি। তিনি তখনও মক্কার শ্রেষ্ঠ বীর। এবং এখন তাঁর হাতে ক্ষমতাও আছে। অথচ সেই তিনিই মোনাজাতে বসলে শিশুদের মতন হাউমাউ করে কাঁদতেন।
এক সাহাবী জিজ্ঞেস করলেন, "ইয়া আমিরুল মু'মিনীন! আপনি এইভাবে কাঁদেন কেন?"
তিনি তখন জবাবে বলেন, "আমিই এখন ইসলামি রাষ্ট্রের সম্রাট। আমার সাম্রাজ্যে যদি একটি কুকুরও না খেয়ে মরে, তবে আল্লাহর কাছে আমাকে জবাবদিহি করতে হবে। আমি সেদিন কী জবাব দেব?"
তিনি উটের পিঠে চড়ে কোথাও গেলে কিছুক্ষণ পরে উট থেকে নেমে এতক্ষণ উটের রশি ধরে টানা দাসটিকে উটে চড়িয়ে নিজে দড়ি ধরে টানতেন। "ইসলামের দৃষ্টিতে সব মানুষ সমান।"
তিনি রাতের আঁধারে ছদ্মবেশে প্রজাদের খোঁজ নিতে বেরিয়ে যেতেন। বিভিন্ন প্রজার বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখতেন সবাই ন্যায় বিচার পাচ্ছে কিনা। না পেলে পরেরদিনই তাঁকে ন্যায় বিচার পাইয়ে দিতেন।
এক্ষেত্রে তাঁর ফলসফি ছিল স্পষ্ট।
"তোমাদের প্রতি কেউ জুলুম করলে তোমরা সরাসরি আমার কাছে এসে বিচার দিবে। আমি তার বিচার করবো। আর যদি আমি তার বিচার না করি, তার মানে, সেই অন্যায়ে আমিও শরিক হলাম। আল্লাহ তখন আমার বিচার করবেন।"
যেকারনে আমরা দেখতে পাই যখন তাঁর হাতে জেরুসালেমের পতন ঘটলো, তিনি তখনকার বিধর্মী খ্রিষ্টান ও ইহুদিদের ডাকিয়ে এনে বললেন, "তোমাদের উপাসনালয়ে তোমরা অবাধে উপাসনা করতে পারো। যদি কেউ বাঁধা দেয়, আমাকে সরাসরি বলো। আমি তাঁর বিচার করবো।"
এতগুলো ঘটনা বললাম আজকের বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে।
দেশের ভিআইপিরা রাস্তা বন্ধ করে আইনের তোয়াক্কা না করে রাস্তার রং ওয়ে দিয়ে নির্লজ্জের মতন গাড়ি হাকিয়ে চলে যান। "চাকরকে উটে চড়িয়ে নিজে রশি টানা" এদের দ্বারা অসম্ভব একটি ব্যপার।
দেশের মানুষ পিপড়ার মতন মারা যাচ্ছে, আমাদের শাসকদের কোনই টেনশন নেই। বিচার চাইতে গেলে বিচার পাওয়া যায় না। উমারের (রাঃ) মতে, তারাও সেই অন্যায়ে একইভাবে দায়ী।
উপরের যুক্তিতে আপনি একমত? এতটুকু পড়ে দিলেনতো দেশের সব রাজনীতিবিদদের গালি?
এখন দেখা যাক আপনি কতখানি লাইনে আছেন।
আপনার বাড়িতে কাজ করতে আসে যে ছোট মেয়েটি, অথবা আপনার বাজার করে দেয় যে ছেলেটি, তার প্রতি আপনি কতখানি জাস্ট? বিশেষ করে ইসলাম যেখানে বলে আপনি যে কাপড় পড়বেন, সেই একই মানের কাপড় তাকেও পড়াবেন। যে থালে খাবেন, সেই একই থালে তাকেও খেতে দিতে হবে। আপনি ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে টিভি দেখবেন এবং সে মেঝেতে (কার্পেটেও না, যদি কার্পেট নোংরা হয়ে যায়!) বসে থাকবে, এমনটা ইসলাম অনুমোদন করেনা। বহুব্রীহি নাটকে হুমায়ূন আহমেদ সোবহান সাহেবকে দিয়ে বাড়ির কাজের লোকদের ডাইনিং টেবিলে বসিয়েছিলেন বলে দেশে রায়ট লেগে গিয়েছিল। লেখককে ফোন করে "বিশিষ্টজনেরা" গালাগালি করতেন।
ইসলাম খুবই "বর্বর" একটা ধর্ম, তাই না? আশাও করিনা আমরা কাজের লোকেদের সাথে এমন সদাচরণ করবো। তবে, কিছু মনবতাতো আমরা দেখাতেই পারি।
এক বান্ধবীর সাথে নিউমার্কেট এলাকায় দেখা হয়ে গিয়েছিল। বিরাট দল বেঁধে শপিংয়ে বেরিয়েছে। গাউসিয়ায় গেলে মেয়েদের এমনিতেই মাথা নষ্ট হয়ে যায়। চোখের সামনে যা দেখে তাই কিনে ফেলে। তাদের বিরাট বিরাট শপিং ব্যাগের বোঝা বইবার দায়িত্ব কার উপরে পড়লো? অবশ্যই কাজের ছেলের। বয়স খুব বেশি হলে দশ হবে।
বান্ধবী নিজে তাগড়া, তাঁর সঙ্গী সাথীরাও প্রমাণ করে দেশে মাশাল্লাহ কোন খাদ্যাভাব নেই। এরা অনায়াসেই নিজেদের ব্যাগ নিজেরাই বহন করতে পারতেন। কিন্তু ছোট কাজের ছেলেটাকেই সব কাজ করতে হবে।
বাড়িতে কিছু পাওয়া যাচ্ছে না? নিশ্চই চুরি হয়েছে। এবং চুরিটা করেছে কে? অবশ্যই কাজের লোক। শুরু হয়ে গেল চড়, থাপ্পর। কিছু সাইকো সিগারেটের ছ্যাকা বা গরম খুন্তির ছ্যাকা দিয়ে কথা বের করার চেষ্টা করেন। তারপর যখন আলমারির চিপায় অথবা অন্য কোথাও সেই জিনিস পাওয়া যায়, তখন একটা "স্যরি" পর্যন্ত বলা হয়না। ওরা ছোটলোকের জাত, ওদের কাছে স্যরি কিসের?
কিন্তু সেই একই বাড়ির কর্তা, যিনি অফিসে কাজ করেন, তাঁর বসও কী তাঁর সাথে সভ্য আচরণ করেন?
"টার্গেট মিট করতে পারেন নাই কেন? সারাদিন অফিসে বসে ডিম পাড়েন? পয়সা দিয়ে আমি কী গাধা পুষছি? পাছায় লাত্থি দিয়ে অফিস থেকে বের করে দিব।......"
দেশীয় বসদের মুখ নিঃসৃত এমন বাণীর খবর প্রায়ই শুনি। অফিসের সবার সামনে একজন সহকর্মীকে অপমান করতে এদের বিবেকে বিন্দুমাত্র বাঁধে না। আর কোন লুচ্চা কলিগের বিরুদ্ধে কোন মেয়ে যদি সেক্সুয়াল হেরাসমেন্টের মতন সিরিয়াস অভিযোগ নিয়ে আসেন, তাঁকে কী শুনতে হয়?
"অ্যাডজাস্ট করে নিন। ছোটখাট বিষয়ে ধৈর্য্যহারা হলে চলে?"
এরা নিজেদের অধীনের দুই চারজন মানুষের প্রতিই ন্যায়পরায়ণ হতে পারেনা। গালি দিতে আসে দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের।
দেশের রাষ্ট্রপ্রধান আপনার আমার মতই মানুষ। আসেন, আমরা নিজেদের বদলাই। দেশ নিয়ে তাহলে চিন্তা করতে হবেনা। সে আপনাতেই পাল্টে যাবে।
১৬ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:২৪
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ!
২| ১৬ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:৩৮
ফ্লাইং সসার বলেছেন: সহমত
১৭ ই জুলাই, ২০১৫ ভোর ৪:২৬
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ!
৩| ১৬ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:৫০
কিঙ্ক১২৩ বলেছেন: হ ভাই, আমাকে আগে ঠিক হতে হবে। তারপর বাকীরা .
১৭ ই জুলাই, ২০১৫ ভোর ৪:২৬
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন:
৪| ১৭ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ৮:০৭
মন্জুরুল আলম বলেছেন: আপনার কথাগুলো যদি আমরা বুঝতে পারতাম.......
১৮ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ২:৩২
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: পারবেন, একজন দুইজন হলেও পারবেন। আস্তে আস্তে হলেও চলবে।
©somewhere in net ltd.
১| ১৬ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:১৭
ইমরান আশফাক বলেছেন: একমত।