নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
কোরবানি হওয়া উচিৎ স্রেফ আল্লাহকে উদ্দেশ্য করে। "আল্লাহ শ্রেষ্ঠ" সেটা প্রমান করতে নয় - বরং এটাই নিয়ত থাকতে হয় যে, আল্লাহর চেয়ে প্রিয় আমার কাছে আর কোন কিছু হতে পারেনা। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন এই দিনে পশু জবাই করে উৎসব পালন করতে, আমি উৎসব পালন করবো। টাকা পয়সা বা বাড়ির প্রিয় গবাদি পশু কোরবান হয়ে যাচ্ছে, ম্যাটার করেনা। যিনি দেনেওয়ালা, তিনিই দিবেন। না দিলেও অসুবিধা নাই।
বড় পশু, দামী পশু, কমদামী পশু ইত্যাদি এখানে মূখ্য বিষয় নয়। মূল বিষয় হচ্ছে নিজের ভিতরের পশুকে কোরবান করা। পশুর গলায় ছুরি চালানোরও আগে আমাদের নিজেদের বাজে অভ্যাস, যেমন মিথ্যা বলা, ঘুষ খাওয়া, পরচর্চা ইত্যাদি থেকে শুরু করে যেকোন ছোট বড় বদভ্যাসের গলায় ছুরি চালাতে হবে। শপথ নিতে হবে - যা করার করেছি, আর এইসব না। আজকে থেকে আমি পবিত্র মানুষ।
ভাল হওয়া আসলেই সহজ, শুধু একটু চেষ্টা নিলেই হয়। মন্দ হতেই বরং অনেক কসরত করা লাগে।
আগেও এক লেখায় বলেছি, আবারও বলি, পশু হত্যা করাটা এখানে নেগেটিভ অর্থে দেখার কিছু নেই। আমরা নিজেরা বাঁচার জন্য প্রতিদিন কয়েক লক্ষ গরু ছাগল মেরে ফেলছি। কোরবানির ঈদের মাংসও খাওয়া ছাড়া অন্য কোন কাজে ব্যয় হয়না। আমাদের এমন কোন ধর্মীয় আচার নেই যে আল্লাহর উদ্দেশ্যে এক ভাগ মাংস বা সামান্য এক টুকরা মাংসও ফেলে দিতে হবে। পশুর যাবতীয় মাংস আমাদেরই খাবার জন্য, ঠিক যেমনটা আমরা অন্য সময়ে মাংস খাই। একে আমি কাবাব বানালাম, না স্টেক বানালাম, না ভুনা বা শুটকি করে খেলাম সেটা আমার উপর। এখানে বিতর্কের কোনই অবকাশ নাই।
তবে, কোরবানির সবচেয়ে বড় মাহাত্ম্য হচ্ছে আমরা এর তিন ভাগের দুইভাগই দান করে দেই। অন্য সময়ে আমরা যে মাংস খাই, তখন কতটুকু দান করি? আপনি যদি নিজে প্রতিবার বাজার থেকে কেনা মাংসের তিনভাগ করে এক ভাগ নিজের জন্য রেখে বাকি দুইভাগ বিলিয়ে দেন, তাহলে আমার কোন কথা নাই। আর যদি তা না করে নিজের জন্যই রাখেন, যেটা অত্যন্ত স্বাভাবিক মানব চরিত্র, সেইক্ষেত্রে কোরবানির বিরুদ্ধে কোন কথা বলতে না যাওয়াই ভাল। কারন, একমাত্র হাড় কিপ্টা মানুষ বা পিওর ভেজিটেরিয়ান ছাড়া কারোরই কোরবানী নিয়ে আপত্তি করার কথা না। এক লাখ টাকার গরুর ৬০ হাজার টাকার মাংসই দান করে দিচ্ছি - কৃপণদেরতো কলিজা ছিড়ে ফালাফালা হয়ে যাওয়ার অবস্থা! তারাই তখন লাফালাফি করে, "ইহা অমানবিক। ইহা ব্লাসফেমি! ধর্মের নামে ইহা অনাচার।"
অথচ নিজে বিয়েবাড়িতে গিয়ে বাটি ভর্তি মাংস খেতে খেতে কলেস্তরল হাই করে ফেলে - তখন মানবতা কই যায়? পশুকি তখনও হত্যা করা হয়না?
তিনভাগের এক ভাগ মাংস আমরা নিজে খাই। এক ভাগ পায় আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশী। আরেকভাগ পায় ফকির মিসকিনগণ।
আমাদের দেশে আমরা করি কি, হাড্ডিগুড্ডি ও যেসব মাংস আমরা খাইনা, ফকিরদের সেসবই দান করি। যুক্তি চমৎকার, "ওরা জীবনেও মাংস খায় নাকি যে মাংসের ভাল মন্দ বুঝতে পারবে? ওদের যে এটা দিচ্ছি - এই যথেষ্ট।"
এখানেই সমস্যা। দান করে ওদের আমরা ফেভার করছি না। ওদের দেয়াটা আমার উপর আল্লাহর নির্দেশ। কাজেই এইটা তাদের অধিকার। এবং তাদের হাড্ডি ও বাজে মাংস দিয়ে আমি প্রত্যক্ষভাবে তাদের ঠকাচ্ছি।
এরপর আসে আত্মীয়ের পালা। এখানেও দেখা যায় যারা খুব কাছের আত্মীয়, আমরা তাঁদের ভাগেই ভাল মাংস দেই। দূরের আত্মীয়, বা যাদের আমরা খুব একটা পছন্দ করিনা, তাঁদের ভাগে পড়ে হাড্ডিওয়ালা মাংস, মাংসওয়ালা হাড্ডি নয়। এখানেও ডিসক্রিমিনেশন। এবং তারচেয়ে বড় কথা, কোন আত্মীয়ই আমার নিজের জন্য রাখা মাংসের সমান কোয়ালিটির মাংস পায়না। এখানেও বৈষম্য।
এ থেকে বাঁচার আমার একটা আইডিয়া আছে, যা আমি নিজে অ্যাপ্লাই করি। দেখেন পছন্দ হয় কিনা।
বিদেশে আমাদের একটা সুবিধা আছে। বিভিন্ন দোকান আমাদের হয়ে র্যাঞ্চে পশু কোরবানি দেয়। তারপর আমাদের ভাগের মাংস বক্সে ভরে আমাদের বুঝিয়ে দেয়। আমি করি কি, দোকানেই মাংস তিনভাগ করে ফেলি। এক ভাগ গরিবকে দেই, একভাগ কোন আত্মীয়কে দেই, আরেকভাগ নিজের জন্য রাখি। নিজেও জানিনা আমার বক্সে কেমন মাংস পড়ছে। কাজেই নিজের কাছে অন্তত পরিষ্কার থাকি, আমি আসলেই আল্লাহকে খুশি করতে কোরবানী করেছি, তাঁর নির্দেশ মতই ভাগ করে বিলিয়ে দিয়েছি।
বাকি আল্লাহ ভরসা।
* মহা পবিত্র হজ্বে পদদলিত হয়ে ৭০০+ হাজির মৃত্যুর ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। কিছুদিন আগেই ক্রেন দুর্ঘটনায় একশোর বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। তখন "মারহাবা! বেহেস্তবাসী! বেহেস্তবাসী!!" বলে সবাই ছাড় দিয়ে দিয়েছি। এইবার আমার মনে হয় সৌদি হজ্ব কমিটিকে একটু ঝাকুনি দেয়া উচিৎ, জানোই যখন ২০লক্ষ মানুষ হজ্বে আসবে, এমন ঘটনা ঘটবেই। তাহলে তোমরা কেন সাবধানতাবশত ব্যবস্থা নিলে না? টাকাতো তোমাদের কম নেই, কাবা ঘরের গিলাফের পেছনে পাঁচ মিলিয়ন ডলার খরচ না করে হাজ্বীদের নিরাপত্তার দিকে জোর দেয়াটা উচিৎ ছিল না? আল্লাহ বা রসূল বলেননি কাবা ঘরকে সোনা দিয়ে মুড়িয়ে দিতে, বরং বলা হয়েছে হাজ্বী ব্যক্তি মাত্রই আল্লাহর অতিথি। সেই অতিথিদের তোমরা এইভাবে মরতে দিলে?
সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা। এবং নিহত হাজ্বীদের গুনাহ আল্লাহ মাফ করে জান্নাতবাসী করুন। আমাদের সবাইকে, যাঁরা হজ্ব করতে চান, হজ্ব আদায় করার সৌভাগ্য দান করুন।
©somewhere in net ltd.