নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

আজ তাজিয়া মিছিলে হামলা তো কাল বায়তুল মুকাররমে?

২৭ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:২৬

সেপ্টেম্বরের এগারো তারিখ অ্যামেরিকায় যখন হামলা হলো, তখন দাঁত ক্যালিয়ে হাসতে থাকা কিছু বাঙালির নিকটাত্মীয় ময়মনসিংহের সিনেমা হলের বোমা হামলায় নিহত হলেন।
ফিলিস্তিন-সিরিয়ার শিশুদের মরতে দেখে যারা চোখ বন্ধ করে মজা উপভোগ করেন, তাদের জন্যই ফেলানিদের বারবার মরে গিয়ে কাটাতারের বেড়ায় ঝুলতে হয়।
মুম্বাই-করাচি-পেশোয়ারে বোমা হামলায় যারা বিমলানন্দ পান, তাদের জন্যই রামুতে মন্দির ভাঙ্গা হয়, পূজা মন্ডপে হামলা হয় এবং এখন তাজিয়া মিছিলেও বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
একটি অপরাধ, সেটা আমার শত্রুর বিরুদ্ধে ঘটলেও অপরাধই থাকে। সেটাকে প্রশ্রয় দিলে একদিন সেটা আমার সাথে ঘটতে বাধ্য।
তারপরেও আমাদের টনক নড়ে না। আমরা ব্যস্ত কার ঘাড়ে দোষ চাপানো যায় সেটা নিয়ে।
আমি দুঃখিত কন্ঠে যাকেই বলছি, "শুনেছেন, হোসেনী দালানে বোমা ফেটেছে..."
আমার কথা শেষ করার আগেই বাঙালি নিজের পরিচয় তুলে ধরায় ব্যস্ত হয়ে যায়।
আওয়ামী সমর্থক বলে দেন, "খুনি খালেদার কাজ! এই মহিলাটা দেশ বর্বাদ করে দিল।"
বিএনপি সমর্থক বলছেন, "সরকার এই কাজ করে এখন বিএনপির উপর চাপানোর চেষ্টা করছে।"
শিয়ারা চোখ বন্ধ করে সুন্নিদের দোষ দিচ্ছে, তো সুন্নিরা ইতিহাস ঘাটাঘাটিতে ব্যস্ত যে কেন খলিফা আলীর (রাঃ) আগে তিন খলিফার সিলেকশন জাস্টিফায়েড ছিল।
এইদিকে কয়েকটা ডিটেকটিভ গল্প পড়েই নিজেকে শার্লক হোমস ভাবা লোকজন বলছেন, "বুঝলেন না, এইসব ঐ মালাউনদের কাজ। শিয়াদের মিছিলে বোমা ফাটিয়েছে যাতে শিয়া সুন্নি দাঙ্গা লেগে যায়। মুসলমান মুসলমান কাটাকাটি করে মরবে, দেশটা তখন কারা শাসন করবে?"
জনাবের এই প্রশ্নে উত্তর খুজার রুচিও হয়না।
দুঃখজনক হচ্ছে, একজনকেও দেখছি না বলতে, "এর সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ তদন্ত হোক, এবং হামলাকারীর কঠোর থেকে কঠোরতর বিচার কার্যকর হোক।"
কাউকে দেখলাম না "মানুষ" মরার জন্য দুঃখিত হতে। আমরা ব্যস্ত কে শিয়া, কে সুন্নি, কে হিন্দু, কে বিদেশী ইত্যাদি ক্যাটাগরিতে বিভক্তি নিয়ে।
কেউই উপলব্ধি করিনা, স্প্লিন্টারে ছিন্ন হওয়া মৃতদেহটি কারও না কারও সন্তান, কারও না কারও পিতা। আমরা নিজেদের বাচ্চার সামান্য সর্দি কাশিতে অস্থির হয়ে যাই - আর অন্যের ক্ষেত্রে শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ খুঁজি!
এইবারে একটা ঘটনা বলি। প্রাসঙ্গিক বলেই মনে হচ্ছে।
অ্যামেরিকার সবচেয়ে ভয়াবহ এবং নৃসংশ অপরাধ চক্রের নাম "আরিয়ান ব্রাদারহুড।" অ্যামেরিকায় এমন কোন মানুষ পাওয়া যাবেনা যে এই দলটি সম্পর্কে জানে এবং তাদের ভয় পায় না।
এই সংগঠনটির যাত্রা শুরু হয় সত্তুরের দশকে, ক্যালিফোর্নিয়া জেলের ভিতরে এবং এখনও জেলের ভিতরেই এদের বেশিরভাগ অপারেশন চালিত হয়। তবে শংকার কথা, পুরো অ্যামেরিকা জুড়েই এদের জাল ছড়িয়ে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি সপ্তাহে কেউ না কেউ জেলের ভিতরে নিহত হয়, সেটা কোন দাগী আসামী হোক, কিংবা সিকিউরিটি গার্ড - এবং দেখা যায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এর পেছনে আরিয়ান ব্রাদারহুডের হাত থাকে। অন্যান্য আসামীদের তুলনায় ফাজিলগুলির পার্সেন্টেজ ১ ও না, তারপরেও ২০% এরও বেশি অপরাধ (বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই খুনাখুনি) এরাই করে থাকে - এবং অবশ্যই জেলের ভিতরে, কড়া নিরাপত্তা সত্ত্বেও।
এদের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে নৃসংশতা। এমনভাবে খুন করবে যাতে অন্যান্যদের জন্য সেটি উদাহরণ সৃষ্টি করে। পুলিশদের মতে, "আমরা প্রতিদিনই খুন খারাবি হতে দেখি। আমরা এসবে অভ্যস্ত। কিন্তু আরিয়ান ব্রাদারহুডের নৃশংসতা আমাদেরও আত্মা কাঁপিয়ে দেয়।"
জেলের বাইরেও এরা সমানভাবে সক্রিয়। কেউ কোন অপরাধ করলে তাকেতো মারেই, সাথে উদাহরণ সৃষ্টি করার জন্য তার জ্ঞাতি গুষ্ঠী যে যেখানে আছে, সবাইকে সাফ করে দেয়। এবং সেটাও নৃসংশ থেকে নৃসংশতম উপায়ে। ইটালিয়ান মাফিয়াদেরই অ্যামেরিকান সংস্করণ।
পুলিশ কী করবে? ওদের সব নেতারা যে এমনিতেই জেলে আছে। ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিবে? মানবাধিকার কর্মীরা তখন ইনানো বিনানো শুরু করে।
"একটা লোককে মেরে ফেলা হবে? ওরা পশু হতে পারে, আমরাতো মানুষ। আমরা একবিংশ শতাব্দিতে বাস করি......"
তা এই ভয়াবহ আরিয়ান ব্রাদারহুডের জন্ম হলো কিভাবে?
স্রেফ আত্মরক্ষার খাতিরে।
অ্যামেরিকার জেলের অলিখিত সংবিধান বলে, "কখনই নিজের জাতের বাইরের লোকেদের সাথে মেলামেশা করবেনা।"
এখানে জেলের ভিতরে ম্যাক্সিকানদের বিরাট গ্যাং থাকে, কালোদের বিরাট গ্যাং থাকে, সাদাদের তেমন কিছু ছিল না। কাজেই দেখা যেত প্রায়ই অন্যান্য গ্যাংয়ের পোলাপান সাদা অপরাধীদের ধরে ধরে বুলি করছে। কোণঠাসা হয়ে পড়া সাদা অপরাধীরা মাথা সোজা করে দাঁড়াতেই এই গ্যাংয়ের জন্ম দিল। এবং এখন যে যত বড়ই বাপের ব্যাটা হোক না কেন, জেলের ভিতরে ওদেরকে সবাই সমীহ করে চলে। ব্রাদারদের চোখে ওরা কিন্তু হিরো, একজন সাবেক মেম্বারের মতে, "আমি দলের জন্য যা করেছি, কয়েক শতাব্দী আগে হলে আমাকে নাইটহুড দেয়া হতো।"
এখন কথা হচ্ছে, এক সম্প্রদায়ের উপর হামলা করার পর সেই সম্প্রদায়ের কেউ যদি প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে উঠে, এবং "আত্মরক্ষার খাতিরে" হিংসার পথ বেছে নিয়ে অপর সম্প্রদায়ের উপর হামলা চালায়, তাহলে কী আমরা কেয়ামত ঠ্যাকাতে পারবো?
নেলসন ম্যান্ডেলার জীবনের সাতাশটা বছর কেড়ে নেয়া হয়েছিল তাঁর গাত্র বর্ণ কালো ছিল বলে। নিজের মা, নিজের ছেলের মৃতদেহও তাঁকে দেখতে দেয়া হয়নি। জেলের ভিতরেও প্রতিদিন অত্যাচার সহ্য করতে হতো। সাদাদের অত্যাচার থেকে বাদ যায়নি তাঁর স্ত্রী কন্যাও। বাইশ বছর তিনি তাঁর স্ত্রীর হাত স্পর্শ করতে পারেননি।
তারপরেও তিনি তাঁদের ক্ষমা করেছিলেন। তাঁর সিদ্ধান্তের সাথে তাঁর স্ত্রীর সম্মতি ছিল না, তিনি সাদাদের ক্ষমা করতে পারেননি এবং প্রতিশোধ চেয়েছিলেন, ফলাফল ডিভোর্স - তারপরেও ম্যান্ডেলা শান্তির পথ থেকে সরে আসেননি। কারন বেঁচে থাকতে হলে শান্তির যে আর কোন বিকল্প নেই। প্রতিশোধের আগুনে ফুটতে থাকা কালো আফ্রিকান যোদ্ধাদের তিনি বলেছিলেন, "যদি আমি ওদের ক্ষমা করতে পারি, আপনারাও পারবেন।"
আমাদেরও এখন বলা উচিৎ। যথেষ্ট হয়েছে। বন্ধ হোক এইসব বোমাবাজি। জয় হোক শুধুই তাঁদের যারা মধ্যরাতে লাগাতার বিস্ফোরণের শব্দেও ভয় না পেয়ে আহত মানুষদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। মোটর সাইকেল, রিক্সা-সিএনজি বা কোলে করে হলেও তাঁদের হাসপাতালে পৌছে দিয়েছিলেন।
তাঁরা আমলে নেননি আহত হওয়া লোকটা শিয়া, নাকি সুন্নি, নাকি মূর্তি পূজা করা হিন্দু। মানুষের কষ্টে তাঁদের বুক কাঁপে। মানুষকে মানুষ হিসেবেই তাঁরা দ্যাখে।
আমার বাংলাদেশ এই সমস্ত লোকেই ভর্তি। এদের শুধু জেগে উঠতেই দেরী।
তাই যাই ঘটুক না কেন, আমার বাংলাদেশকে নিয়ে আমি সবসময়েই গর্বিত ও আশাবাদী।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১২:২৯

নূর আল আমিন বলেছেন: এমন দেশটি কোথাও খুজে পাবে নাকো তুমি. . . . ?

২| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৮:০৫

বিপরীত বাক বলেছেন: আমার বাংলাদেশ এই সমস্ত লোকেই
ভর্তি।


এসব লোক বা মানুুষ না এরা বাঙালি।

৩| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১:৩৯

আমিনুর রহমান বলেছেন:



আমরা সবাই যদি এভাবে ভাবতে শুরু করি তাহলে হয়ত খুব বেশী সময় লাগবে না দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ভালো হতে।
এই লোকগুলোর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা যারা মানুষকে মানুষ মনে করে কে শিয়া, নাকি সুন্নি, নাকি মূর্তি পূজা করা হিন্দু মনে করে না।

প্রতিহিংসায় লিপ্ত হয়ে যেনো আর কোন আরিয়ান ব্রাদারহুড বা আইএস এর মতো সন্ত্রাসী গোষ্ঠি গড়ে না উঠে সেই আশা করি।

পোষ্টে +

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.