নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
প্রতি রমজান মাসে ইজরায়েলিরা গাজ্জায় গণহত্যা চালায়, এবং শুধু তখনই ফিলিস্তিনিদের জন্য আমাদের প্রাণ কেঁদে উঠে। আমরা তখন ফেসবুকে নানান ধরনের ক্যাম্পেইন চালাই।
"কোকাকোলা একটি ইহুদি কোম্পানি, আজ থেকে কোক খাওয়া নিষেধ।"
"নেসলে একটি ইহুদি কোম্পানি, আজ থেকে "নেসলে পণ্য, বর্জনে হবো ধন্য।""
কেউ কেউ পেপসি খাওয়াও বন্ধ করে দেন। কারন কোন এক আহাম্মক তাদের বলেছিলেন PEPSI মানে হচ্ছে "পে ইচ পেনি টু সেভ ইজরায়েল।"
বলে রাখা ভাল, পেপসি নাম এসেছে পেপসিন নামের এক এনজাইম থেকে যা পেপসির রেসিপির একটি উপাদান। ইজরায়েলের সাথে কোনই সম্পর্ক নেই।
এবং আমরা কথা ছাড়া অ্যামেরিকাকে গালাগালি করি। বলি, এই ফাজিলটার জন্যই ইজরায়েল আজ এত শক্তিশালী। নাইন ইলেভেন ঘটলে পরে আমরা উল্লাসে ফেটে পরি। এবং যারা সামনা সামনি কিছু বলতে দ্বিধা বোধ করি, তারা ইনিয়ে বিনিয়ে বলি, "ব্যপারটা উচিৎ হয়নি মানছি, কিন্তু ফিলিস্তিনে যে প্রতিদিন হাজারটা নাইন ইলেভেন ঘটছে - সেটার কী হবে?"
ভায়োলেন্সকে ভায়োলেন্স দিয়ে জাস্টিফাই করার যুক্তি, অন্ধকারকে অন্ধকার দিয়েই দূর করার হাস্যকর চেষ্টা!
সবচেয়ে ভয়াবহ যে ব্যপারটা ঘটে সেটা হচ্ছে, কেউ কেউ অতি চেতনায় চেতীত হয়ে মরহুম জনাব হিটলার সাহেবকে “রহমতুল্লাহ আলাইহি” বানিয়ে দেন। তার মহান বাণী ফেসবুকের ওয়ালে ওয়ালে হাদিসের মতন পোস্ট হয়, "আমি ইচ্ছা করেই কিছু ইহুদি ছেড়ে দিয়েছি যাতে পৃথিবী বুঝতে পারে আমি কেন ওদের মেরেছিলাম।"
আমার নিজের দেশের মানুষের যে স্বভাবটা আমাকে সবচেয়ে বেশি দুঃখিত করে সেটি হচ্ছে, কিছু চিন্তা ভাবনা না করেই হাওয়ায় পাল তুলে ধরে। শুধুমাত্র নাম দেখেই আমরা বলি, "ওতো শালা একটা মালাউন, রেন্ডিয়ার দালাল। রেন্ডিয়া তার পাছায় কষে লাথি দিলেও মুচকি মুচকি হাসবে।"
কিংবা "ঐ ব্যাটাতো একটা ছাগু, পাইক্যা দালাল। মা বোন বেচে দিবে, তবু প্যায়ারা মুলকের নামে একটা কথাও উচ্চারণ করবে না।"
আমরা প্রতিটা মানুষকে আলাদা আলাদা কাজের জন্য আলাদা আলাদা করে বিচারই করতে শিখি নাই।
তাই ইজরায়েলের আগ্রাসনকে যখন তামাম বিশ্বের জনগনের সাথে সাথে আমাদের দেশের লোকজনও "ইহুদি-মুসলিম জিহাদ" নাম দেয়, এবং ইসলামের নামে যে কোন জঙ্গিবাদকে হালাল করার চেষ্টা করে, তখন আর অবাক হতে হয়না। এটাইতো স্বাভাবিক।
এবং তখন বেশ অবাক হয়ে দেখি একদল ইসলামোফোবিক রাম ছাগল রামাল্লায়, গাজ্জায় ইজরায়েলি আগ্রাসনে নিহত শিশুদের ছবি দেখে উল্লসিত হয়। বলে, "ঠিকই আছে, এদের মরাই উচিৎ।"
এরা এইসব নিরপরাধ শিশুদের আমাদের দেশের রাজাকার সমর্থকদের সাথে গুলিয়ে এক করে ফেলে! কী মর্মান্তিক!
আমরা জেনারালাইজেসনের বাইরে কিছু চিন্তাই করতে পারিনা। যেকারনে আমাদের ইতিহাসের পৃষ্ঠাগুলো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় রাঙ্গা। ভারতে একদল কট্টর হিন্দু বাবরি মসজিদ ভাঙ্গলো, আমরা গিয়ে আমাদের হিন্দু প্রতিবেশীর বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিলাম। অথচ এই লোকটাই একদিন আমার অর্থনৈতিক দুঃসময়ে "আল্লাহর রহমত" হিসেবে এসেছিল। হয়তো তার থেকে ধার নিয়েই আমি আমার বাচ্চাদের ঈদের জামা কিনে দিয়েছিলাম।
কিংবা হয়তো এমন এক বন্ধুর গলায় ছুরি চালিয়ে দিলাম যার সাথে বন্ধুত্বের শুরুটা কবে হয়েছিল আমি নিজেই মনে করতে পারিনা।
ভাগ্য ভাল আমাদের দেশে কোন ইহুদির বাস নেই। থাকলে কবেই স্বপরিবারে সাবার করে ফেলতাম। সে ইজরায়েলের বিপক্ষের লোক হলেও কিছু যেত আসতো না।
অনেকেই নাক সিঁটকে বলবেন, "ইহুদি হয়ে আবার কেউ ইজরায়েলের বিপক্ষে যায় ক্যামনে?"
এবং তখনই বুঝা যায় যে তার কলসি কতখানি খালি, এবং সেটা ঝনঝনিয়ে বাজতে শুরু করেছে।
কথা না বাড়িয়ে বিশ্ব ইতিহাসের কিছু পৃষ্ঠা উল্টানো যাক। দেখা যাক ইজরায়েলের জন্মের সময়কার ঘটনা।
একশ বছর আগে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়নি তখনও, মুসলিম বিশ্বের খলিফা ছিলেন অটোম্যান সম্রাট। খলিফায়ে রাশেদিনের মতন ঝকঝকে চরিত্রের অধিকারী না হলেও তিনিই ছিলেন মুসলিম জাতির (উম্মাহ মানে nation, ইসলাম কেবল একটি ধর্মই নয়, মুসলিমদের একই জাতি বলে বিবেচনা করতে হবে - নবীজির (সঃ) নির্দেশ) নেতা। এবং অটোম্যানদের সাম্রাজ্য কত বিশাল ছিল সেটা একটু কষ্ট করে গুগল করে দেখে নিন।
তাঁর রাজধানী ছিল ইস্তাম্বুল।
এদিকে তখন মক্কার শেরিফ ছিলেন হোসেইন ইবনে আলী, যার যোগ্যতা হযরত মুহাম্মদের (সঃ) ডিরেক্ট বংশধর।
এবং যেটা আমাদের ধর্ম শেখায়, এবং আমরা কখনই মানি না - কারও বাপ দাদার পরিচয় তাঁর চরিত্রের গ্যারান্টি দিতে যথেষ্ট নয়। নবীর বংশের মানুষও পাপ পুন্যের উর্ধ্বে নয়।
এক্ষেত্রেও ঠিক সেটাই ঘটলো। শেরিফ সাহেবের মনে একটি কথা উকি দিয়ে উঠলো, "আমি হচ্ছি নবীর ডিরেক্ট বংশধর। যদি কারও খলিফা হবার যোগ্যতা থাকে, তবে সেটা আমার। আমি কেন অটোম্যান সম্রাটের নিচে থাকবো?"
আসলে ভাবনাটা যে আপনাতেই তাঁর মাথায় চলে এসেছে এমন নয়। লরেন্স অব অ্যারাবিয়া খ্যাত টি.ই. লরেন্সের নাম শুনেছেন? এই “ভদ্রলোকই” শেরিফের কান ভরেছিলেন। কেন? সেই পুরানো ব্রিটিশ রাজনীতি, ডিভাইড অ্যান্ড রুল। বেকুব হিন্দুস্থানিরা হিন্দু-মুসলিম-শিখ কামরাকামরি করে মরলো, ব্রিটিশরা রাজত্ব করলো দুইশো(তখন পর্যন্ত দেরশ) বছর। আরবদেরও সেভাবে ভাগ করে দিলেই কেল্লাফতে।
১৯১৫ সালে যখন অটোম্যান সম্রাট জার্মানির পক্ষে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন, তখন আমাদের শেরিফ সাহেবকে হেনরি মিকম্যান প্রকাশ্যেই লিখিতভাবে জানালেন যে আরবরা যদি ব্রিটিশদের সাহায্য করে, তবে যুদ্ধ শেষে আরবদের স্বাধীনতা দান করা হবে। উল্লেখ্য, আরব অঞ্চল মানে কিন্তু আজকের সৌদি আরব নয়, সমস্ত আরব পেনিন্সুলা। গুগল করে ম্যাপ দেখে নিন। বিশাল!
ব্যস, লেগে গেল গিট্টু। দুই পাঠায় লড়াই করে শিং ফাটালো, আর তাদের ঘিরে দর্শক তালি বাজালো।
এইদিকে ফ্রান্স, রাশিয়া, গ্রেট ব্রিটেন নিজেদের মধ্যেই রুদ্ধদ্বার বৈঠক করে ঠিক করে নিল যে যুদ্ধ শেষে মধ্যপ্রাচ্যের কে কোন ভাগটা নিবে। সাইকস-পিকো (Sykes-Picot) অ্যাগ্রিমেন্ট নামে পরিচিত, গুগল করলেই জানতে পারবেন।
মনে প্রশ্ন আসতেই পারে যে, মিটিং যদি রুদ্ধদ্বারই হয়ে থাকে, তবে ঘরের কথা পরে জানলো ক্যামনে?
এই কাজের সমস্ত কৃতিত্বের দাবিদার আমাদের লেনিন ভাই। অক্টোবর রেভ্যুলুশন করে জারদের পতন ঘটিয়ে মস্কোর সিংহাসন বাগিয়েই তিনি ব্যস্ত হয়ে পড়লেন পৃথিবীবাসীকে জানাতে যে জাররা কতটা দুর্নীতিবাজ ছিলেন। লেনিনের প্রকাশ করা তথ্যেই ব্রিটিশদের দ্বিমুখী নীতি ফাঁস হয়ে পড়লো।
আরবরা তখন কী করলেন? ব্রিটিশদেরই ভরসা করলেন।তাঁরা শুধু আজকের মাথামোটা নয়, মস্তিষ্কে চর্বি সেই শতবর্ষ আগেই জমেছিল।
এইদিকে ব্রিটিশরা লুকিয়ে লুকিয়ে আরেকটা পরিকল্পনা করে ফেলে। জায়নিস্টদের একটি স্বাধীন ভূখন্ড দান করা হবে। ১৮৮০-৯০ দশক থেকেই জায়নিস্ট ইহুদিরা নিজেদের জন্য একটি স্বাধীন ভূখন্ড দাবি করে আসছিল, এতদিনে সেটার পালে হওয়া লাগলো। ব্রিটিশরা চেয়েছিল উগান্ডা অঞ্চলকে জায়নিস্টদের জন্য ছেড়ে দিতে। বিখ্যাত বিলিওনেয়ার, কেমিস্ট ও অ্যাসিটোন (বোমা তৈরির উপাদান) ব্যবসায়ী চেইম ওয়াইজম্যান (ইজরায়েলের প্রথম প্রেসিডেন্ট) স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, "আমার টাকা পয়সার দরকার নেই। আমার জেরুজালেমই লাগবে।"
বিশ্বযুদ্ধ চলছে, টাকার লড়াই। যে যুদ্ধকে যত দীর্ঘ সময়ে ধরে রাখতে পারবে, সেই জিতবে। এবং ইহুদিরা তখন থেকেই মাল্টি বিলিওনেয়ার সম্প্রদায়। ব্রিটিশদের সামর্থ্য ছিল না ওয়াইজম্যানকে অখুশি করার।
ফলে ব্রিটিশদের রাজি হয়ে বলতেই হলো, "ঠিক আছে, জেরুজালেমই তোমাদের দেয়া হবে।" (বেলফোর ডেক্লারেশন ১৯১৭।)
আরবরা এই ঘটনাও জানলো। এবং তারপরেও ব্রিটিশদের কথা শুনে আবারও তাদের বিশ্বাস করলো।
একদিকে আরবদের স্বাধীনতার প্রতিশ্রুতি, অন্য দিকে ফ্রান্স এবং রাশিয়ার সাথে অঞ্চল বিভক্তি নিয়ে গোপন চুক্তি, এবং অন্য দিকে জায়নিস্টদের হাতে ফিলিস্তিন তুলে দেয়ার অঙ্গীকার - সব একই ভূখন্ডকে ঘিরে। সাধে কী আর লোকে এখনও "ব্রিটিশ পলিটিক্স" বলে গালি দেয়?
এই ইস্যুতে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ভোটাভুটি শুরু হয়। একমাত্র ইহুদি সদস্য ছিলেন এডুইন স্যামুয়েল মন্টেগু। তিনি জোরালোভাবে বললেন, "ফিলিস্তিন অঞ্চলে ইজরায়েল প্রতিষ্ঠা করলে মুসলিম ও ইহুদিদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বেঁধে যাবে, যা ঠ্যাকানো অসম্ভব হয়ে উঠবে।"
জ্বী, মন্টেগু একজন ইহুদি ছিলেন, এবং তিনি ভালই জানতেন যে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মুসলিম ও ইহুদিদের মধ্যে সম্পর্ক ছিল দুই আদর্শ প্রতিবেশীর মতন। কট্টরপন্থী খ্রিষ্টানদের থেকে যতবার তারা নিজ দেশ থেকে বিতারিত হয়েছে, প্রতিবারই মুসলিমরা তাঁদের আশ্রয় দিয়েছে।
মন্টেগুর সাথে একমত পোষণ করলেন লর্ড কার্জন, আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের কার্জন ভাই। তিনিও বললেন, "একটি দেশের এতগুলো মানুষকে গায়ের জোরে সরিয়ে দেয়া স্রেফ দাঙ্গাই সৃষ্টি করবে।"
এবং অ্যামেরিকান ইহুদিরাও জায়নিস্টদের এই দাবি প্রত্যাখ্যান করলো। তাঁদের কথা, "আমরা অ্যামেরিকায় আছি, বেশ আছি। শুধু শুধু আরেকটা দেশের কোনই প্রয়োজন নেই।"
বলে রাখা ভাল, আজও জায়নিস্ট মুভমেন্টের সমালোচকদের মধ্যে একটা বিরাট ও শক্তিশালী গোষ্ঠী এই অ্যামেরিকান ইহুদি সম্প্রদায়। আর আমাদের কিনা শিখানো হয় "ইহুদিরা আমাদের জন্মশত্রু!"
এইদিকে অ্যামেরিকা নিজস্ব সমীক্ষা চালালো, যা "কিং ক্রেন কমিশন রিপোর্ট" নামে পরিচিত, যেখানে জনাব কিং এবং জনাব ক্রেন আরব অঞ্চল ঘুরে এসে একই কথাই জানালেন, "কোন অবস্থাতেই সেই অঞ্চলে ইজরায়েল প্রতিষ্ঠা করা উচিৎ হবেনা। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সেখানে যাদের বসবাস, কোন যুক্তিতে তাঁদের বিতারিত করা হবে?"
যাই হোক, চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনী। মন্টেগু, কার্জন, কিং-ক্রেন ভাইদের রিজেক্ট করা হলো। ঠিক হলো জেরুজালেম অঞ্চলেই ইজরায়েল প্রতিষ্ঠিত হবে। তবে সলিড যুক্তি কেউ খুঁজে পাচ্ছিল না।
এইসময়ে তাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন বাঙাল মুল্লুকসহ সারা বিশ্বে সর্বজন শ্রদ্ধেয়, ইতিহাসের সবচেয়ে জঘন্য নরপশুদের অন্যতম, মরহুম জনাব হিটলার সাহেব জার্মানাবাদী।
ফাজিলটা যে হারে ইহুদি মারা শুরু করলো, ব্রিটিশরা সলিড সুযোগ পেয়ে গেল ইজরায়েল প্রতিষ্ঠার, এবং তাদের সামনে আর কারোরই দ্বিমত টিকলো না। তারপরের ঘটনা সবাই জানেন। কিভাবে এককালের জনসংখ্যার ৫% জনতা গায়ের জোরে একটা দেশের দখল নিয়ে নিল। কারা জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের সৃষ্টি করেছিল (The Irgun লিখে সার্চ দিয়ে যা তথ্য পান পড়ে ফেলুন)। ইসলামের নামে হিটলার সমর্থকদের একটা কথা বলে রাখি। আমাদের নবীজি (সঃ) ও তাঁর সাহাবীরা মার খেতে খেতে প্রায় মরতে বসেছিলেন, কেউ কেউ শহীদও হয়েছিলেন, দেশছাড়াও হয়েছিলেন - তবুও অন্যায়কারী কোন নেতার সাথে হাত মেলাননি। "শত্রুর শত্রু আমার মিত্র" টাইপ কথাবার্তা এই যুগে চালু থাকলেও, নবীজির শিক্ষা হচ্ছে "অন্যায় অন্যায়ই হয়ে থাকে, আমার শত্রুর সাথেও যদি তা হয়ে থাকে।"
উদাহরণ হিটলার এবং স্তালিনের "বন্ধুত্ব।" স্তালিন হিটলারের সাথে হাত মিলিয়ে ভেবেছিল তার কিছুই হবেনা, বেকুবটা নিজের আহাম্মকি কিছুদিনের মধ্যেই হারে হারে টের পেয়েছিল।
আমাদের নেতাজি সুভাস বসুও জানোয়ারটার সাথে হাত মিলিয়েছিলেন। তিনি ভাগ্যবান, শিক্ষা পাওয়ার আগেই হিটলারের পতন ঘটেছিল। নাহলে ভারতে রক্ত গঙ্গা যে বইতো এ বিষয়ে অনেক বামাতির সন্দেহ থাকলেও আমার বিন্দুমাত্র নেই।
আরেকটা উদাহরণ একাত্তুরের রাজাকার বাহিনী। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পা চাটতে চাটতে নিজের দেশের মানুষেরই সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা করলো। অথচ যখন তাদের বাপদের লাথি দিয়ে বিদায় করা হলো, তখন একটা জামাত নেতাকেও পাকিস্তান তাদের মুলকে স্থান দেয়নি। বিহারীদেরও না।
ন্যায়ের জন্য মরাও ভাল। আমরা যে কবে বুঝবো!
যাই হোক, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে কয়েক শতকের অটোম্যান সাম্রাজ্যের পতন ঘটেছিল এইটা সবাই জানেন। মক্কার শেরিফের গোষ্ঠির কী পরিণতি হয়েছিল সেটা বলে আজকের ইতিহাস কপচানো বন্ধ করা যাক।
শেরিফের তিন ছেলেকে ব্রিটিশরা তিন ভিন্ন অঞ্চলের "রাজা" বানিয়ে দিল। রিয়াদে বসলো বড় ছেলে, এক ছেলে পেল জর্ডান, এবং আরেক ছেলে বাগদাদ। স্বাভাবিকভাবেই, এরা তিনজন তিনটি পুতুল, এবং বৃটিশরাই ছিল আসল সূত্রধর।
বড় ছেলে আলী বিন হোসেন মাত্র এক বছরের মধ্যেই আব্দুল আজিজ ইবনে সাউদ নামের এক নেতার হাতে রাজ্যহারা হন। যে নিজের পরিবারের নামেই গোটা দেশের নাম রাখেন, সৌদিআরব। এবং এই ওয়াহাবী নেতাকে কে ফাইন্যান্স করেছিল বলতে পারেন? Obviously, ব্রিটিশ ছাড়া আর কে! খুব মজা, তাই না?
বাগদাদে কিছুটা ছন্দ পতন ঘটেছিল, তবে ক্ষমতা পুরোপুরি শেরিফের বংশধরদের হাত থেকে যায়ওনি।
অবশেষে ১৯৬৩ সনে ইরাকি বাথ পার্টি একটি ঘরে শেরিফের বংশধরদের, যারা তখনও ইরাকের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়, জমা করে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করে।
এই হত্যাকান্ডের সময়ে সেই রুমে বাথ পার্টির একজন তরুণ নেতাও উপস্থিত ছিলেন যার নাম সাদ্দাম হোসেন।
একমাত্র জর্ডানের রাজ পরিবারেই তাঁরা এখনও টিকে আছেন। জ্বী, আজকের জর্ডানের রাজ পরিবারের সদস্যরা আমাদের নবীজির ডিরেক্ট বংশধর, "আহলে বাইত।" যারা আসলে জর্ডানের নয়, মক্কার অধিবাসী।
তা যা বলছিলাম, ইজরায়েল হচ্ছে একটি পলিটিকাল মুভমেন্টের ফসল, কোন ধর্মীয় যুদ্ধ নয়। জায়নিস্টদের আমরা ঘৃনা করি, তবে সামগ্রিকভাবে ইহুদিদের ঘৃনা করাটা মোটেও উচিৎ নয়। যদি সাধারনভাবে ইহুদিদের আমরা আমাদের শত্রু জ্ঞান করি, তাহলে সেটা আল্লাহ এবং নবীজির বিরুদ্ধেই যাওয়া হবে, যেখানে ইসলামী শরীয়ায় স্পষ্টভাবেই আহলে কিতাবীদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত আছে।
ফিলিস্তিনিদের জন্য আমাদের প্রাণ কাঁদে। প্রতিবার একটি করে প্রাণ ঝরে, এবং আমরা আল্লাহর কাছে দুই হাত তুলে দোয়া করি এই অন্যায়, এই অত্যাচার যেন দ্রুত সমাপ্ত হয়।
তবে একই সাথে আমরা অবাক হয়ে ভাবি, কিছু রাজনৈতিক নেতার কিছু ভুল সিদ্ধান্ত কিভাবে যুগের পর যুগ ধরে সাধারন মানুষকে ভোগ করতে হয়।
ফিলিস্তিন শীঘ্র দখলমুক্ত হোক। বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা পাক।
** ফুটনোট; কিছুদিন আগে ক্যানভাসেই কেউ কেউ তর্ক জুড়ে দিয়েছিলেন যে ইহুদিরা সামগ্রিকভাবে জার্মানদের ঘৃনা করে। কিছু তথ্য দেই, কাজে আসতে পারে।
ইজরায়েলে সবচেয়ে জনপ্রিয় লাক্সারী কার কোনটা বলেন তো? মার্সিডিজ বেঞ্জ। জার্মান গাড়ি। দ্বিতীয়তে বিএমডব্লিউ। এটিও জার্মান।
ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর অফিশিয়াল গাড়ি কোনটি? আউডির হাফ মিলিয়ন ডলার মূল্যের A-৪ মডেলের বুলেট প্রুফ গাড়ি। আউডির প্যারেন্ট কোম্পানি ফক্সভাগেন বা ভক্সওয়াগেন (volkswagen), যাকে হিটলার স্বয়ং বলেছিলেন, "কার অব দ্য ফিউচার।"
আমরা যে নেসলেকে ইহুদি ইহুদি বলে গালাগালি করি, এই নেসলে ম্যাগি কোম্পানিকে কিনেছিল বহু যুগ আগে। যে ম্যাগি হিটলারের "ফোর্সড লেবারের"(ইহুদি) সাহায্য পেয়ে ফুলে ফেপে উঠেছিল।
"ইহুদি" বলে কোকাকোলা কোম্পানিকে গালাগালি করছি, অথচ এই কোক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে তাদের "ফ্যানটা" প্রোডাক্ট লঞ্চ করেছিল কেবল জার্মান মার্কেটের জন্যই।
এবং আমাদের সবার পরিচিত ও প্রিয় ব্র্যান্ড ফ্যাশন হাউজ Hugo Boss কে ছিলেন জানেন? নাৎজি বাহিনীর ইউনিফর্মের ডিজাইনার! অমানুষ হলেও পোশাকের ব্যপারে হিটলারের রুচি ভালই ছিল বলা যায়।
আরও অনেক উদাহরণ আছে। ইন্টারনেট ঘাটলেই তথ্য পাবেন। ব্যবসায়ীরা ব্যবসায়ী হয়ে থাকেন। তাদের ধর্ম টাকা। তাদের ঈশ্বর একশ ডলারের নোটে ছাপা বেনজামিন ফ্র্যাঙ্কলিনের ছবি। তাদের ফিলোসফি, যতক্ষণ ব্যাংকে টাকা আসছে, কুচ পরোয়া নেহি।
এবং আমাদের দুর্বলতা, জেনারেলাইজেশনের মাধ্যমে নিজেদের ছোট ছোট দলে ভাগ করে ফেলে কাটাকাটি করে মরা। ইতিহাস শুধু আমরা পড়েই যাই। স্কুলের ইতিহাসের বইয়ে সিরাজুদ্দৌলা ও আলীবর্দী খানের ছবিতে দাড়ি মোচ এঁকে বিমলানন্দ পাই। ইতিহাসের শিক্ষাটা কেউ নিতে আগ্রহী নই।
২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১:৩৩
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: এটাই হয় ভাই। অনেক ভাল লেখা পাত্তা পায় না, অনেক হাল্কা লেখা হিট হয়ে যায়।
©somewhere in net ltd.
১| ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৮:০৪
সাব্বির জুবাইর বলেছেন: আপনার অসাধারন এ লেখাটা তেমন সাড়া পেলোনা কেন বুঝতে পারলামনা। অনেক ভালো লাগল পড়ে।