নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
ধরুন একটি বনে পথ ভুলে আপনি হারিয়ে গেছেন, এবং আপনার সামনে একটি বুনো শেয়াল পড়ল - যদি দেখেন সেই শিয়াল আপনাকে দেখে হম্বিতম্বি শুরু করেছে , তাহলে অবশ্যই আপনার স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলা উচিৎ। কারন "বাঘ নাই বনে শেয়াল রাজা!"
তার ফালাফালি দেখে ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই। একটা জোরে লাথি দিলেই সব ঠান্ডা হয়ে যাবে।
কিন্তু যদি দেখেন আপনাকে দেখে সেটা লেজ গুটিয়ে পালিয়েছে, তবে অবশ্যই আপনার ভয় পাওয়া উচিৎ। এর মানে এই বনে অবশ্যই বাঘ আছে। এবং সম্ভাবনা আছে ওস্তাদ আশেপাশেই কোথাও ঝোপের আড়ালে ঘাপটি মেরে আপনাকে পর্যবেক্ষণ করছে।
আমাদের দেশের সমস্যা হয়েছে এই যে আমাদের বনের সব বাঘকে সেই একাত্তুর সালেই মেরে ফেলা হয়েছে। যে কয়টা বেঁচে ছিল, তাঁদের গর্জন এখন হুক্কাহুয়ার শোরগোলে চাপা পরে যায়। জ্বী, বলছিলাম বুদ্ধিজীবিদের কথা। কলম ধরলেই যে কেউ বুদ্ধিজীবী হয়না, মাথায় বুদ্ধিও থাকা লাগে, এই সহজ বাক্য আজকের যুগে কে বুঝাবে? ইন্টারনেট সুলভ এবং বাংলা কিবোর্ড সহজলভ্য হওয়ায় এখন যে কেউ ব্লগিং শুরু করে দিয়েছে। এবং এত মানুষের ভিড়ে লাইমলাইটে আসার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে ধর্মকে আঘাত কর, নাহলে ধর্মদ্রোহিদের গুষ্ঠীনাশ কর। দুইটাই অব্যর্থ ফর্মুলা।
"সদা সত্য কথা বলিব" - জাতীয় কথা এখন পুরানো হয়ে গেছে। এখনকার লেটেস্ট ট্রেন্ড হচ্ছে "সত্য কথা বলিব, তো দুইপক্ষেরই মাইর খাইব।"
এই যুগে টিকে থাকার একটাই উপায়, ডানে বা বামে যেকোন একটা পথকে আপনার বেছে নিতেই হবে। যদিও জানেন দুইটা পথই ভুল, দুইটা পথই আপনাকে কেবল ধ্বংসই দিবে - কিন্তু কোন উপায় যেন নাই।
আমি পুরানোযুগের বুদ্ধিজীবিদেরই বেশি পছন্দ করি, যেকারনে এখনও চেষ্টা করি সত্যের/ন্যায়ের পথে থাকতে। কাজেই পুরানো একটা কবির কয়েকটি লাইন শেয়ার করছি। কবিকে প্রেমিক পুরুষ মাত্রই চিনে থাকবেন, তাঁর কবিতার লাইন মেরে মেরেই বাঙ্গাল মূলুকের পোলাপান এখনও মেয়ে পটিয়ে থাকেন।
"মহামৈত্রীর বরদ-তীর্থে- পুণ্য ভারতপুরে
পূজার ঘণ্টা মিশিছে হরষে নামাজের সুরে-সুরে !
আহ্নিক হেথা শুরু হ’য়ে যায় আজান-বেলার মাঝে,
মুয়াজ্জেনের উদাস ধ্বনিটি গগনে-গগনে বাজে;
জপে ঈদগাতে তসবী ফকির, পূজারী মন্ত্র পড়ে,
সন্ধ্যা-উষায় বেদবাণী যায় মিশে কোরানের স্বরে;
সন্ন্যাসী আর পীর
মিলে গেছে হেথা, —মিশে গেছে হেথা মসজিদ, মন্দির !"
চিনেছেন কবিকে? আরে আমাদের জীবনানন্দ বাবু - নোয়াখালিতে হিন্দু মুসলিম দাঙ্গায় প্রচুর মানুষের নিহত হবার ঘটনায় মর্মাহত হয়ে যে কবিতাটি তিনি রচনা করেছিলেন। এত সুন্দর করে কাউকে দেখেছেন সত্যকে লেখার ভাষায় রূপ দিতে? এটাই বাংলাদেশ, এখানে সন্ধ্যায় আজানের ধ্বনির সাথে সাথে শাখের শব্দ শোনা যায়, শোনা যায় হিন্দু রমণীকূলের উলুধ্বনি। পূজায় ঢাকের বাদ্য দূর দূর পর্যন্ত জানিয়ে দেয় কোথায় দেবীর মন্ডপ বসেছে - এবং প্রতি রবিবার গীর্জায় শোনা যায় ঘন্টার ধ্বনি। মহামৈত্রীর বরদ-তীর্থ আমাদের দেশ - এই মৈত্রীতে ফাটল ধরাতে চায় একদল মাথামোটা উন্মাদ। যারা ধর্মীয় বা বিধর্মীয় উন্মাদনা তৈরী করে সমাজে বিশৃঙ্খলাই সৃষ্টি করতে পারে, আর কিছু নয়। তাই আজকে এক উন্মাদ দাবি করছে আজানের ধ্বনি শব্দদূষণের জন্য দায়ী - এবং অতি স্বাভাবিকভাবেই এতে সায় দিয়ে লকলকে জিভ বের করে লেজ নাড়তে দেখা যাবে কিছু বুদ্ধিহীন প্রানীকে।
কিছুদিন পর পূজার ঢাকের বাদ্য শব্দদূষণের কারন বলে আরেকদল আওয়াজ তুলবে, তখন তার পাশেও জিভ বের করে লেজ নাড়ানো প্রাণীকুলের অভাব হবেনা।
অতীতে যেমন ভারত ভেঙ্গে পাকিস্তান-বাংলাদেশ হলো - কেন হলো সেটাতো সবাই জানে। এইসব উস্কানিমূলক কথাবার্তা দেশটাকে শুধু ভাঙতেই জানে, গড়তে নয়।
এইগুলিকে কে বুঝাবে - এটাই বাংলাদেশ। জীবনানন্দের ভাষায় "‘কাফের’ ‘যবন’ টুটিয়া গিয়াছে, ছুটিয়া গিয়াছে ঘৃণা,
মোস্লেম্ বিনা ভারত বিফল,—বিফল হিন্দু বিনা;"
কারও যদি কারও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে আপত্তি থেকে থাকে, তবে সে যেন নিজেকে বাংলাদেশী হিসেবে দাবি করা বন্ধ করে।
খাঁটি দুধ খেয়ে অভ্যস্ত মানুষকে একবার ক্রিমমুক্ত দুধ দিয়ে দেখুন - ওয়াক করে ফেলে দিবে। ওটা তাঁর কাছে অখাদ্য। আমি আমার দেশকে একরূপে দেখে অভ্যস্ত। আমরা মুসলমানেরা স্কুলে গিয়ে হিন্দু বন্ধুর গায়ে গা ঠেসে বেঞ্চিতে বসে পড়াশোনা করেছি। বিকালে হুজুরের কাছে কোরআন শরিফ শেখার পর সন্ধ্যায় হিন্দু স্যারের কাছে স্কুলের পড়া শিখেছি। ঈদের দিনে স্যার এসে আমাদের বাড়িতে দাওয়াত খেয়ে গেছেন তো পূজায় তাঁদের বাড়িতেও নেমন্তন্ন পেয়েছি। পতাকার ঐ লাল বৃত্তে যতটা না মুসলমানের রক্তের দাগ লেগেছে, ততখানিই হিন্দুরও রক্ত মিশেছে।
অথচ এখন বাঘের অনুপস্থিতিতে একদল শেয়াল দেশটি থেকে ক্রিম সরিয়ে একে অখাদ্য বানিয়ে ফেলার চক্রান্ত করছে। আর আমরা সেটা বুঝতেও পারছি না!
২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ২:১৫
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ঠিক বলেছেন।
২| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ২:৩৯
প্রবাসী পাঠক বলেছেন: প্রতিক্রিয়াশীল আর অতি প্রগতিবাদী এই দুই দলের মধ্যে বিন্দুমাত্র পার্থক্য নেই। লাইম লাইটে আসার জন্য এখন সবচেয়ে সহজ পন্থা হচ্ছে ধর্মের বিষয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করা।
৩| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৬ ভোর ৪:০৫
পথে-ঘাটে বলেছেন: আবারও দেশ ভাঙ্গার ষড়যন্ত্র!
ঠিক বলেছেন।
৪| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৬ ভোর ৪:২২
কল্লোল পথিক বলেছেন: শতভাগ সহমত।চমৎকার একটি বিষয় তুলে ধরেছেন।
ধন্যবাদ,শুভ কামনা জানবেন।
৫| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৬ ভোর ৪:৩০
রাফা বলেছেন: চমৎকার লিখেছেন-উপমাও সুন্দর।এরা সমাজে আর কোন ভুমিকা না রাখতে পারলেও গোলযোগ সৃষ্টিতে সবার সেরা ।কারন ঘোলা জলে তাদের অন্নের সংস্থান হয়।তাই ঘুরেফিরে তারা এই পাঁকেই আবদ্ধ থাকে।
একাত্তরে যদি স্বাধীনতা আনতে পারে আমাদের পুর্বপুরুষেরা তাদের প্রজন্মকে ধোকা দিয়ে দেশ ভাঙ্গতে পারে এমন সক্ষমতা মনে হয়না তাদের আছে।যদি থাকতো তাহলে সর্ব প্রথমে আজকে যে বিচার চলছে সেটাই বন্ধ করে দিতো।কাজেই কুকুরের ঘেউ ঘেউ কে আমলে নেওয়ার কিছুই নেই।
৬| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৬ ভোর ৫:৫১
শাহাদাত হোসেন বলেছেন: চমৎকার বলেছেন।শেয়ালের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে ।
৭| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৭:০৪
চাঁদগাজী বলেছেন:
শিয়াল স্পেশালিস্ট?
৮| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:২৯
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: খুব সুন্দর লিখেছেন
©somewhere in net ltd.
১| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১:৪৮
অন্ধবিন্দু বলেছেন:
তাই-তো কথা, মঞ্জুর। পারস্পরিক সহাবস্থান, সম্প্রীতি, সহযোগিতা, সহমর্মিতা এতদ সহকারে যে সংস্কৃতি আমার শেকড়কে মজবুত করলো। কোথাকার কোন, ভিনদেশী(মানসিকতায়) এসে এ আচারে মরি-ধরি করছে! লাইমলাইটে আসার যদি এতই ইচ্ছে তো সিনেমা-নাটকে গেলেই তো পারে। আর আমরাও হয়েছি যতো অবুঝ, হুজুগের সুযোগ করে দিই উল্টো!!