নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে যখন দুই অধিনায়ক টস করতে এলেন, তখন স্বাগতিক অধিনায়ক প্রতিপক্ষের অধিনায়ককে বলেন, "এটাই হতে পারে তোমার সাথে আমার শেষবারের মতন টস করতে আসা।"
সাউথ আফ্রিকা সিরিজের প্রতিটা ম্যাচে শোচনীয়ভাবে হেরে হোয়াইটওয়াশ হবার পর দেশের মাটিতেই অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টে ভয়াবহ ব্যাটিং দুর্যোগ, দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র একান্ন রানে অল আউট হয়ে তিনশো বারো রানের পরাজয়ের পাহাড় একদম পিষে ফেলে দলটিকে। হোম সিরিজের আগেই বোর্ড নোটিস দিয়েছিল তাঁরা মাত্র দুই টেস্ট পর্যবেক্ষণ করবেন, যদি পরিস্থিতির বদল না ঘটে, তবে তৃতীয় টেস্টে নতুন অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহর সাথে টস করতে নামবেন।
স্টিভ ওয়াহর অস্ট্রেলিয়া কয়েক বছর ধরেই টেস্ট ক্রিকেটে অজেয় একটি দল। যদি ওয়ানডের মতন টেস্টেও বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ থাকতো, তবে অবশ্যই অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপটাকে নিজেদের সম্পত্তি বানিয়ে ফেলত।
এই অবস্থায় ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক ব্রায়ান লারা যখন সিরিজ শুরুতেই ঘোষণা দেন "আমরা অস্ট্রেলিয়ার কাছে এই বছর সিরিজ হারবো না" - তখন প্রায় সবাই মুচকি মুচকি হেসেছিলেন। প্রথম টেস্ট পরে যে হাসি সরাসরি টিটকারিতে পাল্টে গিয়েছিল, "প্রথম টেস্টেতো অস্ট্রেলিয়া প্যান্ট খুলে নিল, এইবার না জাঙ্গিয়াটাও রেখে দেয়!"
লারার কথাটা শুনে স্টিভ ওয়াহ কেবল পিঠ চাপড়ে দিল। বিপক্ষ দলের সবচেয়ে বড় যোদ্ধার প্রতি সহানুভূতি। মাঠের লড়াইয়ে যে বিন্দুমাত্র ছাড় দেয়া হবেনা সেটা টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েই বুঝিয়ে দিল। অস্ট্রেলিয়া মাঠে নামে যুদ্ধ করতে, দান দক্ষিনা করতে হয়।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং তখন তলানিতে এসে ঠেকলেও বোলিংয়ে তখনও ব্যাটসম্যানদের রাতের ঘুম হারাম করতে এম্ব্রোস-ওয়ালস জুটি ছিলেন। তাঁদের তোপের মুখে অস্ট্রেলিয়া দুইশো ছাপ্পান্ন রানেই এটকে গেল। কিন্তু তাতেও নিশ্চিন্ত হবার কিছু নেই, আগের টেস্টের প্রথম ইনিংসে এরচেয়ে খুব বেশি রান ছিল না। উইন্ডিজের আসল "টেস্ট"তো তাঁদের ব্যাটিং। তা তারা এইবারও যথারীতি ব্যর্থ। দিন শেষে দলীয় স্কোর সাইত্রিশ, প্যাভিলিয়নে ফিরে গেছেন চার চারজন টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। ক্রিজে আছেন অধিনায়ক লারা এবং নাইট ওয়াচম্যান কলিন্স, যে বুঝাই যাচ্ছে দুই দিনের মেহমান! ম্যাকগ্রা-ওয়ার্ন-গিলেস্পি-ম্যাকগিলদের সামনে দুই চার ওভারও টিকবে না।
সবাই ধরে নিলেন এটাই অধিনায়ক লারার শেষ ম্যাচ।
রবিবার, ১৪ই মার্চ, ১৯৯৯, সাবিনা পার্ক টেস্টের দ্বিতীয় দিনটি লারা শুরু করেছিলেন ৭ রান দিয়ে, দিন শেষে তিনি ২১২ রানে অপরাজিত। ততক্ষণে ক্রিকেট বিশ্ব দেখে ফেলেছে ইতিহাসের সেরা টেস্ট ইনিংস। যদিও ক্রিকেট পন্ডিতদের মতে ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বকালের সর্ব সেরা ইনিংসটি লারা খেলেন ঠিক তার পরের ম্যাচেই, কিন্তু লারার নিজের কাছে এই ২১৩ রানের ইনিংসটিই সবকিছু থেকে এগিয়ে। এই এক ইনিংস সর্বজয়ী অস্ট্রেলিয়াকে অন্তরিক্ষ থেকে মাটিতে আছড়ে ফেলেছিল। এই এক ইনিংসই পাতালের অতল থেকে ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটকে টেনে তুলে এনে মুক্ত বাতাসে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে দিয়েছিল।
অস্ট্রেলিয়ার অতি অতি বিখ্যাত বোলিং লাইনআপ হতভম্ব হয়ে দেখেছিল একজন মানব কিভাবে অতিমানব হয়ে উঠতে পারে।
ওয়েস্টইন্ডিজ সেই টেস্ট জিতে যায় ১০ উইকেটে। পরের টেস্টও লারার আরেকটি অলৌকিক ইনিংসের কল্যানে তিনশোরও বেশি রান তাড়া করে এক উইকেট হাতে রেখে জিতে সিরিজে এগিয়ে যায়।
লারা তাঁর কথা রেখেছিলেন, সেই বছর ফ্র্যাংওরাল ট্রফি ওয়েস্টইন্ডিজ অস্ট্রেলিয়াকে বাড়িতে নিয়ে যেতে দেয়নি।
আমি আমার যেকোন গল্প এইভাবেই সাজাই। আমার গল্পের নায়ক নায়িকা বিরুদ্ধ স্রোত সাঁতরে জয়ী হন। আমার বিজয়ীদের নিয়ে গল্প লিখতে ভাল লাগে। কেউ যদি বলেন আমি কার কাছ থেকে আইডিয়া পাই - আমি বলবো আমাদের আশেপাশের বাস্তব মানুষের জীবন থেকে। বাস্তবের চেয়ে নাটকীয় ঘটনা বইয়ের পৃষ্ঠায় পাওয়া অসম্ভব।
এবং কেউ কেউ জানতে চান বাংলাদেশ বাদে কোন দলটি আমার সবচেয়ে প্রিয়। উত্তর সাউথ আফ্রিকা, তবে সেটা ব্রায়ান লারার রিটায়ারমেন্টের পর।
আমার চোখে এখনও সর্বকালের সর্বসেরা ব্যাটসম্যানের নাম ব্রায়ান লারা। অন্যরা যতই রেকর্ড নিয়ে কাড়াকাড়ি করুক না কেন, লারার ডিফেন্সিভ শট খেলার মধ্যেও শিল্প ঝরে ঝরে পড়ত। চাপের মুখে ব্রায়ান লারার মতন হারা ম্যাচ একাই বের করে আনার মতন ক্রিকেটার আজ পর্যন্ত মর্ত্যে পা ফেলেনি।
আমাদের জন্মেরও আগে একটা সময়ে এই ওয়েস্টইন্ডিজ পুরো ক্রিকেট বিশ্ব শাসন করেছে। ওয়াসিম আকরাম সেদিন ভিভিয়ান "দ্য কিং" রিচার্ডসকে বললেন, "তোমাদের বিরুদ্ধে ম্যাচের আগের রাতে আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করতাম আউট করাতো বহুদূর, তোমার হাতে যেন আমি পিটুনি না খাই।"
এই সেই রিচার্ডস যিনি জীবনেও হেলমেট পরে মাঠে নামেননি। প্রতিপক্ষে লিলি-টমসন-ইমরান-বোথাম আছেতো কী হয়েছে? ফাস্ট বোলার যদি দেখে ব্যাটসম্যান তাঁর ভয়ে মাথায় হেলমেট পরেছে, তাহলে সে সাহস পেয়ে মাথায় উঠে বসবে। সামান্য একটা চামড়ার বলের গতিকে অত পাত্তা দেয়ার কী আছে?
এই নাহলে তিনি কিং? মাঠেতো কত ব্যাটসম্যানই আসলো গেল, কয়জন কিং হতে পেরেছে? সম্রাট হতে হলে কেবল ভাল খেললেই হয়না, পার্সোনালিটিও দাপুটে হতে হয়।
মার্শাল, হোল্ডিং, গ্রিনিচ, সোবার্সরা যে কত ক্রিকেটারের দুঃসপ্নে হানা দিতেন তার হিসাব কে রাখবে? অথচ তাঁদের উত্তরসুরীদের যখন দেখি সবধরনের ক্রিকেটেই মার খেতে - তখন খুবই কষ্ট হয়। এককালের দোর্দন্ড প্রতাপশালী মহারাজাকে ভিখিরির বেশে দেখতে কারই বা ভাল লাগে?
কিন্তু এমনতো নয় যে ওদের ট্যালেন্টেড ক্রিকেটার নেই। ওদের ক্রিস গেইল, সুনীল নারীন, পোলার্ড, স্যামিরাইতো বিশ্ব জুড়ে টি২০'র ফেরিওয়ালা। গেইল যেমন গর্ব ভরে বলেন, "আমিই দেশে দেশে টি২০ লীগ তৈরী করি।" - কথাটাতো এক বিন্দুও মিথ্যে নয়।
গেইল না থাকলে সেই লীগ দেখার মজাই ফিকে হয়ে যায়।
কিছুদিন আগেই ওদের যুবদল আমাদের দেশের মাটি থেকে বিশ্বকাপ জিতে গেল। আমাদেরও হারিয়েছে, কিন্তু ফাইনালে ওদের জয়টা সেই কষ্ট দূর করেছে। আমরাতো অগা মগার কাছে হারিনি, টুর্নামেন্টে ওরাই চ্যাম্পিয়ন।
আজকে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওদের বড় দলের দাপুটে কায়দায় জিততে দেখে এত ভাল লাগছে! ক্রিস গেইল সাতচল্লিশ বলে একশো করলো, এই নাহলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ! এই নাহলে লারার উত্তরসুরী!
তবে সবচেয়ে বড় ব্যপার আজকের তারিখটা।
১৬ই মার্চ ১৯৯৯ পোর্ট অফ স্পেনের সাবিনা পার্কে অধিনায়ক লারার ২১৩ রানের মহাকাব্যিক ইনিংসের জোরে ওয়েস্টইন্ডিজ সর্বজয়ী অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছিল ১০ উইকেটে।
আজ ১৬ই মার্চ ২০১৬ তারিখে গেইল যেন মুম্বাইকেও সাবিনা পার্ক বানিয়ে ছাড়লেন।
গত বছর থেকেই ঈর্ষনীয় গতিতে বাংলাদেশ ক্রিকেটের উত্থান ঘটছে। ক্রিকেট বিশ্ব এখন আর বলার সাহস পায় না "আমরা বাংলাদেশকে মোটেও হালকাভাবে নিচ্ছি না।" বরং মাশরাফির এগারোটা বাঘকে তুলনা করা হয় ৯৬এর অর্জুনা রানাতুঙ্গার দিগ্বিজয়ী সিংহদের সাথে। আমাদের সাব্বির, মাহমুদুল্লাহ, তামিমরা নিয়মিতই অন্য দেশের খেলোয়ারদের স্রষ্টার কাছে বাড়তি প্রার্থনা করতে বাধ্য করছে। বাংলাদেশী হিসেবে অবশ্যই এতে গর্বিত।
তবে সেই সাথে পুরানো ভক্ত হিসেবে মনে প্রাণে চাই পুনরুত্থান ঘটুক ওয়েস্টইন্ডিজ ক্রিকেটেরও।
কর্পোরেট এবং পলিটিক্সের দাগে নোংরা হয়ে যাওয়া ক্রিকেটের সৌন্দর্য্য ফিরিয়ে আনতে নকশী কাঁথার পাশাপাশি ক্যারিবিয়ান ঝড়েরও বিকল্প নেই।
১৭ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ৩:৪৫
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ!
২| ১৭ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ৩:৫৪
নুর আমিন লেবু বলেছেন: খুব ভাল লাগল আপনার লেখা পড়ে,
১৭ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ৯:২৩
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ!
৩| ১৭ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ৯:০২
বিজন রয় বলেছেন: তাতে ক্রিকেটের লাভ।
১৭ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ৯:২৩
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন:
©somewhere in net ltd.
১| ১৭ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ৩:১৯
মহা সমন্বয় বলেছেন: খুবই ভাল ক্রিকেট বিশ্লেষণ মনে হল যেন কোন ক্রিড়া বিশেষজ্ঞের লেখা পড়লাম।
লারার খেলা খুব একটা দেখার সৌভাগ্য হয়নি তার শুধু নামই শুনেছি। তবে ওয়েষ্ট ইন্ডিজ যে এক সময় দূর্দান্ত প্রতাপশালী ছিল সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।
আমি আক্রমণাত্নক ব্যাটিংয়ের শেষ কথা মানি ভিভ রিসার্চ কে সেই আমলে তিনি খুবই ভয়ঙ্কর ব্যাটসম্যান ছিলেন। তার অনেক কির্তি যা এখনকার ব্যাটসম্যানও ছুতে পারে না।
আর সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান তো একজনই এবং এই মহাবিশ্বে একজনই মাত্র সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান থাকেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত থাকবেন আর তিনি আর কেউ নন সেই সূউচ্য সুমহান ব্যাটসম্যান স্যার ডন ব্র্যাডম্যান।
আর শচিন, লারা এই দুজন হচ্ছে এ যুগের ব্র্যাডম্যান।
তার পর ক্রমান্বয়ে রিকি পন্টিং ও অন্যান্য সেরা ব্যাটসম্যানেরা থাকবে।