নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

"বাঙাল-উইন্ডিজ ভাই ভাই - আইসিসির গালে চড়াইতে চাই।"

০৫ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১২:২৭

"কিরে, ব্রায়ান লারার নু** চুষতে কেমন লাগে?"
প্রশ্নটা গ্লেন ম্যাকগ্রার। ক্যারিয়ারের মাঝপথেই যে কিংবদন্তির ফাস্ট বোলার হয়ে গিয়েছিল। সর্বকালের সর্বসেরা বোলারের সংক্ষিপ্ত থেকে সংক্ষিপ্ততম তালিকারও উপরের দিকে যার নাম থাকবেই। অব্যর্থ লাইন লেন্থ ছাড়াও যার আরেকটি বড় অস্ত্র ছিল স্লেজিং। খাঁটি বাংলায় গালাগালি।
যার ক্যারিয়ারের একটি বড় অংশ জুড়েই অধিনায়ক ছিলেন স্টিভ ওয়াহ, দ্য আলটিমেট স্লেজিং লেজেন্ড, তাঁর মুখ ভাল হবে আশা করেন কিভাবে?
অস্ট্রেলিয়া তখন তিন শুন্য ব্যবধানে সিরিজে এগিয়ে। হোয়াইটওয়াশ এড়াতে ওয়েস্টইন্ডিজকে চতুর্থ ইনিংসে চারশো আঠারো রান করতে হবে। আজ পর্যন্ত কোন দল এত বিশাল পাহাড় টপকে জিততে পারেনি। তখনকার ভাঙ্গাচোরা ক্যারিবিয়ান দলটি থেকে তাই কেউ তেমন বড় কিছু আশা করছিল না।
কিন্তু ভাঙ্গা ঘরের বেড়ার ফুটা দিয়েও চাঁদের আলো আসে। ওয়েস্ট ইন্ডিজেও তেমনি ব্রায়ান লারার মতন ব্যাটসম্যান জন্মে। বহু মহাকাব্যের মহানায়ক লারাকে ঘিরেই তাই সব স্বপ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল। এই লারাই দুই দুইটা মহাকাব্যিক ইনিংস রচনা করে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধেই একটি সিরিজ একাই ড্র করে দিয়েছিলেন। সেই লারাই পারবে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে।
লারা খেলছিলেনও দুর্দান্ত। ৬০ রান করে যখন তিনি আউট হয়ে যান, কবরের নিস্তব্ধতা নেমে আসে উৎসব প্রিয় সেন্ট লুইস ময়দানে। অস্ট্রেলিয়া তখন আকাশে উড়ছে। ওদের পাতালে নামাতে তখনও অনেকটা পথ পাড়ি দেয়া বাকি। মাঠে নামলেন ইনফর্ম ব্যাটসম্যান শিভ নারায়ণ চন্দরপল। বেচারার সাথে রাহুল দ্রাবিড়ের বড্ড মিল। ভুল সময়ে ভুল দলে খেলেছেন। নায়ক হয়েও তাই মহানায়কের ছায়ায় থেকে যেতে হয়েছে চিরটাকাল।
দেখা গেল লারার বিদায়েও ক্যারিবিয়ান ঝড় দমে যায়নি। বরং আরও ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। তখনকার সময়ের বিশ্বসেরা বোলিং লাইনআপ নিয়েও অস্ট্রেলিয়া উইন্ডিজ ব্যাটসম্যানদের শেকড় উপরাতে পারছে না।
অবশেষে অস্ট্রেলিয়া তাঁদের সেই কুখ্যাত ক্ষেপনাস্ত্র নিক্ষেপ করলো। গালাগালি করে ব্যাটসম্যানদের উত্তেজিত করে আউট করে ফেলা।
পিচের মধ্যে বিছানা পত্তর নিয়ে থেকে যাওয়ার পরিকল্পনা করা রামনরেশ সারওয়ান হলেন প্রথম শিকার। ম্যাকগ্রা হঠাৎই বলে উঠলেন, "কিরে, ব্রায়ান লারার নু** চুষতে কেমন লাগে?"
ম্যাকগ্রা সাড়ে ছয় ফুট উচ্চতার দানব। ওল্ড টেস্টামনের প্রাচীন দৈত্য গলায়েথ। সারওয়ান তাঁর তুলনায় আক্ষরিক অর্থেই ডেভিড - গালিভারের লিলিপুট। শুধু উচ্চতাই নয়, ব্যাটিং রেকর্ডও তাঁর পক্ষে খুব বেশি উচ্চবাচ্য করে না। আগেই বলেছি, ম্যাকগ্রা সর্বকালের সর্বসেরা ফাস্ট বোলার। সারওয়ান Just a good batsman. এমন ব্যাটসম্যান সব দলেই একটা দুইটা করে থাকে। সর্বজয়ী অস্ট্রেলিয়ার রিজার্ভ বেঞ্চেই এইরকম চার পাঁচটা সারওয়ান আছে।
এছাড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের আরেকটা স্বভাব হচ্ছে ওরা কখনই মুখে পাল্টা জবাব দেয়না। যতই গালাগালি করা হোক না কেন, ওরা কিছু বলেনা। তখনকার সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে ভদ্র খেলোয়ারের দল ছিল ওয়েস্টইন্ডিজ। মাঝে মাঝে দুই একটা ব্যতিক্রম ছাড়া বহুদিন ধরেই তাঁরা তাঁদের এই সুনাম ধরে রেখেছিল। এখনও আছে। (যদিও নিউজিল্যান্ড এখন তাঁদের চেয়েও ভদ্র।)
ম্যাকগ্রা আশা করেনি সারওয়ান তাঁর প্রশ্নের কোন জবাব দিবে। কিন্তু তাঁকে হতবাক করে দিয়ে সারওয়ান তাঁর চোখে চোখ রেখে বলল, "আমি কী জানি, তোর বউকে গিয়ে জিজ্ঞেস কর। ওই ভাল বলতে পারবে।"
ম্যাকগ্রা বিস্ফোরিত হলো। গালাগালির মেশিনগান ছুটলো মুখ দিয়ে। সাথে যোগ দিলেন স্লেজিং গড স্টিভ ওয়াহ। সারওয়ান একাই লড়াই চালিয়ে গেল। আম্পায়ার ডেভিড শেফার্ড, ভেঙ্কট রাঘবন হস্তক্ষেপ করলেন। কিছুতেই কিছু হয়না।
সারওয়ানের পাশে এসে দাঁড়ালেন তাঁর দেশের দর্শক। এতটাই দুয়ঃধ্বনি দিচ্ছিল যে ম্যাকগ্রাকে বাউন্ডারী থেকে সরিয়ে হেইডেনকে সেখানে ফিল্ডিংয়ে পাঠান স্টিভ ওয়াহ।
সারওয়ান শেষ পর্যন্ত সেঞ্চুরি আদায় করেই ছাড়লেন। তখনও খেলার ভাগ্য দুই দলের দিকেই সমান ঝুঁকে আছে। সারওয়ানকে মাঠে থাকতে হবে। কাজ এখনও শেষ হয়নি।
কিন্তু সারওয়ান মাথা ঠান্ডা রাখতে পারলেন না। ব্রেট লীর বাউন্সারে পুল করতে গিয়ে আউট হয়ে গেলেন। লী প্রথমেই ছুটে গেলেন ম্যাকগ্রাকে জড়িয়ে ধরতে। ওর কারনেইতো উইকেটটা পাওয়া।
সারওয়ানকে দেখেই বুঝা যাচ্ছিল কী ভুলটাই না তিনি করেছেন।
সাথে যোগ হলো পরের বলেই আম্পায়ারের ভয়াবহ রকমের ভুল সিদ্ধান্ত। রিডলি জ্যাকবসের কনুইয়ে লেগে গিলক্রিস্টের হাতে যাওয়া বলকে কট বিহাইন্ড ঘোষণা করলেন বিশ্বখ্যাত আম্পায়ার ডেভিড শেফার্ড।
বিগ স্ক্রিনে রিপ্লে দেখে প্রতিবাদে ফুঁসে উঠলো উইন্ডিজ দর্শক। সেন্টলুইসকে ইডেন বানিয়ে বোতল ছুঁড়ে মারলো মাঠে। ধারাভাষ্যকার খুবই হতাশ স্বরে বললেন, "সামান্য একটি রান ভ্যারিফাই করার জন্য আম্পায়ার টেকনোলজির সাহায্য নিতে পারে, অথচ একটি আউট দেয়ার আগে কেন নেয় না?"
যাই হোক, খেলা তখনও চলছিল। সময় মতন চন্দরপলও সেঞ্চুরি উঠিয়ে নিলেন। এবং খেলাকে আরও রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনা দিতে আউটও হয়ে গেলেন।
উইন্ডিজের লেজ বেরিয়ে এলো। অস্ট্রেলিয়া স্পষ্টতই জয়ের সুবাস পাচ্ছিল। ড্রেসিংরূপে লারা, এম্ব্রসদের চেহারাই বলে দিচ্ছিল আর আশা নেই। ম্যাকগ্রা, লী, গিলেস্পি, ম্যাকগিলদের নিয়ে গড়া পৃথিবীর সেরা বোলিং আক্রমনের পক্ষ্যে উইন্ডিজের লেজ গোটানোতো স্রেফ ডাল ভাত।
কিন্তু উপরওয়ালার পরিকল্পনা ছিল ভিন্ন। অস্ট্রেলিয়ার অতি বিখ্যাত ফিল্ডাররা ক্যাচ ধরতে পারলেন না। অতি আক্রমনাত্মক ফিল্ডারদের মাঝখান দিয়ে বল ছুটতে লাগলো সীমানার দিকে। গুটিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে উইন্ডিজ খেলোয়াররা বুক চিতিয়ে দাঁড়ালো। টপকে গেল হিমালয় পর্বত। পায়ের নিচে লুটালো অস্ট্রেলিয়ার দেয়া মাউন্ট এভারেস্টসম টার্গেট।
ওয়েস্টইন্ডিজ - এক কালের ক্রিকেট বিশ্বের সম্রাট - মাঝে মাঝেই যারা প্রমান করে, সিংহাসনচ্যুত হলেও রাজা রাজাই থাকে।
ওয়েস্টইন্ডিজ - এক কালে যাদের নিয়ে বলা হতো "ক্যারিবিয়ান দ্বীপে যদি কেউ নারকেল গাছ ঝাকাঝাকি করে, তাহলে দুই একটা নারকেলের সাথে তিন চারটা ফাস্ট বোলার ঝরে পরবে।"
এবং এইসব ফাস্ট বোলার যেই সেই ফাস্ট বোলার না। মার্শাল, হোল্ডিং, বিশপ, ওয়ালশ, এম্ব্রোস!
আহারে! বোর্ডের দূর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা আজকে সেই দলটাকেই প্রায় ধ্বংস করে দিয়েছে। আজকে ওদের খেলা দেখে এককালের শত্রু স্টিভ ওয়াহ পর্যন্ত ওদের বাঁচাতে আইসিসির হস্তক্ষেপ কামনা করেন!
আর তিন মোড়লের হাতের পুতুল হয়ে যাওয়া আইসিসি মাঝে মাঝেই ফাজলামি নিয়ম বের করে - যার বলির পাঠা হতে হয় বাংলাদেশসহ rangking এ পিছিয়ে থাকা দলগুলোকে। যার জ্বলন্ত প্রমান আগামী বছর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে আসল চ্যাম্পিয়ন হবার সবচেয়ে বড় দাবিদার দলটিই খেলতে পারবে না। জ্বী, এই বছরের টি-২০ চ্যাম্পিয়নরাই চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলতে পারবে না। মাঠের মধ্যে "চ্যাম্পিয়ন, চ্যাম্পিয়ন" নাচটা সেখানে আর দেখা হবেনা।
কেন? কারন ওরা কোয়ালিফাই করেনি।
মাইকের সামনে বক বক করা শ্যেন ওয়ার্নকে স্যামুয়েলস জবাব দিয়েছে ফাইনালে ম্যান অফ দ্য ম্যাচ ট্রফিটি উৎসর্গ করে।
নিজের বোর্ডের দুর্নীতি আর স্বেচ্ছাচারিতার জবাব স্যামি দিয়েছেন বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে মঞ্চে দাঁড়িয়ে আবেগময়ী বক্তব্য দিয়ে।
আর আইসিসি জবাবটা কিভাবে পেয়েছে?
যুব বিশ্বকাপে ভারতকে হারিয়ে।
মেয়েরা অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে।
আর বড়রা ইংল্যান্ডকে হারিয়ে।
তিন মোড়লের বিষ দাঁত একে একে গুড়িয়ে দিল এক কালের ক্রিকেট বিশ্বের সর্বদিগ্বিজয়ী অবিসংবাদিত বীর সম্রাট - ওয়েস্ট ইন্ডিজ!
আল্লাহতে যারা বিশ্বাস করে না তাঁরা বলবে "প্রকৃতির বিচার।"
যারই বিচার হোক, বিচারটা কিন্তু ন্যায় সঙ্গত হয়েছে।
"ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইজ দ্য চ্যাম্পিয়ন!"
"বাঙাল-উইন্ডিজ ভাই ভাই - আইসিসির গালে চড়াইতে চাই।"

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৭:৫৪

বিজন রয় বলেছেন: হা হা হা হা ......শূণ্য।

২| ০৫ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:৪৩

অলওয়েজ ড্রিম বলেছেন: ভাল লিখেছেন।

৩| ০৫ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:৫০

তৌফিক মাসুদ বলেছেন: দারুন লিখেছেন। শুভকামনা জানবেন।

৪| ০৫ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৯:৫৯

আলাপচারী বলেছেন: ব্যাপক ভালো লেখা।
ভাই আরো লিখুন। আমি জানি আপনার হাত দিয়ে স্বর্ণ ঝরবে। এ আমার বিশ্বাস, আপনার অবলীলায় লেখা।

৫| ০৫ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:২০

বৈশাখের আমরণ নিদাঘ বলেছেন: বাংলাদেশের এই টিমটা আর ২২-৩ বছর একসাথে খেলুক, চড় চলবেই একের পর এক, তিন মোড়লের গালে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.