নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

"ইহা আল্লাহর ঘর মসজিদের রাস্তা। এই রাস্তায় মহিলাদের প্রবেশ সম্পূর্ণভাবে নিষেধ।"

১৩ ই মে, ২০১৬ রাত ১২:২২

"ইহা আল্লাহর ঘর মসজিদের রাস্তা। এই রাস্তায় মহিলাদের প্রবেশ সম্পূর্ণভাবে নিষেধ।"
একটি সাইনবোর্ডে লেখা। বাংলায়। বোর্ডের ছবিটি ফেসবুকে আপলোড হলে পরে একদল খুবই মজা নিল। ইসলাম যে মহিলাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা নিয়ে এত গলাবাজি করে, সেই ইসলামই মসজিদে মহিলাদের প্রবেশ অনেক আগেই নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এখন মসজিদের রাস্তাতেই চলাফেরা নিষেধ করলো। হিপোক্রেসী আর কাকে বলে!
আবার আরেকদল একদমই প্রতিক্রিয়া দেখালো না। কারন, আসলেইতো - মহিলাদের মসজিদে প্রবেশের অধিকার কে দিয়েছে? মুমিন মহিলারা থাকবেন ঘরে, বছর বছর বাচ্চা পয়দা করবেন, স্বামীর দেখাশোনা করবেন। নামাজ পড়বেন। কাজের ফাঁকে সময় সুযোগ পেলে কুরআন শরিফ পড়বে - এইতো যথেষ্ট! ওদের মসজিদে যাওয়ার দরকার কী?
এখন একটা সহজ প্রশ্ন। ধরুন, আপনি আপনার মা বোনকে নিয়ে কোন আত্মীয়ের বাসায় গেছেন। রাস্তায় মাগরিবের আজান দিয়ে দিয়েছে। আপনি খুবই ইসলামী ঘরানার যুবক। টুপ করে মসজিদে গিয়ে জামাতে নামাজ পড়ে ফেললেন। আপনার মা বোনের কী হবে? তাঁদেরও কী বেহেস্তে যেতে ইচ্ছা করে না? তাঁরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে কী করবে?
আপনি দাঁত কেলিয়ে বলবেন, "আগেই বলেছিলাম, মেয়ে মানুষের বাইরে যাবারই বা দরকার কী? ঘরে থাকলেই এই বিপত্তিতে পরতে হতো না। আলেমরা নিষেধ করেছেন - ওদের মসজিদে যাবার অধিকার কে দিয়েছে?"
কথা হচ্ছে, আমি এমন এক আলেমকে চিনি, যাঁর ইমামতিতে ফজরের নামাজ পড়তে মহিলারা অতি ভোরে ঘুম থেকে উঠে দল বেঁধে আসতেন। রাস্তায় আবর্জনা পেরিয়ে আসতে হতো, তাঁদের জামার তলভাগে আবর্জনা লেগে যেত। তাঁরা একবার আলেম সাহেবকে বলেও ফেললেন, "হুজুর, আমরা কী তবে বাসায় নামাজ পড়বো?"
আলেম কী জবাব দিলেন?
"তোমাদের জামায় যে ময়লা লাগে, হেঁটে আসতে আসতে মাটিতে সেটা মুছেও যায়। তোমরা অবশ্যই নামাজে আসবে।"
কত্ত বড় কথা! মহিলাদের মসজিদে আসতে বলেন! আমাদের উপমহাদেশের আলেমদের চেয়ে বেশি জানেন? কে এই আলেম?
আলেমের নাম মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ (সঃ)। চৌদ্দশ বছর আগের একজন সুপার স্মার্ট এবং অতি আধুনিক ব্যক্তি - যার বর্তমান ফলোয়াররা এই আধুনিক যুগে প্রাগৈতিহাসিক মেন্টালিটি ধারন করে বলে তাঁকেও সবাই ভুল বুঝে।
বিখ্যাত এই "আলেমের" আরেকটি বাণী (যাহাকে "হাদিস" বলে) বর্ণনা করি।
"পুরুষদের জন্য নামাজের শ্রেষ্ঠ সারী হচ্ছে প্রথম সারী।"
এই হাদিসটি সবাই জানি। কিন্তু হাদীসটির শেষাংশ আমাদের কাছে বর্ণনা করা হয়না।
"এবং নারীদের জন্য শ্রেষ্ঠ সারী হচ্ছে শেষের সারী।"
লক্ষ্য করুন, হাদিসটি কোন ক্ষেত্রে প্রযোজ্য? ছেলে মেয়েদের যদি আলাদা-আলাদা ঘরে নামাজ পড়ার ব্যবস্থা থাকে, তাহলে কিন্তু "শেষের সারী" শর্ত খাটে না। মানে নবীজির (সঃ) সময়ে ছেলেমেয়েরা এক সাথে এক ঘরে নামাজ পড়তেন। ছেলেরা সামনের সারিতে দাঁড়াতেন। মেয়েরা পেছনের সারিতে।
চিন্তা করেন, আমাদের দেশে এই দৃশ্য কল্পনাই করা যাবেনা! কোন মহিলা মসজিদে প্রবেশ করলে হুজুররা প্রথমেই আস্তাগফিরুল্লাহ বলে পাপ কাটানোর জন্য নফল ইবাদত শুরু করে দিবেন। জামাতে নামাজ পড়ার কথাতো বহু দূর!
এখন কেউ কেউ বলবেন, আমরা পুরুষ, আমরা আমাদের চিনি। পেছনের সারিতে মেয়ে মানুষ নামাজ পরছে, আর আমরা উঁকি ঝুকি দিব না - সেটা কখনই হবেনা। কাজেই ঈমান তাজা রাখতে হলে অবশ্যই মেয়েদের বাড়িতেই রাখতে হবে।
লিসেন ব্রো - সাহাবীরাও "পুরুষ" ছিলেন। তাঁরা কেউই অতিমানব ছিলেন না। এক যুবক সাহাবী জামাতে নামাজ পড়ার সময়ে সিজদা দেয়ার সময়ে উঁকি দিয়ে মেয়েদের দেখছিলেন। এবং তিনি ধরাও পরে ছিলেন। নবীজির (সঃ) সমাধান কী ছিল জানেন? না, তিনি আমাদের আলেমদের মতন মেয়েদের মসজিদে আসা নিষেধ করেন নি। পুরুষ নারীর মাঝখানে পর্দাও দেননি। তিনি শুধু সেই যুবক সাহাবীকে প্রথম সারিতে নিয়ে গেলেন। স্কুলে কিছু দুর্বল অমনোযোগী ছাত্রদের টিচাররা ফার্স্ট বেঞ্চে বসার "শাস্তি" দেন না? তিনিও সেটাই করলেন। প্রবলেম সল্ভ্ড!
ঘটনা এখানেই শেষ না।
আমরা সবাই জানি সাহাবীদের অনেকেই গরিব ছিলেন। এতই গরিব যে প্যান্ট/পাজামা কেনারও পয়সা তাঁদের ছিল না। তাঁরা কেবল একটি কাপড় পেঁচিয়ে (লুঙ্গির মতন) লজ্জাস্থান ঢাকতেন, এবং উর্ধাঙ্গেও কিছু থাকতো না। এখন এই পোশাকে সিজদা দিতে একটা বিরাট কলিজা থাকা লাগে। তাঁদের সেই কলিজা ছিল। সমস্যা দেখা দিল, সিজদাহ শেষে ওঠার সময়ে প্রতিবার সেই সাহাবীদের পেছনের সারির মহিলাদের একটি দুর্ঘটনার সাক্ষী হতে হতো। তাঁরা নবীজির (সঃ) কাছে সমস্যার কথা খুলে বললে নবীজি (সঃ) এইবারও তাঁদের অন্য ঘরে পাঠিয়ে দিলেন না। বরং তিনি বললেন, তোমরা একটু বেশি সময় সিজদায় থেক। আবারও "অতি জটিল" সমস্যার অতি সহজ সমাধান।
মসজিদে নববী ছিল আমাদের নবীজির (সঃ) অফিস। এখান থেকেই তিনি দ্বীন প্রচার করতেন। মহিলারা দল বেঁধে তাঁর কাছে এসে নানান বিষয়ে জানতে চাইতেন। একবার উমার (রাঃ) মসজিদে এসে দেখেন নবীজি (সঃ) একদল "মহিলাকে" দ্বীনের শিক্ষা দিচ্ছিলেন এবং তাঁকে দেখেই তিনি হেসে দিলেন। উমার (রাঃ) জানতে চাইলেন, "হে আল্লাহর দূত, আপনি হঠাৎ হাসছেন যে?"
তিনি জানালেন যে মহিলারা খুব সিরিয়াস বিষয় নিয়ে তাঁর সাথে আলোচনা করছিল, এবং তাঁদের প্রত্যেকেরই গলা চড়ে গিয়েছিল। অথচ উমারকে (রাঃ) দেখে সবাই সাথে সাথে চুপ হয়ে গেল।
এখানে পয়েন্ট হচ্ছে মহিলারা নবীজিকে কতটা আপন ভাবলে এইরকম গলা চড়িয়ে কথা বলেন! তারমানে তাঁদের সাথে কতখানি ভাল ব্যবহার করলে তাঁরা তাঁকে এতটা আপন ভাবেন!
তারচেয়ে বড় কথা, ঘটনা মসজিদে নববীতে ঘটেছিল। পৃথিবীতে এরচেয়ে মর্যাদার স্থান কেবল মক্কার কাবা শরিফ - আর কিছু নেই।
আর আমরা আমাদের পাড়ার জামে মসজিদকে কিনা পবিত্র রাখার জন্য নারী প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করি! তাহলে কী বলতে চাইছেন, আমাদের উপমহাদেশের মসজিদগুলি মসজিদে নববী, বা হারাম শরিফ থেকেও পবিত্র? সেসব স্থানেতো মহিলাদের অবাধ প্রবেশাধিকার আছে!
জামাতে নামাজ পড়লে পুরুষের জন্য ২৫- ২৭ গুণ বেশি সোয়াবের প্রতিশ্রুতি দেয়া আছে। মহিলাদের ক্ষেত্রেও কিন্তু তাই।
আমাদের প্রমান আছে, নবীজির (সঃ) সাথে মহিলারা জামাতে নামাজ আদায় করেছেন। মহিলা সাহাবীরা তলোয়ার হাতে সক্রিয় জিহাদে অংশ নিয়েছেন। প্রমান আছে, জিহাদে আহত সাহাবীদের মহিলারা সেবাদান করে সুস্থ করে তুলেছেন। প্রমান আছে উমারের (রাঃ) খিলাফতে মদিনার বাজারের (বর্তমান NYSE) প্রধান নিয়ন্ত্রণ ছিলেন (বর্তমান SEC) একজন নারী সাহাবী।
এবং আমাদেরই একদল আহাম্মক কুরআন ঘেটে ফতোয়া জারি করে "এক পুরুষের সাক্ষ্য, দুই নারীর সমান।" মানে একনারী এক পুরুষের অর্ধেক।
এবং এই ফতয়া শুনে আরেকদল দাঁত কেলিয়ে বলে, "ইসলাম নাকি নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করে।"
দ্বিতীয় দল নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই। প্রথম দলকেই আহাম্মক বলছি, কারন এরা চিন্তা ভাবনা না করেই ফতোয়াবাজি করে। প্রথম কথা হচ্ছে, কুরআনের যে আয়াতটিতে (সুরাহ বাকারাহ, আয়াত ২৮২, কুরআন শরীফের সবচেয়ে দীর্ঘতম আয়াত) এই কথা বলা হয়েছে সেটিতে স্পষ্ট করেই বলা হয়েছে "ঋণ আদান প্রদানের" (মানে বিজনেস ট্রানজেকসনে) ব্যপারে এই শর্ত মানতে হবে। আবার আরেক ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, "মার্ডার কেসের" ব্যপারেও দুই নারী সাক্ষী নিতে হবে।
কিন্তু এইসব "সর্বক্ষেত্রে" নয়।
যদি তাই হতো, হজরত আয়েশার মুখ দিয়ে যে এতগুলো হাদিস এসেছে, সেখানেতো তিনি একাই সাক্ষ্য প্রদান করেছেন, ভ্যারিফাই করার জন্য দ্বিতীয় নারীর প্রয়োজন হয়নি। কিভাবে কী হলো? কমন সেন্স! যেটা আমাদের মধ্যে খুবই আনকমন একটি ব্যপার।
কথা হচ্ছে, আমাদের দেশে একদল লোক খুব আগ্রহী ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠার ব্যপারে। রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম প্রতিষ্ঠার দাবিতে শহীদ হতেও কারও কোন আপত্তি নেই। অথচ এই তাঁরাই, দেশের অর্ধেকের বেশি জনসংখ্যাকে মসজিদে আসতে নিষেধ করে গৃহবন্দী করে রাখেন। ইসলাম সম্পর্কে যে দেশের জনগনের বেসিক জ্ঞানটাও নেই, ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠা কী লাইসেন্স বিহীন চালকের হাতে পাঁচ টনের ট্রাক ধরিয়ে দেয়ার মতন ব্যপার হবেনা?

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই মে, ২০১৬ রাত ১২:৩৮

নতুন বলেছেন: ++ সহমত

১৩ ই মে, ২০১৬ রাত ২:০২

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ!

২| ১৩ ই মে, ২০১৬ রাত ১২:৫৯

কানিজ রিনা বলেছেন: এদেশের ইমামরা হচ্ছে তেতুই ইমাম
মসজিদে মহিলারা প্রবেশ করলে জিহ্বায়
লালা চলে আসবে তাই সাবধানের মার
নেই।

১৩ ই মে, ২০১৬ রাত ২:০২

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: সত্য বলেছেন :(

৩| ১৩ ই মে, ২০১৬ রাত ১:১৮

kajolrainু বলেছেন: নিচের লেখা পড়ুন। আর ক্ষুদ্র জ্ঞান নিয়ে কুরআন হাদীস ব্যাখ্যা করা কন্ধ করুণ!! নিশ্চয়ই যারা ৩০-৪০ বছর কোরআন হাদীস অধ্যয়নরত ছিলো তাদের থেকে বেশী ভালো ব্যাখ্যা আপনি করতে পারবেননা। এসব মনগড়া কথা বলে মানুষদের বিভ্রান্ত করবেননা নিজেও হবেননা। হাদীস একটা পড়েই যেকোন বিষয় এ বলা যায় না। সহীহ হাদীস গুলো বের করে তারপরই মাসায়লা বলা যায়।!!!!!!!!!!!
.
মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদে যাওয়া মাকরূহে
তাহরীমী
আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের ফতওয়া হলো – ”
মহিলাদের পাঁচ ওয়াক্ত, জুমুয়া, তারাবীহ ও ঈদের
নামাযসহ যে কোন নামায জামায়াতে আদায় করার
উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হওয়া বা মসজিদে যাওয়া
মাকরূহে তাহরীমী।” এ ব্যাপারে হযরত ছাহাবা-ই-
কিরাম রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, তাবেঈন, তাবে
তাবেঈন, আয়িম্মায়ে মুজতাহিদীনসহ সকলেই “ ইজমা বা
ঐক্যমত “ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পক্ষান্তরে মহিলাদের ঘরে
নামায আদায় মুস্তাহাব এবং পঁচিশগুণ বেশী ফযিলতের
কারণ। (আবু দাউদ, আহমদ, দায়লামি, ত্ববারানী, ইবনে
হাব্বান, মুয়াত্তা মালিক)।
হাদীস শারীফের কোথাও উল্লেখ নেই যে মহিলাদের
জুময়া, ঈদ ও জামায়াতে উপস্থিত হওয়ার জন্য তাগিদ করা
হয়েছে।
প্রথম যুগে মহিলাদের মসজিদে যাওয়ার হাকীকত
আজকাল আমাদের দেশের কোন কোন স্থানে
মহিলাদের পাঁচ ওয়াক্ত নামাযসহ ঈদ ও জুমার নামায
মসজিদে গিয়ে জামায়াতের সাথে আদায় করতে
দেখা যায় এবং কেউ কেউ হাদিছ শারিফের দোহাই
দিয়ে বলে থাকে যে, “মহিলারা সাইয়্যিদুল মুরছালীন,
ইমামুল মুরসালীন হুযুরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর যামানাতে জামায়াতে নামায আদায়
পরতেন, তাই মহিলারা জামায়াতে নামায আদায়
করতে পারবে।” তাদের উক্ত বক্তব্যের উত্তর হলো-
শরীয়তের এমন অনেক বিষয় রয়েছে, যা সাইয়্যিদুল
মুরছালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযুরে পাক সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যামানায় ছিলনা কিন্তু
সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণের সময় তা উৎপত্তি লাভ
করে। যেমন “জুময়ার সানী আযান” এ সানী আযান
সাইয়্যিদুল মুরছালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযুরে পাক
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সময় ছিলনা।
হযরত ওসমান (রাঃ) মুসলমান ও ইসলামের বৃহত্তর স্বার্থে
ইজতিহাদ করতঃ উক্ত সানী আযানের প্রথা চালু করেন
এবং এর উপর সকল সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ) গণের ইজমা
প্রতিষ্ঠিত হয় এবং রসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম-এর যামানায় তারাবীহ নামায
দায়েমীভাবে জামায়াতে পড়া হতোনা, তারাবীহ
নামাযে কুরআন শরীফ খতম হতোনা। অনুরুপভাবে যদিও প্রথম
যুগে ইসলাম ও মুসলমানদের বৃহত্তর স্বার্থে মহিলাদের
জামায়াতে উপস্থিত হওয়ার অনুমতি ছিল কিন্তু হযরত ওমর
(রাঃ) এর খিলাফতকালে তা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়
এবং পরবর্তীতে ইমাম, মুজতাহিদগণ মহিলাদের মসজিদে
গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহে তাহরীমী
ফতওয়া দেন এবং এর উপর উম্মতের ইজমা প্রতিস্ষ্ঠিত হয়।
প্রথম যুগে মহিলাদের জামায়াতে উপস্থিত হওয়ার
অনুমতি দেওয়ার কারণ সম্পর্কে কিতাবে উল্লেখ আছে-
ইমাম তাহাবী(রঃ) বলেন “মহিলাদের ইসলামের প্রথম
যুগে জামায়াতের উপস্থিত হওয়ার অনুমতি প্রদান করার
কারণ হলো বেদ্বীনদের সম্মুখে মুসলমানগণের জনসংখ্যা ও
জনশক্তি বৃদ্ধি করা।” (মায়ারিফে মাদানিয়াহ, শরহে
তিরমিযী)
ইমাম আইনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “সে যুগ
ফিতনা ফাসাদ থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ ছিল। কিন্তু
বর্তমানে তা একেবারেই বিপরীত।”
মূলতঃ মহিলাদের মসজিদে জামায়াতে উপস্থিত হওয়ার
অনুমতি দেওয়ার কারণ হিসেবে তা’লীম বা ইলম অর্জন
করাকেই উল্লেখ করা হয়েছে এবং তা আরও স্পষ্টভাবে
প্রমাণিত হয়, বুখারী শারীফের ৯১৫ নং হাদীস
শারীফের বর্ণনা দ্বারা। এ হাদীস শারীফে এরশাদ করা
হয়, হযরত উম্মে আতিয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত- তিনি বলেন,
“ঈদের দিন আমাদেরকে বের হওয়ার আদেশ দেওয়া হতো,
আমরা কুমারী মেয়েদেরকে, এমনকি ঋতুবর্তী
মহিলাদেরকেও ঘর থেকে বের করতাম। অতঃপর পুরুষদের
পিছেনে থেকে তাদের তাকবীরের সাথে সাথে
তাকবীর পড়তাম এবং তাদের দোয়ার সাথে সাথে
আমরাও ঐ দিনের বরকত ও পবিত্রতা লাভের দোয়া
করতাম।”
এ হাদিস শরীফে এবং অন্যান্য আরও হাদীস শরীফে স্পষ্টই
উল্লেখ রয়েছে যে, ঋতুবর্তী মহিলাগণও ঈদগাহে
উপস্থিত হতো। অথচ শরীয়তে ঋতুবর্তী মহিলাদের জন্য
নামায সম্পূর্ণ হারাম। সুতরাং তাদের ঈদগাহে বা
জামায়াতে উপস্থিত হওয়ার অনুমতি যদি শুধুমাত্র
নামাজের জন্য হতো, তবে ঋতুবর্তী মহিলাগণ ঈদগাহে
উপস্থিত হতোনা। মূলতঃ প্রথম যুগে নামাজসহ সকল
অনুষ্ঠানাদিতে মহিলাদের উপস্থিত হওয়ার মুখ্য উদ্দেশ্য
ছিল, তালীম গ্রহন করা। তথা নবী (সা.) এর কাছে
নিত্যনতুন আদেশ নিষেধ নাযিল হতো তা যেন পুরুষ
মহিলা সকলে সমভাবে জানতে পারে সে কারণে
তাদেরও উপস্থিত হওয়ার অনুমতি ছিল।
রসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর
যামানায় মহিলাদের ঘরে নামায পড়ার উৎসাহ ও
ফজীলত
হাদীস শরীফে এরশাদ করা হয়,
হযরত উম্মে সালমা(রাঃ) হতে বর্ণিত- হুজুর পাক
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “মহিলাদের
জন্য উত্তম মসজিদ হলো, তার ঘরের গোপন
প্রকোষ্ঠ।” (সুনানুল কোবরা, আহমদ, মুয়াত্তা ইমাম মালেক)
অন্য হাদীস শরীফে উল্লেখ করা হয়,
হযরত আব্দুল্লাহ্(রাঃ) হতে বর্ণিত- সাইয়্যিদুল মুরছালীন
হুযুরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
“মহিলাদের অন্ধকার কুঠরীর নামাজ আল্লাহ্ পাকের
নিকট অধিক প্রিয়।” (সুনানুল কোবরা লিল বায়হাকী)
হাদীস শরীফে আরো উল্লেখ করা হয়,
হযরত আব্দুল্লাহ(রাঃ) হতে বর্ণিত- সাইয়্যিদুল মুরছালীন
হুযুরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
“মহিলাদের ঘরে নামাজ পড়া, বারান্দায় নামাজ পড়ার
চেয়ে উত্তম এবং সাধারণ ঘরে নামাজ পড়ার চেয়ে
গোপন প্রকোষ্ঠে নামাজ পড়া সর্বোত্তম।” (আবূ দাউদ,
৫৭০নং)
কেউ কেউ এ হাদীস শরীফের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলে
থাকে যে, দেখুন এ হাদীস শরীফে মসজিদের উল্লেখ
নেই, তাই তুলনাহীনভাবে মসজিদ উত্তম। এটা তাদের
সম্পূর্ণ মনগড়া ও বিভ্রান্তিমূলক ব্যাখ্যা। কেননা, তারা
এমন একখানা হাদীস শরীফও পেশ করতে পারবে না, যে
হাদীস শরীফে মহিলাদের মসজিদে নামাজ পড়া উত্তম
বলা হয়েছে। অথচ নিম্নোক্ত হাদীস শরীফসমূহে
মহিলাদের মসজিদে নামাজ পড়ার চেয়ে গোপন
প্রকোষ্ঠে নামাজ পড়া উত্তম বলা হয়েছে।
হযরত আয়েশা(রাঃ) হতে বর্ণিত- সাইয়্যিদুল মুরছালীন,
নবীয়ে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন
“কোন মহিলার জন্য তার খাছ ঘরে নামাজ পড়া সাধারণ
ঘরে নামাজ পড়ার চেয়ে উত্তম এবং সাধারণ ঘরে
নামাজ পড়া বাইরের ঘরে নামাজ পড়ার চেয়ে উত্তম
এবং বাইরের ঘরে নামাজ পড়া মসজিদে নামাজ পড়ার
চেয়ে উত্তম।” (সুনানুল কোবরা লিল বায়হাকী)
অন্য হাদীস শরীফে উল্লেখ করা হয়,
হযরত উম্মে হুমাইদ(রাঃ) হতে বর্ণিত- তিনি বলেন ইয়া
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আমরা
মহিলারা আপনার সাথে নামাজ পড়তে ইচ্ছুক কিন্তু
আমাদের স্বামীরা আমাদেরকে নিষেধ করেন। অতঃপর
সাইয়্যিদুল মুরছালীন, নবীয়ে পাক সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তোমাদের জন্য সাধারণ
ঘরে নামাজ পড়ার চেয়ে, খাছ ঘরে নামাজ পড়া উত্তম
এবং সাধারণ ঘরে নামাজ পড়া মসজিদে জামায়াতে
নামাজ পড়ার চেয়ে সর্বোত্তম।” (সুনানুল কোবরা,
জাওহারুন নক্কী)
এ হাদীস শরীফ দ্বারা স্পষ্টই বুঝা যায় যে, সাইয়্যিদুল
মুরছালীন হুযুরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম স্বামী কর্তৃক মহিলাদের মসজিদে যাওয়ার
নিষেধকে সমর্থন করেন। যদি তিনি সমর্থন না করতেন,
তবে অবশ্য তিনি বলতেন, বাঁধা দেওয়া ঠিক হবে না। এর
দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, মহিলাদের মসজিদে
যেতে নিষেধ করা নাজায়েজ নয় বরং জায়েজ।
এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে আরো উল্লেখ করা হয়,
হযরত উম্মে হুমাইদ(রাঃ) হতে বর্ণিত- তিনি সাইয়্যিদুল
মুরছালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযুরে পাক সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট এসে বললেন, ইয়া
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আমি
আপনার সাথে নামাজ পড়তে অধিক আগ্রহী। অতঃপর
সাইয়্যিদুল মুরছালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযুরে পাক
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “অবশ্যই আমি
জানি তুমি আমার সাথে নামাজ পড়তে ভালবাস বা
অধিক আগ্রহী। কিন্তু তোমার, আমার মসজিদে নামাজ
পড়ার চেয়ে তোমার গোত্রের মসজিদে নামাজ পড়া
উত্তম এবং গোত্রের মসজিদে নামাজ পড়ার চেয়ে
হুজরায় নামাজ পড়ার আরও উত্তম এবং হুজরায় নামাজ পড়ার
চেয়ে ঘরে নামাজ পড়া সর্বোত্তম।” (আহমদ, ইবনে
হাব্বান, তিবরানী)
এ হাদীস শরীফে সাইয়্যিদুল মুরছালীন, ইমামুল মুরসালীন
হুযুরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর
মসজিদে নামাজ পড়ার চেয়ে ঘরে নামাজ পড়া উত্তম
বলেছেন। যেখানে ঘরে নামাজ পড়া রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে নামাজ
পড়ার চেয়ে উত্তম, সেখানে অন্য মসজিদে নামাজ
পড়তে যাওয়া কি করে মজীলতের আশা করা যায়? অথচ
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর
সাথে নামায পড়ার চেয়ে উত্তম, সেখানে অন্য
মসজিদে নামায পড়তে যাওয়া কি করে ফজীলতের আশা
করা যায়? অথচ আল্লাহ পাকের রাসূল হুযুরে পাক
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে এক
রাকায়াত নামাজ পড়া লক্ষ রাকায়াত নামাজের
চেয়েও সর্বোত্তম। কাজেই যদি জামায়াতের
ফজীলতের জন্য মহিলাদের মসজিদে আসার অনুমতি
দেওয়া হতো, তবে ঘরে নামাজ পড়া হুযুরে পাক
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে নামাজ
পড়ার চেয়ে উত্তম বলা হতোনা। মুলতঃ এর দ্বারা এটাই
বুঝা যায় যে, মহিলাদের মসজিদে বা ঈদগাহে যাওয়ার
অনুমতি ইলম অর্জনের জন্যই দেওয়া হয়েছিল।
হাদীস শরীফে আরো উল্লেখ রয়েছে যে,
হযরত আবু ওমর শায়বানী(রাঃ) হতে বর্ণিত- তিনি বলেন,
তিনি দেখেছেন হযরত আব্দুল্লাহ্(রাঃ)কে জুময়ার দিন
মহিলাদেরকে মসজিদেরকে মসজিদ হতে একথা বলে
বের করে দিতেন যে, “হে মহিলারা, তোমরা
তোমাদের ঘরে ছলে যাও, কারণ নামাজের জন্য
তোমাদের ঘরই উত্তম।” (তিবরানী শরীফ)
উপরোক্ত হাদীস শরীফসমূহের আলোচনা থেকে এটা
স্পষ্টই প্রমাণিত হয় যে, সাইয়্যিদুল মুরছালীন, ইমামুল
মুরসালীন হুযুরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম শুধু মহিলাদের ঘরে নামাজ পড়ার জন্য কার্যতঃ
উৎসাহ প্রদান করেননি বরং ঘরে নামাজ পড়ার বহু
ফজীলতও বর্ণনা করেছেন। যেমন হাদীস শরীফে উল্লেখ
করা হয়,
“মহিলাদের মসজিদে জামায়াতে নামাজ পড়ার চেয়ে
ঘরে একা নামাজ পড়ার ২৫ গুণ বেশী ফজীলত পাওয়া
যায়।” (দায়লমী শরীফ ২য় জিঃ পৃঃ ৩৮৯)
হযরত ওমর(রাঃ)-এর নিষেধাজ্ঞা ও হযরত আয়েশা
(রাঃ)এর সমর্থন
পর্দার গুরুত্ত ও মহিলাদের ঘরে নামাজ পড়ার উৎসাহ ও
ফজিলতপূর্ণ হাদীস শরীফের দিকে লক্ষ্য রেখে আমীরুল
মো’মেনীন হযরত ওমর(রাঃ) ইজতেহাদ করতঃ
মহিলাদেরকে মসজিদে এসে জামায়াতে নামাজ
পড়তে নিষেধ করে দেন। তখন মহিলারা হযরত আয়েশা
সিদ্দিকা(রাঃ)-এর নিকট গিয়ে এ ব্যাপারে অভিযোগ
করেন, তখন হযরত আয়েশা(রাঃ) বলেন, “যদি হুযুরে পাক
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমাদের এ
অবস্থায় পেতেন, তবে অবশ্য তিনিও তোমাদেরকে
মসজিদে যেতে নিষেধ করতেন।” (বুখারী,আবূ দাউদ,
মেশকাত)
সতরাং, হযরত ওমর(রাঃ)-এর নিষেধাজ্ঞা ও হযরত
আয়েশা সিদ্দিকা(রাঃ)-এর সমর্থন বিরধিতা করে প্রথম
যুগের দোহাই দিয়ে মসজিদে গিয়ে জামায়াতে
নামাজ পড়া সম্পূর্ণ কোরআন-সুন্নাহ্ বিরোধী। কেননা,
কোরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
“যারা হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রাদিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুমগণকে ইখলাছের সাথে অনুসরণ করবে, তাঁদের প্রতিও
আল্লাহ্ পাক সন্তুষ্ট এবং তারাও আল্লাহ্ পাক-এর প্রতি
সন্তুষ্ট।” (সূরা তওবা-১০০)
কোরআন শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
“একমাত্র কাফিররাই তাঁদের অর্থাৎ ছাহাবা-ই-কিরাম
রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ
করে থাকে।” (সূরা ফাত্হ-২৯)
হাদীস শরীফে উল্লেখ করা হয়,
হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
“তোমাদের জন্য আমার সুন্নত ও আমার খোলাফায়ে
রাশেদীনের সুন্নত অবশ্যই পালনীয়।” (মিশকাত, মিরকাত,
আবূ দাউদ, তিরমীযী, আহমদ, ইবনে মাজাহ্)
“আমার প্রত্যেক সাহাবা-ই-কিরাম(রাঃ) তারকা
সাদৃশ্য, তাঁদের যে কাউকে তোমরা অনুসরণ করবে,
হিদায়েত পেয়ে যাবে” (মিশকাত শরীফ)
সতরাং, খোলাফায়ে রাশেদীন, সাহাবা-ই-কিরাম
(রাঃ)গণের হুকুম-আহকাম, বিধি-নিষেধও আমাদের জন্য
অবশ্যই অনুসরনীয়। কেননা তাঁদের অনুসরণ করার অর্থই হলো,
আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লামকে অনুসরণ করা। আর তাঁদের হুকুমকে অস্বীকার
করার অর্থই হলো আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব হুযুরে পাক
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হুকুমকে
অস্বীকার করা। আর বিশেষ করে হযরত ওমর(রাঃ)-এর
ফাযায়েল ফজীলত যেটা বলার অপেক্ষাই রাখেনা।
যাঁর সম্পর্কে হাদীস শরীফে উল্লেখ করা হয়,
“নবীদের পরে শ্রেষ্ঠ মানুষ হযরত আবূ বকর সিদ্দীক(রাঃ),
অতঃপর হযরত ওমর(রাঃ)।”
হাদীস শরীফে আরো উল্লেখ করা হয়,
“যদি আমার পরে কেউ নবী হতো তবে হযরত ওমর(রাঃ)ই
নবী হতেন।”
অন্য হাদীস শরীফে বলা হয়,
“স্বয়ং আল্লাহ্ পাক হযরত ওমর(রাঃ)-এর জবানে কথা
বলেন।”
হুযুরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো
বলেন, “শয়তান হযরত ওমর(রাঃ)কে দেখলে, তার মাথা
খারাপ হয়ে যেত, কোন রাস্তা দিয়ে পালাবে।”
যে হযরত ওমর(রাঃ)-এর এত ফজীলত ও মর্যাদা, তাঁর পক্ষে
কি করে কোরআন শরীফ, হাদীস শরীফের বিরোধিতা
করা সম্ভব? এটা কল্পনাও করা যায় নয়া।
“মুজামুল ওয়াজিজ” নামক কিতাবে উল্লেখ আছে যে,
হযরত আয়েশা সিদ্দিকা(রাঃ)-এর সমন্ধে হুযুরে পাক
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
“তোমরা অর্ধেক দ্বীন গ্রহন করবে হযরত আয়েশা(রাঃ)
হতে।”
সুতরাং, দ্বীন গ্রহণের ক্ষেত্রে হযরত আয়েশা সিদ্দিকা
(রাঃ)-উনার বিধি-নিষেধ মেনে চলা মুসলমান
হিসেবে অবশ্যই পালনীয়। আর উনি যে বিষয়ে সমর্থন
করেছেন সেটার বিরোধিতা করাও আল্লাহ্ পাক ও
হুযুরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনাদের বিরোধিতা করা।
অতএব, যাদেরকে অনুসরণ করা আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব
হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নির্দেশ
ও তাঁদের সন্তুষ্টি লাভের কারণ, আমাদেরকে তাদেরই
অনুসরণ করতে হবে। যদি এটাই হয় তবে মহিলাদের
জামায়াতের জন্য মসজিদে যাওয়াকে কি করে জায়িয
বলা যেতে পারে? মূলতঃ মহিলাদের জামায়াতকে
জায়িয বলার অর্থই হলো-
১) কালামুল্লাহ শরীফ তথা আল্লাহ্ পাককে অবজ্ঞা করা।
২) হাদীছ শরীফ তথা হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লামকে অমান্য করা।
৩) উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা ছিদ্দীকা রদিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য বা অবজ্ঞা ও অমান্য
করা।
৪) উম্মুল মু’মিনীন ও হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুমগণকে অপূর্ণ বলে সাব্যস্ত করা।
৫) নিজেকে হযরত ওমর ইবনুল খত্তাব রদিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু, হযরত আয়িশা সিদ্দিকা রদিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহাসহ সকল ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্দিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুম থেকে বেশী জ্ঞানী ও বড় মনে করা।
৬) হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুমগণ জায়েযকে নাজায়েয করেছেন বলে
দোষারোপ করা।
৭) হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুমগণের প্রকাশ্য বিরোধিতা করা ও বিদ্বেষী হওয়া।
৮)শরীয়তের একটি অন্যতম দলীল “ইজমা”কে অস্বীকার করা
বা ইজমার বিরোধিতা করা।
উপরোক্ত উল্লেখিত সবগুলোই কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। আর
শরীয়তের ফয়সালা হলো- যে কুফরী করে সে মুরতাদ হয়ে
যায়।
আল্লাহ্ পাক বলেন,
“একমাত্র কাফিররাই তাঁদের অর্থাৎ ছাহাবা-ই-কিরাম
রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ
করে থাকে।” (সূরা ফাত্হ-২৯)
সতরাং, এটাই বুঝা যাচ্ছে যে, মহিলাদের
জামায়াতকে জায়িয বলা হযরত ওমর ইবনুল খত্তাব
রদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আয়িশা সিদ্দিকা
রদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা- উনাদের বিরোধিতা
করা যা খাছ ভাবে কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
ইজমায়ে উম্মত
আর পরবর্তীতে ইমাম, মুজতাহিদগণ পর্দার গুরুত্ব মহিলাদের
ঘরে নামাজ পড়ার উৎসাহ ও ফজীলতপূর্ণ হাদীস শরীফ ও
হযরত ওমর(রাঃ)-এর নিষেধাজ্ঞা ও হযরত আয়েশা
সিদ্দিকা(রাঃ)-এর সমর্থনের দৃষ্টিতে ইজতাহিদ করতঃ
কেউ বিনা শর্তে মাকরূহ্ তাহরীমী ফতওয়া দেন, আর কেউ
শর্ত সাপেক্ষে মাকরূহ্ তাহরীমী ফতওয়া দেন, তবে
হানাফী মাযহাবের সকল ইমামগণই বিনাশর্তে মাকরূহ্
তাহরীমী ফতওয়া দেন এবং উক্ত ফতওয়ার উপর উম্মতের
ইজমা ঐকমত প্রতিষ্ঠা লাভ করে, বিশেষ করে হানাফী
মাযহাবের ইমাম মুজতাহিদদের মধ্যে।
যেমন ইমদালুল আহকাম কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে,
“মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতের সাথে
নামাজ পড়া মাকরূহে তাহরীমী হওয়ার ব্যাপারে
উম্মতদের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।” (ইমদাদুল আহকাম ১ম
জিঃ, পৃঃ ৪২৫)
বিশ্ব বিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য ফিকাহ ও ফতওয়া কিতাব
দোররুল মোখতার-এর শরাহ্ গায়াতুল আওতার এর বর্ণনা
নিম্নরূপ-
“মহিলাদের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, জুময়া ও ঈদের
নামাজের জামায়াতে উপস্থিত হওয়া মাকরূহে
তাহরীমী, যদিও প্রাপ্তা বয়স্কা ও বৃদ্বা হোক, ফিতনা
সৃষ্টি হওয়ার আশংকায়। তাই পরবর্তী ফকীহগণ ফতওয়া দেন
যে, মহিলাদের জামায়াতের জন্য বের হওয়া মাকরূহে
তাহরীমী। অনুরূপভাবে তাহতাবী কিতাবেও উল্লেখ
রয়েছে।”(গায়াতুল আওতার ১ম জিঃ পৃঃ ২৬৩)
তদ্রুপ ফতওয়ায়ে রহীমিয়ায় বিশ্ব বিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য
ফিকাহর কিতাব দররুল মোখতার-এর বরাত দিয়ে উল্লেখ
করা হয়,
“মকীহগন ফতওয়া দিয়েছেন যে, মহিলাদের
জামায়াতের জন্য মসজিদে যাওয়া মাকরূহে তাহরীমী।
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জামায়াত হোক অথবা ঈদ ও
জুময়ার নামাজের জামায়াত হোক। (যেমন দোররুল
মোখতার কিতাবে উল্লেখ রয়েছে) মহিলাদের পাঁচ
ওয়াক্ত নামাজসহ ঈদ ও জুময়ার নামাজের জামায়াতে
উপস্থিত হওয়া মাকরূহে তাহরীমী।” (দোররুল মোখতার, ১ম
জিঃ পৃঃ ৩৮৩)
ফতওয়ার কলেবর বৃদ্ধির আশংকায় এখানে মাত্র কয়েকটি
কিতাবের ইবারত পেশ করা হলো। এগুলো ছাড়াও
নিম্নোত্ত সমস্ত কিতাব সমূহে মহিলাদেরকে
জামায়াতের জন্য মসজিদে যাওয়া মাকরূহে তাহরীমী
বলে উল্লেখ আছে। যেমনঃ
১)ওমদাতুল কারী শরহে বোখারী, ২)ফায়জুল বারী শরহে
বোখারী, ৩)ফাতহুল মুলহিম শরহে মুসলিম, ৪)বযলুল মাযহুদ
শরহে আবু দাউদ, ৫)মেরকাত শরহে মিশকাত, ৬)আশয়্যাতুল
লোময়াত ৭) মোযাহেরে হক, ৮) দরসে তিরমিযী, ৯)
মায়ারিফে মাদানিয়া, ১০) ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া, ১১)
তাতার খানিয়া, ১২) বাদায়েউস সনায়ে, ১৩) বাহরুর
রায়েক, ১৪) আল জাওহারাতুন নাইয়্যারাহ, ১৫) আইনী
শরহে হেদায়া, ১৬) শামী, ১৭) রদ্দুল মোহতার,
১৮)মারাকিউল ফালাহ, ১৯) খোলাছাতুল ফতওয়া, ২০)
শরহে বেকায়া, ২১) এলাউস সুনান, ২২) হেদায়া, ২৩) আইনুল
হেদায়া, ২৪) কুদুরী, ২৫) ফতওয়ায়ে দেওবন্দ, ২৬) আহসানুল
ফতওয়া, ২৭) মাদানুল হাকায়েক, ২৮) আহসানুল মাসায়েল,
২৯) কেফায়াতুল ফুফতী, ৩০) ফতওয়ায়ে রহিমিয়া, ৩১)
ইমদাদুল আহকাম, ৩২) মাশারিকুল আনওয়ার ও ৩৩) ফতওয়ায়ে
নঈমিয়া ইত্যাদি।
পরিশেষ এ বলা যায় যে, মুসলমানগণ ইবাদত তথা নামায,
রোযা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি কেন আদায় করে, নিশ্চয়ই
মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীবের খাছ রেযামন্দি বা
সন্তুষ্টি হাছিল করার জন্য। যদি তাই হয়ে থাকে, তবে
তো শরীয়তের ফায়ছালা মুতাবিক মহিলাদের নিজ ঘরে
একাকি নামায পড়ার মধ্যে যেরূপ ২৫ গুণ বেশী ফযীলত
রয়েছে তদ্রুপ মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব হুযুর পাক
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ সন্তুষ্টিও
রয়েছে। আর তার বিপরীত মহিলাদের জামায়াতের জন্য
মসজিদ, ঈদগাহে যাওয়া নবী (সা.) এর মতের বিপরীত
হওয়ার কারণে তা মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব হুযুরে
পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অসন্তুষ্টির
কারণ।
আল্লাহ্ পাক আমাদেরকে প্রত্যেককে সকল শরীয়ত
বিরোধী ও বেদয়াত কাজ থেকে হিফাযত করুন এবং
কোরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজমা ও কিয়াসের উপর
পরিপূর্ণ কায়েম থাকার তওফিক দান করুন। (আমিন

৪| ১৩ ই মে, ২০১৬ রাত ১:৫০

নাফিয়া মারিয়া বলেছেন: নারীর মর্যাদা দেয়া নিয়ে লাফায় তারা । অথচ তাদের ধর্মগ্রন্থ ক্বোরান শরীফের 'সূরা নিসা'য় মহিলাদের প্রহার করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে । অন্যদিকে হাদিসে পুরুষদের অন্যায় স্ত্রীকে নীরবে সহ্য করে স্বামীকে নরম ভাষায় বোঝানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে... হাহ্!

১৩ ই মে, ২০১৬ রাত ২:০৫

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: আপনার কমেন্ট পড়ে বুঝলাম আপনার জানায় বিরাট ভুল আছে। নিচের লেখাটি পড়লে কিছুটা হলেও বুঝবেন।

http://www.somewhereinblog.net/blog/manzur_mc/30122473

৫| ১৩ ই মে, ২০১৬ রাত ২:০৩

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন: - ভাল

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.