নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
গতকালকের লেখার জের ধরেই আজকের লেখা। শুরুতে ভূমিকা টেনে নেই। লম্বা - কিন্তু এর প্রয়োজন আছে।
আমরা যখন আমাদের অফিসে নতুন কাউকে চাকরিতে নেই - সেই সিস্টেমটা একটু বয়ান করি।
প্রথমে বিজ্ঞাপন দেয়া হয় অমুক পদের জন্য লোক লাগবে। যোগ্যতা এই ঐ হতে হবে।
বিজ্ঞাপন দেখে শ খানেক প্রার্থী আবেদন করে। এইচআর ডিপার্টমেন্ট তখন ফিল্টার করে আমাদের ভিপির কাছে রেজুমেগুলো (বাংলায় সিভি বা জীবনবৃত্তান্ত ইত্যাদি) পাঠায়। রেজুমেগুলোতে অতি সংক্ষেপে প্রার্থীর যোগ্যতা লেখা থাকে। সে অমুক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছে, তমুক জায়গায় কাজ করেছে, এটা ঐটা সে করতে পারে।
শ'খানেক রেজুমে থেকে বাছাই করে আট দশটা রেজুমে এইচ আরের কাছে ফেরত পাঠিয়ে বলা হয় পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে।
এইবার সেই আট দশজনকে ফোনে ইন্টারভিউ নেয়া হয়। সেখানে অনেকে বাদ পড়েন। সংখ্যা সর্বোচ্চ পাঁচ ছয়ে এসে শেষ হয়।
এদের ডাকা হয় ফেস টু ফেস ইন্টারভিউর জন্য। ইন্টারভিউ নেন ম্যানেজার, সিনিয়র ম্যানেজার, ভিপি প্রমুখ।
সেখান থেকে একজনকে বাছাই করা হয়।
এইচআর এইবার নামে ব্যাকগ্রাউন্ড চেকে। পুলিশ রিপোর্ট জানায় (ব্যাংকে কাজ করতে হলে এফবিআই ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করে) প্রার্থী অতীতে কোন কুকর্মে লিপ্ত ছিল কিনা। সাথে ব্লাড টেস্ট করা হয়। প্রার্থী মাদকাসক্ত কিনা সেটাও পরীক্ষা করা হয়।
সবকিছু ক্লিয়ার হলে তারপরে প্রার্থীর কাছে কন্ট্রাক্ট পাঠানো হয়। সাইন করলে তবেই সে চাকরি পায়।
ডিরেক্টর, ভিপি এমনকি সিইওর সন্তানও প্রার্থী হলে একই পদ্ধতির মধ্য দিয়ে তাঁদের যেতে হবে। রেফারেন্স হিসেবে একটা এডভান্টেজ অবশ্যই পাবেন - কিন্তু ঐটুকুই। সিইওর মাদকাসক্ত সন্তান যদি এক লাফে সিএফও হয়ে যায় - তাহলে দেখা যাবে সেদিনই কোম্পানির ৮০% কর্মচারী ইস্তফা দিয়ে দিয়েছেন।
অ্যামেরিকা চাটুকারিতার জোরে নয়, শক্ত মেরুদণ্ডের কারনে বিশ্ব শাসন করে।
একটা বাস্তব উদাহরণ দেই।
আমার চাচা লেক্সাস ডিলারশিপে ফাইন্যান্স ম্যানেজার। লংগো লেক্সাস। তাঁর মালিকের (পেন্সকি - অ্যামেরিকা ব্যাপী বিশাল বিশাল সব ব্যবসা আছে, কোটি কোটি কোটি পতি বললেও কম বলা হয়) ছেলে ইউসিএলএ থেকে এমবিএ পাশ করে বাপের ডিলারশিপে যখন কাজ নিতে এসেছে, বাপ প্রথমদিন তাঁকে পাঠিয়ে দিয়েছে গাড়ি ধোয়া মুছার কাজে। বুঝতে পারছেন? সবচেয়ে লোয়ার ক্যাটাগরির জব। সেখান থেকে মাসের পর মাস বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে কাজ করে করে পোক্ত হয়ে হয়ে কয়েক বছর পরে ছেলে নিজের যোগ্যতায় ডিরেক্টর পদে গিয়েছে। এখন এই ছেলেকে কেউ এসে বুগিচগি বুঝাতে পারেনা, কারন সে ঐসব ডিপার্টমেন্টে কাজ করে সব জেনে শিখে এসেছে। আখেরে কোম্পানিরই লাভ হয়েছে।
আমাদের ক্যানভাসের নিয়মিত পাঠক ফরহাদ ভাইও নিজের ছেলের ক্ষেত্রে একই কাজ করেছেন। নিজের বিখ্যাত চেইন শপে ছেলেকে দিয়ে ট্রাক আনলোডের কাজ দিয়েছেন। ছেলে একটা সময়ে বাবার স্থান নিবে - কিন্তু রেডিমেড খাবার যেহেতু পাতে তুলে দেয়া হয়নি, কাজেই সেই কাজটির সে কদর করতে শিখবে।
এই গেল একটি কোম্পানির সামান্য একটি পদের জন্য নিয়োগ পদ্ধতি। সেখানে আমরা দেশের বড় বড় পদগুলিতে নিয়োগ কিভাবে দেই? অমুক সন্ত্রাসী, তমুক গড ফাদার টাকা ও ক্ষমতার জোরে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দুই দলের মার্কায় দাঁড়িয়ে যায় - জনগণ ভোট দেন - এবং তারা মন্ত্রী সাংসদ হয়ে যায়।
আমি রাজনীতি এড়িয়ে চলা মানুষ। কারন আমার এই সিস্টেমটার উপরই বিশ্বাস নেই।
যাদেরকে আমাদের চৌদ্দ শিকের কারাগারের ওপারে রাখার কথা - তাদেরকেই আমরা ভিভিআইপি বানিয়ে ফেলি।
কেমন লাগে একজন মুক্তিযোদ্ধা জেনারেল যখন একজন যুদ্ধাপরাধী মন্ত্রী-সাংসদকে স্যালুট দিতে বাধ্য হন? কেমন লাগে যখন এক মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এক স্বীকৃত রাজাকারের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকতে বাধ্য হন?
একটি লোক বহু পরিশ্রম করে বিসিএস পরীক্ষা পাশ করে একটি সরকারি দপ্তরে চাকরি নেন। জীবনের বহু চড়াই উৎরাই পেরিয়ে তিনি সেই দপ্তরের একদম শীর্ষ পদে উন্নীত হন। নিজের ডিপার্টমেন্টকে তিনি নিজের হাতের তালুর উল্টো পিঠের মতোই চেনেন। ঠিক তখনই জনগনের ভোটে নির্বাচিত হয়ে এমন কেউ তাঁর "বস" হয়ে যায় যার অভিজ্ঞতা রাস্তাঘাটে মিছিল মিটিং করা পর্যন্তই। যেহেতু এই লোকটা এখন তাঁর বস, কাজেই এর কথাই শুনতে হবে, মানতে হবে। তাঁর অভিজ্ঞতা, যোগ্যতার মূল্য এখানে সামান্যই।
বুঝতে পারছেন তখন সেই যোগ্য-শিক্ষিত-অভিজ্ঞ ব্যক্তিটির মনের ভিতর কী চলে?
পুলিশি উদাহরণ দেই। আমাদের ক্যানভাসেই যেহেতু অনেক পুলিশ বাহিনীর সদস্য আছেন, ভুল হলে তাঁরা শুধরে দিতে পারবেন।
সবাই জানি পুলিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করে।
একজন যুবক বহু কষ্টে বিসিএস পাশ করে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেয়। তারপর জীবন বাজি রেখে মরতে মরতে বেঁচে গিয়ে অপরাধী চক্র ঠ্যাংঙিয়ে একটা সময়ে আইজিপি হয়। তাঁর উপর তখন কেবল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এবং তখনই দেখা যায় ক্যাচালটা বাঁধে। আইজিপি ও তাঁর বাহিনীর প্রতিটা সদস্যের আছে ট্রেনিং, অভিজ্ঞতা। তাঁরা জানেন কিভাবে ক্রিমিনালদের বিনাশ করতে হয়। কিন্তু মন্ত্রী মহাশয় যদি বলেন, "অমুককে ধরা যাবেনা, এবং তমুককে ক্রসফায়ারে ফেলে দাও" - তখন বাংলাদেশের সামাজিক/রাজনৈতিক রীতি অনুযায়ী সেই আইজিপি বাধ্য হন তাঁর বসের হুকুম মানতে। যদি না মানেন, এই ফাজিল মন্ত্রী তাঁকে সিস্টেম করে দিবেন - এবং দেশের দলকানা অন্ধ জনগণ তাঁর পাশে এসে দাঁড়াবে না একটুও। কারন তাদের আছে অনলাইন নিউজ পত্রিকা এবং ফেসবুক।
এইটা পরীক্ষিত সত্য।
হাজার হাজার ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাই গ্রেপ্তার হওয়া সন্ত্রাসী বহাল তবিয়তে থানা থেকে বেরিয়ে আসছে। কার ফোন কলে ঘটনা ঘটে বলে আপনাদের ধারণা?
অথচ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদে সবচেয়ে যোগ্যতম ব্যক্তি কিন্তু সেই আইজিপি এবং তাঁর সমপর্যায়ের কিছু অফিসারের - যারা তাঁদের জীবন দিয়েছেন এই ডিপার্টমেন্টের পেছনে।
আমাদের দেশের কী সিস্টেম এমন হলে হতো না যে, যে যার ডিপার্টমেন্টের মন্ত্রী হতে ইচ্ছুক, তাঁকে সেই ডিপার্টমেন্টের কাজে অভিজ্ঞ হতে হবে। একটি লোক মৎস মন্ত্রী হতে হলে তাঁকে মৎস অধিদপ্তরে কাজ করতে হবে কমসে কম বিশ থেকে পঁচিশ বছর। কেউ পানি সম্পদ মন্ত্রী হতে চাইলে তাঁকেও সেই ডিপার্টমেন্টে বিশ থেকে পঁচিশ বছর অভিজ্ঞ হতে হবে। তারপরে যোগ্যতম ব্যক্তিদের রেজুমে বিচার করে যোগ্যতম ব্যক্তিকেই নিয়োগ দেয়া হবে। তাহলেই "দাদারা কথা দিয়েছেন ব্রক্ষ্মপুত্রে পানি না দিলে বাংলাদেশের ক্ষতি হবেনা" কিংবা "জঙ্গিদের ব্যাপারে আমাদের কাছে তথ্য ছিল" জাতীয় বুলশিট বাণী শুনতে হবেনা।
এমনকি প্রধানমন্ত্রী হতে হলেও তাঁকে নানান মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন মেয়াদে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। কারও পিতা, কারও স্বামী সাবেক প্রধানমন্ত্রী এটা কোন যোগ্যতা হতে পারেনা। "গণতন্ত্র" আর "পরিবারতন্ত্রে" আকাশ পাতাল ফারাক আছে - এইটা আশা করি আমরা বুঝি। কিন্তু কিছু বলিনা। কারন, আমার নেতাকে, তাঁর দলকে চোখ বন্ধ করে সমর্থন করে যেতে হবে।
একটি সরকারি চাকরি পেতে হলেও যেখানে বিসিএস নামের আজাবের মধ্য দিয়ে যেতে হয়, সেখানে একজন নেতা "আমার ভাই তোমার ভাই" চাটুকারিতা করে আরামসে তাঁদের বস হয়ে যাচ্ছে। এটাকে কিভাবে "আদর্শ" সিস্টেম বলে?
তারেক জিয়া কোন যোগ্যতায় বিএনপিতে যোগ দিয়েই যুগ্মমহাসচিব হয়ে যায়? এবং চাটুকারেরা সরাসরিই ভাষণে বলে - "বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রনায়ক" - বাকিরা কী ফাজলামি করতে পার্টি পলিটিক্স করে? দেশের স্বার্থে দলে যোগ দেয়া বর্ষীয়ান নেতাদের কোনই মূল্য নেই? সারা জীবন চাকর হওয়াই তাঁদের নিয়তি?
সজীব ওয়াজেদ জয়ের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার ঘটছে।
আমারতো মনে হয় তৃণমূল পর্যায়ে ভোটারদেরও যোগ্যতা পরীক্ষা করে সার্টিফাই করা উচিৎ। যে কেউ কেন ভোট দিতে পারবে? বিড়ি বিক্রেতা জব্বার আলী, কিংবা রাজপথ ঝাড়ু দেয়া সগীরা খাতুন যেখানে মাত্র পাঁচশো টাকা পেলেই নিজের ভোট বিক্রি করে দেন - সেই ভোটের উপর কেন আমরা ভরসা করবো? একটি কোম্পানির অগা মগা শেয়ার হোল্ডাররা কী সিইও নির্বাচনে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারেন? মোটেই না। বোর্ড অফ ডিরেক্টর সেটা করে থাকেন। কারন তাঁরা বুঝেন কে যোগ্য। তাহলে দেশের ক্ষেত্রে এমনটা করতে ক্ষতি কী?
যদি যোগ্য লোক যোগ্য জায়গায় যোগ্যতামতন কাজ করতে না পারেন, তাহলে তাঁকে অপসারণ করে দ্বিতীয় কাউকে নিয়োগ দেয়া হবে।
তাহলে দেশ থেকে রাজনীতিই উঠে যেত। এবং তাহলেই দেশে কোন ঝামেলা থাকতো না।
ছাত্ররা রাজনীতির নাম করে একে অপরের খুন করে ফেলছে। যেখানে তাঁদের তপস্যা কেবল পড়ালেখা হবার কথা - সেখানে ওরা এই ঐ আন্দোলনের নাম করে সেশনজট বাঁধাচ্ছে। যে শিক্ষকদের উদ্দেশ্য কেবল ছিল শিক্ষাদান, তাঁরাও রাজনীতি করে ক্লাস বর্জন থেকে শুরু করে অনেক নোংরামি করছেন।
দেশে কোন হরতাল হতো না, হতো না কোন হানাহানি। সবাই কাজ করতেন দেশের জন্য। প্রতিটা ডিপার্টমেন্ট যার যার ক্ষেত্রে স্বাধীন, আবার একই সাথে দেশের প্রতি দায়বদ্ধ।
রূপকথার মতন শোনাচ্ছে? বলবেন, এমন সিস্টেম পৃথিবীর কোথাও নেই। আমাদের হবে কেন?
নেই তো কী হয়েছে? আমরা কী পথিকৃৎ হতে পারিনা?
মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাজউদ্দিন আহমেদ - বর্তমান নিয়ম মেনে শেখ কামাল বা শেখ জামাল বা শেখ হাসিনা (যারা বয়সে একদমই তরুণ এবং অভিজ্ঞতায় ছিলেন শূন্য) নেতৃত্ব দিলে আজকে হামে উর্দুমে ইয়ে স্ট্যাটাস লিখনা পারতা।
আমি খুব হতাশ হই যখন দেখি তরুণ প্রজন্ম, যাদের দেশটা বদলে ফেলার কথা - তারা একে অপরের মাথা কাটায় ব্যস্ত কেবল নিজের দলকে ভিত্তি ধরে। নিজের দলের হাজারো খুন মাফ, অন্যের দলের পান থেকে চুন খসলেও মুণ্ডুপাত করতে হবে।
তারেক জিয়ার ইতিহাস শিক্ষা চোখ বন্ধ করে গ্রহণ করেন, হাত তালি দিয়ে বলেন "ঠিক ঠিক ঠিক।"
এবং আরেকদল রামপাল, সুন্দরবন কিংবা পানি চুক্তির মতন আত্মঘাতী বিষয়গুলোতেও দিব্যি মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকেন।
আমরা কবে বুঝব যে দেশটা আমাদের? মরলে আমরাই মরবো, বাঁচলেও আমরাই শ্বাস ফেলবো।
২| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৬ ভোর ৪:৩৭
আব্দুল্যাহ বলেছেন: আগামী বদল করবে কে!
আমরা শুধু অভিযোগ করেই চুপ, বিচার দেখার কেউ নেই। ফালতু কারণে সময় নষ্ট করে কি করবে বলুন, বিনোদন এখন হাতের মুঠোয়। তাই বিনোদন ছেড়ে কথা বলে কি লাভ!
©somewhere in net ltd.
১| ১৩ ই আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৪:১৮
মো: হাসানূর রহমান রিজভী বলেছেন: অসাধারন