নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
ইকবাল যখন পা পিছলে গভীর পানিতে পরে গেলে তারেক এবং আশিক দুইজনই ঝাঁপিয়ে পড়লো তাঁকে টেনে তুলতে। ইকবাল সাঁতার জানতো না, আশিকও না, তারেকও না। আমরা ছিলাম নদীর এপারে। আমাদের সাত বন্ধুর মধ্যে একমাত্র সাঁতারু রানা ঝাঁপিয়ে পড়লো বন্ধুদের উদ্ধারে। সে খুবই দ্রুত সাঁতরাতে পারে। কিন্তু তখন মনে হচ্ছিল ওরা যেন তারচেয়েও দ্রুত ডুবে যাচ্ছে।
রানা মাঝপথ পৌঁছাবার আগেই ইকবাল পানিতে হারিয়ে গেল। আশিকও প্রায় ডুবে গেছে রানার হাতের টানে কোন রকমে নাক পানির উপরে আনতে পারে। তারেক তখনও কিভাবে কিভাবে যেন হাত পা ছুড়ে ভেসে আছে। দুইজনকে দুই হাতে ধরে রানা ভাসছে। ইকবালের দেখা নেই। ছোট ছোট দুটা বাচ্চা ছোট একটা ডিঙি নাও নিয়ে খেলছিল - আমরা তাদের তাড়িয়ে দিলাম ওদের বাঁচাতে।
ছোট ছোট হাতে ছোট বৈঠা বেয়ে নৌকা পৌঁছাতে দেরি হচ্ছে। ইকবালের তখনও দেখা নেই।
আশিক এবং তারেককে কোন রকমে নৌকা ধরে ভাসতে দিয়ে রানা ডুব সাঁতার শুরু করলো। কাঁচের মতন স্বচ্ছ পানি। সূর্যের আলো নেমে যাচ্ছে দশ বিশ হাত গভীরে। তবুও ইকবালকে দেখা যাচ্ছে না।
পানির নিচে তিন চার মিনিট থাকলেই যেখানে মানুষ মরে যায় - আমার হাতঘড়ি তখন আমাকে বলছে যে আধ ঘন্টা পেড়িয়ে গেছে। আমার মনে হলো কেউ যেন আমার হাঁটুর নিচ থেকে পা দুটা কেটে ফেলে দিয়েছে। মাথায় হাত দিয়ে তীরে বসে পড়লাম। সামি তখনও ঘড়ি দেখেনি। ও একবার এদিকে দৌড়াচ্ছে, আরেকবার ওদিকে। এবং চিৎকার করে বলছে, "ঐদিকে দেখ, ও ওখানেই আছি। হাতটা একটু নিচে বাড়ালেই ও উঠে আসবে।"
ডুবতে ডুবতে বেঁচে যাওয়া আশিক পেট থেকে সব বের করে দিতেই কিছুক্ষন পরপর বমি করছে। অল্পের জন্য বেঁচে যাওয়া তারেক চিৎ হয়ে তীরে শুয়ে আছে। আশফাক, রুবেল দুইজনই একদম জম্বি। ফ্যাকাশে মুখে কোন প্রাণ নেই। রানা তখনও সাঁতরে যাচ্ছে। ইকবালের কোন খোঁজ নেই।
আমাদের প্রত্যেকের হাতে তখন স্মার্ট ফোন। তার উপর আমার হাতে Sony H সিরিজের ক্যামেরা। ১০৮০পি কোয়ালিটির ভিডিও ধারণ করা যায়। দেখে মনে হয় একদম চোখের সামনে ঘটছে। কিন্তু আমাদের কারোরই মাথায় কেন জানি ঘটনাটা ভিডিও করার চিন্তা এলো না। বরং বন্ধুকে বাঁচানোটাই আমাদের মূখ্য উদ্দেশ্য ছিল। যেকারনে সাঁতার না জেনেও তারেক আশিক ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। আমরা কেউই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভিডিও করিনি।
এম.সি. কলেজে ক্যাম্পাসে (আমার নিজের কলেজ, এখন থেকেই এইচএসসি দিয়েছিলাম, আমার দাদা এবং চাচাও ছিলেন এই কলেজেরই ছাত্র) চোখের সামনে একটি মেয়েকে কুপিয়ে মারতে দেখায় লোকজন "ও মাই গো" (এটি ইংলিশের O my God না - সিলেটিরা লন্ডনের ভক্ত হলেও এক্ষেত্রে ইংলিশ ঝাঁড়েনি। সিলেটিরা "মা" কে "মাই" ডাকে। মানে হচ্ছে "ও মা গো!") বলতে বলতে ভিডিও করলো - অথচ দশ বারোজন গিয়ে টিপে দিলেই শূকর শাবকটা খতম হয়ে যেত। কোথায় থাকে মানুষের মনুষত্ব? আমরা বন্ধুদের কেউইতো ভিনগ্রহের এলিয়েন ছিলাম না - তাহলে এইসব ঘটনায় ভিডিও যারা করে তারা কী মানুষ না?
চাপাতি দেখে ভয় পেয়েছে সবাই? দশ বারোজন এগিয়ে এলে সেই জানোয়ারটা কয়জনকে কোপাতে পারতো? তার আগেইতো তাকে পিষে মেরে ফেলা হতো। একতাবদ্ধ জনতাকে যেকোন দেশের সরকার পর্যন্ত ভয় পায় - সেখানে একটা তেলাপোকা কী চিজ ছিল?
খুব খারাপ লাগলো ঘটনাটা দেখে। তারচেয়ে খারাপ লাগছে এই ঘটনা নিয়ে কাউকে কাউকে রাজনীতি করতে দেখে। কান্ডটা ছাত্রলীগের জানোয়ার করায় দোষটা ইসলামের গায়ে আসছে না, আলহামদুলিল্লাহ! তবে ছাত্রলীগও শুরু করে দিয়েছে বয়ান দেয়া, "উহা সহীহ ছাত্রলীগ নয়। ম্যা ম্যা ম্যা।"
এবং বিপক্ষ দলের অভিযোগ, "ছাত্রলীগের কর্মীর কান্ড দেখুন! ব্লা ব্লা ব্লা।"
জানোয়ারটির অপরাধ থেকেও বেশি হাইলাইট করা হচ্ছে তার রাজনৈতিক পরিচয়টিকে। ওয়াহরে ওয়াহ জনতা এবং মিডিয়া!
অবশ্যই এই জানোয়ারটাকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা গেলে ন্যায় বিচার হতো। আফসোস, সভ্য দেশে অসভ্যদের সাথেও সভ্য আচরণ করতে হয়। "An eye for an eye leaves everyone blind" - কথাটা ফিলোসফি ও ধর্মগ্রন্থে মানায়। বাস্তবে কেউ কারও চোখ উপড়ালে তারও চোখ প্রকাশ্যে উপরে ফেললে বাকিরা অন্যের সাথে অন্যায় করার আগে সাবধান হতো।
©somewhere in net ltd.