নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
মুসলিম মাত্রই ওহুদের যুদ্ধ এবং হুদাইবিয়ার সন্ধির ঘটনা সম্পর্কে অবগত আছেন। ডিটেইল ইতিহাসের কথা বলছি না, স্রেফ নাম এবং মূল ঘটনার কথা বলছি। তারপরেও বোঝার সুবিধার জন্য কাহিনী সংক্ষেপ উল্লেখ করতে চাই। ওহুদের যুদ্ধ দিয়েই শুরু করি।
ওহুদের ময়দানে মুসলিমদের মোকাবিলা ছিল কুরাইশদের বিরুদ্ধে। আগের বছরই বদর ময়দানে কুরাইশদের টপ ক্লাস লিডারশিপ একদম নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবার অপমানের প্রতিশোধ স্পৃহায় ওরা ফুটছিল টগবগ করে। একদিকে খালিদ বিন ওয়ালিদ, অন্য দিকে ইকরিমা ইব্ন আবু জাহেল এবং মাঝখানে আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে ওরা ভীষণ শক্তিশালী দল।
এইদিকে আল্লাহ ভরসায় নবীজির (সঃ) নেতৃত্বে মুসলিম সেনাবাহিনী।
যুদ্ধকৌশলে কোন ট্রেনিং না থাকা সত্বেও নবী মুহাম্মদও (সঃ) একজন মিলিটারি জিনিয়াস ছিল। সেটা প্রমান পাওয়া যায় অনেক ছোটখাট ঘটনা থেকে। আপাতত ওহুদের একটি ঘটনাই উল্লেখ করতে চাই। সেটা হচ্ছে, অপ্রতুল সেনা সদস্য থাকার পরেও তিনি একদল সেনাকে তীর ধনুক একটি নির্দিষ্ট অঞ্চল পাহারায় নিয়োজিত রেখেছিলেন। স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছিলেন যুদ্ধে যাই ঘটুক না কেন, তাঁরা যেন তাঁদের অবস্থান ত্যাগ না করে।
যুদ্ধ শুরু হলে মুসলিমরা আল্লাহু আকবার এবং কুরাইশরা হুবালের নাম নিয়ে একে অপরের উপর ঝাঁপিয়ে পরে। এবং বদরের মতই ওহুদের ময়দানেও কুরাইশরা প্রথম থেকেই মার খেয়ে একদম কোনঠাসা হয়ে একসময়ে পালাতে শুরু করে।
খালিদ ছিলেন জন্ম থেকেই মিলিটারি সুপার জিনিয়াস। তিনি পিছু হটার সময়েও শত্রুর উপর পাল্টা আক্রমণের সুযোগ খুঁজছিলেন। এবং ওহুদ পাহাড়ের একটি খাড়িতে নিজের "এক কোম্পানি" সেনা নিয়ে ঢুকে পড়েন। উল্লেখ্য, সেই খাঁড়িতে মুসলিমদের হাতে ধরা খেলে হয় নিশ্চিত মৃত্যু নাহয় যুদ্ধবন্দী। পালানোর কোনই উপায় নেই।
এইদিকে তীর ধনুক হাতে পাহারাদার সেনা বহর দেখলো মুসলিমরা কুরাইশদের তাড়া করে হারিয়ে দিয়েছে। যুদ্ধে জিতে গেছে ভেবে তাঁরা আনন্দে নিজেদের স্থান থেকে নিচে নেমে এলেন। গনিমতের মাল সংগ্রহ ছিল তার প্রধান আরেকটি কারন।
কথা প্রসঙ্গে বলে ফেলি - তখনকার যুগে কোন প্রফেশনাল সেনাবাহিনী ছিল না। সবাই ক্ষেতে খামারে কাজ করা লোক ছিলেন। কুরাইশরা ছিল ব্যবসায়ী সম্প্রদায়। যুদ্ধের সময়ে প্রতিটা যুবককে যুদ্ধে যেতে হতো। এর বিনিময়ে তাঁদের কাউকেই টাকা দেয়া হতো না। তখন পর্যন্ত নিয়মটা ছিল এমন যে শত্রুকে মারতে পারলে শত্রুর সবকিছু তোমার। তুমি মরলে তোমার সবকিছু শত্রুর।
এখন তীরন্দাজ বাহিনী স্বাভাবিকভাবেই ভেবেছিল তাঁরা যদি এখনই শত্রুর ফেলে যাওয়া অস্ত্র এবং বর্ম সংগ্রহ না করে - তাহলে যুদ্ধ থেকে তাঁদের খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হবে।
খালিদ এই সুযোগটারই অপেক্ষায় ছিলেন। যখনই দেখলেন তীরন্দাজ বাহিনী সরে পড়েছে - তিনি নিজের বাহিনী নিয়ে আক্রমণ করলেন। তাঁর পাল্টা আক্রমনের কুরাইশরাও ঘুরে দাঁড়ালো।
এই কারণেই নবীজি (সঃ) বলেছিলেন, যুদ্ধে যাই ঘটুক, তীরন্দাজ বাহিনী যেন সরে না আসে। তিনি সব ফুটো বন্ধ করেই নাও ভাসিয়েছিলেন।
এখানেও আরেকটা কথা উল্লেখ করি। সবাই জানেন যে খালিদ ওহুদ পাহাড় ঘুরে এসে পেছন থেকে আক্রমণ করেছিলেন। বাস্তবে যেটি অসম্ভব একটি ব্যাপার। ঘোড়ায় চড়ে ওহুদ পাহাড় ঘুরে আসতে পাঁচ ছয় ঘন্টা লাগার কথা। গুগল ম্যাপে দেখে নিলে আইডিয়া পেতে পারেন। খাঁড়ির ঘটনাই যুক্তিযুক্ত।
যাই হোক - পাল্টা আক্রমনে মুসলিম বাহিনী প্রস্তুত ছিল না। একদম বিহ্বল অবস্থায় একেকজন মারা পড়তে লাগলেন। নিহত হলেন অনেক নামকরা সাহাবী। নবীজি (সঃ) নিজেও আহত হলেন ব্যাপক। চেহারায় তীর বিদ্ধ হলেন। কে জানে, তিনি যদি শেষ নবী না হতেন, এবং আল্লাহর অন্য কোন পরিকল্পনা থাকতো - তাহলে ওহুদের যুদ্ধের শহীদের তালিকায় তাঁর নামটাও থাকতে পারতো। ঘটনা এতটাই মারাত্মক ছিল।
আল্লাহ মিরাকেল ঘটালেন - এবং মুসলিমরা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সত্বেও সর্বহারা হয়ে ফেরত আসেনি। সেই ইতিহাস অন্য একদিন হবে ইন শা আল্লাহ।
আপাতত ওহুদের যুদ্ধ শেষে হুদাইবিয়া সন্ধির ঘটনায় আসি।
মুসলিম কাউকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, "বলতো, নবীজির (সঃ) জীবনে ইসলামের সবচেয়ে বড় বিজয় কোনটা ছিল?"
আমি নিশ্চিৎ ৯৫% মানুষ উত্তরে বলবেন মক্কা বিজয়!
কিন্তু এখন যদি বলি কুরআন মোতাবেক উত্তরটি ভুল, তখন? বরং আল্লাহ এমন একটি বিষয়কে "বিজয়" বলেছেন (শুধু বিজয়ই না, "ফাতহান মুবিনা" বলেছেন, manifest Victory), যা শুনলে যে কোন মুমিনের চোখ কপালে উঠে বলবে "বিজয়? তাও আবার "স্পষ্ট?" হাউ কাম?"
হুদাইবিয়ার সন্ধির কথা বলছি। কিছুদিন আগে মোটামুটি সংক্ষেপে এর বর্ণনা দিয়েছিলাম। বিস্তারিত লিখার উপায় নাই - ফেসবুক এখন বড় লেখা পোস্ট করতে দেয় না। তাই এখানে আরও সংক্ষেপে আরও কিছু কথা বলবো। প্লিজ পে এক্সট্রা এটেনশন!
কিছুদিন আগেই কুরাইশরা সমস্ত আরবের সব গোত্রের সাথে হাত মিলিয়ে দশ হাজার সৈন্য নিয়ে মদিনা আক্রমণ করেছিল। মদিনায় তখন মুসলিম পুরুষ নারী বৃদ্ধ ও শিশু মিলিয়েও সংখ্যা কয়েক হাজারের বেশি না। দশ হাজারের বিরুদ্ধে লড়তে গেলে একদম নিঃশেষ হয়ে যেতে হতো।
তাই নগরীর প্রবেশ দ্বারে পরিখা খনন করে তাঁরা আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইলেন। এবং দীর্ঘ একমাসের টানটান উত্তেজনাময় স্নায়ুক্ষয়ী যুদ্ধের পর এক ঘূর্ণি ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে কুরাইশরা পিছু হটতে বাধ্য হলো। কিন্তু বুঝিয়ে দিয়ে গেল মুসলিমদের সামনে পেলে খবর আছে।
এখন সেই কুরাইশদেরই এলাকায় একদম বিনা অস্ত্রে মুসলিমরা উমরাহ করতে যাচ্ছে! এ যেন নিজের শরীরে তেল মশলা মেখে সিংহের গুহায় ঢুকে পড়া।
কুরাইশদের সাথে সংঘর্ষ এড়াতে মুসলিমরা ভিন্নপথে মক্কায় গেল। এমন পথ যা মানুষের চলার জন্য একদমই অনুপযুক্ত। কাঁটাময়, পাথুরে, এবড়োখেবড়ো পথ। তারউপর পানিরও কোন ব্যবস্থা নেই। হুদাইবিয়া পর্যন্ত আসতে আসতে প্রতিটা উমরাহ যাত্রী সাহাবীর পা ফেঁটে রক্ত বেরুচ্ছে, পিপাসায় বুক ফেটে চৌচির।
এদিকে কুরাইশরা মুসলিমদের মারতে একদল গুপ্ত ঘাতক পাঠালো।
এখানে বলে রাখা ভাল, কুরাইশদের কাছে তাঁদের ইজ্জ্ত ছিল সবচেয়ে বড় সম্পদ। পুরো আরবজুড়ে তাঁদের রেপুটেশন ছিল এই যে তাঁরা হজ্জ্ব যাত্রীদের ভাল যত্নআত্তি করে। তাছাড়া বছরে চারটি পবিত্র মাসে মক্কার ভিতর যেকোন ধরণের যুদ্ধবিগ্রহ নিষিদ্ধ ছিল (সেই ইব্রাহিমের (আঃ) সময় থেকে এই নিয়ম চলছে)। এখন নিজের এলাকায় নিষিদ্ধ মাসে নিজেদের প্রিয় শত্রুর উপর আক্রমণ করে বসলে তাঁদের সেই রেপুটেশনটা নষ্ট হয়ে যাবে। কিন্তু মক্কার বাইরেই যদি ওদের খতম করে দেয়া হয় - তাহলে কেউ কিছু বলতে পারবেনা। কাজেই এই পদক্ষেপ।
তাদের দুর্ভাগ্য, সেই গুপ্তঘাতকের দল ধরা পরে গেল। এবং কী অদ্ভুত! মুহাম্মদ (সঃ) সবাইকে বহাল তবিয়তে ফেরত পাঠালেন।
তারপরে ওরা এলো মুসলিমদের সাথে চুক্তি করতে। লং স্টোরি শর্ট - চুক্তির প্রতিটা শর্ট ছিল মুসলিমদের হেয় প্রতিপন্ন করা।
"মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ না লিখে লিখতে হবে মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ।"
"এই বছর কোন উমরাহ করতে পারবেনা, পরের বছর আসতে হবে।"
"মুসলিমদের কেউ যদি কুরাইশদের কাছে যায়, তাহলে তাঁকে ফেরত দেয়াটা জরুরি না, কিন্তু কুরাইশদের কেউ মুসলিম শিবিরে যোগ দিলে তাঁকে ফেরত পাঠাতেই হবে।" এবং এইরকম লম্বা তালিকা। যা শুনে শুনে আবু বকরের (রাঃ) মতন ঠান্ডা মাথার মানুষটিরও রক্ত ফুটে উঠলো।
এখন "এই বছর উমরাহ করতে না পারাটা" কেন এত বিগডিল সেটা বলি।
নিজেকে সেই পরিস্থিতিতে বসিয়ে কল্পনা করুন।
আপনি বাড়ির সব কাজ ফেলে অফিস থেকে দুই সপ্তাহের ছুটি নিয়ে অনেক ঝামেলা করে ভিসা সংগ্রহ করে রিয়াদ বিমান বন্দরে যাওয়ার পর ইমিগ্রেশন অফিসার যদি বলেন, "এইবছর হবে না, পরের বছর আসেন" - তখন আপনার মেজাজ কতটা খারাপ হবে?
সেখানে তাঁরা তাঁদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, বন্ধুর পথ হেঁটে এতদূর এসেছেন। মনে রাখবেন, তাঁদের কিন্তু আপনার মতন পেইড ভ্যাকেশন ছিল না। কাজ বন্ধ তো খাওয়াও বন্ধ। পুরাটাই পন্ডশ্রম হলো তাহলে। সাথে অপমানের বিষয়টা যোগ করে নিন।
তো যাই হোক - সন্ধিচুক্তি সইয়ের ঠিক আগে আগে আবু জান্দাল (রাঃ) এসে হাজির।
"ও আমার মুসলিম ভাইয়েরা! আমি মক্কা থেকে পালিয়ে এসেছি! আমাকে তোমাদের দলভুক্ত করো!"
আবু জান্দালের বাবা সাফওয়ান কুরাইশদের পক্ষে সন্ধির শর্তগুলো আরোপ করছিলেন। তিনি নিজের ছেলেকে মুসলিম হয়ে যাবার অপরাধে শেকল দিয়ে বেঁধে গৃহবন্দী করে রেখেছিলেন। তাঁর জন্য কতটা অপমানজনক যে তাঁরই পুত্র কিনা পালিয়ে এসে তাঁরই শত্রুর দলে যোগ দিতে চায়!
তিনি বললেন, "সন্ধির চুক্তি অনুযায়ী আবু জান্দালকে আমাদের হাতে ফেরত পাঠানো হোক।"
সাহাবীরা ফুঁসে উঠলেন। এ কেমন কথা! এক ছেলে তাঁদের ভরসায় নিজের পরিবারকে ছেড়ে চলে এসেছে - এখন এই তাঁরাই কিনা তাঁকে তাঁরই পিতার হাতে তুলে দিবে? এতটা কাপুরুষ তাঁরা নন।
নবীজি (সঃ) অনুনয়, বিনয় করলেন।
"আমরা এখনও চুক্তি সই করিনি। আবু জান্দালকে আমাদের সাথে থাকতে দাও। এরপরে কেউ আসলে তাঁকে ফেরত পাঠানো হবে।"
সাফওয়ান শুনতে নারাজ। তাঁর নিজের ইজ্জতের প্রশ্ন।
অবশেষে নবীজি (সঃ) হতাশ স্বরে বললেন, "ঠিক আছে - আবু জান্দালকে ফেরত পাঠানো হোক।"
কোন মন্তব্য করার আগে একবার আবু জান্দালের স্থানে নিজেকে কল্পনা করুন। যে নবী/নেতার ভরসায় তিনি এত বড় পদক্ষেপ নিলেন - সেই নবী/নেতাই তাঁকে ফেরত পাঠিয়ে দিলেন। তাঁর যেন কোন মূল্যই নেই সেই নেতার কাছে! আপনি হলে কী করতেন? এই লোকটা চুপচাপ ভগ্ন হৃদয়ে নিজের পিতার কাছে ফেরত গেল। এবং তারপরেও মুখে একটা টু শব্দ উচ্চারণ করলো না।
এই ঘটনায় আরও অনেক গভীর শিক্ষা লুকিয়ে আছে। পরে কোন লেখায় ব্যাখ্যা করবো। আপাতত মূল টপিকে থাকি।
সাহাবীরা চূড়ান্ত রকম হতাশ হলেন। উমারতো (রাঃ) বলেই ফেললেন, "আপনি কী আল্লাহর রাসূল নন? আমরা কী সঠিক পথে নেই? তাহলে কেন ওদের অন্যায় সিদ্ধান্ত এইভাবে মাথা নত করে মেনে নেব?"
পরবর্তী জীবনে উমার (রাঃ) আফসোস করে বলেছিলেন, "আমি সেদিন নবীজির (রাঃ) নির্দেশ অমান্য করে প্রায় কাফির হয়ে যাচ্ছিলাম।"
আবু বকর (রাঃ) ধমক দিয়ে উঠলেন, "শান্ত হও ও উমার(রাঃ)!" (তিনি "ইয়া রাজুল" বলেছিলেন - আক্ষরিক বাংলা করলে দাঁড়াবে, "এই ব্যাটা" শান্ত হ!" নবীর সাথে বেয়াদবি করায় আবু বকরেরও মাথা গরম হয়ে গিয়েছিল।)
"তুমি উপলব্ধির চেষ্টা কর কার সাথে কথা বলছো।"
উমার (রাঃ) তারপরে নিজের ভুল বুঝতে পারেন। কিন্তু অন্যান্য সাহাবীরাও মনে মনে ঠিকই ফুঁসছিলেন। এমনকি নবীজি (সাঃ) যখন সবাইকে বললেন মাথা কামিয়ে (রিচ্যুয়াল) বাড়ির জন্য রওনা হতে, কেউই প্রথমে তাঁর নির্দেশ পালন করলো না। এই প্রথম এমন ঘটনা ঘটলো।
নিজের সাহাবীদের এমন শান্ত বিদ্রোহে মর্মাহত নবীজি (সঃ) কোন কথা বাড়ালেন না। স্ত্রীর পরামর্শে নিজের মাথা কামালেন, এবং তাঁর সাহাবীরাও তাঁর দেখাদেখি নিজেদের মাথা কামিয়ে ফেললেন।
সেই সময়েই সুরাহ ফাতাহ নাজেল হয়। আল্লাহ বলেন, "নিশ্চয় আমি আপনার জন্যে এমন একটা বিজয় দিয়েছি, যা সুস্পষ্ট।"
এখন উপরের ঘটনাগুলো, সন্ধির শর্তগুলো জানার পর একজন মানুষ কিভাবে একে "বিজয়" বলে ধরে নিবেন? এর কয়েক বছরের মধ্যেই মক্কাসহ পুরো আরব অঞ্চল মুসলিমদের অধীনে চলে আসে। কিন্তু তখন পর্যন্ত সেটাতো ভবিষ্যতের কথা - কেউই জানার কথা নয়। আল্লাহ একে বিজয় বলছেন, নবীজি(সঃ) সেই সুসংবাদে খুশিতে পূর্ণিমার চাঁদের মতন জ্বলজ্বল করছেন। সাহাবীরা তাঁকে বিশ্বাস করে আল্লাহু আকবার বললেন ঠিকই - কিন্তু আপনি যদি সাহাবী হতেন - আপনি সৎভাবে জবাব দিন - আপনি এই ঘটনায় কোন বিজয় খুঁজে পেতেন?
এখন বলি আসল বিজয়টা কোথায় ছিল।
বিজয়টা এখানেই ছিল যে শত প্রতিকূলতা সত্বেও - শত অপমান, অবমাননা সত্বেও - এই ঘটনায় নবীজির (সাঃ) সাহাবীরা কেউই তাঁর নির্দেশের বাইরে একটা পাও ফেলেননি। নিজেদের বুকে পাথর রেখে আবু জান্দালকে কুরাইশদের কাছে ফেরত পাঠিয়েছেন - কিন্তু একবারও আঃ উফ জাতীয় শব্দ উচ্চারণ করেননি। এই ডিসিপ্লিনড থাকাটাকেই আল্লাহ বিজয় হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এর ফলও তিনি দিয়েছেন হাতেনাতে। কয়েক বছরের মধ্যেই একসময়ে মার খেয়ে দেশ থেকে বিতাড়িত হওয়া মুসলিম গোষ্ঠী পুরো আরবের সিংহাসনে নিজেদের অধিষ্ঠিত করে।
উপরের দুইটা ঘটনা এই কারণেই উল্লেখ করলাম, নবীর (সঃ) নির্দেশ মানো - সেটা তোমার মনের বিরুদ্ধে গেলে হলেও - শেষে বিজয় তোমারই হবে।
এবং নবীর (সঃ) নির্দেশ অমান্য করলে - সেটা নিশ্চিত বিজয় মনে হলেও - একসময়ে তুমিতো মার খাবেই - তোমার কর্মফলে নবীজির রেপুটেশনেও আঘাত পড়বে।
ইসলামের নামে যারা সংখ্যালঘু অত্যাচার করে - যারা নিরীহ মানুষ মারে - যারা আগডুম বাগডুম করে - তারা দেখে নিক - তাদের কারণেই আজকে অজ্ঞ মুসলিমরাই আমাদের নবীকে নিয়ে উল্টা পাল্টা কথা বলে বেড়ায়। বাইরের লোকেদের কথাতো বাদই দিলাম।
এখন সিদ্ধান্ত আপনার। ওহুদের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাবেন, নাকি হুদাইবিয়ার?
০৮ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৪২
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১:৪৩
সংক্ষিপ্ত যোগাযোগ বলেছেন: সুন্দর পোস্ট, ধন্যবাদ নেবেন।