নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
বাসা বাড়িতে ঠিকা ঝি খাটা শেফালী বেগমের বিরুদ্ধে কারও কোন অভিযোগ নেই। তাঁর মতন সাংসারিক কাজে দক্ষ ঝি পাওয়া এই যুগে অসম্ভব একটি ব্যপার। সব কাজ অত্যন্ত নিখুঁত। সেই সাথে আরেকটি গুণ তাঁর আছে। অসম্ভব রকমের সৎ! এই মহিলাকে দিয়ে বাজার করালে বাজার থেকে ফিরে সে প্রতিটা পাই পয়সা মালিককে বুঝিয়ে দেয়। একটা টাকাও এদিক সেদিক হয়না। তবু কেউ তাঁকে বাড়িতে পাকাপাকি চাকরি দিতে সাহস পায় না। কারন মাঝে মাঝেই তাঁর মাথা এলোমেলো হয়ে যায়। পাগলকে বাড়িতে চাকরি দিবে কোন পাগলে?
তাঁর মাথা এমনিতে সুস্থ্য স্বাভাবিক। শুধু তাঁকে একটা গান শোনালেই তিনি ভীষণ খেপে উঠেন। একেবারে পাগলিনীর মতন তেড়েফুড়ে মারতে আসেন। ধমকের সাথে মুখ দিয়ে থুথু বেরোয়। আর ছুটে গালাগালি। এই দেখে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা খুব মজা পায়। হাতে তালি বাজাতে বাজাতে তাঁর সামনেই গানটা বারবার গায়।
বড়রা বাঁধা দেন না। নাগরিক শিশুদের এমনিতেই বিনোদনের বড্ড অভাব। একটা পাগল ক্ষেপিয়ে যদি মজা নিতে চায়, ক্ষতি কী?
গানটা শুনলেই শেফালী বেগম ক্ষেপে গিয়ে বলেন, "সব মিছা কথা! সব মিছা কথা! গান বন্ধ কর তোরা বান্দির পুতেরা! গান বন্ধ কর!"
বাচ্চারা দ্বিগুন উৎসাহে গেয়ে উঠে, "সব কটা জানালা খুলে দাও না!"
অবশ্যই গানের প্রতিটা কথা মিথ্যা। যে যায়, সে কখনই ফিরে আসেনা।
তাঁর স্বামীকে যখন ওরা বাস থেকে নামিয়ে ধরে নিয়ে যাচ্ছিল, মানুষটা তখন কেবল একবার পিছন ফিরে বলতে পেরেছিলেন, "যাই!"
ঠিক যেমনটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ও দেশসেরা নাট্যকার মুনির চৌধুরী ছোট ভাইয়ের দিকে ফিরে শেষবারের মতন বলেছিলেন, "যাইরে ভাই!"
ওরা ধরে নিয়ে গিয়েছিল শহীদুল্লাহ কায়সারকে। মিরপুরের বধ্যভূমিতে একের পর এক লাশ উল্টে উল্টেও যার স্ত্রী স্বামীর লাশ শনাক্ত করতে পারেননি।
শেফালী বেগমও গিয়েছিলেন সেসব জায়গায়। যেখানেই খবর পেয়েছেন লাশের স্তূপ আবিষ্কার হয়েছে, সেখানেই তিনি ছুটে গিয়েছেন। নিজ হাতে পঁচে যাওয়া, গলে যাওয়া লাশ হাতড়ে হাতড়ে দেখেছেন।
সেলিনা পারভিনকে তাঁর আত্মীয়রা পায়ের মোজা দেখে সনাক্ত করতে পেরেছিল। মানুষটার গলায় সদা ঝুলন্ত তাবিজ দেখে শেফালী বেগমের সনাক্ত করতে কোন অসুবিধা হবার কথা না। ন্যাংটা বাবার তাবিজ! সবধরণের অনিষ্টতা থেকে রক্ষা করার অব্যর্থ কবজ! তাঁর স্বামীকে তিনি খুঁজে পাননি।
তাঁর ছেলেকেও না।
শেফালী বেগমের ছেলে আলমগীর বাড়ি থেকে পালিয়ে যুদ্ধে গিয়েছিল। যেভাবে আরও হাজার খানেক ছেলে পালিয়েছিল। যুদ্ধের মাঝে একদিনের জন্য মায়ের সাথে দেখা করতে সেও এসেছিল। বলেছিল দলে দলে মুক্তিযোদ্ধা ঢাকা শহরে ঢুকে পড়ছে। সারা দেশ মোটামুটি স্বাধীন হয়ে গেছে, এখন কেবল ঢাকা শহরটা বাকি। তিনি বলেছিলেন তার আর যুদ্ধে যাবার দরকার নেই। বাকি কাজটা অন্যরাই করুক।
ছেলে হেসে বলেছিল, আর মাত্র কয়েকদিন! তারপরেই সে আবার মায়ের কোলে মাথা রেখে ঘুমাবে। আবার ভাত খাওয়া শেষে হাত ধুয়ে মায়ের শাড়ির আঁচলে হাত মুছবে।
কই! এর তিনদিন পরেইতো দেশ স্বাধীন হয়েছিল। দলে দলে মানুষ রাস্তায় মিছিল বের করেছিল। ফাঁকা গুলি ফুটিয়েছিল। মিলিটারির গাড়ি যেতে দেখে থুথু ছিটিয়েছিল। ফিরে এসেছিল আসাদ, আজম, বাচ্চু। কমলাপুর বস্তির রিকশাওয়ালা ফরিদের ছেলে মুরাদ, সেও স্বগর্বে শত্রুহনন শেষে ফিরে এসেছিল। কিন্তু তাঁর আলমতো ফিরে এলো না।
বাড়ির দরজার কড়া নড়তেই তিনি ছুটে যেতেন আলম এসেছে ভেবে।
রাতের বাতাসে গাছের পাতা নড়ে উঠলে তিনি খুশি খুশি গলায় জানতে চাইতেন, "বাবা ফিরা আইয়েছিস? এত দেরী করলি তুই?"
পয়তাল্লিশবার বিজয় দিবস ফিরে এলো, আলম তবু ফিরল না।
তাঁর বাবাও না!
আর সবাই কিনা প্রতিবার একই গান গায়,
".....ওরা আসবে, চুপি চুপি,
যারা এই দেশটাকে ভালবেসে দিয়ে গেছে প্রাণ!....."
তাই গানটি শুনলেই শেফালী বেগমের মাথা খারাপ হয়ে যায়। ধমক দিয়ে মিথ্যা গান বন্ধ করতে বলেন।
ধমকের সাথে মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে থুথু। আর ছোটে গালাগাল।
বাচ্চারা এতে খুব মজা পায়। তারা হাততালি বাজাতে বাজাতে গানটা গায়।
(পুনঃপ্রকাশ )
©somewhere in net ltd.
১| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:৪৮
চাঁদগাজী বলেছেন:
কপি পেস্ট? নাকি ডিসেম্বরে রং বদলাচ্ছেন?