নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

"আল্লাহর সাথে আমার ভয়ের সম্পর্ক হবে কেন" - বিষয়ে অযথা ত্যানাবাজি

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:৫২

মুসলিমদের ধর্ম বিশ্বাসের একটি আবশ্যিক অনুষঙ্গ হচ্ছে, আল্লাহকে ভয় করা। অতি সহজ ও অতি সরল শর্ত। আমাদের কোনই সমস্যা নেই তাতে।
কিন্তু এর মাঝেও ত্যানা প্যাঁচাতে চাইলে প্যাচানো সম্ভব।
"আল্লাহর সাথে আমার ভয়ের সম্পর্ক হবে কেন? হবে প্রেমের সম্পর্ক, ভালবাসার সম্পর্ক। নাহলে তিনি কিসের বিধাতা?"
অতি ত্যানাবাজদের সাথে আমার মাঝে মাঝে কথাবার্তা হয় ইনবক্সে। আমি নিশ্চিত আপনাদেরও মাঝে মাঝে তাঁহাদের সাথে সাক্ষাৎ পাইবার সৌভাগ্য হয়।
আমি যা উত্তর দেই - তা পড়ে দেখুন। কাজে লাগতে পারে।
স্কুল-কলেজের প্রিন্সিপালকে ছাত্রছাত্রীরা ভয় করে। অফিসের বড় সাহেবকে সাধারণ এমপ্লয়ীরা ভয় করে। মিলিটারি জেনারেলকে তাঁর লিউটান্যান্ট জেনারেল পর্যন্ত ভয় করে। এতে কারোর কোন সমস্যা নাই। আল্লাহকে ভয় করতে কেন বলা হলো এতেই সমস্যা।
আমাদের স্কুলের প্রিন্সিপাল টিচারের নাম ছিল রাবেয়া খান আহমেদ। তিনি বারান্দা দিয়ে হেঁটে গেলে টিচারের অনুপস্থিতিতে হৈচৈ দাঙ্গা হাঙ্গামায় লিপ্ত ক্লাসরুমগুলো পলকেই নিস্তব্ধ কবরে পাল্টে যেত। ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের বুকের ধুকপুকানি পর্যন্ত স্পষ্ট শুনতে পেত।
আমরা গর্ব করে বলি আমরা আমাদের প্রিন্সিপাল টিচারকে বাঘের মতন ভয় পেতাম। একই সাথে মায়ের মতোই সম্মান করতাম। যেকারনে আমাদের স্কুলের পোলাপানদের নষ্ট হয়ে যাওয়ার হার ছিল শূন্য। এখনকার খবর জানিনা।
আমাদের কেমিস্ট্রির টিচারের নাম ছিল মিরা টিচার। আমাদের স্কুলের গরু গাধা ছাত্রও এসএসসিতে কেমেস্ট্রিতে লেটার মার্ক্স্ পেত। ঐতিহাসিক সত্য ঘটনা।
টিচার গর্ব করে বলতেন, "কলেজে গিয়ে ছাত্ররা অস্ত্র ধরেছে (রাজনীতি) - কিন্তু আমাকে রাস্তায় দেখলে এখনও পায়ে ধরে সালাম করেছে।"
মিরা টিচারের ভয়ে কত ছাত্রের ওযু ভেঙে গেছে সেটার হিসেব নেই। একই সাথে সেই একই ছাত্রদের হৃৎপিন্ড জুড়ে মিরা টিচারের অবস্থানও ছিল বিস্ময়কর!
তাঁর মৃত্যু সংবাদে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তাঁর ছাত্রদের হাহাকার ধ্বনি তিনি শুনে যেতে পারেননি, এটাই আফসোস।
আমাদের টিচারদের সাথে আমাদের সম্পর্ক ছিল ভয় মিশ্রিত ভালবাসার। যদি সম্পর্ক হতো স্রেফ ভালবাসার - তাহলে আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি, Blue Bird High School কখনই সিলেটের সেরা স্কুল হতে পারতো না। আমরা মাথায় উঠে নাচতাম। টিচাররা কিছুক্ষন ধমকাধমকি করে হাল ছেড়ে দিয়ে বলতেন, "যা তোরা উচ্ছন্নে যা!"
এখন আসি মূল টপিকে।
কুরআনে আল্লাহ যতবার বলছেন, "আল্লাহকে ভয় কর -....." সাথে কোন না কোন নির্দেশনামাও যুক্ত করে দিয়েছেন। যেমন "তোমরা যখন স্ত্রীদেরকে তালাক দিতে চাও, তখন তাদেরকে তালাক দিয়ো ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য রেখে এবং ইদ্দত গণনা করো। তোমরা তোমাদের পালনকর্তা আল্লাহকে ভয় করো। তাদেরকে তাদের গৃহ থেকে বহিস্কার করো না এবং তারাও যেন বের না হয় যদি না তারা কোন সুস্পষ্ট নির্লজ্জ কাজে লিপ্ত হয়।(৬৫:১)"
কিংবা "হে মুমিনগণ! যখন তোমরা কোন নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে ঋনের আদান-প্রদান কর, তখন তা লিপিবদ্ধ করে নাও এবং তোমাদের মধ্যে কোন লেখক ন্যায়সঙ্গতভাবে তা লিখে দেবে; লেখক লিখতে অস্বীকার করবে না। আল্লাহ তাকে যেমন শিক্ষা দিয়েছেন, তার উচিত তা লিখে দেয়া। এবং ঋন গ্রহীতা যেন লেখার বিষয় বলে দেয় এবং সে যেন স্বীয় পালনকর্তা আল্লাহকে ভয় করে এবং লেখার মধ্যে বিন্দুমাত্রও বেশ কম না করে।.....(২:২৮২)"
এবং এইরকম আরও অনেক কিছু। বটম লাইন হচ্ছে, আল্লাহ একটা নির্দেশ দিচ্ছেন, এবং বলছেন তাঁকে ভয় করতে, এবং সেই নির্দেশ অনুযায়ী চলতে।
কেন ভয় করতে বলা হচ্ছে? উদাহরণ দেই।
তালাকের পরপরই স্ত্রীকে ঘর থেকে বের করে দেয়ার নিয়ম ইসলামে নেই। একটি ইদ্দতকালীন সময় থাকে। এরমাঝে মিটমাট হয়ে গেলে তালাক খারিজ হয়ে যায়। প্রসঙ্গত বলে ফেলি, ইসলামে বিয়ে করাটা যত সহজ - তালাক ততই জটিল প্রক্রিয়া। ঘর সংসার ভাঙা ইসলামে চরমভাবে তিরস্কার করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের অতি বাইরে চলে না গেলে সংসার না ভাঙার পক্ষে ইসলাম। রাগের মাথায় তিন তালাক দিলেই তালাক হয়ে যায়, স্ত্রীকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয় এবং হিল্লা বিয়ে জাতীয় আগডুম বাগডুম আমাদের দেশের মাতবরদের ফতোয়া।
তো যা বলছিলাম - তালাক ঘোষণার সাথে সাথে স্ত্রীকে ঘর থেকে বের করে দেয়ার নিয়ম নেই। স্ত্রী - যে স্বামীর উপর নির্ভরশীল - সে যাবে কোথায়? তাঁরতো একটা ব্যবস্থা করে নিতে হবে। এবং সেজন্য তাঁর সময়ের দরকার। সেই সময়টা তাঁকে দিতে হবে। এক্ষেত্রে স্বামী বলতেই পারেন, "আমার বাড়ি। আমি যাকে খুশি যখন খুশি বের করে দিতে পারবো, কার বাপের কী?"
এখানেই আল্লাহ বলছেন, "আল্লাহকে ভয় করো।"
তুমি তোমার বাড়ির মালিক হতে পারো। কিন্তু তোমার মালিক আল্লাহ। কাজেই অন্যায় করতে পারবে না। করলে তোমার খবর আছে।
এই লজিকটাই সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
একজন রাষ্ট্রপ্রধান যখন গদিতে বসেন, তাঁর অধীনে পুরো দেশের জনগণ। রাস্তায় বসে জুতা সেলাই করা মুচি থেকে মিলিটারি জেনারেল, রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রীপরিষদ সবাই তাঁকে ঝুঁকে সালাম ঠুকে। তিনি ইচ্ছা করলেই যা খুশি তাই করতে পারেন। সংখ্যালঘু বা উপজাতি বসতি পুড়িয়ে ছাই বানিয়ে দিতে পারেন। কারোর কিছু বলার নেই। তিনিই সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। কিন্তু তাঁকেও আল্লাহ বলছেন, "আল্লাহকে ভয় করো, কারন তিনি নিশ্চিতভাবেই কঠিন শাস্তিদাতা!"
এবং ইতিহাস প্রমান দেয় - পাশার দেন পাল্টে যেতে সময় লাগেনা। কেউ বলেন, প্রকৃতি করছে - আমরা বলি আল্লাহই ব্যাপারটি করছেন।
কারন ঈশ্বরের অস্তিত্বের চেয়েও "ন্যায় পরায়ণ প্রকৃতির" অস্তিত্ব আরও বেশি illogical.
উমার (রাঃ) তখন মুসলিম বিশ্বের খলিফা। তাঁর অধীনের অঞ্চলকে যদি বর্তমান সময়ে তুলনা করি, তিরিশের বেশি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান তিনি। তাঁর মুখের উপর কথা বলে এমন লোক দুনিয়ায় নেই। সেই তিনিই প্রতি নামাজের শেষে মোনাজাতে হাউ মাউ করে কাঁদেন। কেন? তাঁর ভাষায়, "আল্লাহ এত বড় অঞ্চলের দায়িত্ব দিয়েছেন। এই অঞ্চলে যদি একটি কুকুরও না খেয়ে মারা যায়, তাহলে আল্লাহর কাছে আমাকে তার জবাবদিহি করতে হবে। আমি কী জবাব দেব তখন?"
এই উমারই (রাঃ) সারাদিনের রাজকার্য শেষে গভীর রাতে ছদ্মবেশে মানুষের বাড়িতে বাড়িতে ঘুরে বেড়াতেন - কারোর কোন অসুবিধা হচ্ছে কিনা খোঁজ নিতে। মধ্যরাতে প্রসব যন্ত্রনায় কাতর স্ত্রীকে দেখে হতভম্ব হয়ে যাওয়া বেদুঈনের বাড়িতে খলিফা উমার (রাঃ) নিজের স্ত্রীকে নিয়ে হাজির হন। কেন? কারন কুরআনে তিনি পড়েছেন, "আল্লাহকে ভয় করো।" তিনি খলিফা উমার হলেও ভয় পেতে হবে।
শেষ করি উমারের (রাঃ) ওস্তাদের একটা ঘটনা বলে।
মুহাম্মদ (সঃ) এর সামাজিক অবস্থা তখন ভীষণ নড়বড়ে। কিছুদিন আগেও যে শহরবাসী "আল-আমিন" ডেকে ডেকে তাঁকে মাথায় তুলে রেখেছিল, এখন পারলে তাঁকে মেরেই ফেলে। টেকনিক্যাল কারণেই হত্যা করা সম্ভব হচ্ছেনা, এই যা।
কত্তবড় সাহস! বলে কিনা, মানুষে মানুষে কোন ভেদাভেদ নেই! সবাই আদম থেকে এসেছে এবং আদম মাটির তৈরী! এমন অদ্ভুত কথা কেউ কখনও বলেছে? বাদশাহ এবং ফকিরের মাঝে কোন ভেদাভেদ থাকতে পারবে না? ফাজলামি নাকি?
তারপরেও তাঁর কথাবার্তা ভীষণ আন্তরিক। তিনি তাই বলেন যা তিনি নিজে বিশ্বাস করেন। একবার কথা বলা শুরু করলে পুরোটা শুনতে ইচ্ছে করে।
দেখা গেল ধীরে ধীরে তাঁর অনুসারী সংখ্যা বাড়তে লাগলো। কিছুদিন আগেও যে উমার (রাঃ) কেউ ইসলাম গ্রহণ করেছে শোনার সাথেই সাথেই মারধর করতো - সেই কিনা এখন প্রকাশ্যে বলে, "আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া আর কোন প্রভু নাই এবং মুহাম্মদ (সঃ) তাঁর বান্দা ও রাসূল।"
তারপরেও অসংখ্য ছোট বড় গোত্রে বিভক্ত কুরাইশদের কোন গোত্র প্রধানই যেহেতু তাঁর ধর্ম গ্রহণ করেনি (নিজের চাচা, মক্কার সবচেয়ে প্রভাবশালী হাশেমী গোত্রপ্রধান আবু তালিবও নয়), কাজেই সামাজিক অবস্থানটা আগের মতোই নড়বড়ে থেকেই যাচ্ছে।
এই সময়ে কুরাইশ নেতারা একটি প্রস্তাব রাখলেন তাঁর সামনে।
"আমরা তোমার ধর্ম গ্রহণ করবো - তবে একটাই শর্ত। এই বিলাল, শোয়াইব, আম্মারদের মতন দাসরা আমাদের সাথে উঠাবসা করতে পারবেনা। আমরা হচ্ছি কোরাইশ - এলিট শ্রেণী। ওদের মতন দাসদের সাথে মেলামেশার প্রশ্নই উঠেনা।"
এখন একটু বসে ঠান্ডা মাথায় চিন্তা ভাবনা করা যাক। প্রস্তাবটা কিন্তু একদম সোনার থালায় সাজিয়ে সামনে আনা হয়েছে। উমার (রাঃ) এবং হামজা (রাঃ) ইসলাম গ্রহণ করায় অত্যাচারের পরিমান একটু কমলেও বোঝাই যাচ্ছে এটা খুবই সাময়িক সমাধান। যেকোন সময়ে হাওয়া বদলে যেতে পারে - তখন মুসলিমদের টপ করে গিলে ফেলা একদম ওয়ান টু।
এদিকে কোন গোত্রপ্রধান যদি ইসলাম গ্রহণ করে তাহলে তাঁর গোত্রের সবাই আপনাতেই মুসলিম হবে। অনাদিকাল ধরে এটাই সামাজিক নিয়ম। কনস্টান্টিন খ্রিষ্টান হয়েছিলেন বলেই রোমানরা সবাই খ্রিষ্টান হয়েছিল - এক্ষেত্রেও তাই হবে। সামান্য কয়েকটা দাস - যাদের বাঁচা মরায় সমাজের কিচ্ছু আসে যায় না - তাদের জন্য এমন সুবর্ন সুযোগ হাতছাড়া করাটা কী বুদ্ধিমানের কাজ হবে?
এই পরিস্থিতিতে কুরআনে বহু আয়াত নাজিল হলো, ন্যায়ের সাথে কোন রকমের আপোষ করা চলবে না। সূরা আন'আমে আল্লাহতো হুমকিই দিয়ে বসলেন, আপনি যদি সমাজের মাথাদের জন্য এদের পরিত্যাগ করেন, ও রাসূলাল্লাহ, তবে আপনি নিজেই বিপথগামীদের অন্তর্ভুক্ত হবেন।
এরপর আর কারও সাহস হয় কিছু বলার? নবীজি (সঃ) ওদের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন। অত্যাচার চলতে থাকলো।
গোত্রভিত্তিক মক্কা সমাজে সবচেয়ে শক্তিশালী দুই গোত্রের একটি ছিল বনু মাখযুম। এর প্রধানের নাম আল ওয়ালিদ ইবনে মুগীরা। মুসলিম লেজেন্ড খালিদ বিন ওয়ালিদের পিতা। তখনকার আরব সমাজের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি তিনি। প্রতি সপ্তাহে নতুন নতুন বিলাসবহুল পোশাক পড়তেন। ঘরে ধন সম্পদ, ঘোড়া উট - কোন কিছুরই অভাব নেই। তবে তার অহংকার, তার সমকক্ষ কোন কবি পুরো তল্লাটে আর একটিও নেই। তিনিই মক্কার শেক্সপিয়ার।
সেই আল ওয়ালিদ একদিন কি মনে করে নবীজির (সঃ) কথাবার্তা শুনতে বসলেন। এবং বেশ মনোযোগ দিয়েই তিনি নবীজির (সঃ) যুক্তিগুলো আমলে নিচ্ছিলেন। নবীজির (সঃ) মনে তখন আশার আলো দাউ দাউ করে জ্বলছে যে আল ওয়ালিদ ইসলাম গ্রহণ করবেন। তাহলেই আর দেখতে হবেনা। সুরসুর করে প্রতিটা কুরাইশ সম্প্রদায় মুসলিম হয়ে যাবে। আর কোন চিন্তা থাকবেনা। তাঁর দায়িত্ব সম্পন্ন হবে।
ঠিক তখনই ইবনে উম্মে মাখতুম নামের এক অন্ধ ব্যক্তি, যার টাকা পয়সাতো ছিলই না, সেই সাথে জাত বিচারে আনলে যিনি ছিলেন সবচেয়ে নিচু সম্প্রদায়ের কুরাইশী, হিন্দু বর্ণ প্রথায় শূদ্র শ্রেণীর - লাঠি ঠুকতে ঠুকতে নবীজির (সঃ) খোঁজে এসে হাজির হলেন।
"কোথায় মুহাম্মদ(সঃ)! কোথায় আল্লাহর রাসূল? আমার কিছু কথা ছিল তাঁর সাথে!"
আল ওয়ালিদ ইবনে মুগীরা সামনে এই হতদরিদ্র নিচু জাতের লোকটিকে দেখে উঠে দাঁড়িয়ে মুহাম্মদকে (সঃ) ব্যঙ্গ করে বললেন, "তুমি বলতে চাও তোমার দলে যুক্ত হতে, যেখানে তোমার দলে এরাও আছে? ধন্যবাদ। আমি এমনিতেই ভাল আছি।"
আমাদের নবীজি মানবশ্রেষ্ঠ ছিলেন। অন্য যেকারও চাইতে তাঁর ধৈর্য্য ছিল অবিশ্বাস্য রকমের অটল। কিন্তু তারপরেও তিনিও মানুষ ছিলেন। হাতের একদম মুঠো থেকে এমন সুবর্ণ সুযোগ বেরিয়ে যেতে দেখে তিনিও একটু হতাশ হয়েছিলেন নিশ্চই। এবং তাই আল্লাহ সূরা আবাসার প্রথম কয়েক আয়াত নাজিল করলেন। পড়ে দেখুন, রীতিমত ধমক!
আমাদের নবীজি (সাঃ) উম্মে মাখতুমকে জড়িয়ে ধরলেন। কষ্ট করলেন, মার খেলেন, গৃহহীন হলেন, প্রাণ বাঁচাতে অন্য শহরে গিয়ে আশ্রয়ও নিলেন - কিন্তু কুরাইশ প্রধানদের অন্যায়ের সাথে আপোষ করলেন না। পরে বহুবার উম্মে মাখতুমকে ডেকে হাসিমুখে বলতেন, "তোমার জন্য আমি আল্লাহর কাছে বকা খেয়েছি।"
এই "বকা" খেয়েই তিনি তাঁর প্রভুর নির্দেশ পালন করে গেছেন। কারন তিনি নিজেও সেই প্রভুকে ভয় পেতেন।
এখন আসি ভালবাসার সম্পর্কে।
একদিন এক যুদ্ধের ময়দানে এক মহিলা হন্যে হয়ে নিজের ছেলেকে খুঁজতে এসে তাঁকে জীবিত দেখে আনন্দে বুকে জড়িয়ে ধরে আদর করছিলেন। নবীজি (সঃ) তাঁর সাহাবীদের বললেন, "তোমাদের কী ধারণা - এই মেয়ে তাঁর সন্তানকে আগুনে ছুড়ে ফেলতে পারবে?"
সাহাবীদের জবাব, "অবশ্যই না ইয়া রাসূলুল্লাহ!"
নবীজি (সঃ) বললেন, "তবে জেনে রাখো, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের এই মায়ের চেয়েও বেশি ভালবাসেন।"
তাই আমরা জানতে পারি, অন্যায় যতই বড় হোক না কেন, একটু অনুশোচনাতেই তা ক্ষমা পেতে পারে। যিনি ভয় দেখাচ্ছেন, সেই তিনিই ক্ষমার সুসংবাদ দিচ্ছেন। ভয়ংকর বিপদেও তিনিই স্বস্তি দিচ্ছেন। আল্লাহর সাথে আপনার প্রেমের সম্পর্ক, ভালবাসার সম্পর্ক ঠিকই আছে - কিন্তু আপনি যাতে মাথায় উঠে যা খুশি তাই করতে না পারেন, সেজন্যই বলা হয়েছে, তাঁকে ভয় পেতে।
আশা করি এবিষয়ে অযথা ত্যানাবাজি বন্ধ করবেন।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১:০৪

আহলান বলেছেন: এই ভয় ভীতির সঞ্চার করে না প্রেম আবেগ ভালোবাসা সৃষ্টি করে ... যদি সহীহ্ ভাবে তাঁকে ভয় করে তাঁর আদেশ নিষেধ মেনে চলা যায়।

২| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:২৯

আলগা কপাল বলেছেন: সৃষ্টিকর্তাকে ভয় কেন পেতে হবে এই প্রশ্ন যারা করে তাদের মাথায় মস্তিষ্ক কতটুকু আছে তা গবেষণার ব্যাপার।

আপনি সঠিক জবাবই দিয়েছেন। ভালো লাগলো।

৩| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:০২

এম এ কাশেম বলেছেন: খুব সুন্দর ও যুক্তিযুক্ত আলোচনা।
শুভ কামনা রইল।

৪| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:১৮

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: অসাধারন!!!

সমাসাময়িকতাকে ধারন করে দারুন উপস্থাপনা! মনো মুগ্ধকর!

যারা সত্য অনুভব করতে চায় যথেষ্ট ইশারা রয়েছে লেখনিতে। হেদায়েত হবে কি?

ধন্যবাদ লেখার জন্য।

৫| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:৫০

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: চমৎকার লেখনী, লাইক উইথ প্লাস।

ভাল থাকুন সবসময়, শুভকামনা রইল।

৬| ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:৪৬

রফিকুলইসলাম বলেছেন: আল্লাহ ভয় দেখাচ্ছেন, তিনিই ক্ষমার সুসংবাদ দিচ্ছেন। ভয়ংকর বিপদেও তিনিই স্বস্তি দিচ্ছেন।

৭| ০১ লা এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৫:৩৯

সালমান আহমেদ বলেছেন: সুন্দর আলোচনা

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.