নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আগে ও পরে অফিসের কাজে প্রচন্ড ব্যস্ত ছিলাম বলে লেখাটি লেখা হয়নি। ব্যস্ততা এখনও কাটেনি - তবে একটু ফাঁক বের করে লিখে ফেললাম। নাহলে একটু বেশিই বাসি হয়ে যাবে।
এবং প্রথমেই ডিসক্লেইমার দিয়ে নেই - অনেকেরই মনমতন লেখা হবেনা এটি। তবে আমি আমার নিজস্ব চিন্তাভাবনা এখানে তুলে ধরবো। কিছু পয়েন্টে কারোর মনে আঘাত লাগলে প্রথমেই দুঃখিত বলে নিচ্ছি।
একাত্তরের চৌদ্দই ডিসেম্বরের দুই একদিন আগে ও পরে যেসব সিলেকটিভ সূর্য সন্তানদের বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হলো - তাতে জাতি হিসেবে আমরা পিছিয়ে গেছি কয়েকশো বছর। এই কথাটি হাজারজন মানুষ বলেছেন - এবং ব্যাপারটির সাথে আমার কোনই দ্বিমত নেই। আমি সাথে নিজস্ব আরেকটি কথা যুক্ত করতে চাই। এই এক ঘটনাই আমাদের জাতীয় মেরুদন্ড ভেঙে দিয়েছে। কারন শিক্ষা মানুষের মেরুদন্ডকে শক্ত করে - এবং ওরা আমাদের আলোর দিশারীদেরই খতম করে দিয়েছে।
আমার দ্বিমত অন্য বিষয়ে। সেটি হচ্ছে, আজকে অমুক বেঁচে থাকলে আমাদের দেশে নোবেল আসতো - তমুক বেঁচে থাকলে আমরা পেতাম অস্কার - ইত্যাদি এক্সপ্রেশন আমার কাছে কেমন কেমন যেন মনে হয়। যারা লিখেন, তাঁদের যে বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও আবেগের কোনই কমতি নেই - তাতে আমার কোনই সন্দেহ নেই - দ্বিমতটা অনুভূতি প্রকাশের ভাষায়। মনে হয় কেন যেন আসল কথা বাদ দিয়ে সাইড টপিকে ফোকাস করা হচ্ছে।
তা লেখক করতেই পারেন, সমস্যা বাধায় তাঁদের পাঠক। বিশেষ করে বললে, মূর্খ পাঠক। এই কারণেই এখনও মিনমিনে কণ্ঠে কেউ কেউ বলে উঠে, "তাঁরা বুদ্ধিমান হলে যুদ্ধের সময়ে নিজেদের বাড়িতে ছিলেন কেন?"
কিংবা, "তাঁরাতো পাকিস্তান সরকারের বেতন নিতেন নিয়মিত। তারমানে তাঁরা পাক সরকারের অনুগত কর্মচারী। তাঁদের মৃত্যুতে এত শোক প্রকাশের কী আছে?"
কিংবা, "ম্যা ম্যা ম্যা।"
এইসবের কারন হচ্ছে, আহাম্মকগুলো জানেই না সমাজে বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা কী।
তবে তার আগে বলি নোবেল বিষয়টা কি। এটি আমার কাছে স্রেফ একটি পুরষ্কার। একে এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখুন। সাদা চামড়ার ভদ্রলোকেরা এটি ঘোষণা করে বলেই একে মাথায় তুলে রাখতে হবে এমন কোন শর্ত নেই।
আমাদের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পেয়েছিলেন, আমরা ধন্য ধন্য করলাম। কিন্তু আপনারাই বলুন, আমাদের নজরুল, আমাদের শরৎ, মানিক, তারাশঙ্কর, বিভূতি, সতীনাথ কিংবা সুনীল-শীর্ষেন্দুরা কী কোন অংশে কম? বাংলা সাহিত্যের গভীরতা, এর রত্ন ভান্ডার অফুরন্ত। কাকে ছেড়ে কাকে নিবেন? কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ছাড়া আর কেউই পেলেন না নোবেল। তার মানে কী বাকিদের ফালতু বলে ফেলে দেব? না। ভারতীয় সহিত্য ভান্ডার কত রত্নে ভরপুর সেটা একটু নাড়াচাড়া করলেই টের পাবেন। কিন্তু ভারতে সাহিত্যে তেমন নোবেল নেই। চীনা সভ্যতার বয়স পাঁচ হাজার বছর। তাঁদের সাহিত্যের বয়সও তেমনই। এই পর্যন্ত কয়জন চীনা সাহিত্যিক নোবেল পেয়েছেন? অথচ দেখা যায় স্ক্যান্ডেনেভিয়ান দেশগুলোর সাহিত্যিকগণ ঝাঁকে ঝাঁকে নোবেল পেয়ে যাচ্ছেন। তার মানে, এটি নামেই আন্তর্জাতিক, আসলে তাঁদের গন্ডি অনেক ছোট। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মতে, নোবেল কমিটি এখন দেশ বিবেচনায় নোবেল দেয়। অমুক দেশ বেশ কিছুদিন ধরে নোবেল পাচ্ছে না, কাজেই দিয়ে দাও। আগামী কয়েক দশক ওদের নিয়ে না ভাবলেও চলবে। কাজেই বুঝাই যাচ্ছে ওটা স্রেফ একটা রিকগনিশন - পেলে ভাল, না পেলেও ক্ষতি নেই।
আমাদের ইউনুস সাহেব শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন। দেশের আম জনতার কিই বা পরিবর্তন হয়ে গেল তাতে। উল্টা একদল তাঁকে সুদখোর বিদেশী দালাল বলে গালাগালি করছে।
শান্তিতে পুরস্কার পেয়েছেন আন সু চি। নিজ দেশে রোহিঙ্গা গণহত্যা রোধ করতে পারছেন না।
বুদ্ধিজীবীদের আসল কাজ দেশকে নাড়া দেয়া - আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন নয়। পেলে ভাল, না পেলে কুছ পরোয়া নেহি। তাঁরা তাঁদের সৃষ্টির মাধ্যমে যুগ পাল্টে দেন।
এক হুমায়ূন আহমেদই পুরো দেশকে বৃষ্টিতে ভিজিয়েছেন, জোছনা দেখা শিখিয়েছেন, হলুদ পাঞ্জাবি পড়িয়ে যুবকদের খালি পায়ে হাঁটিয়েছেন, প্রেম করা শিখিয়েছেন, শিখিয়েছেন পাগলামিও।
স্রেফ মাসুদ রানা পড়ে কয়টা যুবক আর্মিতে যোগ দেয় তার হিসেব আছে?
বাংলাদেশে এক সময়ের শিশু কিশোররা তিনজনের দল বানিয়ে গোয়েন্দা বাহিনী খুলে বসতো।
ক্যানভাসের উদাহরণই নিন। এইযে দিনরাত অনবরত আমরা বকবক করে যাই - তাতে কী মানুষের চিন্তাধারার পরিবর্তন ঘটেনা? কোন মেয়ের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অভিজ্ঞতা পড়ে আরেক মেয়ে মনে মনে সাহস পায়। পরেরবার, কিংবা তার পরেরবার যখন তাঁর সাথে কেউ ফাজলামি করতে আসে - সে নিজের মনের আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত ঘটায়। অথবা কোন বন্ধু যখন ধর্মান্ধ কথাবার্তা শুরু করে, ক্যানভাসের সদস্য বন্ধুটি যুক্তি সহকারে জঙ্গিবাদ সমর্থক বন্ধুর মত পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়। ইনবক্সেতো প্রায়ই তেমনটাই খবর শুনি। তাহলে কলমের শক্তিশালী ক্ষমতার কথা অস্বীকার করবেন কিভাবে?
কবি সাহিত্যিকেরা, বুদ্ধিজীবীরা মানুষের চিন্তাধারা পাল্টে যেতে সাহায্য করেন। এই যে আমাদের দেশে জঙ্গিবাদের উত্থান, ধর্মান্ধতা, দূর্নীতি, সংখ্যালঘু নির্যাতন, উগ্রবাদ - সবকিছু কেন ঘটছে জানেন? কারন পঁয়তাল্লিশ বছর আগের ১৪ই ডিসেম্বর তারিখে একদল কুকুর লেজ নাড়তে নাড়তে লিস্ট হাতে নিজের দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের বাড়ি থেকে ধরে ধরে এনে তাদের প্রভুদের খুশি করেছিল। আজকে দুই চারটা নোবেল পেলাম না কিংবা আমাদের বাড়িতে অস্কার এলোনা নিয়ে আমার বিন্দুমাত্র হাহাকার নেই - ওসবে কারোর কিছুই আসে যায়না। হাহাকার করে উঠি যখন দেখি দেশের রাজধানী শহরে এক মহিলা ছোট্ট শিশু কন্যাকে নিয়ে আত্মঘাতী বোমা হামলা করে।
হাহাকার করি যখন দেখি ধর্মান্ধ গোষ্ঠী এবং সেকুলার দাবিকারী জনতা একই স্বরে কথা বলে দেশটাকে সমান দুভাগে ভাগ করে টানাটানি করে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলছে।
কেন এমনটা ঘটে?
কারন যেসব আলোক মশাল আমাদের পথ দেখাবার কথা, ওরা আগেই তাঁদের নিভিয়ে দিয়েছিল।
©somewhere in net ltd.
১| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ৮:৫৪
মু ওমর ফারুক বলেছেন: বুদ্ধিজীবীদের আসল কাজ দেশকে নাড়া দেয়া - আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন নয়। right