নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

কুরআন সবসময়ে এক্সট্রিম সিচ্যুয়েশন বর্ণনা করে, তারপরে তার অ্যাকশন সম্পর্কে নির্দেশ দেয়।

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:২০

সুরা নূরের একটি আয়াত বলি, "তোমাদের মধ্যে যারা উচ্চমর্যাদা ও আর্থিক প্রাচুর্যের অধিকারী, তারা যেন কসম না খায় যে, তারা আত্নীয়-স্বজনকে, অভাবগ্রস্তকে এবং আল্লাহর পথে হিজরতকারীদেরকে কিছুই দেবে না। তাদের ক্ষমা করা উচিত এবং দোষক্রটি উপেক্ষা করা উচিত। তোমরা কি কামনা কর না যে, আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করেন? আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম করুণাময়।" বাইশ নম্বর আয়াত, মিলিয়ে দেখুন।
এইবার আয়াতটির ব্যাকগ্রাউন্ড বলি।
হজরত আয়েশার নামে মদিনার মুনাফেকরা অত্যন্ত জঘন্য ঘৃণ্য কিছু গুজব ছড়াচ্ছিল। আমাদের দেশে সাধারণ মানুষেরা যা করে আরকি।
"জানেন ভাবি, অমুকের বড় মেয়েটার না চালচলন ভাল না। ফুসুর ফুসুর ফুসুর।"
এবং এই ভাবি থেকে ঐ ভাবিতে ফুসুর ফুসুর হতে হতে গুজব ডালপালা ছড়াতে থাকে। এতে ভাবীদের কোনই লাভ হয়না, তবে গুজবের শিকার মেয়েটির অবশ্যই ক্ষতি হয়। সে দোষী হলেও কারোর অধিকার নেই তাঁকে নিয়ে চর্চা করার - নির্দোষ হলেতো কথাই নেই।
ইসলাম এই কুঅভ্যাসকে সিরিয়াস পর্যায়ের গুনাহ হিসেবে ধরে। ভিত্তিহীন গুজব ছড়ানোর অপরাধের শাস্তি কী জানেন? আশি ঘা বেত্রাঘাত। তুলনা করুন, ব্যাভিচারের শাস্তির সাথে। ব্যবধান মাত্র বিশ ঘা কম।
তো যাই হোক।
সাহাবীরাও মানুষ ছিলেন। কাজেই হজরত আয়েশার (রাঃ) নামে গুজব যখন কিছু সাহাবীর কানে এলো, কেউ কেউ রসালো গুজবের মজা নিতে চাইলেন। ইসলামী ভাষায়, শয়তানের ফাঁদে পা দিলেন।
"শুনলাম মা আয়েশার (রাঃ) নামে এই কথা বাতাসে ভাসছে। আমি কিছু বলছি না, শুধু জানিয়ে রাখলাম আর কি।"
জ্বি, আপনার মতে এটি নিরীহ মন্তব্য হলেও, আপনার এই মন্তব্যই কিন্তু গুজবের পালে হাওয়া দেয়।
তা এদের মধ্যেই একজন আবার হজরত আবু বকরের আত্মীয়। তাও আবার এমন একজন গরিব আত্মীয় যাকে আবু বকর অর্থ সাহায্য দিয়ে থাকেন। এখন চিন্তা করুন আবু বকরের (রাঃ) অবস্থা। হজরত আয়েশা (রাঃ) নবীজির (সঃ) স্ত্রী, বিশ্বাসীদের মা। এমনিতেই তাঁর নামে গুজব শুনলে মেজাজ ঠিক থাকার কথা না। তার উপর তিনি আবার তাঁর কন্যা।
বাংলা সিনেমার ভাষায়, "যেই থালে ভাত খাস, সেটাতেই থুথু ফেলিস?"
আবু বকর (রাঃ) কোন গালাগালি করলেন না। কোন মারধরও না। তিনি অত্যন্ত ভগ্নহৃদয়ে আল্লাহর নামে কসম খেয়ে বললেন, "আমি আর জীবনেও তাকে অর্থ সাহায্য দিব না।"
এবং আল্লাহ তাঁর এই কসমের জবাবে উপরের আয়াতটি নাজেল করলেন। বুঝালেন, মানুষই ভুল করে। সেও করেছে। তাঁকে তুমি ক্ষমা করো - আল্লাহও তোমাকে ক্ষমা করবেন।
পয়েন্ট, আল্লাহ কিন্তু মূল গুজব সৃষ্টিকারীকে ক্ষমা করেননি, বলেছেন, গুজবের ফাঁদে যে পা দিয়েছে - তাঁকে মাফ করতে।
এখন আরেকটু zoom in করা যাক আয়াতটিতে।
আল্লাহ কী কোথাও বলেছেন এই "অপরাধীকে" ক্ষমা করতে? "দোষীকে" ক্ষমা করতে? বা "বেঈমানটিকে" ক্ষমা করতে?
আল্লাহ উল্টো তাঁর প্রশংসা করে বলেছেন, "আল্লাহর পথে হিজরতকারী।" অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আল্লাহ তাঁর সবচেয়ে ঘৃণ্য অপরাধটি নিয়ে কথা বলছেন, তারপরেও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন সে জীবনে যা ভাল করেছিল তার কথা। তারপর দুইটির মধ্যে তুলনা করে বলছেন, ভালটা খারাপটার চেয়ে ওজনে ভারী, কাজেই ক্ষমা করতেই পারো।
মুসলিমদের সম্যস্যা কী জানেন? এ ঐ সেই ছোট বড় ভুল করলেই চোখ বন্ধ করে ট্যাগ দেয়া শুরু, "ও কাফির, ও ছদ্মবেশী খ্রিষ্টান, ইহুদি গুপ্তচর, গুমরাহ পশ্চিমাদের দালাল আগডুম, বাগডুম ঘোড়াডুম!"
এবং এই ট্যাগিংকারীদের মুরিদের অভাব হয়না।
এবং এই মুরিদদের থেকেই একদল পাওয়া যায় যারা কুপিয়ে অনায়াসে মানুষের মাথা ফেলে দিতে পারে।
এবং সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার হলো - এই জঘন্য অপরাধ করার পর ওরা মনে করে দ্বীনের বিরাট সেবা করে ফেলেছে! বেহেস্তে যাওয়াটা এখন কেবল সময়ের ব্যাপার।
আরেকটা পয়েন্ট বলি, কুরআন কিন্তু সবসময়ে এক্সট্রিম সিচ্যুয়েশন বর্ণনা করে, তারপরে তার অ্যাকশন সম্পর্কে নির্দেশ দেয়। এবং তারপরে আমাদের হাতে ছেড়ে দেয় যাতে নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে সহজ সিচ্যুয়েশনের অ্যাকশন বিচার করি।
উপরেরটা যেমন। নবীর স্ত্রীর নামে অপবাদ ছড়ানোর অপরাধের মতন এক্সট্রিম সিচ্যুয়েশনের বর্ণনা করেও বলেছেন, যে ভুল করে (মানুষ মাত্রই ভুল) এই ফাঁদে পা দিয়েছে, তাঁর অতীতের ভাল কাজগুলো মাথায় রেখে তাঁকে ক্ষমা করো।
হ্যা, অপরাধ কন্টিনিউ করলে, তখন শাস্তি দেয়া যাবে।
কথা প্রসঙ্গে আরেকটা উদাহরণ দেয়া ফরজ হয়ে গেছে।
তার আগে একটা ক্যুইজ।
ধরুন আপনার জীবন সঙ্গিনীকে আপনি প্রচন্ড ভালবাসেন। তাঁর ভালোর জন্য দুনিয়া ওলট পালট করে দিতে পারেন। তাঁর এবং তাঁর সন্তানদের সুখের জন্য আপনি দিন রাত এক করে পরিশ্রম করে গাধার মতন খেটে মরেন।
এবং একদিন জানতে পারলেন, আপনার সেই সঙ্গিনী আরেজনের সাথে ইটিশ পিটিশ করে বেড়ায়। আমি ভদ্রভাবে বললাম, আপনি বুঝে নিন কী বুঝিয়েছি। এক্সট্রিম সিচ্যুয়েশনের কথাই বলছি।
তখন আপনার কী করতে ইচ্ছে করবে?
তার আগে বলে নেই - অ্যামেরিকায় স্বামীর হাতে স্ত্রী খুনের কেসগুলোর প্রায় নব্বই শতাংশেরও বেশি ক্ষেত্রে দেখা যায় পরকীয়া দায়ী। স্ত্রীর "অন্য ব্যাটার সাথে লাইন" ছিল - স্বামী একদিন নিজের সিন্দুক থেকে বন্দুক বের করে মামলা ডিসমিস করে দিয়েছে।
কুরআনও এই এক্সট্রিম সিচ্যুয়েশনেরই বর্ণনা করে। জ্বি, "স্ত্রী ডালে লবন কম দিল কেন?" কিংবা "স্ত্রী শ্বাশুড়ির সাথে ঝগড়া করে কেন?" ইত্যাদি ছোটখাট আজাইরা বিষয় না বলে ডিরেক্ট বলেছে, "পুরুষেরা নারীদের উপর কৃর্তত্বশীল (protectors and maintainers) এ জন্য যে, আল্লাহ একের উপর অন্যের বৈশিষ্ট্য (strength) দান করেছেন এবং এ জন্য যে, তারা তাদের অর্থ ব্যয় করে(support them from their means)। সে মতে নেককার স্ত্রীলোকগণ হয় অনুগতা এবং আল্লাহ যা হেফাযতযোগ্য করে দিয়েছেন লোক চক্ষুর অন্তরালেও তার হেফাযত করে। আর যাদের মধ্যে অবাধ্যতার আশঙ্কা কর তাদের (প্রথমে) সদুপদেশ দাও, (দ্বিতীয়ত) তাদের শয্যা ত্যাগ কর এবং (সবশেষে) "প্রহার" কর। যদি তাতে (প্রথম অথবা দ্বিতীয় বা তৃতীয় ধাপে) তারা বাধ্য হয়ে যায়, তবে আর তাদের জন্য অন্য কোন পথ অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সবার উপর শ্রেষ্ঠ।"
কী বুঝলেন?
স্ত্রী আরেক ব্যাটার সাথে শুয়ে গেছে, আপনার মাথা এলোমেলো হয়ে গেছে - কিন্তু আল্লাহ বলছেন, তাঁকে বুঝাতে, সদুপদেশ দিতে।
আপনাকে কতটা মহান হতে বলছে বুঝতে পারছেন?
সদুপদেশে কাজ হলো না। আপনি তাঁর থেকে আলাদা শোয়া শুরু করবেন। কতটুকু ধৈর্য্যশীল হতে বলছে!!! Unbelievable!
এবং তারপরেও যদি না মানে, তবে তাঁকে এমনভাবে শাসন করবেন (প্রহার শব্দটি এখানে ফিট করেনা, কারন যে verb ব্যবহার করা হয়েছে, তায়াম্মুমের ক্ষেত্রেও একই verb ব্যবহৃত হয়েছে। তায়াম্মুম মানে পানি না থাকলে আমরা মাটি ঘষে পবিত্র হওয়ার যে নিয়ম আছে, সেটার কথা বলছি। আল্লাহ নিশ্চই মাটিকে "প্রহার" করতে বলছেন না।) যাতে তাঁর শারীরিক ব্যথা একটি টুথব্রাশ দিয়ে আঘাত করলে যে ব্যাথা হয়, তার পরিমাণকে ছাড়িয়ে যেতে পারবে না।
সিরিয়াসলি? টুথব্রাশের আঘাত? এই সিচ্যুয়েশনে? কিন্তু কুরআন এবং সুন্নাহ মোতাবেক তাইতো বলে। খুন করাতো বহুদূর! চুল টানাটানি - চড় থাপ্পড় পর্যন্ত কিচ্ছু না। কারন আল্লাহ ওয়ার্নিং দিয়েছেন, "নিশ্চয় আল্লাহ সবার উপর শ্রেষ্ঠ।"
তুমি যতবড় আন্ডারটেকার বা রক হও না কেন, তোমার স্ত্রীকে মারধরের অধিকার তোমার নাই।
এবং আল্লাহ এও জুড়ে দিয়েছেন, স্ত্রী যদি ভুলের জন্য ক্ষমা চায় - তাহলে তাঁকে মাফ করে দিয়ে সংসার চালিয়ে যেতে।
আর আমগো দেশে কী ঘটে?
যারা কুরআন সুন্নাহ নিয়ে পড়াশোনা করেন - তারাই বা এই বিষয়ে কতটুকু গভীরে যান?
তো যা বলছিলাম - এক্সট্রিম সমস্যার বর্ননার পরেও আল্লাহ শাস্তি দিয়েছেন বলতে গেলে কিছুই না। বলেছেন, কারো দোষ ধরার আগে খুঁজে দেখ তাঁর পুণ্যের পরিমান কত। এবং সবচেয়ে বড় কথা - তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন - তিনিই আসল বিচারের মালিক। আরে বাবা, তিনি যদি মানুষদের হাতেই বিচারের দায়িত্ব ছেড়ে দিতেন, তাহলেতো হাশরের ময়দানের ব্যবস্থাই থাকতো না। মানুষের ভিতরে কী চলছে তুমি আমি বুঝে ফেলবো? আমরা এতই বিরাট তালেবর?
এখন উপরের লেখার আলোকে নিজেকে শুধরে ফেলার চেষ্টা করুন।
কাউকে ভন্ড, কাফির, মুশরিক, বেঈমান ইত্যাদি ট্যাগ দেয়ার আগে দেখুন তাঁর ভাল কর্মকান্ডগুলো কি।
হজরত উসমানকে (রাঃ) কারা হত্যা করেছিল? কারা হজরত আলীকে (রাঃ) হত্যা করেছিল? এই ফ্যানাটিক মুসলিমরাই। বিশ্বাস করেন আর নাই করেন, ওদের বিশ্বাস ছিল হজরত উসমান এবং আলী "সহীহ" মুসলিম ছিলেন না।
এখন হাসছেন। কিন্তু আপনিই ভেবে বলুন, আপনি নিজেও কী সেসব খাওয়ারিজদের মতন আচরণ করেন না?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.