নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

হে মুমিনগণ ! তোমরা ইহুদী ও খৃষ্টানদেরকে "বন্ধু" রূপে গ্রহণ করিও না

৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:৪৩

ছোটবেলায় কোন দোষ করলে, যেমন ক্রিকেট খেলতে গিয়ে গাড়ির সিগনাল লাইট ভেঙ্গে ফেলা জাতীয় অপরাধ করলে, বাবা মা বকে দিতেন।
"অ্যাই রাজীব! তুমি এমন করলে কেন?"
মা বাবার বকুনিতে কোনই সমস্যা ছিল না। ভুল করেছি, এখন বুঝতে পেরেছি, তাই অনুতপ্ত।
কিন্তু মেজাজ তখনই খারাপ হতো যখন বড় বোন সুযোগের ফায়দা তুলতে আসতো।
বাবা মায়ের বকুনি শেষ হতে না হতেই সে আরও কড়া গলায় বলতো, "ঠিকই তো, তুই এমন করলি কেন? এখন কার পকেট থেকে টাকা যাবে? আব্বু আম্মু এত কষ্ট করে রোজগার করে, আর তোর সারাদিন শুধু খেলা, খেলা আর খেলা। পড়ালেখা নাই? স্কুলের পরীক্ষায় পাস করিস কিভাবে? নকল ছাড়াতো মনে হয় না সেটা সম্ভব।......"
এবং শুরু হয়ে যাবে জ্ঞান হবারও আগে থেকে কবে কোন কোন অপরাধ করেছিলাম সেই নিয়ে ইতিহাস ঘাটাঘাটি।
সূর্য গরম থাকবেই, এটাই তার স্বভাব। কিন্তু বালি যখন গরম হয়ে যায়, তখন মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। ঠিক না?
লেগে যেত ধুন্ধুমার কান্ড।
লাভের মধ্যে লাভ এই হতো যে, পরিস্থিতি তখন সম্পুর্নই আমার দিকে ঘুরে যেত।
আব্বু আম্মু তখন উল্টা আমার পক্ষ নিয়ে আমার বোনকেই ধমক দিতে শুরু করতেন।
"আমাদের জিনিস নষ্ট হয়েছে, আমরা বকছি, তুমি কথা বলতে আসলে কেন?"
"না মানে ইয়ে....."
"কোন ইয়ে ফিয়ে না। যাও, নিজের ঘরে গিয়ে পড়তে বসো। আর যাবার আগে স্যরি বলে যাও।"
ঘটনা পরিচিত মনে হচ্ছে না? জ্বী ভাই, এটাই "কাহানি ঘর ঘর কি।"
এখন আসি মূল পয়েন্টে।
ইসলাম ধর্ম মতে আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করা যাবেনা। আমাদের বিশ্বাস করতেই হবে নিখিল ব্রহ্মান্ড তাঁরই সৃষ্টি, তিনিই সবার পালনকর্তা, লালনকর্তা। তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই, এমনকি হযরত মুহাম্মদ (সঃ) পর্যন্ত তাঁর সৃষ্ট একজন দাস, তাঁর প্রতিনিধি, এবং যাঁর একমাত্র দায়িত্ব তাঁর হুকুম পালন করা।
এর অন্যথায় কিছু ভাবলে সেই ব্যক্তি আর মুসলিম থাকেনা, মুশরিক হয়ে যায়।
এখন, স্বাভাবিকভাবেই অন্যান্য ধর্মের লোকেরা এই ব্যপারটা বিশ্বাস করে না। যেমন খ্রিষ্টানরা আমাদের আল্লাহকে বিশ্বাস করলেও সাথে এও মনে করে যে যিশু (আঃ) তাঁর পুত্র।
আমাদের ধর্ম বিশ্বাস অনুযায়ী ব্যপারটা আল্লাহর জন্য খুবই অপমানজনক। মহাশক্তিশালী যে ঈশ্বর, তাঁর পুত্রের প্রয়োজন হবে কেন? তাও আবার তাঁকে জন্ম দিতে হলে মাধ্যম হিসেবে একজন মনুষ্য নারীর গর্ভ লাগবে?
আল্লাহ নিজেই এই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
কুরআনে নিজের প্রচন্ড রাগ মোটামুটি এইভাবে প্রকাশ করেছেন, "ওরা যখন বলে আল্লাহ সন্তান নিয়েছেন, তখন আকাশ বিষ্ফোরিত হতে চায়, ধরনী বিদীর্ণ হতে চায়, এবং পাহাড় পর্বত ধ্বসে ধুলিকনা হতে চায়........।" (আক্ষরিক নয়, ভাবানুবাদ করলাম)
যেই কুরআনে যিনি নিজেই বহুবার বলেছেন যে তিনি রাহমানুর রাহিম, পরম করুনাময়, সেখানে তিনিই বলছেন কেউ যখন তাঁর বিরুদ্ধে এমন জঘন্য অপবাদ দেয়, তখন তিনি কতটা ক্রোধান্বিত হন।
পরিস্থিতিটা ভয়ংকরতো অবশ্যই।
এবং তখনই আমাদের মুসলমান ভাইয়েরা আমার "বড় বোন" হয়ে যান।
"ইহুদি-খ্রিষ্টানরা আমাদের জন্মশত্রু! ওদের সাথে মেলামেশা করলে আমরাও ধ্বংস হয়ে যাব। আল্লাহর গজব নাজিল হবে। ব্লা ব্লা ব্লা!"
এবং রেফারেন্স হিসেবে তাঁরা সবসময়ে উপরে বর্ণিত কুরআনের আয়াতটাই পেশ করেন। এবং আমাদের মতন স্বল্প জ্ঞানী সাধারন মুসলিমরা তখন তেমন মাথা না খাটিয়েই ভাবি, "আসলেইতো! আল্লাহ যেখানে ওদের উপর ক্ষেপে গেছেন, তখন আমরা কেন ওদের সাথে মিশবো?"
ব্যস! ওদের সাথে মেলামেশা বন্ধ করে দেই। ফলে একটা সময়ে ওদের "মানুষ" হিসেবে গন্য করা বন্ধ করে দেই। ফলে একটা সময়ে ওদের এলাকায় বোমা ফেলে আসি। কিংবা জবাই করে বলি, "আল্লাহু আকবার!"
এবং যখন টেলিভিশনে শুনি খ্রিষ্টান প্রধান এলাকায় জঙ্গি হামলায় এত লোক নিহত হয়েছে, ইহুদি প্রধান এলাকায় মরেছে এতজন, আমরা মনে মনে বিমলানন্দ বোধ করি।
ঠিকতো?
এখন আমার একটাই প্রশ্ন, ইসলাম যদি আমাদের স্কুল হয়ে থাকে, তাহলে এর হেডমাস্টার কে? অবশ্যই মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ (সঃ)। তাঁর চেয়ে বেশি কেউতো আর আল্লাহর নির্দেশ পালন করতে পারবে না। তাঁর দ্বারা সম্ভবও ছিল না আল্লাহর বিরুদ্ধে যাবার। এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, তিনি কী কুরআনের এই আয়াতগুলো জানতেন না? তাঁর চেয়ে বড় কুরআনের আলেম বা ইসলামিক স্কলার কে আছে?
তাহলে দেখা যাক তিনি কী করলেন।
মসজিদে নববী তখন মাত্রই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ইয়েমেনের নাজরান অঞ্চল থেকে একদল খ্রিষ্টান পাদ্রী এলেন তাঁর সাথে ঈসার(আঃ) ব্যপারে আলোচনা করতে। আমাদের নবীজি (সঃ) তাঁদের কোথায় থাকবার ব্যবস্থা করলেন? মসজিদে নববীর ভিতরে।
আমাদের দেশে কল্পনা করাও সম্ভব? মসজিদের ভিতরে বিধর্মী ধর্মগুরুদের থাকবার ব্যবস্থা!
একটা সময়ে তাঁদের প্রার্থনার সময় এলো। নবীজি (সঃ) বললেন, "তোমরা মসজিদের ভিতরেই উপাসনা করতে পারো।"
আমাদের দেশে হলে এলাকা জুড়ে ইন্নালিল্লাহ রব উঠতো। মসজিদের ভিতরে খ্রিষ্টানদের প্রার্থনা! সেইসব খ্রিষ্টান, যারা আল্লাহকে সন্তানের পিতা বলে অপমানিত করে!
কিন্তু নবীজি (সঃ) কোন মসজিদে এর অনুমতি দিলেন? মসজিদে নববী - মর্যাদার বিচারে যার উপরে একমাত্র কাবা শরীফের স্থান!
এবং আরেকবার সাহাবীদের সাথে তাঁর আলোচনার মাঝখানে এক ইহুদি ব্যক্তির জানাজা যেতে দেখে মৃতের প্রতি সম্মান দেখাতেই তিনি উঠে দাঁড়ান।
সাহাবীরা বললেন, "হে আল্লাহর দূত (সঃ)! মৃত ব্যক্তি একজন ইহুদি।"
নবীজি উল্টো আহত গলায় বললেন, "তারও আগে সে কী একজন মানুষ না?"
জ্বী, আমাদের নবীজি (সঃ) আমাদের "বড় বোন" ছিলেন না।
আল্লাহর বান্দা, আল্লাহর সাথে বেয়াদবি করেছে, আল্লাহ বকে দিয়েছেন। আমাদের কী? আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে আল্লাহর নির্দেশ পালন। সেটা হচ্ছে, "তোমরা ওদের দেবদেবীদের নামে কুকথা বলো না....."
"....দ্বীনের ব্যপারে কোন জবরদস্তি নেই।"
"তোমাদের রবকে আমি উপাসনা করি না, আমার রবকেও তোমরা উপাসনা কর না। যার যার ধর্ম তার তার কাছে।"
এবং এইরকম আরও অনেক আয়াত যা কুরআনে আছে।
কথা প্রসঙ্গে আরেকটা কুরআনের আয়াতের মহাগুরুত্বপূর্ণ ব্যাখ্যায় আসি। কিছু সংকীর্ণমনা বেকুব আহাম্মক এই আয়াতটার ভুল ব্যাখ্যা ফেসবুকে ছড়িয়ে "বিশৃঙ্খলা" সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে ২৫শে ডিসেম্বরের আগে ও পরে।
সূরা আল মায়েদাহর ৫১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, "হে মুমিনগণ ! তোমরা ইহুদী ও খৃষ্টানদেরকে "বন্ধু" রূপে গ্রহণ করিও না, তারা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু৷ তোমাদের মধ্যে কেউ তাদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করলে সে তাদেরই একজন হবে৷ নিশ্চয় আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না।"
এই আয়াত পড়েই মাথায় হাত দিয়ে বলবেন, "খাইছে! তাইলেতো ইউরোপ অ্যামেরিকার মুসলিমরা সব দোযখে যাচ্ছে! ইয়া রাহমানুর রাহিম! এইসব কাফির কুফফারদের ধ্বংস করো! সবাই বলেন, আমীন!"
রিল্যাক্স! আয়াতটির ব্যাখ্যার আগে আফসোস করি কেন যাদের ভাষার উপর ভাল দখল আছে, তাঁরা কুরআন তর্জমা করেন না। তাহলে কোন ঝামেলাই হতো না।
আয়াতটির শানে নজুল বলি।
ইসলামের ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আলেম ইব্ন কাসিরের লেখনী থেকে, এই আয়াতটি ওহুদের যুদ্ধের পরে নাজিল হয়েছিল। কারন মদিনার এক মুসলিম আনসার ওহুদের যুদ্ধের ভয়াবহতা দেখে ঘোষণা দিয়েছিলেন, তিনি মদিনায় ফিরে গিয়ে ইহুদিদের প্রোটেকশন গ্রহণ করবেন, তাহলে মদিনায় যদি কুরাইশরা আক্রমণ করে, তাহলে তিনি নিরাপদ থাকবেন।
এই শুনে আরেক আনসার বললেন, তিনি তাহলে তাঁর খ্রিষ্টান বন্ধুদের এলাকায় শিফট হয়ে যাবেন।
আয়াতটি ব্যাখ্যার আগে তখনকার দিনের সামাজিক ব্যবস্থারও একটু ধারণা পেতে হবে।
আশা করি সবাই জানেন যে সেই যুগে "দেশ" বলে কোন কিছুর অস্তিত্ব ছিল না। কোন সৌদি আরব, কোন ইন্ডিয়া-পাকিস্তান-বাংলাদেশ, কোন অ্যামেরিকা ছিল না। ছিল একেকটি শহর, এবং অঞ্চল। মানুষের জাতীয়তা ছিল ধর্ম ও গোত্রভিত্তিক। জ্বি, আপনি হিন্দ অঞ্চলে জন্মালেই হিন্দুস্তানী হয়ে যেতেন না - আপনার ধর্ম-গোত্র ইত্যাদি ছিল আপনার জাতীয়তা। কেউ ব্রাক্ষন, কেউ ক্ষত্রিয়, কেউ শূদ্র, কেউ কায়স্থ। তেমনি, আরবেও জাতীয়তা ছিল ধর্ম ও গোত্রভিত্তিক। মক্কার কুরাইশরা ছিল পৌত্তলিক; মদিনা ছিল ইহুদি-খ্রিষ্টান এবং পৌত্তলিক নন কুরাঈশীদের অঞ্চল। কোন পুলিশ নেই, কোন সামাজিক নিয়ম শৃঙ্খলা নেই। যে যার সম্প্রদায়ের লোকদের প্রতিরক্ষা করছে।
মুসলিমরা আলাদা জাতি হিসেবে তখন সবে আত্মপ্রকাশ করা শুরু করে। যেই ইসলাম গ্রহণ করে, সেই মুসলিম উম্মাহর সদস্য। ইসলামই তাঁর জাতীয় পরিচয় বা আধুনিক ভাষায় "পাসপোর্ট।"
এখন স্বাভাবিকভাবেই, যখন একটি দেশের উপর আক্রমণ ঘটে - যেমন বাংলাদেশের উপর পাকিস্তানের আক্রমণ হয়েছিল - তখন পাকিস্তানে অবস্থানকারী বাঙালিদের উপরও কিন্তু অত্যাচার হয়েছিল। সেখানে আশ্রয় গ্রহণ তাঁদের নিরাপত্তা দেয়নি। ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল বিশাল অংকের উদ্বাস্তু, কিন্তু ভারত সরকার তাঁদের ভারতীয় পাসপোর্ট দিয়ে গ্রহণ করেনি - শরণার্থী শিবিরে রেখেছিল - দেশ স্বাধীন হবার পর বলেছিল "টা টা বাই বাই।"
ঠিক যে কারনে আমরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিচ্ছিনা। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে পিঁপড়ার মতন টিপে ফেলার ক্ষমতা আমাদের মিলিটারির আছে। তবুও আমরা পরের জন্য নিজের জোয়ানদের প্রাণক্ষয় করতে চাইনা। অস্বাভাবিক কোন মানব আচরণ এটি নয়।
কাজেই আল্লাহ বলেছেন, ইহুদি খ্রিষ্টানদের পৃষ্ঠপোষকতা গ্রহণ করোনা। ওরা ওদের স্বজাতিকে যেভাবে প্রোটেক্ট করবে - তোমাকে করবে না। তোমার জন্য তোমার ভাইই এগিয়ে আসবে, প্রয়োজনে প্রাণ দিবে।
পৃষ্ঠপোষকতা শব্দটিকে "বন্ধু" লিখে চালিয়ে দিয়েছে। এবং এক দল লোক এটিকেই আক্ষরিকভাবেই ফলো করে। বেকুব আহাম্মকেরা চিন্তাও করেনা তার বাপ, বাপের বাপ, কিংবা বাপের বাপের বাপ কোন এক সময়ে যখন ইহুদি/খ্রিষ্টান/হিন্দু/বৌদ্ধ ছিলেন - তখন কোন মুসলিম যদি তাঁদের সাথে বন্ধুত্ব না করতেন, তাহলে তাঁরা মুসলিম হতেন না। "জোর করে ভালবাসা আদায় করা যায়না" - বাংলা সিনেমার হাস্যকর ডায়লগ হলেও বাস্তব জীবনে এটি সত্য। জোর করে কাউকে কিছু গছিয়ে দিলে মানুষ সেটা জেনারেশনের পর জেনারেশন ধরে আগলে রাখেনা। প্রথম সুযোগে ফি সাবিলিল্লাহ বলে বিদায় জানায়।
এখন আসি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে, সেটা হচ্ছে মূর্তি ভাঙ্গা!
কিছুদিন আগে অন্য এক গ্রুপে এক ইসলামোফবিক আমাকে বলেছিল, "তোমাদের নবী মক্কা বিজয় শেষে মূর্তি ভেঙ্গেছিল। ম্যা ম্যা ম্যা।"
আসলে সে ম্যা ম্যা করার সুযোগ পেয়েছে, কারন আমাদের দলেরই অসংখ্য বেকুব ওদের এই ভাষাই শিখিয়েছে।
পূজা মৌসুমে আমাদের দেশে প্রতিমা ভাঙ্গাতো অতি সাধারণ ঘটনা। বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে অর্ধশিক্ষিত মোল্লারা স্পষ্টচ্চারণে মাইকে হিন্দুদের গালাগালি করে। খুবই ফায়দা হয় তাতে, সবার মধ্যে জোশ চলে আসে, আসর গরম হয়ে উঠে। ফলে প্রচুর "লাইক ও শেয়ার" হয়। মোল্লা সাহেব আলেম সমাজে রাতারাতি সুপারস্টার সেলিব্রেটি বনে যান।
এইদিকে আমরা ডোনাল্ড ট্রাম্পকে র‌্যাডিকাল বলে গালাগালি করি, দেশে যে কোটি কোটি র‌্যাডিকালের সাথে বাস করছি, সেই খবর নাই।
যাই হোক, প্রতিমা ভাংচুর করা মোল্লারা নিজেদের কুকর্ম জায়েজ করতে দুইটা উদাহরণ ব্যবহার করে। প্রথমটা হচ্ছে নবীজির মক্কা বিজয়ের ঘটনা। দ্বিতীয়টি, কুরআনে বর্ণিত হজরত ইব্রাহিমের ঘটনা - যেখানে তিনি প্রতিমা ভেঙ্গে বলেছিলেন "যে নিজেকেই নিজে রক্ষা করতে পারেনা, তার উপাসনা করবো কেন?"
প্রথম কথা হচ্ছে, ইব্রাহিম (আঃ) আল্লাহর কাছে বিশেষ একজন নবী। তাঁকে দিয়ে তিনি এমন সব পরীক্ষা নিয়েছেন যা অন্য কাউকে দিয়ে নেননি। অন্য কোন নবী বা রাসুলের কিন্তু প্রতিমা ভাঙ্গার রেকর্ড নেই।
মূর্তি ভাঙ্গা যদি তাঁর সুন্নত হয়ে থাকে, তবে আমাদের নবীজি সেটা বহু আগেই পালন করতেন। কারন ইব্রাহিম (আঃ) কৈশোরে এই কাজ করেছিলেন, এবং কৈশোর কিংবা যৌবন বা নব্যুয়াতি লাভের পরেও তেরোটি দীর্ঘ বছর কাবা ঘরের এক্সেস আমাদের নবীজির (সঃ) পরিবারের হাতেই ছিল। তিনি কেবল বলেছিলেন, "তোমরা মূর্তি পূজা করোনা।"
বলেননি, "ঘরে ঘরে ঢুকে অন্যের পূজার মূর্তি ভেঙ্গে ফেল।"
তাহলে তিনি কাবা ঘর জয় করার পর মূর্তি ভাঙ্গলেন কেন?
বিষয়টা খুবই গভীর, তবে বুঝা খুবই সহজ।
কাবা ঘর প্রথম থেকেই মুসলিমদের জন্য "মসজিদ" ছিল, সেই ইব্রাহিমের (আঃ) সময় থেকেই। মুশরিকরা এর দখল নিয়ে একে দেবদেবীর মূর্তিতে ভরে ফেলে। কাজেই এটি পুনরুদ্ধারের পর সব মূর্তি ভেঙ্গে ফেলা হয়।
এর মানে হচ্ছে, তুমি কেবল তখনই দেব দেবীর মূর্তি ভাঙ্গতে পারবে, যখন কেউ কোন মসজিদ দখল করে সেটাকে মন্দির বানাবে, এবং তুমি আবার সেটাকে পুনরুদ্ধার করে মসজিদ বানাবে।
যুক্তির স্বপক্ষে প্রমান লাগবে? খলিফা আবু বকর, উমার, উসমান, আলীর (রাঃ) সময়ে একের পর এক বিধর্মী সাম্রাজ্যের পতন ঘটেছিল, কিন্তু একটিও মন্দির ভাংচুরের ঘটনা ঘটেনি। উমারের (রাঃ) সময়েতো মুসলিম সাম্রাজ্য পাকিস্তান পর্যন্ত এসে ঠেকেছিল, পার্সি অঞ্চলে জোরাস্ট্রিয়ান মন্দির ছিল, হিন্দুদের মন্দিরও ছিল, গির্জা আর সিনেগগতো ছিলই। একটিও উপাসনালয় ভাঙ্গার রেকর্ড নেই। উমারতো (রাঃ) জেরুসালেমের ইহুদি-খ্রিষ্টানদের বলেইছিলেন, "আমাদের উপাসনায় তোমরা বাঁধা দিওনা, তোমাদের উপাসনায় কেউ বাঁধা দিলে আমাকে এসে বলবে, আমি ন্যায় বিচার করবো।"
শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে জেরুসালেমের অর্থডক্স খ্রিষ্টানরা বরং ইহুদিদের উপাসনায় বাঁধা দিত; এক শাখার খ্রিষ্টান আবার আরেক শাখার খ্রিষ্টানকেও উপাসনা করতে দিত না। উমারই (রাঃ) ওদের প্রথম অধিকার দেন প্রকাশ্যে নিজ নিজ ধর্মচর্চার।
এখন বলেন দেখি, রাসুলের (সঃ) প্রিয় সঙ্গী উমার (রাঃ) থেকে আপনি আমি ইসলাম বেশি বুঝে ফেলেছি?
উপরে লেখা প্রতিটা ঘটনা সত্য ঘটনার উপরে আধারিত। কারও রেফারেন্স লাগলে ইন্টারনেট ঘাটেন ভাই। গুগল করলেই সব চোখের সামনে ভেসে উঠে। পাতে খাবার তুলে দিয়েছি, চামচ দিয়ে খাইয়ে দিতে আবদার করলে চলবে কেমনে? খানিকটা পরিশ্রম নিজেও করেন। এতে লাভের লাভ হবে এই যে আপনি নিজে আরও অনেক কিছুই শিখতে পারবেন যা এখানে বলা হয়নি।
"অমুক এই কাজ করেছে, সে কাফির" "তমুক ঐ কাজ করেছে, ও কাফির" জাতীয় ফালতু প্যাচাল বাদ দিয়ে চেষ্টা করেন মন থেকে মুসলিম হতে। অন্যে কী করছে না করছে সেটা আল্লাহ এবং তাঁর ব্যপার। তাঁর দ্বীন, তাঁর নির্দেশ। কাউকে শাস্তি দিলে তিনি দিবেন, পুরস্কার দিলেও তিনিই দিবেন। আপনি কেন "বড় বোন" হয়ে মাতবরি করতে আসেন?
(পুরানো লেখার সাথে কিছু নতুন তথ্য জুড়ে দিয়ে পুনঃপ্রকাশ)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.