নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
"আমি অমুককে ভালবাসি, কিন্তু আমার বাবা মা আমাকে তাঁর সাথে বিয়ে করতে দিতে চান না।"
যদি তরুণ সমাজের মধ্যে একটি জরিপ চালানো হয়, তাহলে দেখা যাবে ছেলে মেয়ে নির্বিশেষে এই একটা সমস্যা তাঁদের সবার মধ্যেই কমন পড়বে। ছেলে হলে বাবা মা বলবেন, "এখনো তোমার পড়াশোনা শেষ হয়নাই, (মাত্র ব্যাচেলর্স পাশ করেছে, মাস্টার্স, পিএইচডি পোস্ট ডক্টরেট বাকি আছে) এখনই কিসের বিয়ে?"
ধরা যাক ছেলে সুপার জিনিয়াস। পঁচিশ বছর বয়সেই পিএইচডি শেষ করে ফেলেছে। এবং ভাল চাকরিও পেয়ে গেছে। তারপরেও মা বাবা বলবেন, "এখনও নিজের টাকায় বাড়ি গাড়ি কিছুই হয়নি তোমার। এখনই কিসের বিয়ে?"
মেয়ে হলেতো কথাই নাই।
"যেহেতু ছেলেটা তোমার পছন্দ, কাজেই ঐ ছেলে ছাড়া পৃথিবীর অন্য যেকোন ছেলের সাথে তোমার বিয়ে দেব।"
end of conversation, full stop!
অথচ মজার ব্যপার হচ্ছে, মা বাবা কিন্তু সংসার করবেন না, সংসার করবে ছেলে-মেয়ে। আল্লাহ হায়াৎ দিলে একেকটা সংসারের ইনিংস পঞ্চাশ ষাট সত্তুর বছর পর্যন্ত লম্বা হবে। যে সঙ্গীর হাত ধরে এই সুদীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে, তা নির্বাচন করার অধিকার পর্যন্ত আমরা বাবা মারা নিজেদের সন্তানদের দেই না। অথচ পৃথিবীর যেকোন দেশের রাষ্ট্রীয় আইন বলে, পুরুষ-নারী আঠার বছর বয়ষ্ক হলে সেই দেশের সরকার নির্বাচনের ক্ষমতা পর্যন্ত সে রাখে। কেবল নিজের সঙ্গী নির্বাচনের ক্ষমতা তাঁর নেই!
একটি পুরুষ তের চৌদ্দ বছর বয়স থেকেই বিয়ের জন্য (ভদ্রশব্দ ব্যবহার করলাম, কি বুঝিয়েছি বুঝে নিন) তৈরী হয়ে যায়। দেশের আইন বলে একুশ বছর বয়স হলে সে বিয়ে করতে পারবে। নারীর ক্ষেত্রে বয়সটা আরও কম। যেখানে দেশের সংবিধান তাঁদের বাঁধা দিচ্ছেনা, সেখানে আমাদের নাক গলাতেই হবে?
সম্রাট আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট, পৃথিবীর সর্বকালের সর্বসেরা মিলিটারি জেনারেলদের একজন - কতবছর বয়সে রাজ সিংহাসনে বসেছিলেন? অথচ আমাদের দেশে পঁচিশ ছাব্বিশ হওয়ার পরেও আমরা ছেলেদের বিয়ের পিঁড়িতে বসতে দেইনা।
যার ফলে আমরা দেখি ছেলেমেয়েরা অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে যাচ্ছে। বেশিরভাগই এডাল্ট। বিয়ের যোগ্যতা ও সাংবিধানিক অধিকার তাঁদের আছে, তারপরেও তাঁদের চোরের মতন লুকিয়ে লুকিয়ে কাজগুলো করতে হচ্ছে। কারন নিজের বাবা মাই নিজেদের শত্রু হয়ে বসে আছেন।
"ঠিক মতন স্টাব্লিশ না হয়ে বিয়ে করলে বৌকে খাওয়াবে কী?"
"স্টাব্লিশড ছেলের সাথে বিয়ে না করলে মেয়েতো না খেয়ে মরবে।"
তা স্টাব্লিশমেন্ট বলতে আপনি কী বুঝাচ্ছেন? ভাল চাকরি, গাড়ি, বাড়িতো? তা সৎ উপায়ে সেসব করতে একটি ছেলের কতদিন সময় লাগে সেটা সম্পর্কে কী আপনাদের কোনই ধারণা নেই? ততদিন মেয়েটাকি তাঁর জন্য বসে থাকবে? আপনারা নিশ্চয়তা দিতে পারবেন? শুধু শুধু ছেলেটিকে দুর্নীতিবাজ বানাতে উঠে পরে লেগেছেন কেন?
"ওতো এখনও বাচ্চা, ও নিজের পছন্দ অপছন্দ কী বুঝে?"
তাহলে এইটা আপনার ব্যর্থতা। আপনিই আপনার ছেলেমেয়েকে সঠিক শিক্ষা দেননি কিভাবে নিজের জীবন সঙ্গী/সঙ্গিনী নির্বাচন করতে হবে। এখন ওদের দোষ দিয়ে লাভ কী? সাধারণত দেখবেন, ডাক্তার পুরুষ ডাক্তার নারীকেই চান, ইঞ্জিনিয়ার খোঁজ করেন নারী ইঞ্জিনিয়ারের। সাথে অন্যান্য গুণাবলীতো থাকেই। আপনার ছেলেকে আপনি বানালেন চাপরাশি, অথচ ভেবে বসে আছেন ছেলে অফিসার হয়ে বসে আছে - এখন সে নিজের জন্য চাপরাসিনীকে নির্বাচন করলে ওর উপর খ্যাপার পরিবর্তে নিজের ব্যর্থতার উপর "আলোকপাত" করুন। তাহলে নিজেও সুখী থাকবেন, ছেলেমেয়েরাও সুখে থাকবে।
হ্যা, এখন সতেরো বছর বয়সী ছেলেমেয়ে যদি এসে বলে বিয়ে করতে চায় - তাহলে ভদ্রভাবে বলুন একুশ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে। নাহলে জেল জরিমানা হবে। সাথে এই কন্ডিশনও দিন, তাড়াতাড়ি পড়ালেখা শেষ করে একটা ভাল চাকরিতে ঢুকে যেতে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে তাঁরা নিজেরাও বুঝবে কোন বছর বয়সে বিয়ের জন্য তাঁরা প্রস্তুত।
এবং আল্লাহর ওয়াস্তে টাকা পয়সা দিয়ে ছেলে মেয়ের সুখ পরিমাপ করার ছাগলামি করবেন না। দেখা যায় গরিব থেকে মধ্যবিত্তের সন্তান, যাকে আপনার মেয়ে ভালবেসে বিয়ে করেছে, সেই ঘরে সে রানীর মতন আছে। অথচ দুর্নীতিবাজ মন্ত্রীর লম্পট ছেলের টাকা পয়সা, সামাজিক স্ট্যাটাস দেখে আপনি যে বাড়িতে নিজের মেয়েকে তুলে দিয়েছেন, হয়তো সেই বাড়িতে বেচারিকে চাকরানীর মতন আচরণ করা হয়।
"আমার গর্বে বুক ফুলে যায় যখন দেখি আমার মেয়ে গাড়িতে চড়ে নিজের মা বাবার বাড়িতে আসে।"
আপনার গর্বে বুক ফুলে শার্ট বদলে ব্লাউজ পড়তে ইচ্ছা হলে নিজের সন্তানের মনের সুখের দিকে তাকিয়ে গর্ব করতে শিখুন, তাঁর টাকা পয়সাকে দেখে নয়। আপনি হয়তো ব্লাউজ পরে সুখের নিদ্রা যাচ্ছেন, এইদিকে মেয়ে হয়তো প্রতিদিন চোখের পানি ফেলছে। এই ব্লাউজ দিয়ে আপনি কী করবেন?
"মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেস্ত।" - এইক্ষেত্রে ব্যবহার করা সবচেয়ে কমন হাদিস।
"যেহেতু মায়ের সম্মতি নেই, কাজেই তুই এখানে বিয়ে করতে পারবিনা। তাহলে তুই দোজখে যাবি।"
মাই ডিয়ার আন্টি, সেইসব মায়ের পায়ের তলে সন্তানের বেহেস্ত যারা নিজেরা আগে বেহেস্তে যাবে। আপনি যে বেহেস্তে যাচ্ছেন এই গ্যারান্টি কে দিয়েছে? উল্টা নিজের সন্তানের উপর অন্যায় করে নিজের জন্যই জাহান্নামের পথ সুপ্রশস্থ করছেন।
মনে রাখবেন, আপনার সন্তান কিন্তু আপনার নিজের সম্পত্তি নয়। সেটা আল্লাহর তরফ থেকে একটি আমানত। তিনি আপনাকে নির্বাচন করেছেন যাতে তাঁকে মানুষের মতন মানুষ বানাতে পারেন। যখন খুশি ফেরত নেয়ার অধিকার তিনি রাখেন। তখন আপনার কিছুই করার থাকবেনা। বরং, ওকে মানুষ করার দিকেই ফোকাস করুন।
আমার মতে, বিয়ের সময়ে সবার আগে দেখা উচিৎ স্বভাব-চরিত্র। চরিত্র ভাল - তো সে মহেন্দ্র সিং ধনী হোক, বা হাজি গরীবুল্লাহ সওদাগর, বিয়ের জন্য ৯০% কদম এগিয়ে যান।
তারপরেই দেখুন কম্প্যাটিবিলিটি - বাংলায় বোধকরি শব্দটা হবে উপযুক্ততা। আপনি একজন গরিব রিক্সাওয়ালা, আপনার মেয়ে পায়ে হেঁটে গার্মেন্টসে কাজ করতে যায়। কোটিপতি ধনীর দুলাল আপনার মেয়ের চেহারা দেখে প্রেমে পরে বিয়ের প্রস্তাব দিল। এই পরিবারে আপনার মেয়ের বিয়ে দিলে আপনার "গিরামের আন্ডা" মেয়ে "শহরে এসে মামলেট" হয়ে যাবে। আপনাকে রিকশাওয়ালা, বা টেম্পো বেবিওয়ালা জামাইই খুঁজে বের করতে হবে যার চরিত্র ভাল।
বাংলা সিনেমার উদাহরণ দিলেও নিজের পরিস্থিতির সাথে মিলিয়ে রুল ফলো করুন।
আমার ছেলের বয়সটা এমন যে সে তাঁর সমবয়সী কোন বাচ্চার সাথে তেমন মেলামেশা করেনা। নিজের খেলা নিয়েই ব্যস্ত থাকে।
তো সেদিন এক দোকানে এক পরমা সুন্দরী বাচ্চা (তাঁর বয়সীই হবে, অথবা একটু বড়) তাঁর সামনে এসে হাজির হলো। সেই প্রথম আমার বাচ্চা অন্য কোন বাচ্চার দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকালো। এতটাই মুগ্ধ যে সে নিজের খেলনা নিয়ে খেলা, ক্রিম কেক খাওয়া সব বন্ধ করে দিল। মেয়েটাও দেখি তাঁর দিকে সমান দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
পুরাই সিনেমার দৃশ্য।
সাথে সাথে মেয়েটা করলো কী দুই হাত উপরে তুলে বিড়বিড় করে কিছু একটা বলে "আমিন" বলে চলে গেল। আরব মুসলিম হবে হয়তো। যাক, কেউ আমার জন্য জীবনেও মোনাজাত করেনি, আমার ছেলের জন্যতো করলো। এই মেয়েতো আমার ছেলেকে রাজার মতন রাখবে।
আমি সাথে সাথে তাঁর মাকে বললাম, "আমার পুত্রবধূ পছন্দ হয়েছে!"
বাকি আল্লাহ ভরসা।
©somewhere in net ltd.