নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

হলেও হতে পারতাম একজন চিত্রশিল্পী

২১ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৩:৩৯

ক্লাস টুতে পড়ি। স্কুল আয়োজিত মেলায় আমার উপরের ক্লাসের এক ছেলেকে দেখলাম চেয়ার টেবল নিয়ে ছবির দোকান খুলে বসেছে। বাড়ি থেকে কিছু ছবি কাগজে এঁকে ঝুলিয়ে রাখার পাশাপাশি কাস্টমারের লাইভ পোর্ট্রেটও আঁকছে।
ছেলেটা ছিল আমাদের স্কুলের ফাউন্ডার প্লাস প্রিন্সিপালের ছেলে। মা বাপ দুইজনই সেলিব্রেটি মানুষ। ছেলে নিজেও ছবি আঁকায় গুণী। কাজেই দোকানের সামনে ভিড় জমে গেল। প্রতি ছবি তিরিশ টাকা। তখনকার দিনের হিসেবে অনেক টাকা! বিশেষ করে ক্লাস থ্রি পড়ুয়া ছাত্রের জন্যতো অবশ্যই। এক কৌটা কনডেন্সড মিল্ক পাওয়া যেত সেই টাকায়। সেই সময়ে আমার আল্টিমেট জীবনের লক্ষ্য, তিরিশ টাকা জমিয়ে এক কৌটা কনডেন্সড মিল্ক কিনে আরামসে খাব।
মাথায় চলে আসলো পয়সা উপার্জনের ফন্দি।
আগামী বছর আমিও দোকান দেব। বাড়িতে প্র্যাকটিস শুরু করে দিলাম। নিজে থেকে কোন ছবি আঁকতে পারিনা, তবে সানন্দা ম্যাগাজিনে যেসব ছবি/স্কেচ প্রকাশ করতো - আমি সেসবেরই নকল করতে শুরু করলাম। স্কুলের বই খাতায় যত ছবি দেখতাম, সব নকল করতে শুরু করলাম। এবং একটা সময়ে দেখলাম - রেপ্লিকা আঁকায় আমার দক্ষতা মন্দ না।
পরের বছর দোকান দিয়ে দিলাম। একই দাম। তিরিশ টাকা। কোন ছবি বিক্রির টাকায় কী করবো সেই প্ল্যানিংও শেষ। আগামী বছর কি ধরণের ছবি দোকানে তুলবো সেটাও অনেকখানি ভেবে ফেলেছি। সমস্যা বাঁধলো একটাই। কাস্টমার কেউই আমার দোকানে এলোনা। একে আমার কাঁচা হাতে আঁকা ছবি। তারউপর আমার মা বাপের কেউই সেলিব্রেটি নয়। হাতে কলমে শিখলাম মার্কেটে ব্র্যান্ড ভ্যালু কতখানি ইম্প্যাক্ট ফেলে।
তো যাই হোক। ব্যবসাতে দেউলিয়া হবার পরেও ছবি আঁকাআঁকি বাদ দিলাম না। রেপ্লিকা ছবি আঁকা চলতে লাগলো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবি তখন দেখে দেখে ভালোই আঁকতে পারি। ডিমের খোসায় বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ ছবিতো তখন আমার কাছে ওয়ান টু।
একবার কোন এক বিজ্ঞানীর ছবি আঁকার পরে দেখি সেটা নজরুলের ছবি হয়ে গেছে।
স্কুল বদলালাম। নতুন স্কুলের পোলাপান আমার ডায়েরিতে আঁকা ছবি দেখে যথেষ্টই ইমপ্রেসড হলো। আমি গর্বের সাথে বাড়িয়ে বললাম আমি যে কারোর ফটো দেখে তাঁর ছবি এঁকে দিতে পারবো।
উৎসাহী হয়ে এক ছেলে পরেরদিন নিজের পাসপোর্ট সাইজ ফটো এনে দিল। সাদাকালো। রোলটানা খাতার পৃষ্ঠা ছিঁড়ে তাঁর ছবি আঁকা শুরু করলাম। সে তখন আমাকে শোনাচ্ছে বাড়ির কোন দেয়ালে সে ঐ ছবিটা ঝুলাবে। কেমন ফ্রেমে বাঁধাবে।
ছবি আঁকা শেষ হলো। একজন বলল, "ইগুতো ম্যাকগাইভার লাগের।" (এটাতো ম্যাকগাইভার মনে হচ্ছে।)
আসলেই তাই। বুঝলাম নজরুল ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। আমি ফররুখ আহমদকে রিচার্ড ডিন এন্ডারসন বানিয়ে দিয়েছি।
পরবর্তীকালে যখন সেই ছেলেটার সাথে আমার ঝগড়া হয়েছিল, সে বলেছিল, "তোর আঁকা ছবিটা আমি ড্রেনে ফেলে দিয়েছিলাম। ফেলার আগে কুচিকুচি করে ছিঁড়েছিলাম। এত ফালতু ছবি কাউকে আঁকতে দেখিনাই। ওয়াক থু!"
চিত্রকর্ম থেকে অবসরই নিতে যাচ্ছিলাম, এমন সময়ে আমার মা উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী আয়োজিত চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় নাম দিয়ে আসলো।
ছবির বিষয়, "আমার গ্রাম।"
বাংলা পাঠ্যবই থেকে দুইটা ছবি বাছাই করে এক করে ছবি আঁকা প্র্যাকটিস করলাম।
ছুটির দিনে সকাল দশটায় প্রতিযোগিতা শুরু হবে। আমার বাবা এবং আমি হেলতে দুলতে যাত্রা শুরু করলাম। মাঝপথে ভেসপার টায়ার ফ্ল্যাট হয়ে গেল। চাকা বদলে ভালোই সময় গেল। এবং প্রতিযোগিতা শুরুর বেশ পরে আমি মঞ্চে প্রবেশ করলাম।
সব বাচ্চা দেখি একদম শান্তিনিকেতনি সাজ সেজে এসেছে। পাজামা পাঞ্জাবি, কাঁধে ঝোলানো কাপড়ের ব্যাগ, মাথায় তেল চিটচিটে চুল, খুব সুন্দর করে মাঝখানে অথবা সাইডে সিঁথি কাটা। দেখেই মনে হয় এস.এম.সুলতান, কাইয়ুম চৌধুরীর উত্তরসূরি। সেই দিক দিয়ে আমি গিয়েছি পাংকু আবুল সেজে। জিন্স প্যান্ট, গায়ে কলারওয়ালা গেঞ্জির বুকে মিকি মাউসের হাস্যোজ্বল মূর্তি, চুল এলোমেলো।
আমার ছবি দ্রুত শেষ হয়ে গেল। আশেপাশে দেখি একেকজনের ক্যানভাসে দুর্দান্ত সব ছবি ঝলমল করছে। রংয়ের ছড়াছড়ি। খুব যত্ন নিয়ে আঁকছে একেকজন। হাঁস, মুরগি, গরু, ছাগল, বাড়ি ঘর ইত্যাদি।
যেখানে জেতার কোনই সম্ভাবনা নেই, সেখানে শুধু শুধু সময় নষ্ট করার মানে হয়না। ছবি জমা দিয়ে বেরিয়ে এলাম। রাতে আমাদের গানের অনুষ্ঠান আছে। প্রতিযোগিতার ফল ঘোষণা সংগীতানুষ্ঠানের আগে আগেই হবে।
আব্বু জিজ্ঞেস করলেন, "কেমন হলো?"
"ভাল।" (আমি কখনই "খারাপ" বলিনা। পরীক্ষায় একটা প্রশ্নও কমন পড়েনি, পুরোটাই বানিয়ে লিখতে হয়েছে - এমন পরিস্থিতিতেও কেউ জিজ্ঞেস করলে আমার উত্তর হবে ভাল।)
আব্বুকে আশ্বস্ত মনে হলোনা। সবার শেষে গিয়ে সবার আগে বেরিয়ে আসা প্রতিযোগী কিই বা করতে পারে?
রাতে জানতে পারলাম আমি সেই প্রতিযোগিতায় ফার্স্ট হয়ে গেছি। আমি তখন মঞ্চের পেছনে গ্রিনরুমে গানের অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছি। বাবার চেয়েও বেশি অবাক আমি। পরে বুদ্ধি করে বের করলাম, হয়তো আমার কনসেপ্ট বিবেচনায় নিয়ে প্রথম পুরষ্কার দেয়া হয়েছে। আমি ছবিতে এঁকেছিলাম, এক ছেলে আরেক ছেলেকে আঙ্গুল দিয়ে নিজের গ্রাম দেখাচ্ছে। বিচারকরা হয়তো ভেবে নিয়েছিলেন আমি বিচারকদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে আমার গ্রাম দেখিয়ে দিচ্ছি এমন প্রতীকী ছবি এঁকেছি।
উৎসাহিত হয়ে পরের বছরও একই চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় নাম দিলাম। এবং হাতেনাতে প্রমান পেলাম যে বক মারতে প্রতিবার ঝড় উঠেনা।
তারপরে অবশ্য আমার দৌড় ছিল বায়োলজি প্র্যাকটিকাল খাতায় বন্ধুদের জন্য তেলাপোকা, চিংড়ি, ব্যাঙের ব্যবচ্ছেদের ছবি এঁকে দেয়া। স্কুল এবং কলেজ জীবন এভাবেই কাটলো।
ও হ্যা, একবার খাতার মলাটে কিছু নারীর ছবি এঁকেছিলাম বলে ক্লাসের সেরা সুন্দরী মেয়েরা হাসিঠাট্টা করেছিল। ঐ হাসিঠাট্টার রেশটাকে ঠিক মতন হ্যান্ডেল করতে পারলে প্রণয় ফ্রনয় পর্যন্তও গড়াতে পারতো হয়তো। অন্তত ফিল্মেতো সেটাই ঘটে। যেহেতু কিছুই হয়নি, কাজেই ঐ প্রসঙ্গ বাদ।
আমাদের ইউভার্সিটিতে লেকচারাররা ইংলিশে লেকচার দিতেন। সেটাই তাঁদের উপর নির্দেশ ছিল। অনেক শিক্ষকই সেটা মানতেন না, কেউ কেউ আবার কট্টরপন্থী ধার্মিকের মতন মেনে চলতেন। যারা ইংলিশে ফ্লুয়েন্ট ছিলেন, তাঁদের কথা বাদ, কিন্তু কুতায়কাতায় বলা ইংলিশ শোনার চেয়ে বোরিং কোন কিছু পৃথিবীতে নেই। সেইরকমই এক ক্লাসে চোখ থেকে ঘুম তাড়ানোর জন্য খাতায় ছবি আঁকতে শুরু করলাম। শাড়িপরা বঙ্গ ললনা। পেছনে দুই সুন্দরী মেয়ে বসেছিল। উঁকি দিয়ে দেখে আমি নগ্ন নারীর ছবি আঁকছি। শাড়ির ছবি তখনও আঁকা হয়নি, কেবল ফিগার নিয়ে কাজ চলছে। এবং পুরোটা ঘটনা দেখে কনক্লুশনে আসবে, সেই ধৈর্য্য নারীদের কোন কালে ছিল? ব্যস, ব্যাচের নারী মহলে রটে গেল আমার চরিত্রে বড়সড় সমস্যা আছে। আমি ক্লাসরুমে ন্যাংটা মেয়ে মানুষের ছবি এঁকে খাতার পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা ভরিয়ে ফেলি।
যতদূর মনে পড়ে, আমার চিত্রাঙ্কন প্রতিভার সেটাই পরিসমাপ্তি ছিল। এরপর আর আঁকা হয়নি।
বলা হয়নি, আমার পেছনে বসা দুই মেয়ের একটা আবার আমার বর্তমান সহধর্মিনী। যে আমার কাব্য প্রতিভারও গলাটিপে হত্যা করেছিল। সেই ঘটনা অন্য একদিন বলা যাবে। আজকে নাহয় হলেও হতে পারতো চিত্রশিল্পী মঞ্জুর চৌধুরীর জন্য এক মিনিট নীরবতা পালন করি।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ১০:০১

রানার ব্লগ বলেছেন: সমব্যাথি !!! নিরবতায় সহমর্মিতা।

২| ২১ শে এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৫:০৪

মোঃ আক্তারুজ্জামান ভূঞা বলেছেন: এরকম প্রতিভাকে টুপিখোলা অভিনন্দন! লেখা মজার হইছে...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.