নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
আমি ভূতের গল্প তেমন লিখিনা, তারপরেও ভূতের গল্পের আমি ভীষণ ভক্ত। একটা সময়ে ঠাকুরমার ঝুলি না শুনলে ঘুম আসতো না। রাক্ষস, দৈত্য ইত্যাদি ছিল সেই বইয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
প্রথমবার জি হরর শো দেখে ভয়ে বিছানায় একা শুতে পারিনি। বাড়িতে ডিশ নেয়ার পর এমন কোন ভৌতিক সিরিয়াল ছিল না যা দেখতাম না। আমার ভয়ের বারোটা বাজিয়েছে এই হিন্দি সিরিয়ালগুলোই।
একদিন হঠাৎ আবিষ্কার করলাম ভয় তো দূরের কথা, এসব দেখে মাঝে মাঝে হাসি পায়, বেশিরভাগ সময়েই গা জ্বালা করে। ছোট ছিলাম, তাই নায়িকার গোসলের দৃশ্যে তেমন ইন্টারেস্ট জাগতো না। শুধু ভাবতাম, প্রতিটা পর্বে নায়িকারা গোসল করে কেন? আধা ঘন্টা এপিসোডের পাঁচ দশ মিনিট নায়িকার গোসলেই পেরিয়ে যেত।
ভৌতিক গল্প এখনও আগ্রহ নিয়ে পড়ি। ভৌতিক সিনেমা এখনও আমার খুব প্রিয়। প্যারানরমাল একটিভিটি ১ এবং ২, দ্য এক্সরসিস্ট, দ্য রিং, গ্রাজ, বা কনজুরিং - প্রিয় ভৌতিক সিনেমার তালিকায় এগুলোয় থাকবে উপরের দিকে।
একটা সময়ে ভূত এফএমও খুব শুনতাম। শুনে শুনে ঘুমিয়ে যেতাম। আর.জে. রাসেল ভাইয়ের কণ্ঠস্বর আমার খুব ভাল লাগে। আরেফিন ভাইয়ের গল্প বলার ভঙ্গির আমি খুব ভক্ত। আর ভৌতিস্ট টিমের এক্সপিরিয়েন্সগুলোও সেইরকম ভাল লাগতো।
ভূত এফএমের প্রতি বাংলাদেশ একটা দিকে কৃতজ্ঞ থাকতে পারে। তাঁদের জনপ্রিয়তা দেশে ভৌতিক রেভ্যুলুশন এনে দিয়েছে। লেখকরা বেশি বেশি ভূতের গল্প লিখছে, ফেসবুকে প্যারানরমাল অভিজ্ঞতা নির্ভর পেজ খোলা হচ্ছে। শুনেছি, অনেক ভৌতিস্ট টিমও নাকি গঠন হয়েছে। ভৌতিক বাড়িগুলোতে অতি আগ্রহের সাথেই তাঁরা মশার কামড় খেয়ে রাত্রি যাপন করছে। যদি একবার ভূত আন্টি দেখা দেন!
যেহেতু কারোর রিয়েল ভৌতিক অভিজ্ঞতা হচ্ছেনা, কাজেই অনেকেই ভৌতিক গল্প ফাঁদছেন। অথবা তাঁরা মিথ্যাটাকে সত্যি ভেবে সত্য কথাই বলছেন। মানে তাঁদের মস্তিষ্ক জানপ্রাণ দিয়ে চাইছে ভূত দেখতে, কিন্তু বেরসিক বাস্তবতা সেই ইচ্ছে পূরণ করছে না। কাজেই মস্তিষ্ক নিজেই নিজের পছন্দ মতন ভূত তৈরী করে সামনে উপস্থিত করছে।
একটা উদাহরণ দেয়া যাক।
শুভ একদিন মামার সাথে মাছ মারতে গেল। গভীর রাত। নদীতে টর্চ ফেলে মাছ ধরেছে। বড়শিতে বিশাল মাছ ধরা পড়ায় মামা ভাগ্নে দুজনই খুশি! ঠিক এই সময়ে সে দেখলো একটা কিছু স্রোতের বিপরীত দিকে ভেসে ভেসে তাঁদের দিকেই আসছে।
মামা টর্চের আলো ফেলতেই দেখেন ওটা একটা নারী মূর্তির লাশ।
ভয়ে মামা ভাগ্নে দুজনই আধমরা হয়ে যান। তাঁরা প্রাণপনে বৈঠা বাইতে থাকেন।
কিন্তু তাঁরা যতই জোরে বৈঠা মারেন, লাশের এগিয়ে আসার গতি ততই বেড়ে উঠে।
এই সময়ে মামা তাঁর সাথে নিয়ে আসা বাইবেলখানা লাশের দিকে ছুঁড়ে মারেন। যেহেতু রাত, এবং মাছ ধরতে যাওয়া, তাই ভূতের সাবধানতাবশত বাইবেল সাথে নেয়া। যাই হোক, বাইবেলের স্পর্শে লাশ থমকে যায়। এবং ওখানেই ডুবে যায়। তাঁরা দ্রুত পাড়ে চলে আসেন এবং মাছ নিয়ে পালিয়ে বাড়িতে ফেরত আসেন।
দ্বিতীয় ঘটনা।
মজিদের চাচাতো বোনকে জ্বিনকে ধরেছে। একদিন হঠাৎ সন্ধ্যা বেলায় তাঁকে পুকুরের পাশে অজ্ঞান অবস্থায় পাওয়া যায়। এবং তারপর থেকেই সে যেন কেমন হঠাৎ করেই বদলে যায়। এমনিতে সব ঠিক ঠাক, কিন্তু মাঝে মাঝেই একা একা কথা বলে। জিনিসপত্র ভাংচুর করে। পাগলের মতন হাসতে হাসতে অজ্ঞান হয়ে যায়। এবং যখন জ্ঞান ফেরে, তাঁর কিছুই মনে থাকেনা।
একজন খুব বড় হুজুরের কাছে নিয়ে ট্রিটমেন্ট করানোর পর আলহামদুলিল্লাহ, চাচাতো বোন এখন সুস্থ আছে।
তৃতীয় ঘটনা।
বাবুদের বাড়িতে হঠাৎ করেই খুব ভূতের উপদ্রব শুরু হয়েছে। বলা নেই, কওয়া নেই জিনিসপত্র আচমকাই মেঝেতে আছড়ে পড়তে থাকে। এক তান্ত্রিক বাবার পরামর্শে তাঁরা ঘরে লেবু, মরিচের মালা ঝুলিয়ে রেখেছে, সাথে হনুমান চিল্লিশা জপতে শুরু করেছে - এখন আর কোন অদ্ভুত ঘটনা ঘটেনা।
উপরে তিনটাই অতি কমন ভৌতিক ঘটনার উল্লেখ করলাম। বন্ধুদের আড্ডা হোক, ভূত এফএম হোক, কিংবা জি হরর শো - সব জায়গাতেই মোটামুটি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এই কাহিনীই শোনাবে। হরর শোতে অবশ্য সাথে নায়িকার গোসলও ঢুকিয়ে দিবে। দেখা যাবে, মামা ভাগ্নে মাছ মারতে গেছে, নদীতে নায়িকার গোসল। চাচাতো বোন পুকুরপাড়ে অজ্ঞান হয়ে গেছে, নায়িকার গোসল। বাবুদের বাড়িতে জিনিসপত্র উল্টানোর সময় হয়েছে, নায়িকার গোসল। গায়ে লাইফবয় সাবান ডলবে। পা বেয়ে ফ্যানা পানিতে ধুয়ে যাবে। ক্যামেরায় সেই দৃশ্য ধারণ করা হবে।
তো আমার যেখানে আপত্তি সেটা হচ্ছে, সেটা হলো, সবজায়গাতেই ধর্মই একমাত্র সলিউশন দেখানো। শুভর নাম যেহেতু শুভ কস্টা, কাজেই তাঁকে কী খ্রিষ্টান ভূতই ধরবে? ভূতদের মধ্যেও মুসলিম হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান আছে?
"ঐ দ্যাখ, দুইটা মানুষ আসছে মাছ ধরতে। চল গিয়ে ভয় দেখাই।"
"আরে না। তুই পারবি না। দেখছিস না, ওরা খ্রিষ্টান? মারিয়াকে খবর দে।"
পিচ্চি ভূত দৌড়ে যায় মারিয়া আন্টিকে ডাকতে। ভয় দেখাতে হবে!
মুসলিম ভূতের পক্ষে আরও মজার যুক্তি দেয়া হয়।
"আমি অতৃপ্ত আত্মায় বিশ্বাস করিনা। কারন ইসলামিক মতে ওটা বিশ্বাস করলে ঈমান চলে যাবে। কাজেই ভূতে বিশ্বাস করার প্রশ্নই উঠেনা। তবে জ্বিনে বিশ্বাস করি। জ্বিনেতো বিশ্বাস করতেই হবে। কুরআনে আছে।"
এখানেই যখন আমি প্রশ্ন করি, "কুরআনে কোথায় লেখা আছে যে জ্বিন মানুষের উপর ভর করে?"
তখনই বাবাজি শুরু করে দিবেন আমাকে গালিগালাজ।
কুরআন বা হাদিসের কোথাও কিন্তু আমি পাইনি যে জ্বিন মানুষের উপর ভর করে নিজের গালে নিজে চড় মারে। কেউ যদি পান, আমাকে রেফারেন্স দিন প্লিজ।
"জ্বিন" শব্দের মানেই "hidden" - মানে যা আমাদের থেকে আড়াল করা হয়েছে। মানে ওদের সাথে আমাদের এইরকম দেখা সাক্ষাতের কোনই চান্স নেই। শুধুশুধু বেচারাদের ঘাড়ে দোষ চাপানো কেন ভাই? একর্ডিং টু ইসলাম, ওরা আলাদা স্পিশিস। ওদেরও খাওয়াদাওয়ার প্রয়োজন হয়। ওদেরও জন্ম মৃত্যু ঘটে। এবং সবচেয়ে বড় কথা, ওরা আমাদের চেয়ে হিডেন।
ব্যাক্টেরিয়া, ভাইরাস যেমন খালি চোখে দেখা যায় না। ওদেরও না। এক হাজার বছর আগে কেউ যদি বলতো ব্যাকটেরিয়া ভাইরাস নামের অতিক্ষুদ্র জীবাণু আমাদের চারপাশেই ছড়িয়ে বেড়ায় - লোকে পাগল ভাবতো। এখন বিশ্বাস না করলেই বরং আমরা তাঁকে পাগল ভাববো।
তেমনি, জ্বিন, যা এনার্জি দ্বারা সৃষ্ট প্রাণী (একর্ডিং টু ইসলাম), তাঁদের ডিটেক্ট/কমিউনিকেট করার মতন যন্ত্রপাতি আবিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত হুদাই তাঁদের নিয়ে টানাটানি না করলেই কী হয়না? মাঝে দিয়ে ভন্ড কিছু লোক জ্বিন ছাড়ানোর নামে আপনার পকেট সাফ করে দিচ্ছে।
ভৌতিস্ট টিমগুলোর অভিজ্ঞতার আলোকে জেনেছি, তাঁরা নাকি ইতিমধ্যেই কোন এক যন্ত্রের মাধ্যমে নেগেটিভ এনার্জি ডিটেক্ট করতে পারে। জ্বিন জাতির সাথে কমিউনিকেশনের এটা নাকি প্রথম ধাপ। অনেক শুভ কামনা তাঁদের জন্য। যদি আসলেই এমন একটি যন্ত্র আবিষ্কার হয়, তাহলেতো খুবই ইন্টারেস্টিং ঘটনা ঘটবে। জ্বিন নিয়ে অনেক মিথের অবসান সাথে সাথে ঘটে যাবে।
একটা সহজ যুক্তি মাথায় রাখুন। যখন দেখবেন, আপনি খ্রিষ্টান এবং আপনার ভূত আপনার ক্রসেই ভয়ে পেয়ে গেছে, কিংবা আপনি মুসলিম, এবং আপনার ভূত কেবল আল্লাহু লেখা লকেটে ভয় পেয়ে গেছে - বড়সড় একটা সুযোগ আছে আপনার ভূতের জন্ম এবং অস্তিত্ব আপনার মস্তিষ্কে। দ্রুত ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন। দেখবেন ভূত পালিয়ে গেছে।
ভৌতিক গল্পের লেখকদেরও বলছি। দয়া করিয়া, ভূতের বিনাশ হুজুর, ফাদার বা পন্ডিতের দ্বারা করিবেন না। এই অস্ত্র অতি ব্যবহারে ভোঁতা হইয়া গিয়াছে। নতুন, ইন্টারেস্টিং কিছু ভাবুন।
©somewhere in net ltd.