নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

হরিষে বিষাদ।

৩১ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১২:১৮

এক বন্ধুর কথা মনে পরে গেল।
সে বেচারা অস্ট্রেলিয়া থাকে। সেখানেই স্থায়ী, সেখানকার সিটিজেন।
এখন অস্ট্রেলিয়ার কথা জানিনা, তবে অ্যামেরিকান সিটিজেনশিপ শপথের একটি প্রধান শর্ত হচ্ছে অন্য যেকোন দেশের প্রতি লয়ালিটি ত্যাগ করে অ্যামেরিকার প্রতি ১০০% কমিটেড থাকতে হবে। সহজ কথায়, বাংলাদেশ এবং অ্যামেরিকার মধ্যে যদি যুদ্ধ বাঁধে, তাহলে এখানকার অ্যামেরিকান সিটিজেন বাঙ্গালিদের অবশ্যই অ্যামেরিকার সমর্থন করতে হবে। নাহলে এদেশীয় রাজাকার হিসেবে গণ্য করে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অস্ট্রেলিয়ায়ও হয়তো একই নিয়ম। নাহলে সিটিজেনশিপ দিবে কেন?
তো যা বলছিলাম, সিডনির সমুদ্র সৈকতে একদিন ব্রেট লির সাথে দেখা। তখন ব্রেটলি মহা তারকা। বিশ্ব ফাস্ট বোলিং সেনসেশন। বাংলাদেশের অবস্থা তখনও হাটাহাটি পা পা। তখনও হুকস সাহেব একদিনে টেস্ট সমাপ্তির ফতোয়া ঘোষণা দেননি।
যাই হোক, আমার বন্ধু বেচারা লি সাহেবের সাথে সরাসরি গিয়ে কথা বলার লোভ সামলাতে পারলো না।
টুকটাক কথাবার্তার পর লী বন্ধুর আদি নিবাস বাংলাদেশ শুনে আনন্দিত হলো। এবং একটা সময়ে প্রশ্ন করলো, "অস্ট্রেলিয়া এবং বাংলাদেশের খেলা হলে তুমি কোন দেশের সাপোর্ট করো?"
এইটা অতি আজাইরা একটা প্রশ্ন। যেমন আমাদের দেশে ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরীকে একবার সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেছিলেন, "বাংলাদেশ এবং ইংল্যান্ডের মধ্যকার খেলায় আপনি কার সমর্থন করেন?"
একদিকে আদি নিবাস, রক্তের টান, এবং অপরদিকে বর্তমান নিবাস এবং তারচেয়ে বড় কথা, চাকরির শর্ত, স্বার্থ সব জড়িত। বাঙালি সাংবাদিকদের অনেকেরই কমন সেন্স অনেক দিন ধরেই মিসিং। এই প্রশ্নে একজন হাইকমিশনারকে বিপদে ফেলা ছাড়া আর অন্য কোন উদ্দেশ্য জড়িত থাকতে পারেনা।
তা দেখা গেল, লী সাহেবও বাংলাদেশী সাংবাদিকের দীক্ষায় দীক্ষিত। বন্ধুকে প্যাঁচে ফেলে দিয়েছেন।
এখন একটা কথা সর্বজন স্বীকৃত, নিপাতনে সিদ্ধ সত্য। বাঙালি যতই অন্যদেশের জন্য শপথ টপথ নিক না কেন, প্রবাসী বাঙালির দেশপ্রেম বাংলাদেশ নিবাসী বাঙালির দেশপ্রেমের চেয়ে অনেক বেশি হয়ে থাকে। দেশত্যাগ করে আসার জন্য একটা গিল্টি ফিলিংস সবসময়েই কাজ করে। এবং সেই অপরাধ পুষিয়ে দিতেই প্রেমের পরিমান আরও বাড়িয়ে দেয়। পরকীয়া করনেওয়ালা স্বামীর যেমন বৌর প্রতি আদিক্ষেতা বেশি থাকে - ঘটনা এখানেও তাই।
তো যা বলছিলাম। দেখা যায় ক্রিকেটে ভারত বা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলা হলে প্রবাসী বাঙালিদের কখনই বিরাট কোহলি বা আফ্রিদিদের নিয়ে আল্লাদিমার্কা পোস্ট করে না। বাংলাদেশ নিবাসী বাঙালিদের কী যেন কী হয়ে যায়।
একটা উদাহরণ দেই। কিছুদিন আগে ভারত বনাম বাংলাদেশ টেস্টে কোহলি ডবল সেঞ্চুরি করে রেকর্ড ভাঙ্গায় আমাদের বাংলাদেশী এক ভাই আনন্দে গদগদ হয়ে পোস্ট করেছিলেন, "প্রার্থনা করেছিলাম, আর সবাই ডাক মারুক আর তুমি শুধু সেঞ্চুরি করো। এগিয়ে যাও বিরাট! আমরা সাথে আছি।"
আফ্রিদি নিয়ে পোস্ট আলাদা করে বলতে চাইনা। সবাইতো জানেনই।
আমি এখনও অবাক হই এইভেবে যে নিজের দেশ এখন ক্রিকেটে একটি পরাশক্তি হিসেবে প্রমাণিত হবার পরেও কিভাবে মানুষ এমন নির্লজ্জভাবে অন্য দেশের সমর্থন করতে পারে? চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে আমরা সেমি ফাইনাল থেকে বাদ গেলাম, আমাদের টুর্নামেন্ট কিন্তু ওখানেই শেষ। আর সব সভ্য দেশেরও তাই হয়েছিল। সবাই পরবর্তী টুর্নামেন্ট/সিরিজের দিকে তাকিয়ে ছিল। কেবল আমরা ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ নিয়ে ফেসবুকে নোংরামি করেছি। একে ব্যান, ওকে ব্লক, তাকে গালাগালি।
এনিওয়েজ, বন্ধু ডাই হার্ড বাংলাদেশ ফ্যান। সেই আদ্দিকাল থেকেই। এদিকে অস্ট্রেলিয়ার সিটিজেনশিপ শপথ নিয়ে বসে আছে।
সাথে এও ভাবলো এতবড় তারকার মুখের উপর সত্য বলে দিলে বেচারাও আহত হবে। একটা জাজমেন্টাল মন্তব্যও করে বসতে পারে, "যে দেশে থেকে, যে দেশের আলো বাতাসে বড় হয়ে, সেই দেশের বিরুদ্ধে.......ল্যাঞ্জা ইজ ডিফিকাল্ট টু হাইডের অস্ট্রেলিয়ান ভার্সন।"
তাই সে ঝামেলা এড়াতে বলে দিল, "অজিস!"
মন্তব্য শুনে ব্রেট লি হেসে দিল। হাসি দেখেই বুঝা গেল, সে মনে মনে ভাবছে, "হ, তুমি কইলা, আর আমি মানলাম।"
আজকে অস্ট্রেলিয়ান বাঙালি বন্ধুদের এই বিপদে পড়তে হয়েছে নিশ্চই।
এই কারণেই বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়া না গিয়ে অ্যামেরিকা আসলাম। না দুইদেশের খেলা হবে, না শপথ ভাঙার টেনশন হবে, না হুদাই মিথ্যা বলতে হবে।
আচ্ছা, যদি তিন দুধভাতদের বাদ দিয়ে বাংলাদেশ পূর্ণ শক্তি নিয়ে মাঠে নামতো, তাহলে অস্ট্রেলিয়ার কী হতো? সামনের ম্যাচে এই বিষয়টা মাথায় থাকবেতো? ২-০ সিরিজ জয় হবেতো?
ঝকঝকে পূর্ণিমার চাঁদকে কালো মেঘ দিয়ে ঢেকে দিতেই দুঃসংবাদ হয়ে এলো কিংবদন্তি শিল্পী আব্দুল জব্বারের মৃত্যু। তাঁর গাওয়া অসংখ্য গানের মধ্যে তিনটা গানের কথা না বললেই নয়।
১. সালাম সালাম হাজার সালাম.....
সেই জন্ম থেকে এই গানটা অসংখ্যবার শুনে এসেছি। এরচেয়ে সুন্দর কথা, সুর ও কণ্ঠের সামঞ্জস্যপূর্ণ গান এক জীবনে খুব কমই শুনেছি।
২. ওরে নীল দরিয়া....
এখন পর্যন্ত কোন বোট রাইড হয়নি যেখানে লেকের মাঝখানে গিয়ে আমরা এই গানটা গাইনি। আমার মতে বাংলাদেশের সংগীতাঙ্গনের ইতিহাসে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ১০ গানের একটি অবশ্যই এই গান।
৩. তুমি কী দেখেছো কভু.....
বিটিভিতে প্রচারিত বাংলা সিনেমায় এই গানটি শুনেছিলাম। তার আগেও এখানে ওখানে বহুবার বাজতে শুনেছিলাম। কিন্তু সিনেমায় দেখার পর গানটা মনের মধ্যে গেঁথে রইলো। আমরা হেমন্ত, লতা, কিশোরের কোলকাতার চলচ্চিত্রের কিছু গানকে অমরত্ব দিয়েছি। বাংলা সিনেমার যেসব গান কালের সীমানা অতিক্রম করেছে, তার মধ্যে নিঃসন্দেহে এই গানটি একদম ওপরের দিকে থাকবে।
কিছুদিন আগেই হারালাম আমার প্রিয় নায়ক নায়করাজ রাজ্জাককে। আজ হারালাম আরেক প্রিয় শিল্পী আব্দুল জব্বারকে। বাংলাদেশের আকাশের ধ্রুবতারারা ধীরে ধীরে ঝরে যেতে শুরু করেছেন।
আপনাদের পরলোক যাত্রা শুভ হোক।
ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১২:৩৬

এম আর তালুকদার বলেছেন: পোষ্টটি পড়তে পড়তে পোষ্টের ভিতর হারিয়ে গেছিলাম। খুব ভাল লাগছে।

২| ৩১ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ২:৫০

চাঁদগাজী বলেছেন:


"এক বন্ধুর কথা মনে পরে গেল। "

-আমার কোন বন্ধুর কথা মনে পড়ে গেলে, এসে আপনার পোস্ট পড়ে দেখবো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.