নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
মাহফুজুর রহমানের একক সংগীতানুষ্ঠান নিয়ে অনেক ফেসবুক স্ট্যাটাস দেখছি। আমার দেখার দুর্ভাগ্য হয়নি। জীবনের অমূল্য কিছু সময় নষ্ট হওয়া থেকে বেঁচে গেল। আলহামদুলিল্লাহ।
তা এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান এবং তাঁর স্ত্রীর সাথে আমার পার্সোনাল অভিজ্ঞতা নিয়ে কিছু কথা বলা যাক।
আমার অ্যামেরিকান জীবন যাত্রা শুরু হয়েছিল ইভা রহমানের কনসার্ট শোনার মধ্য দিয়ে। জ্বি, বাংলা বাগধারায় একেই বলে "গোড়ায় গলদ।"
আমার পোর্ট অফ এন্ট্রি ছিল লস এঞ্জেলেস। চাচার বাসা। সময়টা ছিল মে মাস, ২০০৭ সাল।
নতুন দেশে চাচা আমাদের যাই দেখান, তাতেই আমরা মুগ্ধ হই। বাড়ির ঝকঝকে মহল্লা, বিশাল বিশাল হাইওয়ে, ওয়ালমার্ট থেকে শুরু করে শপিং মল - সবকিছুতেই তখন ছিল মুগ্ধতা। তখনও ইউনিভার্সাল স্টুডিওয বা লাস ভেগাস দেখা হয়নি। নতুন জীবনের আনন্দময় বিস্ময় তখনও জমা ছিল অনেক।
তেমনই এক সময়ে, খুব সম্ভব অ্যামেরিকা আগমনের এক সপ্তাহের মধ্যেই চাচা আমাদের নিয়ে গেলেন বৈশাখী মেলায়। অ্যামেরিকান বাঙালিদের আয়োজনে বৈশাখী উৎসব, সাথে থাকছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান যার প্রধান আকর্ষণ তারকা কণ্ঠশিল্পী ইভা রহমান।
তা বাজনা শুরুর আগে যেমন তবলায় ঠুকঠুক চলে, তেমনি এখানে কোন সংগীত তারকার কনসার্ট শুরুর আগে লোকাল শিল্পীদের পরিবেশনা চলে। এবং তখন বুঝলাম অনুষ্ঠানের আয়োজকরা মাথার ঘাম কতখানি পায়ে ফেলে বৈশাখী উৎসবের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। আমি নিশ্চিত, তাঁরা খাঁচা হাতে পাড়ায় পাড়ায় মহল্লায় মহল্লায় ঘুরেছেন। যেখানে যাকে গাইতে দেখেছেন, উঠিয়ে নিয়ে এসেছেন। হোক সে বাথরুম সিঙ্গার, কিচেন সিঙ্গার, বা ড্রয়িংরুম সিঙ্গার।
আমি তখন মাত্রই দেশ থেকে গিয়েছি। দেশে অন্তত কোন স্টেজে এমন বেসুরো শিল্পীর দেখা পাইনি। দেশে এমন শিল্পীদের স্টেজে তুললে পাবলিক সেই অনুষ্ঠানের আয়োজকদের জুতার মালা পরিয়ে এলাকা চক্কর দেয়াতো।
আমার কাছে মনে হলো শীতের সময়ে বাসের উপর মাইক ঝুলিয়ে পিকনিক পার্টির শিল্পীরা যেমন হেরে গলায় গাইতে গাইতে বনভোজনে যায়, এরা তাদের চেয়েও বেসুরো গায়। এবং সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হলো, গাইতে গাইতেই গায়ক/গায়িকা এমনভাব করতে লাগলেন যেন সব দোষ স্পিকারের। আসলে তাঁদের গলা হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কাছাকাছি, কিন্তু সাউন্ড সিস্টেম ভাল না বলেই শুনতে বেসুরো লাগছে।
আমার এখনও মনে আছে, এক সুন্দরী "ভাবি" গাইতে শুরু করেছিলেন "চেনা চেনা লাগে, তবু অচেনা, ভাল যদি বাস, তবে কাছে এসোনা।" "চেনা চেনা লাগেএএএ" তে তিনি যেই টানটা দিয়েছিলেন, আমার কানের পর্দায় এসে সেই টান অনুভূত হয়েছিল। পর্দা যেন আমাকে তখন বলছে, "ভাই, আমি কী দোষ করেছিলাম যে আজ আমাকে এত বড় শাস্তি দিলেন?"
আমি নিশ্চিত, মাইক্রোফোন বা সাউন্ড স্পিকারের যদি প্রাণ থাকতো, এবং সাথে দুইটা হাত, তাহলে তাদের উপর এমন অত্যাচারের জন্য তারা কোন হিংসাত্মক পদক্ষেপ নিত। লোকাল দর্শকদের মোটামুটি সবাই নির্বিকার। মানে তাঁরা এরচেয়েও জঘন্য গান শুনে অভ্যস্ত।
এবং সবশেষে, দর্শকদের অধীর প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে মঞ্চে আগমন করলেন দেশ বিদেশের আলোচিত শিল্পী ইভা রহমান। এবং শুরুতেই তিনি জানিয়ে দিলেন, তাঁর সাথে একটি বিশাল নাচের দলের নৃত্য পরিবেশনের কথা ছিল - কিন্তু ভিসা জটিলতার কারনে তাঁরা আসতে পারেননি।
হয়তোবা নৃত্যশিল্পীরা স্বেচ্ছায় ভিসা না পাওয়ার জন্য ইউএস এম্বেসিতে "আমরা সবাই তালিবান, ইউএস বানাবো আফগান" জাতীয় স্লোগান দিয়েছিল। শিল্পী বলেই তাঁদেরও আত্মমর্যাদা আছে।
শিল্পী হলেই আত্মমর্যাদা থাকতে হয়। টাকা ছড়ালেই লেজ নাড়তে নেই। সবাইকে অপূর্ব-সজলদের মতন হলে চলে না।
তো শিল্পী যখন গাইতে শুরু করলেন, আশ্চর্য্য হয়ে লক্ষ করলাম, তাঁর গান এখন শুনতে মোটেও অত্যাচার মনে হচ্ছেনা। সুর, তাল, কণ্ঠ - কোন কিছুতেই কোন সমস্যা মনে হচ্ছে না। অথচ একই শিল্পীর গান দেশে থাকতে শুনলে কান ফেটে রক্ত বেরুতো। বুঝলাম, এতক্ষন ভাই ব্রাদার ভাবিদের বেহুদা প্যানপ্যানানির পর ইভা রহমানের সংগীত যেন তপ্ত মরুর মাঝে একটি শুকিয়ে যাওয়া নালা হিসেবে আবির্ভূত হলো। পানি নোংরা, কালো, দুর্গন্ধময় হয়ে আছে, তাতে কী? পানি তো!
আমি সহ সেই অনুষ্ঠানের শ্রোতারাও সেদিন ইভা রহমানের কণ্ঠস্বরে সেই আলোর ঝলকের দেখা পেলাম, তাঁর স্বামী মাহফুজুর রহমান সাহেব যেটার সন্ধান বহুদিন আগেই পেয়েছিলেন।
অনুষ্ঠান শেষে লসএঞ্জেলেসের এক বাঙালি রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়ে দেখি ইভা রহমানও সেখানে উপস্থিত। দোকানের আর অন্যান্য বাঙালিদের সাথে আমিও সেদিন তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে ফেললাম। তারকা শিল্পী বলে কথা! কে জানে, আগামী দিনে হয়তো তাঁর স্বামী এ.আর. রেহমানের সুরেও তাঁকে গাইয়ে ছাড়বেন। রেহমান ভাই টাকা দিয়ে বিক্রি হচ্ছেন না বলেই হয়তো এখনও সেই শুভক্ষণ আসছে না।
এখন মাহফুজুর রহমান সাহেবকে নিয়ে কিছু বলা যাক।
এইবারের ঘটনায় আমি সরাসরি জড়িত নই, তবে আমার এক ভাই জড়িত। তাঁর নাম বলতে চাইছি না, অসুবিধা হতে পারে।
তা এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান ডালাস এসেছেন। ডালাস শহরটাকে বাঙালি চিনে বিশ্বখ্যাত টিভি সিরিয়াল "ডালাস" এর কারনে। আশির দশকে দেশে ঝড় তুলেছিল এই সিরিয়াল। সেই সময়ের বাঙালি ডালাস আসলেই তাই সাউথ ফর্ক রেঞ্চ দেখতে চাইবেই। নষ্টালজিয়া কাজ করে খুব।
তা আমার ভাইয়ের উপর দায়িত্ব পড়লো মাহফুজুর রহমান এবং তাঁর সাঙ্গ পাঙ্গদের ডালাস শহর ঘুরিয়ে দেখানো। এবং আর অন্যান্য বাঙালির মতোই চেয়ারম্যান সাহেব অনুরোধ করলেন তিনি সাউথ ফর্ক রেঞ্চ দেখতে চান।
আমার ভাইটা নিজেও তখন ডালাস শহরে খুব বেশিদিন হয়নি এসেছে। সে তাই তাঁর লোকাল এক বন্ধুকে ফোন করলো।
"দোস্তো, সাউথ ফর্ক রেঞ্চ কোথায় রে?"
দোস্ত বোধয় ঘুমাচ্ছিল, বা অন্য কাজে ব্যস্ত ছিল। সে ত্যাড়া উত্তর দিল, "সাউথ ফর্ক রেঞ্চ দিয়ে তুই কী করবি?"
"আরে এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান দেখতে চাইছে।"
বন্ধুর জবাব, "আরে রাস্তার ধারে যেকোন রেঞ্চের পাশে গাড়ি থামায়া দেখায়ে দে। খুশি হইয়া যাইবো।"
আমার ভাইও সেই কাজটাই করলো। রাস্তার পাশে একটা রেঞ্চের পাশে গাড়ি থামিয়ে বলল, "এইটাই সাউথ ফর্ক রেঞ্চ।"
চেয়ারম্যান সাহেব কিছু বলার আগেই তাঁর চ্যালাচামুন্ডারা মারহাবা রব তুললো, "বাহ্! এইতো সব স্মৃতি ছবির মতন চোখের সামনে ভেসে উঠছে। ঐ যে ওখানে জে.আর. ঘোড়া চালাতো।"
"ঐতো তাঁদের বাড়ি।"
"অাহ্, এই মাঠে ঐ সিনটা হয়েছিল।"
চেয়ারম্যান সাহেব বললেন, "ভিতরে ঢুকা যাবে না?"
ভাইয়ের উত্তর, "আসলে আরেকটু আগে আসলে ঢুকা যেত। এখন বন্ধ হয়ে গেছেতো।"
চ্যালাচামুন্ডারা তেলতেলে হাসি হেসে বলল, "ইশ! দেশ হলে এখনই খুলবার ব্যবস্থা নিতাম। সুইমিংপুলটা দেখার খুব ইচ্ছা ছিল। সাথে ওদের ড্ৰয়িংরুমটা দেখা হলোনা, আফসোস!"
চেয়ারম্যান সাহেবের মনে বিন্দুমাত্র সন্দেহের দানা বাঁধার সুযোগ না দিয়ে তাঁরা স্থান ত্যাগ করলেন। স্মৃতিময় ডালাস সিরিয়ালের সাউথ ফর্ক রেঞ্চ স্বচক্ষে দেখার পরম তৃপ্তি নিয়ে তাঁরা এখনও সুখের নিদ্রা যাপন করেন।
মোরাল অফ দ্য স্টোরি ১: ইভা রহমানের একক অনুষ্ঠান পাবলিক দেখে হাসি মজাক তামাশা করতো বলেই মাহফুজুর রহমান দেখিয়ে দিলেন কোন অনুষ্ঠান কতটা জঘন্য হওয়া সম্ভব। শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ ঝড় হারিকেন হার্ভির পরপরই হারিকেন ইরমার আক্রমণের মতন অবস্থা। এখন মনে হচ্ছে, ক্যাটাগরি চারের হার্ভি ক্যাটাগরি পাঁচের ইরমার কাছে কিছুই না। এখন বাঙালি বুঝুক ইভা রহমান কত বড় শিল্পী।
কিন্তু এই অনুষ্ঠানেও যে পরিমান হাসি মজাক তামাশা হয়ে গেল, ভয়ে আছি, এর পরে তিনি না জানি কী নিয়ে হাজির হন যাতে তাঁকেও মানুষ ভাল শিল্পী হিসেবে কদর করে!
মোরাল অফ দ্য স্টোরি ২: বাংলাদেশে পয়সাওয়ালা এবং ক্ষমতাবানদের আশেপাশে হাজারো মাছি ভনভন করে। মাছির ভনভনানিতে কাঁচা গুও নিজেকে গুড়ের সন্দেশ ভাবতে শুরু করে। আমি নিশ্চিত, মাহফুজ সাহেব বন্ধুবান্ধবের আড্ডায় তাঁর সংগীত প্রতিভার প্রদর্শন করেন, এবং তাকে ঘিরে থাকা মাছির দল ভন ভন করতে করতে বলে, "মারহাবা! মারহাবা! স্যার! আপনার অবশ্যই বাজারে এলবাম বের করা উচিৎ! সেই এলবামের ফার্স্ট কপিতে আমাকে কিন্তু অটোগ্রাফ দিতেই হবে।"
"আপনার অবশ্যই টিভিতে একক সংগীতানুষ্ঠান করা উচিৎ! লোকজন অন্যান্য অনুষ্ঠান বাদ দিয়ে যদি এই অনুষ্ঠান না দেখে তাহলে আমি সবাইকে সাক্ষী রেখে বলছি, আমি সবার সামনেই এক চামচ গু খাব।"
এবং তারপরেই ইতিহাস!
©somewhere in net ltd.
১| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১২:৫৮
সোহানী বলেছেন: হাহাহাহাহাহা.......হাসতে হাসতে আমি ফিট। সুপার লাইক।
যাহোক, আমি ইভা বা মাহফুজ সাহেবের গান শুনে হার্টফেইল করিনি। দেশে তাদের অনেক পারফর্মেন্স সরাসরি দেখেছি বা দেখতে বাধ্য হয়েছি কারন মাহফুজ সাহেব অনেক টাকার বিনিময়ে সে সব প্রোগ্রাম স্পন্সর করতো ও এটিএন এ সরাসরি সম্প্রচার করতো। তাই হার্ট অনেক সলিড হয়েগেছিল। তবে তাকে রেন্চ দেখানোর কাজটা জব্বর হইছে..........