নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

মিস বাংলাদেশ

০৬ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১১:০৯

একজন একাউন্ট্যান্ট মাত্রই জানেন যে থার্ড কোয়ার্টার এন্ড ডেডলাইন উপস্থিত হলে দিনের জন্য চব্বিশ ঘন্টা কতটা কম মনে হয়। ক্ষিধায় পেট চোচো করে, খাবার সময় নেই। বাথরুমের নিম্নচাপে রীতিমতন ডান্স করতে হয়, তবু হিসাব ফেলে যাওয়া যায় না। আগে ইনকাম স্টেটমেন্টের ঝামেলা মিটবে, তারপরে যা খুশি করো।
এই সময়ে ফেসবুকে লেখালেখি করাটা বিরাট অপরাধ বলে বিবেচনা করা উচিৎ। আর লেখার বিষয় যদি হয় "মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ" তাইলেতো সেই একাউন্ট্যান্টকে থাব্রানো উচিৎ।
তবুও মাঝে মাঝে ব্রেনের গিট্টু খুলতে ফালতু বিষয়ে লিখতে বাধ্য হই। আজকেরটা তেমনই একটা। ইগনোর করতে পারেন।
তা মিস বাংলাদেশকে নিয়ে খুব হৈচৈ হচ্ছে চারিদিকে। বেশিরভাগই নিন্দা জ্ঞাপন করছে, সংখ্যায় কম হলেও, কিছু মানুষের আগ্রহ আদার সাইড অফ দ্য স্টোরিতে। আসলে আমার প্রায়ই ভুলে যাই যে পৃথিবীতে সাদা এবং কালো রংয়ের পাশাপাশি ধূসর রংয়েরও অস্তিত্ব আছে। ৯৯% ঘটনা এই ধূসর এলাকাতেই ঘটে, কিন্তু আমরা পাবলিকরা সব ঘটনাকেই টেনে হয় সাদা বানিয়ে ফেলি, না হয় কালো।
ব্যক্তিগতভাবে আমি এইসব মিস ওয়ার্ল্ড ফোয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতা দেখিনা। আমারতো মনে হয় ১৯৯৪ সালের পর থেকে এই প্রতিযোগিতা বন্ধই করে দেয়া উচিৎ ছিল। সেই বছরই তাঁরা আল্টিমেট সুন্দরীর দেখা পেয়ে গেছে, ভবিষ্যতে আর যখন দেখা পাবেইনা, তাহলে শুধুশুধু এত পন্ডশ্রম কেন?
তো যাই হোক, কারও কারও মতামত, "মিস বাংলাদেশ প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ অংশ নিলে দেশের ইজ্জত বাড়বে।"
কোন সুন্দরী প্রতিযোগিতার সাথে দেশের ইজ্জতের কী সম্পর্ক এখনও বোধগম্য নয়। যতদূর জানি ইজ্জত এমনিতে আসেনা, কামাতে হয়। সেজন্য প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়, হোক সেটা পড়ালেখা, কিংবা খেলাধুলা; কেউ সুন্দরী হলেই তাঁকে ইজ্জত দিয়ে দেব, আর অসুন্দরী হলেই বেইজ্জত করবো - এইটা কোন কাজের কথা না। হ্যা, "আসল" মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতাগুলোয় সৌন্দর্য্যের পাশাপাশি অন্যান্য বিষয়ে ট্যালেন্ট, বুদ্ধিমত্তা ইত্যাদিও বিবেচনা করা হয় সত্য - কিন্তু আমাদের বাংলাদেশে এখনও সৌন্দর্য্যের শেষ কথা মেয়েদের ফর্সা চামড়া। চামড়া ফর্সা এমন দশটা মেয়ে জুটে গেলে তারপর বিবেচনায় আসে কার নাক নকশা কতখানি সুন্দর সেটা। মেয়েদের বুদ্ধির কদর এখনও সামাজিকভাবে আমরা করিনা। স্যাড রিয়েলিটি। বিশ্বাস না হলে আশেপাশে একটু নজর দেন। টানাটানি করে ম্যাট্রিকও পাশ করতে পারেনি, এমন সুন্দরী মেয়ের জন্য শিক্ষিত যোগ্য ছেলেদের যেমন লম্বা লাইন হয়, কালো ডাক্তার বা ডক্টর (পিএইচডি) মেয়ের জন্য তার ছিটেফোঁটাও পাবেন না। প্রতিটা ছেলেই ফ্যান্টাসি করে তাঁর বৌ সুন্দরী হবে, লোকে বাহবাহ দিবে। বৌয়ের সাথে ইন্টেলিজেন্ট ইন্ট্যাল্যাকচুয়াল কথোপকথনের ফ্যান্টাসি কোন বেকুবের থাকে?
তা এই মেয়ে নাকি অনেক উল্টাপাল্টা আকাম কুকাম করে এই প্রতিযোগিতা জিতেছে। অফিস কাজে ব্যস্ত থাকায় ডিটেইল পড়া হয়নি, তবে যতদূর জানি, ঝামেলার শুরু হয়েছিল বিচারকদের অসন্তুষ্টির মধ্য দিয়ে। তাঁরা নাকি একে প্রথম তিনের মধ্যেই রাখেন নাই, আয়োজকরাই একে ফার্স্ট বানিয়ে ফেলেছে।
তারপর ক্যাচো খুঁড়তে গিয়ে কোবরা সাপের ছোবল খেয়ে বসা। সেটা যাই হোক - অন্যের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে চর্চা করে লাভ নেই। মোট কথা হচ্ছে, এই মহিলা আজকের বাটপার না। পয়সা কামানোর জন্য সে শর্টকার্ট পথ নিতে আগ্রহী, এবং সেজন্য যেকোন মূল্য দিতেও তার কোন আপত্তি নেই। এখন তাঁর খেতাব কেড়ে নেয়া হয়েছে। তিনি নাকি সোশ্যাল মিডিয়ায় কান্নাকাটি করছেন। কোন সুন্দরী নারীকে কাঁদতে দেখলে ইমোশনাল বাঙালি না গলে পারে? এখন অভিযোগ উঠবে এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজের দিকে। যেখানে একটি অবলা মেয়েকে পণ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। যেখানে একটি গরিব মেয়েকে বাধ্য হয়ে এইটা ঐটা করতে হয়। মোট কথা, এই মেয়ে কিছুই করতো না, সমাজ তাঁকে বাধ্য করেছে। মানে সব দোষ আমার আর আপনার।
ইমোশনাল প্যাচাল পারতে ভাল লাগেনা, পড়তেও অসহ্য লাগে।
হিসাব পরিষ্কার। ধরুন আপনি একটি পরীক্ষায় অংশ নিলেন। পরীক্ষায় প্রথম দশজনকে এক কোটি টাকা বৃত্তি দেয়া হবে। আপনি জান প্রাণ উজাড় করে পড়লেন। কোন এক ফাজিল সারা বছর অন্যান্য আকাম কুকাম করে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকদের সাথে সেটিং করে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে পরীক্ষা দিয়ে দশম হয়ে গেল। আপনি হলেন একাদশ। আপনার মেধার,পরিশ্রমের প্রতি সুবিচার করা হলো?
কিংবা চাকরির ক্ষেত্রেও কেউ এমনটা করলো। পারতেন মেনে নিতে?
এখানেও ঠিক তাই হয়েছে। অন্যান্য মেয়েরা জেনুইন ফর্ম ফিলাপ করে (ধরে নিচ্ছি সবাই সৎ। যদিও এখানেও জালিয়াতি হতে পারে - ভরসা নাইরে ভাই) কঠোর পরিশ্রম করে দেখলো একজন বাটপারি করে তাঁদের টাইটেল নিয়ে গেছে। এর প্রতি ইমোশনাল হবো কোন দুঃখে? ওরতো উপযুক্ত শাস্তি হওয়া উচিৎ। এবং ওকে যারা সাহায্য করেছে, যেমন, আয়োজকদের মধ্যে যেই বদের হাড্ডি ফার্স্ট হবার আশ্বাস দিয়ে ফায়দা লুটেছে, তাকে জনতার সামনে এনে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। এই জানোয়ারগুলি থাকে বলেই আমাদের দেশের মেয়েরা বাইরে এসে কোন কিছু করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর সাহস করতে পারে না। বাংলাদেশের সমাজে স্যাক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট আইনকে এসিড নিক্ষেপ আইনের মতোই কঠোরভাবে প্রয়োগ করা এখন সময়ের দাবি। মজার ব্যাপার, এদেরই অনেকে প্রকাশ্য দিবালোকে নারীবাদী উক্তি দিয়ে ভক্তির চরম প্রদর্শন ঘটান।
এখন বরাবরের মতোই একটা অপ্রিয় কথা বলে সমাপ্তি টানি।
ছোটবেলায় আমাদের দেশে সরকারের পক্ষ থেকে ক্লাস ফাইভ এবং এইটের বাচ্চাদের বৃত্তির ব্যবস্থা ছিল। তা সেজন্য ছেলে মেয়েদের কী কম্পিটিশন! এই স্যারের বাসা থেকে ঐ স্যারের বাসা। নাকেমুখে খাবার খেয়ে বৃত্তি পরীক্ষা দিতে যাওয়া। এবং তারপর দেখা যায় যেসব ছেলে মেয়েরা বৃত্তি পেয়েছে তাঁদের প্রায় ৯০% ই পোলাপানের বাপ মা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা বিসিএস ক্যাডার। মানে তাঁদের বৃত্তির দরকার ছিল না, পেয়েছে সামাজিক স্ট্যাটাসের জন্য। সোশ্যাল গ্যাদারিংয়ে যখন কেউ গর্ব করে নিজের সন্তানদের বৃত্তিপ্রাপ্তির খবর বলবেন, তাঁদের বাবা মারাও যেন সেই আলোচনায় অংশ নিতে পারেন - এই হচ্ছে মূল ঘটনা। তা যাদের আসলেই বৃত্তির দরকার? যেমন যেই ছেলেটা বাপকে কৃষিকাজে সাহায্য করে, মাইলখানেক হেঁটে স্কুলে গিয়ে স্কুল ছুটি শেষে টোকাইগিরি করে দুয়েক পয়সা রোজগার করে সংসারের কাজে দেয় - তাঁরই কী সেই বৃত্তির উপর বেশি দাবি না? সরকার গ্রামের স্কুলের জন্য কোটা সিস্টেমের ব্যবস্থা করেন হয়তো। কিন্তু তাতেও রেহাই নেই। গ্রাম থেকে বৃত্তি পাওয়া সহজ, তাই দলে দলে শহরের পোলাপান গ্রামের স্কুল থেকে বৃত্তি পরীক্ষা দিয়ে সেই টাকা হাতিয়ে ফেলছে। পয়সাওয়ালা বাবা মা গর্ব করেই বলেন, "আমার ছেলেও এইবার বৃত্তি পেয়েছে।"
কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির, বিসিএস পরীক্ষার বা চাকরির সময় বিভিন্ন কোটার ফায়দা তুলতে যারা জাল সার্টিফিকেটের ব্যবস্থা করে ফেলেন, ঘুষ দিয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে হাতে রাখেন, এই মেয়েটিওতো সেটাই করলো। আরে, একটা সময়ে দেশে যখন ডিভি ভিসার অপশন ছিল, অ্যামেরিকায় আসার জন্য লোকে নিজের নাম দশবার পাল্টে দশটা আলাদা আলাদা ফর্ম ফিলাপ করতো। এখনও লোকে ত্রাণ নিতে রোহিঙ্গা সেজে দিব্বি ত্রাণ হাতিয়ে নিচ্ছে! এবং সেদিন শুনি এক বড় ভাই বলছেন, তিনি নিজে ব্যক্তিগতভাবে এক চিটাগংয়ের ভদ্রলোককে (!?) চেনেন যিনি রোহিঙ্গা শরণার্থী পরিচয়ে অ্যামেরিকায় এসে সিটিজেনশিপ নিয়ে ফেলেছেন।
গোড়া থেকে পঁচে যাওয়া একটা সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে এই মেয়েটি কী খুব ব্যতিক্রম কিছু করে ফেলেছে? আমরাই বরং ব্যতিক্রমী প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছি না?
মেয়েটিকে শাস্তি দিন। মেয়েটিকে যারা ব্যবহার করেছে, তাদের আরও বড় শাস্তি দিন। এবং তারও আগে, নিজেদের বদলে ফেলুন।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১২:৩৪

মোহেবুল্লাহ অয়ন বলেছেন: অগুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে আমরা ভালই মাতামাতি করতে পারি।

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ২:১৩

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: আফসোস।

২| ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১:৪১

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: একটা পজিটিভ দিক। চুরি করলে ধরা পড়তেই হবে...

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ২:১৩

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ঠিক

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.