নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
ইসলাম ধর্ম বলে ডান হাতে দান করলে বাঁ হাত যেন টের না পায়। মানে পুন্য করলে কখনই শো অফ না করতে।
তবে মাঝে মাঝে যদি মনে করেন, আপনার কোন পুণ্যকর্মের কথা জানতে পেরে অন্য কেউ এগিয়ে আসতে পারে, তাহলে আপনি বলতে পারেন। যেমন আমি কোন সংগঠনের হয়ে কাজ করি, সেটার খবর আপনাকে না দিলে আপনি কিভাবে সেখানে সাহায্য করতে পারবেন?
আমাদের সিলেটের বাসার পাশে একটা রাজবাড়ী আছে, রায়নগর রাজবাড়ী। কোন এক কালে কোন এক রাজা থাকতেন। পুরো এলাকার নাম সেই অনুযায়ী হয়েছে, রায়নগর রাজবাড়ী, রায়নগর রাজদীঘি, দর্জিপাড়া, দর্জিবন্দ ইত্যাদি। তা রাজার রাজবাড়ীর বাইরে এখন বিরাট সাইনবোর্ড ঝুলে, "সরকারি শিশু সদন।"
আমি তখন ক্লাস টুতে পড়ি, শিশু মানে বুঝলেও সদন মানে বুঝিনা। আব্বুকে জিজ্ঞেস করলাম এর মানে কী। আব্বু বলল, "এটা একটি এতিমখানা।"
এ যেন আমাকে গ্রিক কোন শব্দের অর্থ পার্সি ভাষায় দেয়া হলো। "এতিমখানা" শব্দের সাথেও তখনও পরিচয় ঘটেনি। আব্বু আরেকটু ভেঙে বললো, "যাদের বাবা মা ছোট বেলায় মারা যায়, তাঁদের এতিম বলে। এখানে তাঁরাই থাকে, যাদের বাবা মা নেই।"
ক্লাস ফোরে থাকতে একদিন স্কুল চলা অবস্থায় খবর এলো আমাদের এক সহপাঠীর বাবা খুব অসুস্থ, সে যেন বাসায় চলে যায়। তাঁকে নিতে তাঁর এক আত্মীয় এসেছেন।
বেচারা ব্যাগপ্যাক গুছিয়ে রওনা হয়ে গেল। ও যেতেই টিচার বললেন, "আসলে ওর বাবা মারা গেছেন। তোমরা সবাই ওর বাবার জন্য দোয়া করো।"
সেদিনই সে স্কুলে এসেছিল। তাঁর সেই আত্মীয় (খুব সম্ভব বড় ভাই হবে, ভুলে গেছি) তাঁকে বন্ধুদের কাছে নিয়ে এসেছিল - বাবার হঠাৎ এমন আকস্মিক মৃত্যুতে বন্ধুরা যদি একটু সান্তনা দেয়। ছেলেটির কান্না এই তেইশ বছর পরেও চোখে ভাসে।
সেই দিন থেকেই দোয়া করতাম আমার বাবা মায়ের যেন হায়াৎ বাড়িয়ে দেয়া হয়। আমি এতিম হতে চাই না।
আমার বাবা যেদিন মারা গেলেন সেরাতে আমি ঘুমাতে পারিনি। আমি ছিলাম ডালাসে, বাবা মারা গেছেন সিলেটে। কী হচ্ছে, কিভাবে হচ্ছে কিছুই জানিনা। বুঝতে পারলাম আমার মাথার উপর থেকে ছায়া সরে গেছে। হঠাৎ সেই ছাদ ধসে পড়ায় এখন যাবতীয় রোদ ঝড় তুফান বৃষ্টি আমাকেই সামলাতে হবে। আমি ততদিনে পাঁচ মাসের বিবাহিত, নিজের খরচ নিজে চালাই, কারোর উপর আর্থিক দিক দিয়ে নির্ভরশীল নই - কিন্তু সেই রাতে, সেই ঘটনা আমাকে হঠাৎ বড় করে দিল। এর আগে জীবনে কোন কিছু নিয়েই আমাকে কখনই চিন্তা করতে হয়নি। আব্বু বলতেন, "বাপ বেঁচে থাকতে চিন্তা কিসের ব্যাটা?" এখনতো এই কথা বলার কেউ থাকবে না।
শিশুদের আমি এমনিতেও ভালবাসি, তবে এতিম শিশুদের প্রতি আমি বরাবরই সহানুভূতিশীল। বায়াস্ডও বলতে পারেন। জীবনের সবচেয়ে বড় অবলম্বন, সবচেয়ে বড় সুখ থেকে তাঁরা বঞ্চিত হয়। আমার সাধ্যে যেটুকু সম্ভব আমি তাঁদের জন্য করার চেষ্টা করি। ভাই হিসেবে পাশে দাঁড়াই, পিতার প্রয়োজন হলেও পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি।
আমার এক ছেলে আছে। দোয়া করি আল্লাহ কখনই যেন তাঁকে প্রাপ্ত বয়স্ক হবার আগে এতিম না করেন। না বাবা, না মা। একটি সুস্থ স্বাভাবিক সুন্দর এবং সুখী জীবনের জন্য মা বাবার স্নেহের বিকল্প নেই। আমরা অনেকেই বাবা মাকে গ্র্যান্টেড হিসেবে নেই। তাঁদের মূল্য কী, সেটা জানতে হলে যাদের মা বাবা নেই, তাঁদেরকেই জিজ্ঞেস করে দেখুন।
আমি বিশ্বাস করি, মুসলিম হিসেবে এতিমদের পাশে এসে দাঁড়ানো অবশ্য কর্তব্য।
আমাদের নবী (সঃ) নিজে এতিম ছিলেন। তাঁর স্পষ্ট নির্দেশ আছে এতিমদের দেখভাল করতে হবে। যদি তা করতে না পারি, তাহলেও অন্তত কেবল তাঁদের মাথায় স্নেহের পরশ বুলিয়ে দিতে হবে, যাতে তাঁরা বুঝতে পারে তাঁরা সমাজে অবাঞ্চিত নয়। তাঁদের প্রতি দুর্ব্যবহার? আল্লাহর আরশ কেঁপে উঠার জন্য যথেষ্ট। বিশ্বাস না হলে সূরা নিসার প্রথম কয়েক আয়াত পড়েন। কেবলই সতর্কতা। ওদের সাথে কোন অবস্থাতেই দুর্ব্যবহার করা যাবেনা। বিশেষ করে দশ নম্বর আয়াতটাতো রীতিমতন থ্রেট, "যারা এতীমদের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে খায়, তারা নিজেদের পেটে আগুনই ভর্তি করেছে এবং সত্ত্বরই তারা অগ্নিতে প্রবেশ করবে।"
আল্লাহ তাঁর নবীকে বলেছিলেন, "তিনি (আল্লাহ) কি আপনাকে এতিম রূপে পাননি? অতঃপর তিনি (আপনাকে) আশ্রয় দিয়েছেন।" (৯৩:৬)
এর মানে কিন্তু অনেক গভীর ও বিরাট। এতীমকে আশ্রয় দেয়া, তাঁর দেখভাল করা কেবল নবীজিরই নির্দেশ না, স্বয়ং আল্লাহর সুন্নাহ। ইসলামে কিছু সুন্নত আছে যা নবীজির(সঃ) এবং কিছু সুন্নাহ আছে আল্লাহর। এর মানে হচ্ছে এই কাজটা করলে জান্নাতের টিকিট কনফার্ম হয়ে যায়।
এবং তাঁদের প্রতি অন্যায় আচরণও জাহান্নামের জন্য যথেষ্ট।
আমাদের দেশে বা বৃহত্তর ভারতীয় উপমহাদেশে এতিমদের অনেকেই খুব হেয় চোখে দেখেন। অন্যের বাচ্চাকে নিজের বাচ্চার মতন স্নেহ করতে পারেন না, এতে দোষের কিছু নেই। এটাই মানব বৈশিষ্ট্য। কিন্তু তাই বলে ঘৃণা বা করুন করবেন কেন? কিছুদিন আগে ডালাস শহরে এক ভারতীয় দম্পতি ভারত থেকে এক এতিম বাচ্চাকে উড়িয়ে এনে গলা টিপে হত্যা করে ফেললো। গভীর রাতে তিন বছরের এক শিশুকে এইভাবে মেরে ফেলে কালভার্টের নিচে ফেলে আসতে তাদের কলিজা একটুও কাঁপলো না? কী যে মন খারাপ হয়েছিল সেদিন যেদিন তাঁর ছোট শরীরটা পুলিশ খুঁজে পেয়েছিল! আহারে শেরিন ম্যাথুস! মেয়েটাকে এতিমখানার লোকেরা একটি ঝোপ থেকে কুড়িয়ে পেয়েছিল। এই জীবনে সে কারোর ভালবাসা পেল না। না নিজের বাবা মায়ের, না পালক পিতামাতার। মৃত্যুর সময়ে বুঝে যেতে পারলো না কত অচেনা মানুষ তাঁর জন্য চোখের পানি ফেলবে, ভালবাসবে! বিদায়ের আগে বুঝতে পারলো না পৃথিবী মোটেও দয়ামায়াহীন নিষ্ঠুর স্থান নয়।
কিছুদিন আগে অস্ট্রেলিয়ার এক্স ফ্যাক্টর অনুষ্ঠানের একটি ক্লিপ ফেসবুকে দেখেছিলাম। এক পঙ্গু ছেলে (ইমানুয়েল, হাত পা দুইটাই বিকল) গাইতে এসেছে। বিচারকরা তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন "তোমার বয়স কত?" ছেলেটি জবাব দেয়, "ইরাকে যখন আমার এতিমখানা আমাকে খুঁজে পায়, আমার কোন বার্থ সার্টিফিকেট ছিল না। আমরা যুদ্ধক্ষেত্রে জন্মানো শিশু, জুতার বাক্সে পরে ছিলাম। আমাদের মা (পালক) আমাদের চিকিৎসা করাতে এনেছিলেন এবং আমাদের ভালবেসেছিলেন। তিনিই আমাদের হিরো।"
চিন্তা করতে পারেন? দুই দুইটা পঙ্গু শিশুর দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছেন এই বিদেশিনী? এই মহিলার পা ধুয়ে পানি খেলেওতো তাঁর ধারেকাছে আমরা যাবার যোগ্যতা রাখবো না।
বিচারকরা কেঁদে উঠেছিলেন। একজন বলেছিলেন, “It just makes everything you worry about is so pathetic!”
গত পোস্টে স্পৃহার খোঁজ দিয়েছিলাম। যারা ঢাকার রায়েরবাজার বস্তির মানুষদের নিয়ে কাজ করে। আজকে আপনাদের দিচ্ছি আমুদ ফাউন্ডেশনের (http://amoudfoundation.com/) খোঁজ। এই মুহূর্তে চারটি মহাদেশ জুড়ে যারা কাজ করে যাচ্ছেন, তবে তাঁদের মূল লক্ষ্য আফ্রিকার খরাপীড়িত দুস্থ অসহায় মানুষের পাশে এসে দাঁড়ানো। সোমালিয়ার নাম শুনেছেন না? তাঁরা সোমালিয়ার জন্যই কাজ করে।
মাশাল্লাহ, আমাদের দেশের সরকারদের নিয়ে আমরা যতই গালাগালি করি না কেন, আমাদের অনেকদিন দুর্ভিক্ষ দেখতে হয়নি। দুর্ভিক্ষ কাকে বলে বুঝতে হলে সোমালিয়ার লোকজনদের নিয়ে কাজ করুন। এক অ্যামেরিকান যুবক ওখানে এক সপ্তাহ কাটিয়ে এসে পরবর্তী ছয়মাস ভরপেট খেতে পারেনি। প্রতিবার তাঁর চোখ ফেটে কান্না বেরিয়েছে। ও বলতো, "মানুষ সেখানে দিনের পর দিন অভুক্ত থাকে, আর আমরা কত খাবার নষ্ট করি!"
রমজান মাসে এক ভদ্রলোক এক ইসলামিক স্কলারকে জিজ্ঞেস করেছিল, "যদি আমরা সেহরি না খেয়ে রোজা রাখি, এবং ইফতারেও কিছু খেতে না পারি, এবং এইরকম দুই তিনদিন চলে, তাহলে কী আমাদের রোজা কবুল হবে?"
একটি মৃতপ্রায় শিশুর পাশে অপেক্ষারত শকুনের ছবি পৃথিবী কাঁপিয়ে দিয়েছিল। এই ছবিটি এই অঞ্চলেই তোলা হয়েছিল। জ্বি ভাইয়েরা ও বোনেরা, ওদের সাথে কাজ করা লাইফ চেঞ্জিং ঘটনা। আপনার জীবন আপনাতেই পাল্টে যাবে। আমি বুঝতে শিখবেন আপনাকে কত সৌভাগ্যবান করে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে।
আমুদ ফাউন্ডেশন সেই আটানব্বই সন থেকেই কাজ করে চলেছে, আমাদের ডালাসেরই পাশের শহর আরভিং থেকে যাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল তাঁদের। এখন তাঁরা অনেক বড় সংগঠন, কিন্তু এখনও তাঁরা কেবল মানুষের সাহায্যের উপরই নির্ভর করে থাকে। ওদের মাধ্যমে একটি এতিম শিশুর এক মাসের ভরপোষণের দায়িত্ব নিতে কত খরচ পরে জানেন? মাত্র তিরিশ ডলার। আমাদের অনেকের এক বেলার লাঞ্চে এর চেয়ে বেশি বিল উঠে। চিন্তা করে দেখুন, মাত্র তিরিশ ডলারে, একটি এতিম শিশুর পুরো মাসের খরচ তোলা যায়! এছাড়াও আমুদের আরও অনেক অনেক ধরনের প্রজেক্ট আছে। শিক্ষা, স্বাস্থ, কুয়া খনন, পানির ট্রাক, দুর্যোগ মোকাবিলা ইত্যাদি ইত্যাদি।
আপনার আশেপাশের এতিম খানাগুলোয় কখনও খোঁজ নিয়েছেন? কেবল কেউ মারা গেলে আমরা শিরনি পাঠিয়ে দেই। এতে কী হয় জানেন? ওরা দোয়া করবে মানুষ যেন বেশি বেশি করে মরে, তাহলেতো ওরা ভালমন্দ খেতে পারবে। কেন ভাই? কেউ মরার আগে আমরা ওদের ভালমন্দ খাইয়ে দিতে পারিনা? এর বরকতে যদি আমাদের প্রিয়জনদের আয়ু বাড়ে!
আজকে আপনি আছেন বলেই আপনার শিশুরা সুখে আছে। ওদের এতিম হতেও কিন্তু কয়েক সেকেন্ডও সময় লাগবে না। তখন কী হবে? কেমন লাগবে আপনার, যদি অন্যভুবন থেকে দেখেন আপনার শিশুদের প্রতি লোকজন ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখছে? বাড়তি উপদ্রব মনে করছে? কিছু করতে পারবেন? না। কারন বেঁচে থাকতে আপনিও কারোর ফেলে যাওয়া সন্তান নিয়ে মাথা ঘামাননি।
উপরওয়ালার উপর ভরসা রাখুন। তিনি সবার সব হিসেব রাখেন। আপনি কারোর এতিম বাচ্চার পাশে এসে দাঁড়ান। হয় আপনার সন্তান কখনই এতিম হবেনা, নাহয় এতিম অবস্থাতেই কেউ না কেউ তাঁদের পাশে এসে দাঁড়াবে। আল্লাহ দুইয়ের একটি ব্যবস্থা নিশ্চই করবেন।
৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ ভোর ৪:০১
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ২:৩৪
ওমেরা বলেছেন: ভাল লাগল ধন্যবাদ।