নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

আকায়েদ উল্লাহ কান্ডে প্রবাসী মুসলিম বাঙালিদের করণীয়

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:৪২

ইনবক্সে প্রায়ই অনুরোধ আসে, কোন নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে কিছু একটা লিখতে। আমি এমন কোন হনু না যে আমার লেখালেখিতে সমাজ পাল্টে যাবে, বরং যারা অনুরোধ করছেন, তাঁদের বিশ্বাস, আমি তাঁদের কথাগুলোই গুছিয়ে লিখতে পারবো।
একবার তেমনই একটা অনুরোধ এলো, "প্রগতিশীল নারী কি কখনও পর্দানশীন হতে পারে?"
প্রশ্নটা শুনে কনফিউশন দূর করতে অনুরোধকারীকে আরেকটু ভেঙে বলতে বললাম। তিনি বললেন, "ধরো, একটি লোক একই সাথে চাইছে তাঁর স্ত্রী বাইরে কাজ করুক, প্রগতিশীল হোক, আবার হিজাবও পড়ুক, ব্যাপারটা সেল্ফ কন্ট্রাডিক্টরি হয়ে গেল না?"
আমি তারপরেও প্রশ্নটা বুঝতে পারলাম না। বিশেষ করে "সেল্ফ কন্ট্রাডিক্টরি" অংশটি।
আমি আর কথা বাড়ালাম না। অ্যাডমিন প্যানেলে রনিয়াকে ফরোয়ার্ড করে বললাম, "আমার জানা মতে তুমি একজন হিজাবি, এবং একই সাথে প্রগতিশীল। এখন তুমিই এই বিষয়ে লিখ।"
রনিয়াও এই "সেল্ফ কন্ট্রাডিক্টরি" অংশটিতে খটকা খেল। সরাসরিই বলল, "এইটাতো কমন সেন্সের ব্যাপার। কে এমন উদ্ভট অনুরোধ করেছে?"
আমার আবার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আমি মানুষের নাম প্রকাশ করতে আগ্রহী নই। আমাকে যে যা কিছু বলেছে, সেটা গোপন থেকে যায়। কাজেই বললাম, "নাম জানতে চেও না। তুমি চেনো, শুধু শুধু ভুল একটা ধারণা তৈরী হবে।"
তা এই বিষয়ে কখনই লেখা হয়নি। আসলেই ব্যাপারটা কমন সেন্সের ব্যাপার বলেই আমরা, মানে আমরা ক্যানভাস অ্যাডমিনরা ভেবে এসেছি। বাস্তবে যদিও সেটার প্রয়োগ দেখিনা। এক ডাক্তার নারীর গল্প শুনেছিলাম, যিনি ফিফ্থ ইয়ারে গিয়ে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে ফুল হিজাবি মাওলানা বনে গেছেন। এইরকম আরও অনেক নারীর কথাই শুনি, ধর্ম হঠাৎ করেই তাঁদের জীবনে আসে, সব শেকড় শুদ্ধ পাল্টে দেয় - এবং তাঁরা ঘরকুনো হয়ে যান।
আমি সবসময়েই আমি এই ক্ষেত্রে শিফা বিনতে আব্দুল্লাহর উদাহরণ দেই। যে মহিলার সাথে নবী (সঃ) ব্যবসা নিয়ে আলোচনা করতেন, যে মহিলাকে খলিফা উমার (রাঃ) মদিনার বাজারের ইন্সপেক্টরের চাকরি দিয়েছিলেন, এটি দেখতে যে বাজারে কোন দোকানি ভেজাল পণ্য বিক্রি করছে নাতো? যদি করে থাকে, তবে তিনি যেন কঠোর ব্যবস্থা নেন, এবং তাঁর আইনই হবে উমারের (রাঃ) আইন।
কিছু মহিলা সাহাবীতো একদম যুদ্ধক্ষেত্রে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ পর্যন্ত করেছেন।
কিন্তু এইসব ঘটনা আমাদের বঙ্গ মুমিনারা জানবেন কিভাবে?
সেই এঙ্গেলে ভদ্রলোকের অনুরোধটা মোটেও ভুল ছিল না। তাঁরও হয়তো ধারণা, ইসলাম মানেই নারী বাড়িতে বসে থাকবে, এবং প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বেরুবে না, এবং বেরুলে অবশ্যই বোরখা হবে তাঁর পোশাক।
বোরখা/হিজাব/পর্দা নিয়ে অনেকেই বাড়াবাড়ি করে ফেলেন, পক্ষে বিপক্ষে দুই দিকেই। এবং অবশ্যই সেটা আমাদের হিপোক্রেট বাঙ্গাল (সাথে পাক-ভারত-সৌদিতো আছেই) সমাজে বেশি হয়ে থাকে।
সৌদি বিষয়ে বাঙালির আরেকটি মনোভাবে বড্ড অবাক হই। ওরা কবে থেকে ইসলামের স্ট্যান্ডার্ড হয়ে গেল? ইটালিয়ানরা অনেকেই ড্রাগস ব্যবসা করে, তাই বলে কী রোমান ক্যাথলিক খ্রিষ্টানরাও সব ড্রাগস ব্যবসায়ী? কমন সেন্স কোই থাকে মানুষের?
যে নিজেকে মুক্তমনা দাবি করছে, যে দাবি করছে কোন নারী কোন পোশাক পড়বে তা নিয়ে তাঁর বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা নেই - সেই একই ব্যক্তি হিজাব পরিহিতা কাউকে দেখলে আড়ালে বা প্রকাশ্যে অনেক আজেবাজে মন্তব্য করে।
একই সাথে, কোন নারী পর্দা পালন করবেন না করবেন সেটা নিয়ে মন্তব্য করতে আসে বিজ্ঞ মহাজনেরা। তুমি কে ব্রাদার ওদের পোশাক নিয়ে কথা বলার? তুমি নিজে আল্লাহর সব নির্দেশ পালন করো? করলেতো আল্লাহ বলেছিলেন পরনারীর দিকে না তাকাতে। তা তুমি ড্যাব ড্যাবিয়ে বেপর্দা নারীর দিকে তাকিয়ে ছিলে কেন?
এখন আসা যাক প্রগতিশীলতা বিষয়ে। পর্দার সাথে প্রগতিশীলতার দ্বন্দ্ব কোথায় সেটা এখনও আমার মাথায় ঢুকছে না। পর্দা কেবল একটি পোশাক, মিলিটারি ইউনিফর্মের মতন এটিও মুসলিম নারীদের ইউনিফর্ম। প্রগতিশীলতা মানুষের মস্তিষ্কে থাকে। পোশাকের সাথে প্রগতিশীলতার সম্পর্ক থাকলেতো রাস্তায় ট্রাফিক কন্ট্রোল করা ন্যাংটা পাগলগুলো সবচেয়ে প্রগতিশীল, সবচেয়ে বেশি আধুনিক।
কেন আমাদের অ্যাডমিন রনিয়ার উদাহরণ প্রথমে দিলাম এখন তাহলে বলি।
মেয়েটা হিজাবি, তাঁকে কখনও আমি হিজাব ছাড়া বাইরে দেখিনি। ৯/১১ এরও অনেক পরে অ্যামেরিকার সেই কঠিন সময়গুলোতেও তাঁকে দেখেছি হিজাব পড়েই ঘুরতে। একই সাথে এই মেয়ে কিক বক্সিং ক্লাসে অংশ নিয়ে পোলাপানদের পিটায়। ফেন্সিং (তলোয়ারবাজি) ক্লাস নিয়েছে কিনা জানিনা, তবে আস্ত একটা তলোয়ারের সাথে ছবি তুলে আমাদের দেখিয়েছিল এইটা মনে আছে। আর সোশ্যালি যে সে কতখানি অ্যাকটিভ সেটা মোটামুটি সবাই জানেন। এমন কোন ভাল ইভেন্ট দেখিনা যেখানে তাঁর অংশগ্রহণ নেই। চাকরির ফাঁকে কিভাবে সময় ম্যানেজ করে আল্লাহ মালুম! এবং তাঁর লেখালেখি থেকেই বুঝতে পারেন নিশ্চই সে কতটা আধুনিক মনা?
আমার এক বান্ধবী আছে, ডাক্তার। আসলে দুইজন বান্ধবী ডাক্তার। স্কুল জীবনের ক্লাসমেট, তখন কথা হতো না, ফেসবুকের সৌজন্য পরবর্তীতে বন্ধুত্ব হয়েছে। একজন বিশিষ্ট সাইক্লিস্ট। দেশের আনাচে কানাচে সাইকেল চালিয়ে বেড়ায়। বিদেশেও একই কাজ করে। আরেকজন স্কুটি চালিয়ে চেম্বারে যায়। দুইজনই হিজাবি। দুইজনই সিলেটের মতন ছোট শহরের স্থায়ী বাসিন্দা। তাঁরা কী প্রগতিশীল নয়?
ধর্মের সাথে প্রগতিশীলতার কোন বিদ্বেষ নেই। হ্যা, ধর্মান্ধতার সাথে আছে। অনেকেই এই দুই আলাদা বিষয়কে এক করে গুলিয়ে ফেলে। কিছুদিন আগে ক্যানভাস থেকে এক সদস্যকে এই কারণেই কানে ধরে বিদায় করা হয়েছে। ব্যাটার অভিযোগ, আমরা নাকি ধর্মান্ধতাকে সাপোর্ট করি। প্রমান চাইলে প্রমান দেয়ার পরিবর্তে কেবলই গলাবাজি। আমি নিশ্চিত, আগামীতেও এমন সদস্য পেলে তাই করা হবে।
তা ধর্মান্ধ কারা? সহজ উত্তর হচ্ছে, যে যত জোরে চিৎকার করবে, সে তত ধর্মান্ধ।
আকায়েদ উল্লাহ নামের এক উজবুক বাঙালি কিছুদিন আগে নিউ ইয়র্কে একটা কান্ড ঘটালো। গাধার বাচ্চা নিজেতো মরলোই না, উল্টা বাঙালিদের ব্ল্যাক লিস্টেড করে গেল। বাঙালিদের পরিচয় এতদিন ছিল নিরীহ স্বভাবের সম্প্রদায়, যারা সৎ, পরিশ্রমী, এপ্রিল এবং ডিসেম্বর মাসে যারা টুকটাক অনুষ্ঠান করে, এবং মোটামুটি কখনই কোন ধরণের ঝামেলার সৃষ্টি করে না। এখন এই বদের জন্য অ্যামেরিকানরা আমাদের দেশের নাম শুনলে ভ্রু কুঁচকে ভাববে, "ওদের মধ্যে কিছু বেকুব সুইসাইড বম্বারও আছে!"
একজন বিদেশী বন্ধু হেসে রসিকতা করে বলেছিল, "এরচেয়ে আতশবাজির দোকান থেকে কিছু আতশবাজি কিনে নিয়ে আগুন ধরালেওতো ফুটফাট কিছু ফুটতো! বেকুবটা রিয়েলিই অ্যামেচার।"
দুই একজন হাসাহাসি করলেও ব্যাপারটা খুবই লজ্জাজনক, এবং আশংকাজনকও বটে। লোকে সহজেই জাজমেন্টাল হয়ে যাবে। এবং একদিন হেট ক্রাইমও শুরু হয়ে যাবে। আল্লাহর অশেষ রহমত যে কারোর কোন ক্ষতি হয়নি।
তবে, বাঙালি জাজমেন্টাল এবং অ্যামেরিকান জাজমেন্টাল লোকেদের মধ্যেও একটা বিরাট পার্থক্য আছে।
বাঙালি জাজমেন্টাল লোকেদের সামনে গলা কেটে প্রমান দিলেও সে নিজের মতবাদ বদলাবে না। এর প্রমান কিছুদিন আগেই ক্যানভাসে এক মহাজ্ঞানী ভাইয়ের পোস্টে পেয়েছিলাম। যিনি পুরো মুসলিম সম্প্রদায়কে সন্ত্রাসী বলে দিলেন। এবং এভিডেন্স হিসেবে তিনি কুরআনের কিছু আয়াতের কথা উল্লেখ করেছেন, যেখানে বলা হয়েছে কাফিরদের সাথে যুদ্ধ করতে। তিনি দাবি করছেন তিনি "বহুবার" বাংলায় কুরআন পড়েছেন, এবং যেহেতু আমরা কেউ কখনও সেই কাজটা করিনি, কাজেই আমরা "শান্তির ধর্ম" দাবি তুলে "দুর্গন্ধ" ছড়াচ্ছি।
এখন এই আধুনিক যুগে, যুদ্ধক্ষেত্রে কোন জেনারেল তাঁর সেনাদের কী নির্দেশ দেন?
"একটা সেনাকেও প্রাণ নিয়ে ফেরত পাঠাবে না।" যুদ্ধ জিততে হলে বিপক্ষ দলের সেনাদের প্রাণ নিয়েই জিততে হয়, কোলে তুলে চুমাচাটি করে যুদ্ধ জেতা যায় না। কমন সেন্স তাই বলে।
এবং তারপর যদি সেই জেনারেল ভাল হয়ে থাকেন, তবে তিনি বলবেন, "যদি ওরা সারেন্ডার করে, তবে তাঁদের জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী ট্রিট করো।"
এখন কুরআন কী বলেছে সেটা শোনা যাক, "তবে যে মুশরিকদের সাথে তোমরা চুক্তি বদ্ধ, অতপরঃ যারা তোমাদের ব্যাপারে কোন ত্রুটি করেনি এবং তোমাদের বিরুদ্ধে কাউকে সাহায্যও করেনি, তাদের সাথে কৃত চুক্তিকে তাদের দেয়া মেয়াদ পর্যন্ত পূরণ কর। অবশ্যই আল্লাহ সাবধানীদের পছন্দ করেন। অতঃপর নিষিদ্ধ মাস অতিবাহিত হলে মুশরিকদের হত্যা কর যেখানে তাদের পাও, তাদের বন্দী কর এবং অবরোধ কর। আর প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাদের সন্ধানে ওঁৎ পেতে বসে থাক। কিন্তু যদি তারা তওবা করে, নামায কায়েম করে, যাকাত আদায় করে, তবে তাদের পথ ছেড়ে দাও। নিশ্চয় আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।" (সূরা তাওবা ৪-৫)
খুব ভয়ংকর কিছু বলা হয়ে গেছে? শত্রুর সাথে চুক্তিবদ্ধ অবস্থায় খবরদার, কোন রকম বিশ্বাসঘাতকতা করবে না। চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে ওদের হত্যা করো - বন্দি করো। আর যদি তাঁরা সারেন্ডার করে, তাহলে তাঁদের সাথে সৎ আচরণ করো।
এটিই কুরআনের বিখ্যাত "আয়াত অফ সোর্ড" - এবং সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই আয়াত নাজেল হবার পরেও নবী এবং সাহাবীদের জীবদ্দশায় এই আয়াতের কারনে কোন প্রাণঘাত ঘটেনি।
তারচেয়েও গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট এখানেই, সেই যুগে এই আয়াতটি নাযেল হয়েছে যেখানে যুদ্ধক্ষেত্রে একটাই নিয়ম ছিল, কোন নিয়মের তোয়াক্কা না করা। যুদ্ধবন্দীদের একটাই শাস্তি, মৃত্যুদন্ড। সারেন্ডার করুক, না করুক। জেনেভা কনভেনশন এই সেদিনের ঘটনা, অথচ কুরআন ঠিক পরের আয়াতেই বলছে, "আর মুশরিকদের কেউ যদি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তবে তাকে আশ্রয় দেবে, যাতে সে আল্লাহর কালাম শুনতে পায়, অতঃপর তাকে তার নিরাপদ স্থানে পৌছে দেবে। এটি এজন্যে যে এরা জ্ঞান রাখে না।"
এই হচ্ছে "বহুবার" কুরআন পাঠকারী এক ভাইয়ের কান্ড! খালি কলসিতে মাঝে মাঝে টোকাও দিতে হয়না, বাতাসেই বাজতে শুরু করে।
সমস্যা হচ্ছে, এই ধরণের ফালতু সস্তা পোস্টে এখন সময় নষ্ট করতে ভাল লাগেনা। তারউপর তখন ছিলাম নিউইয়র্কে, ছুটি কাটাচ্ছি ছোটবেলার প্রিয় বন্ধুর বাসায়। কোলে তখন পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর এবং আদুরে বিড়াল। এত আজাইরা পোস্টে সময় ব্যয় না করে বিড়ালকে আদর করা বেশি ভাল না? যাই হোক, এইসব আয়াত নিয়ে ঝামেলা আজকে থেকে মানুষ পাকাচ্ছে না, বহুপ্রাচীন হয়ে গেছে। এর ব্যাখ্যার কোনই প্রয়োজন নেই। সামান্য মাথা খাটালেই সমস্যা সমাধান হয়ে যায়। আগে পরের আয়াত পড়লেই হয়। বহুবার কুরআন পাঠকারীর নজরে না পড়ার কোনই কারন নেই। এইরকম মিথ্যুকের সাথে কথা চালাতেও রুচিতে বাঁধে।
এইবার আসি বিপরীত দিকে। নিউ ইয়র্কে গিয়ে জানতে পারলাম, আকায়েদ উল্লাহর সাপোর্টে অনেক বাঙালি দাবি করছে ছেলেটিকে আসলে ফাঁসানো হয়েছে। ঐ যে নাফিস নামের এক ছাগল এফ.বি.আইয়ের স্টিং অপারেশনের শিকার হয়েছিল? এখানেও সেটাই ঘটেছে।
নারে ভাই, এত তেল এদের নাই যে ফাঁদ পেতে ছাগল ধরতে হবে। এই ব্যাটা নিজে থেকেই এই কান্ডটা করেছে।
আকায়েদের সাপোর্টে অনেক বাঙালি পাওয়া যাবে। সব এইরকমই ধর্মান্ধ মুসলমান। যারা বলবে, "ফিলিস্তিনে আমাদের ভাইবোনদের উপর এই ঐ সেই হচ্ছে, এর প্রতিবাদ করা আমাদের দ্বীনি দায়িত্ব।"
জ্বি, প্রতিবাদ করা দ্বীনি দায়িত্ব, কিন্তু এই দ্বীনই শিক্ষা দিয়েছে কিভাবে প্রতিবাদ করতে হবে। রাসূলের সহীহ হাদিস, কোন অবস্থাতেই সিভিলিয়ানতো দূরের কথা, গবাদি পশু, এমনকি একটি গাছের পর্যন্ত ক্ষতি করা যাবেনা। তোমার যদি এতই তেজ থাকে, তাহলে ইজরায়েলে গিয়ে ওদের সেনাবাহিনীর সাথে লড়াই করো, ম্যানহাটনের অফিসগামী নিরীহ মানুষের সাথে ফুটানি দেখানো ইসলামে তীব্রভাবে নিষিদ্ধ। ইসলাম উজবুকীয় মতবাদ বয়ান করেনা। এবং যতদিন না ইজরায়েলি আর্মির বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধ করার ক্ষমতা হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত কূটনৈতিক চাপ দিয়ে যাও। দেখাও তোমার বিরুদ্ধে কী হচ্ছে। মরে যাবে? যাও। এটাই শহীদের মৃত্যু। মৃত্যুর পর বলতে পারবে মৃত্যু পর্যন্ত অন্যায় কিছু করো নি। আল্লাহর উপর তোমার ভরসা নেই?
ঐ জাজমেন্টাল পোস্টে ঐ ভাই একটি মজার দাবি করেছিলেন। তার মতে বিশ্বে ধর্মের নামে কেবল মুসলিমরাই হত্যা করে, আর কেউ নয়। এইজন্যই বলেছিলাম ভাইজানকে একটু পড়াশোনা করতে। তাহলে বেচারা জানতে পারতো, ইজরায়েল রাষ্ট্রটি পুরোটাই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ধর্মের ভিত্তিতেই। ব্রিটিশরা তাদের উগান্ডা অঞ্চলে স্বাধীন ইহুদি রাষ্ট্রের জন্য ভূমির প্রস্তাব দিয়েছিল, তারা বলেছিল তাদের জেরুসালেমই চাই। প্রাকৃতিক সম্পদে উগান্ডা জেরুসালেম থেকে কয়েক হাজার গুণ এগিয়ে, কিন্তু জেরুসালেমে কী এমন সোনার খনিটা আছে? জ্বি, ইহুদিদের সবচেয়ে পবিত্র অঞ্চলটি এই জেরুসালেম। ওদের মক্কা, ওদের কিবলা। এবং ইজরায়েলের নাগরিকত্ব লাভ করতে হলে ইহুদি হওয়াটাই যথেষ্ট, সেটা বিশ্বের যেকোন প্রান্তেরই হোক না কেন। জায়নিস্ট ইহুদিদের খোদ ইহুদিরাই দেখতে পারেনা, ওদের মতে এরা হচ্ছে ইসলামের আইসিস, আল কায়েদা ধরণের ব্রেইন ওয়াশড, জাজমেন্টাল, চরমপন্থী ধর্মান্ধ। The Irgun দিয়ে গুগলে সার্চ করে যা পারেন পড়ে নিন। ওরা ছিল জায়ানিস্টদের সবচেয়ে বড় প্যারা মিলিটারি সংগঠন। কত মানুষের খুনের দাগ ওদের গায়ে লেগে ছিল জানতে পারবেন। এখন ভিন্নভাবে, ভিন্ন নামে অপারেট করছে। আরও মজার ব্যাপার, যেখানে খোদ অ্যামেরিকান ইহুদিরাই জায়োনিস্টদের তিরস্কার করে, সেখানে বাঙাল মূলকের অনেকে আছেন ইজরায়েলের সমর্থন করেন। মায়ের চেয়ে মাসির দরদ একটু বেশিই হয়ে যায়।
যাই হোক, ভাই সাহেব কিছুদিন আগে লাস ভেগাসের আটান্নজন নিরীহ মানুষের মৃত্যুর ঘটনাও চেপে গেলেন। হোয়াইট সুপ্রিমিস্টদের নিয়ে মিডিয়া চুপ থাকে বলে ভাই সাহেবেরও "জ্ঞান" নেই। এই সংগঠন নিয়ে আরেকদিন লিখবো ইন শা আল্লাহ। সবসময়ে অ্যামেরিকার প্রশংসা করে যাই, মাঝে মাঝে কিছু কালো অধ্যায় তুলে ধরাটাও জরুরি।
এই ভাই যেমন দাবি করছেন, "সকল মুসলমান খারাপ," (যার আওতায় আপনিও পরে যাচ্ছেন, একজন বর্ণবাদী শ্বেতাঙ্গের সামনে আপনি যতই হম্বিতম্বি করেন না কেন, ওর দৃষ্টিতে আপনি একজন মুসলিম ব্রাউন পার্সনই থেকে যাবেন) তেমনি আকায়েদ উল্লাহ টাইপ উজবুকদের ধারণা, "সকল কাফের খারাপ।" এদের এই মতবাদে সামান্যতম সহমত হওয়াটাও বিপজ্জনক, বুঝতে পারছেন?
যাই হোক - হুদাই কথা না বাড়িয়ে মূল কথায় আসি।
নাইন ইলেভেনের আগে অ্যামেরিকায় মুসলিমরা ছিল খুবই নীরব সম্প্রদায়। কোন ঝামেলায় জড়াতো না, ঝামেলা করতোও না। বর্তমানের বাঙালিদের মতোই। ঐ ঘটনা দৃশ্যপট পাল্টে দেয়। সাধারণ লোকের মধ্যে ধারণা বুনে দেয় যে মুসলিমরা হয়তো আসলেই সিক্রেট সোসাইটি, যাদের কাম কাজই হচ্ছে আত্মঘাতী হামলা করা। কোথাও কোথাও মসজিদে গোলা গুলিও হয়েছে। এখনও প্রতি জুম্মাবারে বা ঈদের সময়ে মসজিদের বাইরে সশস্ত্র পুলিশ পাহারার ব্যবস্থা থাকে।
তা মুসলিমরা এই সময়ে কী করেছে জানেন? মসজিদের একটিভিটি বাড়িয়ে দিয়েছে। আমার পাশের শহর ক্যারলটন মসজিদে রমজান মাসে প্রতিদিন ইফতার, সাউথ ডালাস মসজিদে গরিবদের জন্য বছরের প্রতিটা দিন ফ্রি খাবারের আয়োজন, ইন্টার ফেইথ আলোচনার জন্য গির্জায় যাওয়া, গির্জার মানুষদের মসজিদে আহ্বান করা, পিস্ ওয়াকের আয়োজন করা, সামাজিক বিভিন্ন কর্মকান্ডে সরাসরি অংশ গ্রহণ করা ইত্যাদি ইত্যাদি। এর ফলে লাভটা কী হয়েছে জানেন? লোকে মুসলিমদের সাথে পরিচিত হচ্ছে, চিনতে পারছে তাঁদের। ফলে যখন কেউ হেট স্পিচ ছড়ানোর চেষ্টা করছে, তখন এই সাদা চামড়ার অ্যামেরিকানরাই এগিয়ে এসে বলছে, "না, আমি মুসলিমদের যতদূর চিনি তাঁরা এমন না। কিছু মাথামোটা সব ধর্মেই আছে। ওদের যেমন আল কায়েদা, আমাদের তেমন তুমি।"
কথাটা আমার এক লেসবিয়ান রেড নেক (বর্ণবাদী) ম্যানেজার তাঁর আপন ভাই বোন এবং খালাকে শুনিয়েছিল যখন তাঁরা তাঁকে "উই হেট্ মুসলিমস অর্গানাইজেশনের" সদস্য বানাতে এসেছিল। আগেই বলেছি, এদের জাজমেন্টাল এবং আমাদের জাজমেন্টালদের মধ্যে এখানেই পার্থক্য। এদের ধরিয়ে দিলে এরা ধরতে পারে, এবং প্রিন্সিপাল বা ন্যায়ের জন্য নিজের আপনাদের বিরুদ্ধে গিয়ে হলেও দাঁড়ায়।
কিছুদিন আগে একটা মজার ভিডিও দেখেছিলাম। একটি রেস্টুরেন্টে ক্যামেরা লুকিয়ে রেখে দুইজন অভিনেতাকে মুসলিম সাজিয়ে অপেক্ষায় বসিয়ে কাস্টমারদের রিয়েকশন রেকর্ড করা হচ্ছিল। যেমন এক কাস্টমার এসে বললেন, "আমার দুইজনের জন্য টেবল লাগবে।"
তখন ওয়েট্রেস বলছে, "ঠিক আছে, আসো আমার সাথে।"
হিজাব পড়া অভিনেত্রী তখন বলে উঠছে, "এক্সকিউজ মি, আমরা এখানে অনেকক্ষন ধরে বসে আছি। আমরা কখন পাবো?"
ওয়েট্রেস বলছে, "তোমাদের একটু দেরি হবে। তোমাদের জন্য আমি কর্নারের টেবল খুঁজছি। তোমার হিজাবে অন্যান্য কাস্টমাররা আনকমফোর্টেবল হতে পারে।"
ব্যস, এই কথা শোনার পর কোন কাস্টমার কেমন রিয়েক্ট করে সেটাই দেখা।
এবং প্রতিটা কাস্টমার উল্টা ওয়েট্রেসকে ধুয়ে দিয়ে গেল।
লন্ডনে এক ম্যাকডোনাল্ডস হিজাব পড়া কাস্টমারকে খাদ্য সার্ভ করতে অস্বীকৃতি জানানোয় সেই ম্যাকডোনাল্ডসেরই দরজার বাইরে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হলো। পিটিশন সাইন করা হচ্ছে। পথচারী সাদা ব্রিটিশ মহিলা পাশ দিয়ে যাবার সময়ে বলছেন, "ঘটনা কী?"
আরেক ব্রিটিশ নারী বলছেন, "একটি কাস্টমারকে হিজাব পড়ার জন্য খাবার সার্ভ করেনি।"
সাথে সাথে সেই নারীর প্রতিক্রিয়া, "ও মাই গড, দে কান্ট্ ডু দ্যাট। দিস ইজ লান্ডান! কোথায় সাইন করতে হবে বলো? আমি করছি।"
এখন আমি লিখে দিতে পারি কালকে আমাদের দেশের কোন রেস্টুরেন্টে যদি কোন হিন্দু দম্পতিকে অপেক্ষায় দাঁড় করিয়ে রাখা হয়, তাহলে এইরকম প্রতিক্রিয়া খুব একটা বেশি কেউ করবে না। কোন হিজাবি নারীকে অপদস্ত করা হলে উল্টো মুসলমানেরাই হাসাহাসি করে বলবে, "খুব ভাল হইছে, একদম উচিৎ শিক্ষা হইছে।"
আবারও অফ ট্র্যাকে চলে যাচ্ছি।
তা আমাদের প্রবাসী বাঙালিদের এখন করণীয় কী? করণীয় হচ্ছে যে সমাজে থাকছেন, সন্তান বড় করছেন, সেই সমাজকে কিছু ফিরিয়ে দিন। বিভিন্ন সামাজিক এক্টিভিটিতে যোগদান করুন।
"আমার দেশ বাংলাদেশ, আমার দেশে লাখো মানুষ না খেয়ে আছে। আমি কেন এই দেশে টাকা খরচ করবো?"
জ্বি, দেশের মানুষ যেমন না খেয়ে আছে, এই দেশেও অনেকেই না খেয়ে থাকে। খোঁজ নিলেই জানতে পারতেন। এখন যেহেতু এই দেশে টাকা কামাচ্ছেন, থাকছেন, এবং তারচেয়ে বড় কথা, এই দেশেই মরার সম্ভাবনা প্রবল, কাজেই এই দেশেও কিছু করতেই হবে আপনাকে। শুরু করুন "এক ডলারে তিনবেলা খাদ্যের" প্রোগ্রাম দিয়েই।
"আমি পর্দা করি, আমি কী বাইরে এই ঐ কাজ করতে পারবো?" ধরণের বুলশিট মতবাদ ঝেড়ে ফেলুন। হিজাব পরিহিতা অবস্থায় আপনার উপস্থিতিই সেই কান্ড করে দেখাবে যা সাধারণ পোশাকে আমরা হাজার হাজার ডলার দিয়েও করতে পারবো না।
আসছে ক্রিসমাসে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, বিভিন্ন অফিস আদালত বিভিন্ন ধরণের কর্মকান্ডের আয়োজন করেছে। যেমন এতিম শিশুদের জন্য খেলনার আয়োজন, কাপড়ের আয়োজন, বা এইরকমই কিছু। এগুলোতে অংশ নিন। মেকি কর্মকান্ড নয়, অন্তর দিয়ে তাঁদের পাশে এসে দাঁড়ান। "আমরা মুসলমান, ঈদের সময়ে এইসব করবো, ক্রিসমাসে কেন?" - ঠিক আছে ভাই, ঈদের সময়েও কইরেন। কিন্তু ওদের লোকাল শিশুদের ক্রিসমাসেই খেলনার প্রয়োজনটা বেশি হয়। এতে আপনার ঈমান যাবেনা, কিন্তু এইসব খ্রিষ্টান শিশুরা বুঝতে শিখবে তাঁদের প্রয়োজনীয় মুহূর্তে একজন মুসলিম তাঁদের জন্য এগিয়ে এসেছিল। ঐ যে উপরে উল্লেখ করা কোরানের আয়াত থেকে শিক্ষা নিন, "আর মুশরিকদের কেউ যদি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তবে তাকে আশ্রয় দেবে, যাতে সে আল্লাহর কালাম শুনতে পায়, অতঃপর তাকে তার নিরাপদ স্থানে পৌছে দেবে। এটি এজন্যে যে এরা জ্ঞান রাখে না।"
আপনি তাঁদের সাথে না মিশলে তাঁরা কিভাবে আপনাকে জানবে? দেখবেন, যখন আবারও কোন আকায়েদ উল্লাহ এরকম কোন কান্ড ঘটাবে, এবং জাজমেন্টাল পোলাপান তাঁদের মন বিষাতে আসবে, তখন এরাই আপনার হয়ে জবাব দিবে, "না, সব বাঙালি এমন নয়। সব মুসলিম এমন নয়। ওদের মধ্যেও দুয়েকটা ব্যাড এপল থাকে, আমাদের মধ্যে যেমন তুমি।"

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ ভোর ৪:১৫

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
জিন্স পড়ে পাছা দুলানো,বুকের কাপড় মাথায় জড়িয়ে এইটারে ইসলামী ইউনিফর্ম বলছেন?

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ ভোর ৪:০০

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: গাধার মতন কথা বলেন কেন? গাধার সাথে কথা বলবো আমি, এইটাই বা এক্সপেক্ট করেন কেন?

২| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:০৩

তারেক_মাহমুদ বলেছেন: সব বাংগালি এক নয়,সব মুসলিম এক নয় এটাই সত্যি। দু এক জন আকাইদ উল্লাহ উদাহরণ হতে পারে না

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ ভোর ৪:০১

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: সত্য, কিন্তু অনেকেই এই কথাটাই মানতে নারাজ। :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.