নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

"ছোট বোনের আগে বিয়ে হয়েছে? নিশ্চই বড়টার অন্য কোথায় লাইন আছে।"

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১২:১২

আঁখি আর যুথি দুই বোন। আঁখি বড়, যুথি ছোট। তাঁদের সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবার।
আঁখি পড়ালেখায় খুব ভাল, প্রচন্ড মেধাবী এবং তাঁর স্বপ্ন ডাক্তার হবার। শুধু এমবিবিএসই না, তাঁর ইচ্ছা আরও পড়াশোনা করে আরও অনেক জ্ঞান অর্জন করার। দেশের নামকরা কয়েকজন ডাক্তারের নাম নিলে যেন তাঁর নামও উচ্চারিত হয় এমন কিছু সে হতে চায়।
সেদিক দিয়ে যুথি বোনের পুরোই বিপরীত। সে সাজুগুজু নিয়েই ব্যস্ত থাকে। পড়ালেখা নিয়ে তাঁর কোন মাথাব্যথা নেই। নামের পেছনে ডিগ্রি থাকলেই কি আর না থাকলেই কি, সেতো আর চাকরি বাকরি করবেনা। মোটামুটি ভাল চাকরি করে এমন কোন ছেলের সাথে তাঁর বিয়ে হয়ে গেলেই সে সুখী। তাঁর যাবতীয় স্বপ্ন তাঁর সংসার সাজানো নিয়ে। সমাজে তাঁর উপস্থিতি না জানান দিলেও তাঁর চলে যাবে।
এখন সমস্যা দেখা দিল যখন তাঁদের "বিয়ের বয়স" এলো। যুথি সেই ষোল সতেরো হবার পর থেকেই দিন গুনছে কবে সে আঠারো হবে, কবে তাঁর বিয়েতে আইনি বাঁধা থাকবেনা।
এদিকে আঁখির যাবতীয় ধ্যান ধারণা পড়ালেখা নিয়ে। আরও পড়তে হবে। প্রয়োজনে বিদেশে যেতে হবে। সেজন্য দরকার স্কলারশিপ। মানে আরও পড়াশোনা। এখন বিয়েশাদি জাতীয় ফালতু বিষয়ে মাথা ঘামাবার সময় কই?
কিন্তু যেহেতু তাঁরা বাংলাদেশী মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে, কাজেই তাঁদের অনেক কিছু নিয়েই ভাবতে হয়। যেমন, বড় বোনের বিয়ে না হলে ছোট বোনের বিয়ে হবে কিভাবে? কাজেই যাই ঘটুক না কেন, যত স্বপ্নই থাকুক না, ছোট বোনের খাতিরেই বড় বোনকে স্যাক্রিফাইস করে বিয়ে করতেই হবে। পারলে পড়ালেখার মাঝখানেই, নাহলে পড়ালেখা শেষ হবার সাথে সাথেই। দেরি করলে লোকে কী বলবে?
বড় বোন বিয়ে না করা পর্যন্ত তাঁর উপর দিয়ে চলবে সাইকো থ্যারাপি। মা বাবা থেকে শুরু করে সবাই কনস্ট্যান্ট মানসিক যন্ত্রনা দিতে হবে মেয়েটিকে। বুঝিয়েই ছাড়বে সে কত নিকৃষ্ট প্রাণী, কতটা স্বার্থপর যে শুধু নিজের কথাই ভাবে, এবং তাঁরই আপন মায়ের পেটের বোনের বিয়ে আটকে রেখেছে।
এখন যদি আল্লাহ না করুক, ভবিষ্যতে বড় বোনের সংসারে কোন ঝামেলা হয়, তাঁর নিজের পায়ে দাঁড়াতে হয়, তখন কিন্তু ছোটবোন এগিয়ে আসেনা। মাঝে আম ছালা সব যায়।
আর যদি কোন কারনে ছোটবোনের বিয়ে আগে হয়ে যায়, তাহলেতো কথাই নাই।
"বড়টার বিয়ে হয়নি কেন? নিশ্চই কোন সমস্যা আছে।"
"আরে না, আমি যতদূর জানি পড়ালেখার জন্যই বিয়ে করেনি।"
"তুমিও না, সবাইকে বিশ্বাস করো! আমি শিওর এইসব পড়ালেখা টড়ালেখা সব ভাওতাবাজি, আসল ঘটনা অন্য কিছু। খোঁজ নিয়ে দ্যাখ গিয়ে, নিশ্চই কোন লাইন আছে।"
বাই দ্য ওয়ে, আমি আসলেই এই অপবাদ সবসময়ে শুনি, "তুমি সবাইকে বিশ্বাস করো!"
ব্যাপারটা আসলে জেনেটিক। আমার বাবাও সবাইকে বিশ্বাস করতেন, মনে করতেন শুধুশুধু আমাকে কেউ মিথ্যা কথা বলবেন কেন? যেকারনে তিনি ব্যবসা করতে গিয়ে ধুমায়ে মার খেয়েছেন। তাঁর পার্টনাররা বরাবর তাঁকে লুটে খেয়েছে। আমিও মানুষকে সহজেই বিশ্বাস করে ফেলি। যেকারনে আমি ব্যবসায় নামিনি। কারন আমার বড় মামা, যাকে সাকসেসফুল ব্যবসায়ী বলাই যায়, সে একবার আমাকে বলেছিল, "কেউ যদি তোকে এক কাপ চাও খাওয়াতে চায়, তাহলেও সন্দেহ করবি। 'আমাকে হঠাৎ চা খাওয়াচ্ছে কেন? নিশ্চই কোন মতলব আছে। নাহলে ব্যবসা তোকে দিয়ে হবেনা।'"
আমিও বুঝে গেলাম আমাকে দিয়ে বাংলাদেশে ব্যবসা হবেনা।
তো যা বলছিলাম, আমাদের দেশে এইরকম ঘটনা হরহামেশাই ঘটছে। বড় বোনের বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত ছোট বোনের বিয়ে হয়না। ছোটটার বিয়ে যদি আগে হয়ে যায়, তাহলে ৯৫% ক্ষেত্রে আমি নিশ্চিত বড়টার বিয়ে হওয়া অসম্ভব হয়ে যায়।
বড় বোনের ত্বক ছোট বোনের চেয়ে একটু ময়লা, কিংবা ছোট বোনের চেয়ে বড় বোন একটু খাটো, দেখা যায় বর দেখতে এলে ছোট বোনকে সামনেই আনেনা। যদি ছোটটাকে পছন্দ করে ফেলে! তখনতো কেলেঙ্কারি অবস্থা! সমাজে মুখ দেখানো দায় হয়ে যাবে! এইসব ফাত্রামি অনেক সময়েই চরম আকার ধারণ করে। বোনেদের মধ্যে সম্পর্কের পতন থেকে শুরু করে একদম আত্মহত্যা পর্যন্ত সবকিছুই ঘটতে পারে।
ছেলেদের ক্ষেত্রেও আরেক যন্ত্রনা। যেহেতু তোমার ছোট বোন আছে, বোনের বিয়ে না দিয়ে তুমি বিয়ে করতে পারবেনা। কী মুশকিল! ছোট বোন আমার চেয়ে দশ বছরের ছোট। তাঁর বাইশ বছরে বিয়ে দিতে গেলে আমার বয়স বত্রিশ হয়ে যাবে। মাথার চুলে পাক ধরে গেছে ততক্ষনে। ভাগ্য খারাপ হলে মাথায় তখন অর্ধেক পূর্ণিমার চাঁদ ঝকঝক করছে। এই বয়সে আমি নিজের জন্য পাত্রী খুঁজে পাবো কিভাবে? প্লাস আমার মনের যাবতীয় রোমান্সওতো ততদিনে ক্ষয় হয়ে গেছে। উল্টো অল্প বয়সী কোন স্বামী তাঁর স্ত্রীর সাথে আল্লাদ করতে দেখলে আমার গায়ে আগুন জ্বলে যায়। ইচ্ছা করে ঠাস করে চড় দিয়ে হারামজাদার ঢং ছুটায়ে দেই।
এখনতো আর সেই যুগ নেই যে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে দশ পনেরো বছরের ব্যবধান কোন বিষয়ই না। আমার কাছেতো পাঁচ ছয় বছরের জুনিয়র পোলাপানদেরই ভিন্ন প্রজন্মের মনে হয়! চিন্তাধারা, মানসিক ধ্যান ধারণা সব কিছুতেই অমিল! জীবন সঙ্গিনীতো আমার জেনারেশনেরই হওয়া উচিৎ, নাহলে মানসিকতা মিলবে কিভাবে?
আমার এক বন্ধুরই যেমন বিয়ের জন্য পাত্রী খুঁজতে সমস্যা হচ্ছিল। ওর চেয়ে ভাল ছেলে পৃথিবীতে আমি দুইটা দেখিনি। দেখতেও ভাল, বংশও উচ্চ। চাকরিও করে ভাল। কিন্তু ছেলের একটাই দোষ, বয়স তিরিশ পেরিয়ে গেছে! বেচারা প্রেম ট্রেম কিছু করেনি পরিবারের কথা ভেবে। এখন হয়তো ভাবছে প্রেম করলেই ভাল হতো। অন্তত মেয়ে খুঁজে পেতে সমস্যা হতো না। আসলে যুগটাই এমন হয়ে গেছে। হয় আপনি নিজের গার্লফ্রেন্ডকে বিয়ে করবেন। নাহলে অন্যের গার্লফ্রেন্ডকে।
সমস্যাটা বুঝাতে পারছি?
সমাধান কী?
সমাধান হচ্ছে আমাদের সমাজ পাল্টাতে হবে। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এইসবে কোন বাঁধা নেই। অন্য ধর্মের ব্যাপারে জানিনা, তবে ইসলাম এই রীতির ঘোর বিরোধী। কোন ফালতু অযৌক্তিক কারনে কারও বিয়ে আটকে রাখাকে ইসলামে ফিতনা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। Oppression. চরম গুনাহ। আমি নিশ্চিত অন্য ধর্মেও একই রীতি।
ছোট বোনের বিয়ে হয়ে গেছে পাঁচ বছর আগে, বড় বোনের বিয়ে হওয়াতে ইসলামিক কোন বাঁধা নেই এইটা আমি লিখে দিতে পারি। তাহলে ধর্মের ব্যাপারে মোটামুটি অন্ধ হয়ে যাওয়া মুসলিম জনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশে এই অনাচার কিভাবে টিকে আছে?
এখন যেহেতু রীতিটা সামাজিক, কাজেই সমাজের এই অসুখ সারাতেই হবে। কে বোরখা পড়লো, কে বিকিনি, কার ঘরে মূর্তি রাখলো, কে রাখলো দাড়ি ইত্যাদির চেয়েও জরুরি এইসব বিষয়ে ফোকাস করা। পশ্চিমা দেশগুলো শুধু শুধু এগিয়ে যায়নি, ওদের মানসিকতা এইসব ফালতু সংস্কার মুক্ত। ওদের দেশে বুড়োবুড়ির বিয়েও ধুমধামে হয়, তাঁদের ছেলে মেয়েরাই সেসব পার্টিতে ফুর্তি করে। আমাদের দেশে কিছুদিন আগে এক মন্ত্রী বেচারা বুড়ো বয়সে বিয়ে করেছিলেন বলে কত কুৎসাই না শুনতে হলো! আর তাঁর বাচ্চা হবার ঘটনায় কিছু না বললাম। কিছু অসুস্থ মানুষের মানসিকতায় নিজেকেই মানুষ ভাবতে লজ্জা হয়।
ওদের দেশে কোন মেয়েকেই তাঁর বোনের খাতিরে নিজের পড়ালেখা ছাড়তে হয়না। কোন ছেলেকে কলুর বলদ হতে হয়না।
আমরা গর্ব করি আমাদের কালচার নিয়ে। "আমরা স্যাক্রিফাইস করতে শেখাই।" কিন্তু অযৌক্তিক স্যাক্রিফাইসে গর্বের কী আছে সেটা আমার মাথায় ঢুকেনা। হ্যা, ওদের আবেগ আমাদের চেয়ে একটু বেশিই কম, ওরা অনেক দিক দিয়েই বেশিই এক্সট্রিম লেভেলের স্বার্থপর। ছেলেমেয়ে মা বাবার বাড়িতে ভাড়া দিয়ে থাকে সেটা এইসব দেশে আসলেই দেখা যায়। এমনকি আমি একটা হোমলেসকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি, বেচারার ছেলে ভালোই টাকাপয়সাওয়ালা, কিন্তু পঞ্চান্নবছর বয়সেও বেচারা বৃদ্ধ বাবাকে দিনমজুরি করতে হচ্ছে, রাতে ঘুমাতে হচ্ছে রেলস্টেশনে বা ব্রিজের নিচে। পুত্রের ঘরে পিতার স্থান নেই।
তবে আমরাই বা কেন অন্যদিকের এক্সট্রিম হয়ে থাকবো? মধ্যপন্থা কী আসলেই এত কঠিন?

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১২:৫০

নূর-ই-হাফসা বলেছেন: অনেক সুন্দর করে লিখেছেন ।
কথা গুলো সত্যি । সমাজ ব‍্যবস্থা এখন এমন পর্যায়ে এসেছে যে কিছুই করার নেই । তাও পরিবর্তন হচ্ছে কিন্তু ।
কেউ কেউ পসিটিভ ভাবেও নিচ্ছে । আজকাল কিছু পরিবার ছেলেদের গ্রাজুয়েশন পর পর এ বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে প্রতিষ্ঠিত হবার আগেই । ছোট বোন থাকলেও ।
তবে বড় বোনের আগে ছোট বোনের বিবাহ খারাপ চোখেই দেখছে ।
আর সমাজ এমন জায়গায় দাড়িয়েছে ছেলে মেয়েরা ত্রিশ পাড় হলে বিয়ের জন্য ছেলে মেয়ে খুঁজে পাচ্ছে না ।

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ৩:৩৬

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ভাল বলেছেন।

২| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৯:০৮

তারেক_মাহমুদ বলেছেন: আপনার গল্পের শিরোনাম দেখেই বুঝেছিলাম বিষয়বস্তু। খুব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।

৩| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৯:৫৯

তার ছিড়া আমি বলেছেন: এটা একটা বিশাল সমস্যা। এর সমাধানে সকলের সহযোগীতা দরকার। কারোর একার পক্ষে সম্ভব নয়।

৪| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:২৮

রাজীব নুর বলেছেন: বেশির ভাগ মানূষের মন মানসিকতা নোংরা।

৫| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১:৪৮

শামচুল হক বলেছেন: ছোট বোনের আগে বিয়ে হলে বড় বোনদের বিয়ে নিয়ে বাংলার মানুষ সমস্যায় পড়ে যায় এই মানসিকতার পরিবর্তন হওয়া দরকার।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.