নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

সরকারি বৃত্তি নিয়ে কিছু কথা - অপ্রিয় শোনাতে পারে।

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১:৪৫

আমাদের সময়ে ক্লাস ফাইভ এবং এইটে বৃত্তি পরীক্ষার ব্যবস্থা ছিল। পিএসসি জেএসসির যুগে জানিনা এখনও সেটা আছে কিনা। যদি না থাকে, তাহলে লেখাটিকে আজাইরা বকবক ভেবে ইগনোর করতে পারেন। তবে যেহেতু জীবনে আরও মাইলফলকে বৃত্তির ব্যবস্থা আছে, কাজেই নিজ অভিজ্ঞতার কিছু কথা বলা যাক। কাজে লাগবে অবশ্যই।
তা ক্লাস ফাইভে উঠার আগে থেকেই জানতাম একটা পরীক্ষা দিয়ে পাশ করলে টাকা কামানো যায়। ফার্স্ট সেকেন্ড হলে চার পাঁচ হাজার টাকা বোধয়। ফার্স্ট সেকেন্ড না হলেও যা টাকা আসে সেটাও কম না। আর প্রাইভেট বৃত্তি পরীক্ষাগুলোর কথা নাহয় বাদই দিলাম। সিলেটের বিখ্যাত চাঁনমিয়া বৃত্তির (প্রাইভেট) চানমিয়ার নাতি তখন আমাদের বন্ধু! যতদূর মনে আছে সে বাসা থেকে নিজের দাদার নামে বৃত্তির পরীক্ষায় বসার অনুমতি পায়নি। আংকেলের বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত।
তো যা বলছিলাম, আমরা তখন প্রাইমারি ক্লাসের ছাত্র, পকেটে চার আনা পয়সাও আসেনা। এদিকে স্বপ্ন দেখি কোটিপতির। আইসক্রিম খাবার সময়ে ইচ্ছে হয় বৃত্তির টাকা পেলে আস্ত এক গাড়ি আইসক্রিম কিনে খেয়ে শেষ করবো। ভিডিও গেম্স্ খেলার সময়ে চিন্তা করি বৃত্তির টাকা পেলে অবশ্যই অবশ্যই একটা গেম কনসোল কিনবো। এদিকে যখন কমিক বা গল্পের বই পড়ি, তখন সিদ্ধান্ত নেই লাইব্রেরির যত বই আছে তা না কিনে থামবো না।
আমাদের বাবা মারা তাঁদের সাধ্যের মধ্যে যা সম্ভব পুরোটুকু ঢেলে দিয়ে আমাদের তৈরী করেন বৃত্তি পরীক্ষার জন্য। বৃত্তি পেলে যে অর্থপ্রাপ্তি হবে, তারচেয়ে অনেক বেশি খরচ করে শহরের সবচেয়ে বিখ্যাত বৃত্তিপরীক্ষা বিশেষজ্ঞ শিক্ষকের বাড়িতে কোচিং, স্কুলের কোচিং, বাড়িতে গৃহশিক্ষক.....কোনই ফাঁক বাকি নেই। তাঁদের বন্ধুবান্ধব আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে অনেকের বাচ্চাই পরীক্ষা দিবে, এবং অনেকেই গর্বিতমুখে বলবেন, "আমার বাচ্চা বৃত্তি পেয়েছে।" তাঁরাও নিজেদের সেই গর্বিত অভিভাবকদের মধ্যে দেখতে আগ্রহী। নানান মোটিভেশনাল কথাবার্তা, "যদি তুমি বৃত্তি পাও, চাকরির সময়েও তুমি বলতে পারবে তুমি ফাইভে/এইটে বৃত্তি পেয়েছিলে। তাহলে চট করে তোমার চাকরি হয়ে যাবে। সবাই কত সম্মান করবে তোমাকে!..........."
আমার এইসব দূর ভবিষ্যতের চাকরি নিয়ে চিন্তা নেই (মিলিটারিতে যাবার ইচ্ছা ছিল) তখন বৃত্তির জন্য শুধু একটাই মোটিভেশন, পয়সা। এইটা ঐটা সেইটা কিনতে পারার লোভ।
বৃত্তি পরীক্ষার রেজাল্ট বেরুলো। ফার্স্ট সেকেন্ড থার্ড তিনটাই আমাদের স্কুলের ছেলে মেয়ে। (ফোর্থ পজিশন পাইলট স্কুলের ফার্স্ট বয়ের এবং তারপর আবারও তিন চারটা সিরিয়াল আমাদের স্কুলের।) দুইজন ডাক্তারের সন্তান এবং অপরজনও কোন অভাবী পরিবারের সন্তান নয়। স্কুল বিবেচনায় আমাদের স্কুল থেকে সবচেয়ে বেশি ছাত্রছাত্রী বৃত্তি পেয়েছে (আগের দশ বছর বা তারও অনেক আগে থেকেই এই ধারা চালু আছে, আমরা শুধু ধরে রেখেছি), প্রিন্সিপাল টিচার এবং অন্যান্য টিচাররাও এতে খুশি। ক্লাস সিক্সে অন্যান্য স্কুল থেকেও আরও কিছু ছাত্রছাত্রী এসে আমাদের স্কুলে ভর্তি হয়ে দলকে আরও শক্তিশালী করেছে। এদের কেউ কেউ আবার গ্রাম থেকে পরীক্ষা দিয়ে বৃত্তি পেয়েছে। কারন সেখান থেকে বৃত্তি পাওয়া নাকি সহজ। খুব সম্ভব কোটা সিস্টেম আছে তাতে। এবং বলাই বাহুল্য, সবগুলিই পয়সাওয়ালা পরিবারের সদস্য।
এখন সরকারি বৃত্তির যে মূল উদ্দেশ্য, গরিব মেধাবী ছাত্রদের মেধানুযায়ী বৃত্তি প্রদান, যাতে তাঁরা তাঁদের পড়ালেখা এগিয়ে নিতে পারে, সেটা কতটুকু সফল হলো? আমাদের বাবা মারাতো সমাজের শিক্ষিত শ্রেণী, তাঁদের বন্ধুবান্ধব, যাদের সন্তানেরা সবাই বৃত্তি পেয়েছেন, তাঁরা মোটামুটি সবাই বিসিএস ক্যাডার বা সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা, কিংবা নামি ব্যবসায়ী, দামি চাকুরে, তাঁরা কেউই বিষয়টা আমলে নিলেন না। বরং এটিকে প্রেস্টিজ ইস্যু বানিয়ে ফেললেন। আমাদের দেশের সরকার এতটাও ধনী নয় যে বড়লোকের সন্তানের জন্যও বৃত্তি দিবে, এবং তাঁদের দরকারও নেই - এক্ষেত্রে সরাসরিই বলতে হবে, আমাদের সবার অভিভাবকগণ গরিবের পেটে লাথি দিয়েছেন। তাঁদের দোষ ছিল না, তাঁরা উপলব্ধিই করেননি কত মহাপাপ তাঁরা করছেন। পরমকরুনাময় তাঁদের ক্ষমা করুন।
আমাদের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছেলে পড়তো। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা এমনিতেও এক্সপেন্সিভ, ব্র্যাক এবং এনএসইউ এই এক্সপেনসিভের মধ্যেও এক্সপেন্সিভ। তবে ব্র্যাকের সুবিধা হচ্ছে এরা নানান স্কলারশিপ প্রদান করে থাকে। নিড বেস স্কলারশিপ তাদের একটি। আমাদের ব্র্যাকের এক ছেলে ছিল, যে নিজেই ব্যবসা করতো, এবং যার মাসিক যায় তখনকার মার্কেটে ছিল মাসে পঞ্চাশ হাজার টাকা। সে কী করলো জানেন? একটা টিনের ঘর ভাড়া করে কাগজে পত্রে দেখালো সেটা তাঁর বাসস্থান যেখানে সে গরিব বাবা মা নিয়ে থাকে। তারপর নিড বেস স্কলারশিপ এপ্লাই করে বসলো। ব্র্যাক লোক পাঠিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখে আসলেই ছেলের স্কলারশিপের প্রয়োজন আছে। ব্যস, পেয়ে গেল!
ব্র্যাকেই আমাদের সিএসই ডিপার্টমেন্টের ডিন ছিলেন প্রফেসর সাঈদ সালাম স্যার। তিনি গর্ব করে বলতেন তিনি সমাজের অত্যন্ত নিচু শ্রেণী থেকে উঠে এসেছেন, এবং তাঁর পিতাকে কখনই তাঁর জন্য কোন টাকা ব্যয় করতে হয়নি। তিনি চলেছেন স্কলারশিপের উপর। বৃত্তি পেয়ে পেয়ে তিনি বিদেশী ডিগ্রিও অর্জন করে দেশে ফিরে এসেছেন। একবার ক্লাসে ডিসিপ্লিন ভঙ্গ করায় (পাশের বন্ধুর সাথে কথা বলেছিলাম) তিনি তাঁর রুমে গিয়ে আমাদের বলেছিলেন, "একটা সেমিস্টারে তোমাদের বাবা একটি সাবজেক্টের পেছনে যত টাকা খরচ করেন, তত টাকা বুয়েটের একটি ফুল স্কেল প্রফেসরেরও বেতন না। তোমরা কত লাকি তোমরা জানোনা। তোমাদের শিক্ষার পেছনে তোমাদের বাপের টাকার কদর করতে শেখো।"
হ্যা, মেধাভিত্তিক স্কলারশিপ, যেটা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অফার করে, সেটা নিয়ে কোনই অভিযোগ নেই। আমার সাথে সাঈদ সালাম স্যারের বকা খাওয়া অপর ছেলেটি ১০০% ফ্রী স্কলারশিপে পড়তো, কারন ভর্তি পরীক্ষায় সে প্রথম হয়েছিল ও নির্দিষ্ট সিজিপিএ ধরে রেখেছিল।
কথা হচ্ছে, এই যে সরকারি বৃত্তি পেয়ে পেয়ে গরিব ঘরের কয়েকটা মাত্র সন্তান এতদূর এগিয়ে আসছেন, সেখানে অপ্রয়োজনে ভাগ বসিয়ে আমরা আরও কতজনের ভাগ্যের গলা টিপে হত্যা করছি? গরিব ঘরের কতজন ছাত্রছাত্রীর পড়াশোনা টাকার অভাবে আটকে যাচ্ছে, যেখানে হয়তো সরকারি সাহায্য পেলে আসলেই তাঁদের পড়ালেখা সুন্দর এগিয়ে যেতে পারতো। আমাদের সন্তানদের নিয়ে গর্ব করতে হয় অন্য হাজারো বিষয় নিয়েইতো গর্ব করা যায়। ক্লাসে ফার্স্ট হয়েছে/সব সাবজেক্টে A পেয়েছে -
এইতো যথেষ্ট, বৃত্তিও পেতে হবে কেন?
প্রায় ৯০% মানুষের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে কথাগুলো লিখলাম। আপনারা হয়তো বলবেন, "যে যোগ্য, সেই বৃত্তি পাবে। এখানে ধনী-গরিব আসছে কোত্থেকে?" তাহলে আপনারাই নিজেদের জিজ্ঞেস করুন, ধনি বা মধ্যবিত্তের সন্তানের পড়াশোনার জন্য বৃত্তি প্রাপ্তিরই বা প্রশ্ন আসছে কোত্থেকে? টাকার অভাবেতো তাঁদের পড়াশোনা এটকে যাবেনা। "ভাল ছাত্র" প্রমান চাইলে স্কুলের বা বোর্ডের পরীক্ষাইতো যথেষ্ট।
ঠান্ডা মাথায় ভাবুন। তারপর সিদ্ধান্ত নিন এই ব্যাপারে কিছু করবেন কিনা। আপনি হতে পারেন ট্রেন্ড সেটার। বন্ধুবান্ধব যখন বাচ্চাদের বৃত্তি নিয়ে কথা তুলবে, বলবেন, "আমারটাকে আর বৃত্তি পরীক্ষায় বসতে দিবো না। ওরতো টাকা পয়সার দরকার নেই, শুধু শুধু গরিবের বাচ্চার পেটে কেন লাথি দেয়া?"
লোকের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে দিতে আপনার সামান্য কথাটিই যথেষ্ট।

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ২:২২

ঢাকার লোক বলেছেন: ভালো একটা দিক তুলে ধরেছেন,
বৃত্তির জন্য রাখা পুরো টাকাটাকে দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে, 25% মেধা ভিত্তিক, মেধাবীরাও যাতে ভালো করার উৎসাহ পায; আর বাকি 75% রাখা যেতে পারে শুধুমাত্র দরিদ্রদের জন্য, যেখানে প্রতিযোগিতা করার জন্য সর্বোচ্চ পারিবারিক আয় সীমিত করে দেয়া হবে। সরকার এ বিষয়ে ভেবে দেখতে পারে ।

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ভোর ৫:৪০

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ভাল বলেছেন।

২| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৩:৫১

চাঁদগাজী বলেছেন:


খই ভাজা হচ্ছে?

৩| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ভোর ৫:২১

starit বলেছেন: Smartchannel24.com is your Latest Entertainment News Website https://smartchannel24.com

৪| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ভোর ৬:৪৯

রানার ব্লগ বলেছেন: বৃত্তি ব্যাপারটা যত না আর্থিক ভাবে সাহায্যকারী তার থেকে ঢের মেধা যাচাই এর ব্যাপারটা থাকে। এখন কেউ যদি বৃত্তি পেতেই হবে ভেবে গ্রামের স্কুলে গিয়ে পরিক্ষা দেয় এটা তার নিজের মেধার সাথে তামসা করাই বোঝায়। আমি যত দূর জানি বৃত্তি পরিক্ষার টাকা এত টাই কম যা আসলে কোন কাজেই লাগে না। (আমার জানা ভুল হতে পারে)

৫| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:০১

রাজীব নুর বলেছেন: পড়লাম।

৬| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:৫৯

আখেনাটেন বলেছেন: বৃত্তি দুইভাবেই দেওয়া যেতে পারে। মেধাভিত্তিক ও আর্থিক সহায়তা। তবে এখানে চিটিং করলে শাস্তির ব্যবস্থা রাখা জরূরী। কারণ এদেশে তেলে মাথায় তেল ঢালার লোকজনই বেশি। গরীব মরে ভূত হলে আমার কী?

৭| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ২:২৩

ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: মজার কথা হলো PSC JSC SSC HSC তে ভালো মার্কস পেলে এমনিতেই বৃত্তি পাওয়া যায়। তাই বৃত্তি পরীক্ষা বিষয়টা আর সেভাবে নেই। শুধু কিছু NGO বৃত্তি পরীক্ষার আয়োজন করে।

৮| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৯:৫০

সোহানী বলেছেন: আখেনাটেন এর মন্তব্যে সহমত। বৃত্তি দুইভাবেই দেওয়া যেতে পারে, মেধাভিত্তিক ও আর্থিক সহায়তা। কারন এটা অনেকটা বাচ্চাদের উৎসাহ দেয়া হয়। তবে গরীব মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা যেন বঞ্চিত না হয় সেটা দেখতে হবে অবশ্যই।

৯| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১২:৪৯

রুদ্র নাহিদ বলেছেন: ভালো পোষ্ট।। সুন্দর করে তুলে ধরেছেন। তবে এখন যতোদূর জানি রেজাল্টের উপর বৃত্তি দেয়।

১০| ০১ লা মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১২:৪৯

আব্দুল্যাহ বলেছেন: এখন বৃত্তি এর নির্ধারণ পদ্ধতি বদলে গেছে, কাউকে আর আলাদাভাবে পরীক্ষায় বসতে হয় না।
সুন্দর লেখার জন্য ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.