নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

সবাই এখন ওয়াজ শোনা মুসলমান, আফসোস, কোরআন হাদিস পড়া মুসলামানের সংখ্যা কেবল কমছেই।

৩০ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১০:৫৭

এক বড় ভাই ইনবক্সে একটি ওয়াজের ভিডিও পাঠালেন। সেখানে এক মাওলানা একজনকে গালাগালি করে তাঁর ফাঁসি দাবি করছেন। ইসলামে পর্দা করার কথা ফরজ, এইটা তাঁর মনে আছে, কিন্তু গালাগালি যে নিষিদ্ধ, এই ব্যাপারটা হুজুর মহাশয় ভুলে গেলেন কিভাবে বুঝলাম না।

তো যাই হোক, এই হুজুর দারুন চেতনাবাদী। কথায় কথায় ফাঁসি দাবি করেন। নাহলে হুমকি দিচ্ছেন এইটা করবেন, সেইটা করবেন। সোজা কথায় সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবেন। অতি উত্তম। তাই বলে বাংলাদেশের "সব" মাওলানা যে এইরকম তা আবার ভেবে বসবেন না যেন। সেটা করলে আপনিও ওদেরই মতন মূর্খ ক্যাটাগরিতে নাম লেখাবেন। সেইসব হুজুরই বাংলাদেশে হিট হয় যে যত বেশি জ্বালাময়ী ভাষণ দিতে পারে। শান্তির বাণী প্রচারকারি ঈমামের খুৎবা কয়জন শেয়ার করেন ফেসবুকে? আপনি নিজে কখনও করেছেন? না। এইটাই কারন যে তারা হেট স্পিচ দিয়ে লাইক ও শেয়ার পেতে চায়।

এবং জ্বালাময়ী ভাষণ মানেই ঘৃণার বাণী প্রচার। অমুক তমুকের নামে মানুষের মনে ঘৃণা সৃষ্টি করো - সবাই উত্তেজিত হয়ে যাবে, তুমিও হিট হয়ে যাবে। বাংলাদেশে এখন ওয়াজ ব্যবসা দুর্দান্ত গতিতে চলছে। সবাই এখন ওয়াজ শোনা মুসলমান, আফসোস, কোরআন হাদিস পড়া মুসলামানের সংখ্যা কেবল কমছেই।

আমরা নাহয় পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের দিকে তাকাই।

সেখানে কট্টরপন্থী সরকার ক্ষমতায় আছে। সেদিন দেখি হোলির ভিডিও, যেখানে টুপি মাথার এক লোকের গায়ে জোর করে রং মেখে দিয়ে ভিডিও করা হয়েছে। মুসলিম নারীদের গায়েও রং করে ভিডিও করা হয়েছে। জাহিল কেবল বাংলাদেশেই জন্মায় না, সীমান্তের ওপারেও জানোয়ারের অভাব নেই। এক্ষেত্রে আমরা দক্ষিণ এশীয়রা হয়তো বিশ্বে এক অথবা দুই নম্বর আসন পাবোই।
প্রকাশ্যে মুসলিমদের খুন করে ফেললেও সেখানে কেউ কিছু বলছে না। যেমন আসানসোলের এক মসজিদের ঈমামের ছেলেকে ওরা মেরে ফেলল। কিভাবে মারলো সেটাও বয়ান করা যাক। তারা তাঁর বুক চিরে কলিজা বের করে শরীর টুকরো টুকরো করে কেটেছে। যেমনটা উহুদের ময়দানে হজরত হামজার সাথে করা হয়েছিল। কারোর মৃত্যুতে নবী (সঃ) প্রকাশ্যে খুব কম কেঁদেছেন, হামজার (রাঃ) মৃত্যু সেই ব্যতিক্রমগুলোর একটি ছিল।
যাই হোক, তা এই পুত্রের অপরাধ সে একজন মুসলমান, এবং তাঁর পিতা একজন মুসলিম ঈমাম।
তা ইসলামে একজন ঈমাম হচ্ছেন সেই অঞ্চলের ধর্মীয় নেতা। আমাদের নিয়ম হচ্ছে খলিফা জুম্মার খুৎবা দিবেন, তিনিই জুম্মার নামাজে ঈমামতি করবেন। তিনিই হজ্জ্বের সময়ে নেতৃত্ব দিবেন। ঈমামের দায়িত্ব ও সম্মান আসলেই এত ব্যাপক।

তাঁর পুত্রের জানাজায় শরিক হলেন দশ হাজারের বেশি মানুষ। প্রত্যেকের মুখ থমথম করছে। প্রতিশোধ স্পৃহার আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে বুকের ভিতর। জানাজার নামাজ শেষের অপেক্ষায় সবাই, এরপরই নেমে আসবে রোজ কেয়ামত। ভাইয়ের রক্তের প্রতিশোধ না নিয়ে কেউ বাড়ি ফিরবে না। এইটা তাঁদের ঈমানী দায়িত্ব।
এই সময়ে সদ্য পুত্রহারা পিতা ঈমাম ইমদাদুল্লাহ্ রশিদি খুৎবা দিতে উঠলেন। বুকের ভিতর ঝড়, হাহাকার, শূন্যতা সব ছাপিয়ে তিনি বলতে শুরু করলেন,

"আল্লাহ্‌ আমার সন্তানের যতদিন আয়ু রেখেছিলেন, ততদিন সে বেঁচেছে। আল্লাহ্‌-র ইচ্ছায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে। তাঁকে যারা হত্যা করেছে, আল্লাহ্‌ তাদের কেয়ামতের ময়দানে শাস্তি দেবেন।

কিন্তু, আমার সন্তানের মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়ার অধিকার আপনাদের কারও নেই। আমার সন্তানের মৃত্যুর জন্য একটিও মানুষের উপর আক্রমণ করা চলবে না। একটিও মানুষকে হত্যা করা যাবে না। বাড়িঘর, দোকানপাট কোথাও ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ বা লুটপাট করা চলবে না।

ইসলাম আমাদের নিরীহ কোনো মানুষকে হত্যা করতে শেখায় না। ইসলাম আমাদের শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রেখে বসবাস করতে শেখায়। আমাদের আসানসোলে আজ শান্তিশৃঙ্খলার প্রয়োজন। আপনারা যদি আমায় আপন মনে করেন, তাহলে ইসলাম নির্দেশিত শান্তি বজায় রাখবেন। শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্ব আপনাদের।
আর যদি, আপনারা শান্তি বজায় রাখতে না পারেন, তাহলে ভাববো- আমি আপনাদের আপন নই। আমি আসানসোল ছেড়ে চিরতরে চলে যাবো।"

ব্যস, এক বক্তব্যেই পরিবেশ ঠান্ডা হয়ে গেল। জানাজার নামাজ শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয়। নামাজ শেষে প্রত্যেকেই নিজের নিজের বাড়ি ফিরে যান। মাওলানা সাহেব ফিরে যান মসজিদে।

হয়তো একদিন তাঁর নাম সবাই ভুলে যাবে। কেউই তাঁকে মনে রাখবেনা। কিন্তু উপরওয়ালার খাতায় তিনি একজন নক্ষত্র হয়েই জ্বলজ্বল করবেন ইন শা আল্লাহ।

এখন নিজেকে সেই মাওলানার স্থানে কল্পনা করে দেখুন, আপনি হলে কী করতেন? পারতেন নিজের সন্তানের খুনিদের আল্লাহর হাতে ছেড়ে দিতে? এই কনফিডেন্স আপনার আমার থাকতো? আমাদের ঈমান এত দৃঢ়?

কিছুদিন আগে অ্যামেরিকাতেও এক ইন্দোনেশিয়ান ভদ্রলোক নিজের পুত্রের খুনিকে কোর্টরুমে বসে মাফ করে দিয়েছিলেন। তাঁর বক্তব্যে কৃষ্ণাঙ্গ খুনি, তার পরিবারতো পরিবার, এমনকি শ্বেতাঙ্গিনী বিচারক পর্যন্ত আবেগাপ্লুত হয়ে কেঁদে ফেলেছিলেন। ভিডিও আছে ইউটিউবে, দেখতে পারেন। যদিও নিজের পুত্রের খুনির মৃত্যুদণ্ডের অধিকারও আপনাকে ইসলাম দেয় - সাথে এও বলে দেয় যে ক্ষমাই শ্রেষ্ঠ গুণ। আপনি যেটা খুশি সেটা নিবেন।

একটা ইসলামী উদাহরণ দেই। দেখি কিছু শিখতে পারি কিনা।

হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) তখন খলিফা। একদল সাহাবীর আড্ডার মাঝখানে তিনি একটি তীর নিয়ে এসে বলেন, "দেখোতো তোমরা কেউ চিনতে পারো কিনা এই তীরটা কার?"

এক সাহাবী তীর হাতে নিয়ে বলেন, "এটি আমার তীর।"

আবু বকর (রাঃ) বললেন, "তুমি নিশ্চিত এটি তোমার?"

সাহাবী বলেন, "অবশ্যই। এইযে এখানে আমার নিজস্ব চিহ্ন খোদাই করা আছে।"

তখনকার দিনে যে যার তীর নিজেই তৈরী করতেন। তারপর নিজস্ব ব্র্যান্ডের স্ট্যাম্প দিতে চাইলে দিয়ে দিতেন। এই সাহাবী সেভাবেই নিজের তীর চিনতে পেরেছেন। খলিফার মুখে অন্ধকার মেঘের ছায়া পড়তে দেখে তিনি জিজ্ঞেস করেন, "হে আল্লাহর রাসূলের খলিফা, বিষয়টা কী যদি আমাদেরও বলতেন।"

আবু বকর (রাঃ) বললেন, "এই তীরেই বিদ্ধ হয়ে আমার পুত্র যুদ্ধময়দানে শহীদ হয়েছিল।"

এইটুকু শুনে সাহাবীর বুক হাহাকার করে উঠে। কিছুদিন আগেও তিনি কুরাইশদের হয়ে মুসলিমদের বিরুদ্ধে লড়তেন। তখনকার দিনে তিনি শত্রু হিসেবে যাকে হত্যা করেছিলেন, তাঁর পিতা এখন মুসলিম বিশ্বের সুপ্রিম লিডার। তাঁর মুখের কথাই এখন আইন।
কিন্তু খলিফা অত্যন্ত কোমল স্বরে বললেন, "সকল প্রশংসা আল্লাহর। তিনি আমাদের পুত্রকে করুণা করেছেন শহীদি মৃত্যু দিয়ে, এবং তোমাকে করুণা করেছেন মুসলিম বানিয়ে। তোমার প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেই।"

এবং সেই ঘটনা এখানেই শেষ হয়ে গেল।

দেখা যাচ্ছে, হয়তো সেই ভারতীয় মাওলানা এই ঘটনাটি পড়েছেন। তিনি জানেন সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখাটা কতটা জরুরি। তাঁর হুকুমে আসানসোলতো আসানসোল, ভারতজুড়েই জ্বালাও পোড়াও শুরু হতে পারতো। বাংলাদেশও সেই আঁচ থেকে বাঁচতে পারতো না। হয়তো তাঁর মাথায় তখন ছিল কুরআনের আয়াত, "বস্তুতঃ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হত্যার চেয়ে জঘন্য অপরাধ।"
আফসোস! আমাদের ওয়াজ করে বেড়ানো মাওলানাদের এসব মনে পড়েনা।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১১:১৬

নাঈম মুছা বলেছেন: সম্প্রতি ভারতের আসানসোলের ঘটনাটি শোনার পর চোখ দিয়ে দরদর করে আপনাতেই অশ্রু ঝরল। প্রকৃত ইসলামের দৃষ্টান্তগুলো আমাদের সামনে মাঝে মাঝে প্রদর্শিত হয়। এ ধরণের ঘটনাগুলো বেশি বেশি ঘটা উচিত। অনেক ভালো লিখেছেন। মুগ্ধ হলাম পড়ে।

২| ৩১ শে মার্চ, ২০১৮ ভোর ৪:৫৮

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: অথচ ইসলামের নামে শুধু দোষ খুঁজে বেড়ায় একদল লোক। আসানসোলের ঘটনা সবাইকে আরেকবার ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব বুঝিয়ে দিল...

৩| ৩১ শে মার্চ, ২০১৮ ভোর ৬:২৫

চাঁদগাজী বলেছেন:


সব মানুষ যখন বিপথে চলে যায়, তখন নতুন নবী আসেন!

৪| ৩১ শে মার্চ, ২০১৮ সকাল ৯:৫৯

ক্স বলেছেন: ইসলামের অভিধানে প্রতিশোধ বলে কোন শব্দ নেই - আছে বিচার। আর বিচার করার অধিকার কেবল আল্লাহ্‌র অথবা আল্লাহ্‌র আইন সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ জানে - এরকম হাকিমের। এর বাইরে কেউ যদি প্রতিশোধ নিতে চায়, তবে তো সে আল্লাহ্‌র ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করে বসল। ইসলামের ইতিহাসে প্রতিশোধ নেবার কোন যুদ্ধের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়না।

৫| ৩১ শে মার্চ, ২০১৮ দুপুর ২:৪৮

এ্যান্টনি ফিরিঙ্গী বলেছেন: চাঁদগাজী আঙ্কেল এখানেও ছাগলামী মার্কা কমেন্ট করলেন,,,,,, ।

৬| ০১ লা এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ৮:৫৯

শামছুল ইসলাম বলেছেন: আসানসোলের ঈমাম সাহেব ও তাঁর ছেলের শহীদ হওয়ার ঘটনাটা আমি গতকাল পড়েছি । আপনার মতো আমিও ভেবেছি, আমি হলে কী করতাম এই পরিস্থিতিতে? মন ছুঁয়ে গেছে লেখাটা ।
প্রিয়তে নিলাম ।

৭| ০২ রা এপ্রিল, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫৩

আলোর পথে বিডি বলেছেন: ইসলাম শান্তির ধর্ম। নিরাপত্তা, মানবতা ও কল্যাণের ধর্ম। পরস্পর কল্যাণ কামনাই এর মূলমন্ত্র। অশান্তি, সন্ত্রাসবাদ, অন্যকে কষ্ট দেয়া ইসলাম সমর্থন করে না |

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, ‘বস্তুত ফিতনা-ফাসাদ বা দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করা হত্যার চেয়েও কঠিন অপরাধ’ -(সুরা আল বাক্বারা ঃ ১৯১)। যা অমার্জনীয় অপরাধ। ইসলাম কখনই তা সমর্থন করেনা। কুরআনের ভাষ্যমতে- ‘যে কেউ প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ অথবা পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করা ছাড়া কাউকে হত্যা করে সে যেন সব মানুষকে হত্যা করে -(সুরা আল মায়িদা ঃ ৩২)।

সুন্দর লিখার জন্য ধন্যবাদ । জাজাক আল্লাহ খাইরান ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.