নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

"কী লাভ হইলো স্বাধীন হয়ে?"

০২ রা জুন, ২০১৮ রাত ২:২৮

দেশে কিছু একটা হলেই অনেককে শুনি হাহাকার তুলতে "স্বাধীন হয়ে কী লাভটা হলো? এরচেয়েতো পাকিস্তান আমল ভাল ছিল।"
যারা বলছেন তাদের বেশিরভাগই পাকিস্তান আমল দেখেননি বলেই আমার বিশ্বাস। এবং আমার এও বিশ্বাস যে পাকিস্তান আমলে এরা জন্মালে বলতো, "কী লাভ হইলো স্বাধীন হয়ে? এরচেয়েতো ব্রিটিশ আমলই ভাল ছিল।"
তো যা বলছিলাম, আমের পোকা কখনই বুঝেনা আমের স্বাদ কী। কোন স্বাধীন দেশে জন্মানোর বেনিফিট বুঝতে হলে অবশ্যই পরাধীন দেশগুলির দিকে তাকাতে হবে। তারপর নিজের সাথে কম্পেয়ার করে দেখতে হবে কে কতটুকু সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। হাদিসে আছে, কখনও মন খারাপ হলে নিজের চেয়ে নিচু শ্রেণীর মানুষদের দিকে তাকিও, তাহলেই বুঝতে পারবে তুমি কত সুখী। (নিজের ভাষায় লিখলাম।)
স্বাধীনতা পরমকরুনাময়ের একটি বিশেষ দান, অশেষ রহমত, একে অস্বীকার করা আল্লাহর করুনাকে অস্বীকার করার সামিল।
ইরাকের কথাই ধরা যাক। আমাদের স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া প্রথম আরব দেশ ছিল ইরাক। সাদ্দামের শাসনামলে অনেকেই তাঁর বিরোধিতা করলেও একটি বিষয়ে সবাই একমত হবেন যে তাঁর আমলে ইরাকে অন্তত শান্তি ছিল। ডেমোক্রেসির মূলা ঝুলিয়ে অ্যামেরিকা গিয়ে সেই দেশটিকে ধ্বংস করার পর থেকে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন সভ্যতার দেশটি আজকে একটি নরককুন্ড ছাড়া কিছুই নয়। আমাদের লোকাল মসজিদ থেকে একটি দল গিয়েছিল ইরাকের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে। এসে যা বর্ননা করলেন তা ভয়াবহ।
"আমি দেখলাম দুইটি এতিম শিশু মুরগি যেমন খাবার খুটে খায়, তেমনি আস্তাকুঁড় থেকে খাবার খুটে খুটে খাচ্ছে। তাও কেমন খাবার? পাউরুটির সাদা অংশ খাবার পরে খয়েরি যে অংশ অনেকেই ফেলে দেন, কিংবা আপেল খাবার পর বিচির আশেপাশের যে অংশটা আমরা ফেলে দেই সেসব। আর হাড্ডির সাথে সামান্য মাংস পেলেতো কথাই নাই, গ্র্যান্ড ডিনার! বাচ্চাগুলোর শরীর ছিল ধূলিধূসরিত, গায়ের কাপড় শতচ্ছিন্ন, তারপরেও তাঁদের চেহারায় খুশি, কারন তাঁরা আজ খাবার পাচ্ছে। মাঝেমাঝে এমনও হয় যে আস্ত ডাস্টবিন ঘাটাঘাটি করেও খাবার পায় না।"
আমার তখন নিজের আড়াই বছর বয়সী বাচ্চার কথা মনে হচ্ছিল। খাবার পছন্দ না করলে ছুড়ে ফেলে। কান্নাকাটি করে। ধমক দিয়ে সেই ছুড়ে ফেলা খাবার তুলে খাওয়াই। এখন খাবার পাচ্ছে বলে এই নিশ্চয়তা তাঁকে কেউ দেয়নি যে ভবিষ্যতেও পাবে। যতদিন নেয়ামত আছে, ততদিন সেটার জন্য শুকরিয়া আদায় করা উচিৎ।
"একটা হাসপাতালে গেলাম। দেখি শিশুওয়ার্ডে একজন ডাক্তারের কাপড় ধরে দুইজন মহিলা টানছেন, এবং চিৎকার করছেন। আমরা ঘটনা কী জিজ্ঞেস করতে ডাক্তার বললেন, "হাসপাতালে ইনকিউবেটর আছে একটি, এবং আমাদের হাসপাতালে এখন প্রিম্যাচিউরড বেবি আছে দুইটি। দুইজনেরই জীবন সঙ্কটাপন্ন, এখন আমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কার বাচ্চাকে আমি এই ইনকিউবিটরে রাখবো, এবং কার বাচ্চাকে আমি মরতে দিব। এই দুই মহিলা সেই দুই বাচ্চার মা।""
কথাটি যখন ঈমাম বলছিলেন পুরো মসজিদ ফুঁপিয়ে উঠলো। ডাক্তারের অবস্থানে নিজেকে কল্পনা করুন! আর মায়েদের কথাতো বাদই দিলাম। পৃথিবীর কোন মাকেই যেন আল্লাহ এমন কঠিন পরীক্ষায় না ফেলেন। আমাদের ভাগ্য কত ভাল যে আমাদের অনেক হাসপাতালের ইনকিউবিটর শূন্য পরে থাকে।
ফিলিস্তিনে এতিম শিশুরা এখন ওয়েটিং লিস্টে থাকে। বিদেশ থেকে সাহায্য আসে যতটুকু, তার ভিত্তিতে আগে লিস্টেড এতিমদের সাহায্য করার পরে তো গিয়ে ওয়েটিং লিস্ট ধরা হয়। এরমাঝে না খেয়ে থাকলে থাকো, মরে গেলে মরে যাও।
সিরিয়ানদেরতো অবস্থা আরও করুন। সাগর সাঁতরে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজ করেন তাঁরা। সাগরের ঢেউ বাবার হাত থেকে সন্তানকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়, পরদিন লাশ হিসেবে ফেরত দিয়ে যায়। ওদেরকে যদি কেউ অপশন দেয়, সারাজীবন অর্ধপেটে থাকবে, তবু তোমাদের স্বাধীন একটি ভূখন্ড দেয়া হবে, তাঁরা সেই সুযোগটা হাসিমুখে লুফে নিবে। কিছুদিন আগে ক্যানাডা প্রবাসীহ বাঙালি কিছু কার্টুনকে সিরিয়ান রিফিউজিদের নিয়ে কটাক্ষ করতে শুনেছিলাম। মজার বিষয় হচ্ছে, এই বাঙালীগুলি কিন্তু নিজের দেশে ফেরত যেতে আগ্রহী নয়, উল্টো সিরিয়ান রিফিউজিগণ নিজের দেশ ছেড়ে বিদেশের মাটিতে থাকতে আগ্রহী নয়।
যাই হোক, আমরা এখন ভয়াবহ অসভ্য সমাজে বাস করছি। এই কথা যতদ্রুত স্বীকার করে নিবেন, নিজের জন্যই তত ভাল হবে।
জ্বি, এই কথা সত্য যে উপরে যেসব সমস্যাগুলোর কথা বললাম, ক্ষেত্র বিশেষে আমাদের দেশেও এমনটা ঘটছে, কিন্তু স্বাধীন দেশ হওয়ায় ইরাক, ফিলিস্তিন, বা সিরিয়ার মতন মহামারী আকার ধারণ করেনি। ষোলো কোটির মধ্যে এক দুইলাখ মানুষকে যদি এই সব পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয় সেটাও অনেক ভাল যেখানে পরাধীন দেশের ৯০-৯৫% মানুষকে এমন শোষণের শিকার হতে হয়। আল্লাহ আমাদের দেশকে দ্রুত এমন সুস্থ করে তুলুন যাতে একটি মানুষকেও খালি পেটে ঘুমাতে যেতে না হয়।
রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পে গিয়ে দেখুন কী অবস্থা। ওরা কিছুতেই দেশে ফেরত যেতে রাজি নয়। কেন সেটা কী একবারও জানতে আগ্রহ হয়? কারন ওদের চোখের সামনে ওদের মায়েদের ধর্ষণ করেছে, বাবাদের মেরেছে, ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। কোন ভরসায় তারা ফেরত যাবে? সাপকে কী কখনও বিশ্বাস করতে আছে? আন্তর্জাতিক আশ্বাস নয়, মিয়ানমারের উপর বলপ্রয়োগ করে বিষদাঁত ভেঙে না দেয়া পর্যন্ত তাদের সেই ভরসা আপনি দিতে পারবেন না। অ্যামেরিকা এবং এর মিত্রশক্তি কড়া ধমক দিলেই মিয়ানমারের প্যান্ট ভিজে যাবার কথা। সেটা কী সম্ভব হচ্ছে?
জ্বি, আপনার ভাগ্য ভাল আপনি মায়ের পেট থেকে স্বাধীন হয়ে জন্মে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রেই বড় হয়েছেন। পৃথিবীর লাখ লাখ কোটি কোটি মানুষের সেই সৌভাগ্য হচ্ছেনা।
"আজ যদি ১৯৭১ না থাকতো তাইলে আমরাও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির চ্যাম্পিয়ন হতাম।" - জাতীয় আল্লাদি কথাবার্তা শুনলে তাই রাগই হয়। এদের জোর করে সিরিয়া, ইরাক, ফিলিস্তিন, আফগানিস্তানে পাঠিয়ে দিতে ইচ্ছে করে তখন। তখন গিয়ে বলুক চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা কতখানি গুরুত্বপূর্ণ।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা জুন, ২০১৮ রাত ২:৪৪

ব্লগ মাস্টার বলেছেন: ঠিক বলছেন ।আমারো মাঝে মাঝে কিছু আবালের গলায় জুতার মালা পড়াইতে মন চায়।বেকুবগুলার সঙ্গে কি চোখ কান নেই নাকি

০২ রা জুন, ২০১৮ ভোর ৪:৪৩

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: :(

২| ০২ রা জুন, ২০১৮ ভোর ৪:৫৬

স্বামী বিশুদ্ধানন্দ বলেছেন: বদমাশ পাকিদের কারণে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে বিদেশী দূতাবাস না থাকায় বাঙালিরা তেমন প্রবাসে যেতে পারতো না | তখন পশ্চিম পাকিস্তানিরা সেই সুযোগ নিয়ে নানান দেশে গিয়ে দ্রুত বংশ বিস্তার করে যা এখন অনেক দেশেই দৃশ্যমান | একমাত্র ব্রিটিশ প্রদত্ত ভাউচারের কল্যানে কিছু সংখ্যক সিলেটবাসী তখন প্রবাসী হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করে | আজ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রায় প্রত্যেকটি জেলার লোক লালসবুজ পাসপোর্ট নিয়ে নানান দেশে গমন এবং প্রবাসী হতে পারছে | বাংলার আনাচে কানাচের অসংখ্য পরিবারের যুবক/যুবতীরা প্রবাস থেকে পাঠানো রেমিটেন্স সচল রাখছে দেশের অর্থনীতির চাকা | স্বাধীন না হলে এই সাফল্যটুকু দেখার সৌভাগ্য আমাদের কারোই হতো না |

০৮ ই জুন, ২০১৮ রাত ৯:৩৭

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: খুবই ভাল পয়েন্ট বলেছেন।

৩| ০২ রা জুন, ২০১৮ সকাল ৯:০৯

রাজীব নুর বলেছেন: কিছুটা সহমত আপনার সাথে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.