নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
আমরা যখন স্কুলে পড়তাম, তখন আমাদের সামাজিক কর্মকান্ড বলতে দৌড় ছিল বড় জোর বন্যার্তদের জন্য খাদ্য বিতরণ, এতিম খানায় শিশুদের জন্য একবেলা সুখাদ্যের (তেহারি/বিরিয়ানি বা মাংস-ভাত) ব্যবস্থা করা। কিংবা কোরবানির ঈদে মাংস বিতরণ এবং শবে বরাতে দুস্থ গরিবদের পয়সা বিলানো।
ও হ্যা, একবার ইত্যাদিতে অনিক নামের একটি শিশুর চিকিৎসার জন্য সাহায্য চাওয়া হয়েছিল। অতিরিক্ত কিউট সেই শিশুটার কি যেন এক জটিল রোগ হয়েছিল, চিকিৎসার জন্য সেই যুগেই এক কোটি টাকার মতন লাগতো। গরিব বাবা চোখে যখন অন্ধকার দেখছেন, তখন সেই সরল শিশু তাঁর সরল বুদ্ধিতে সরল একটি হিসেব দিয়ে দিল।
"বাবা, বাংলাদেশে এক কোটি মানুষের সবাই যদি মাত্র এক টাকা করে দেয় - তাহলেইতো এক কোটি টাকা উঠে যাবে। তুমি চিন্তা করছো কেন?"
হানিফ সংকেতের মাধ্যমে সেই হিসেবটা মাত্র এক রাতেই বাংলার ঘরে ঘরে পৌঁছে গিয়েছিল।
পুরো বাংলাদেশ থেকে তখন সব স্কুল কলেজের বাচ্চারা এগিয়ে এসেছিল। সবাই মিলে কোটি টাকা তুলে দিয়েছিল। কিন্তু অনিককে বাঁচানো সম্ভব হয় নি। খুব খারাপ লেগেছিল সেদিন তাঁর মৃত্যু সংবাদ পড়ে। চোখে পানি এসেছিল কিনা মনে নেই। আসতেই পারে, মন তখনও নরম ছিল।
আমরা যখন এসএসসির প্রস্তুতি নিচ্ছি, সেই সময়ে প্রথম আলো এসিড সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জোরালো সামাজিক প্রতিরোধ শুরু করেছিল। তহবিল সংগ্রহ করছিল এসিড দগ্ধাদের সাহায্যার্থে। এখনকার দিনে প্রতিদিন যেমন ধর্ষণ শেষে খুনের খবর পাওয়া যায়, সেই যুগে প্রতিদিন এইরকম এসিড সন্ত্রাসের খবর পাওয়া যেত। প্রেমে ব্যর্থ হলেই আর কোন কথা নাই - এসিড ঢেলে মেয়ের মুখ পুড়িয়ে দিত কোন প্রেমিক(!)। মেয়েদের অভিভাবদের মনের আতঙ্কের কথা কল্পনা করুন একবার! প্রথমআলোর উদ্যোগ এবং এইভাবে সমাজের সর্বস্তরের লোকজনের জোরালো দাবিতে বাংলাদেশে এসিড সন্ত্রাসে কঠোর আইন পাশ হলো।
তা তখন দেখতাম প্রায়ই এসিড দগ্ধাদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে গরু-বাছুর কিংবা বাড়ি নির্মাণ বা এইরকম স্থায়ী কিছু। ব্যাপারটা আমার খুব পছন্দ হয়েছিল। আমি তখন নিজের পরিচিত মহলের কাছে হাত পাতলাম এসিড দগ্ধাদের সাহায্যার্থে। সবাই তখন স্কুলের ছাত্রছাত্রী। কারোর ইনকাম বলতে রিক্সাভাড়া বাঁচিয়ে যদি কিছু টাকা জোগাড় করা যায়! এবং সেটা করতে গেলেও বহুপথ হেঁটে গিয়ে তো আয় করতে হতো।
তাই সেই সময়ে কেউ দশ টাকা দিলে মনে হতো যেন লাখ টাকা দান করে ফেলেছে। বিরাট ব্যাপার ছিল।
এই এসিড দগ্ধাদের জন্য তহবিল তেমন সংগ্রহ করতে পারিনি, মাত্র সাড়ে তিনশো টাকার মতন উঠেছিল মনে আছে।
কিন্তু সেই প্রথম আমার বাড়িতে অজ্ঞাত নম্বর থেকে আমার জন্য মাঝে মাঝে ফোন আসতে শুরু করেছিল। তরুণী কণ্ঠ আমার সাথে কিছুক্ষন কথা বলতে আগ্রহী। তাঁর আমাকে নাকি ভাল লেগেছে।
আমাদের সব ইনকামিং কল আম্মুই রিসিভ করতো। বিপরীত লিঙ্গের কেউ আপুকে চাইলে তাকে লম্বা জেরার মধ্য দিয়ে যেতে হতো। আর আমাকে যখন কেউ চাইতো আম্মু উল্টো হাসিমুখে বলতো, "তোর গার্লফ্রেন্ড ফোন করেছে।"
আমি লজ্জায় শেষ হয়ে যেতাম। এবং আম্মু সেটা দেখেই মজা পেত।
মায়েরা অনেক বায়াস্ড হন!
অবশ্য সেই মেয়েদের কারোর সাথেই আমি প্রেম করিনি। পরম হরমোনাল রাশের দিনগুলোতেও অত সহজে প্রেমে পরা ছেলে ছিলাম না। আমার মাথা ভিন্নভাবে হিসেব করে তবেই প্রেমে পড়তো। সেটা নিয়ে পরে একদিন গল্প করা যাবে।
তো যাই হোক - আমরা এই যুগের ছেলেমেয়েদের প্রায়ই হাসিতামাশা করে উড়িয়ে দেই। "ডিজুস জেনারেশন" "আই অ্যাম জিপিএ ফাইভ জেনারেশন" ইত্যাদি ডেকে হাসি তামাশা করি। অনেকেই এই যুগের ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ নিয়ে মহা চিন্তিত। ওদের এই ঐ সেই আকাম কুকামের ছবি তুলে নিয়ে কেউ কেউ বলি, কোথায় যাচ্ছে আমাদের দেশ? কাউকেই দ্বিমত পোষণ করতে দেখিনা তখন।
কিন্তু এই যে গত কয়েকদিন ধরে ছাত্রছাত্রীরা গোটা দেশটাকে বদলে দিচ্ছে, এই কাজের পর এদের নিয়ে আর কারোর কোন অভিযোগ থাকবে? সড়ক দুর্ঘটনাতো আমাদের সময়েও হতো। স্টুডেন্টতো আমাদের সময়েও মরতো। আমরা কী অশ্বডিম্বখানা প্রসব করেছি তখন? এখনই বা ফেসবুকে লেখালেখি বাদে কি করে দেখাচ্ছি?
এরা রাস্তায় নেমে করে দেখিয়েছে। সাতচল্লিশ বছরেও দেশে যা হয়নি, এরা মাত্র কয়েকদিনেই তা করে দেখালো। ইমার্জেন্সি লেন দিয়ে এম্বুলেন্স যাওয়া, লাইসেন্সবিহীন ড্রাইভারের হাত থেকে চাবি কেড়ে নেয়া, সুশৃঙ্খলভাবে লেন মেনে চলে গাড়ি চালানো, রাস্তাঘাট পরিষ্কার করা, রাস্তার গর্ত নির্মাণ আরও কত কি!
মনে পরে গেল আমাদের এক আত্মীয় হার্ট এটাক করে এম্বুলেন্সে শুয়ে শুয়েই মারা গিয়েছিলেন। জ্যামের রাস্তায় এম্বুলেন্সকে কেউ সাইড দিচ্ছিল না। এই আন্দোলন যদি তখন করতাম তাহলে আমার সেই আত্মীয়ের তিনটি বাচ্চা সেই অল্প বয়সে এতিম হতো না।
মনে পরে গেল ড্রাইভারের গাফিলতিতে মীরসরাইয়ে ট্রাক দুর্ঘটনায় স্কুল পড়ুয়া অর্ধশতাধিক ছাত্রছাত্রী মারা গিয়েছিল। আমরা যদি তখন এই আন্দোলন করতাম, তাহলে দুই দুইটা গ্রামের এতগুলো পরিবারের পরবর্তী জেনারেশন নিঃশেষ হয়ে যেত না।
এই যে রাজীব এবং মিম মারা গেল, কিংবা হানিফ পরিবহনের যাত্রী ছেলেটিকে সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হলো - সেসবের কিছুই ঘটতো না যদি আমরা সেই সময়ে এই আন্দোলনটা শুরু করতাম।
ইংলিশে একটি কথা আছে, it's better late than never, শুরুটা যে হয়েছে - এইতো যথেষ্ট। আরও কতজনের প্রাণ রক্ষা করলো এই আন্দোলন তার হিসেব করা সম্ভব নয়।
এই আন্দোলনের কিছু কিছু দৃশ্যেতো চোখে পানি এসে যায়। আহত রিক্সাওয়ালাকে সিটে বসিয়ে ছাত্রের রিকশা টেনে চলা এবং তাঁদের জন্য রাস্তা পরিষ্কার করে দেয়া।
এম্বুলেন্সের সাইরেন শুনে রাস্তায় অবস্থান নেয়া ছেলেপিলের অতি দ্রুত জায়গা বের করে দেয়া।
কলিজায় পাথর রেখে নিজের ছেলেমেয়েদের প্রশাসন, পুলিশ, পুরো সিস্টেমের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে রাস্তায় নামিয়ে দেয়া।
কোন এক ছাত্রের মা গামলা ভর্তি ভাত এনে নিজের হাত দিয়ে লাইন ধরে দাঁড়ানো তাঁর সবকটা ছেলেদের মুখে তুলে খাইয়ে দেয়া। কিংবা বৃষ্টিতে মাথায় ছাতা ধরে অভিভাবকদের বুঝিয়ে দেয়া "এগিয়ে যা তোরা, আমরাতো ছাদ হয়ে মাথার উপরে আছিই।"
আহা! বাংলাদেশের প্রতিটা সংগ্রামে এইভাবে রুমি - জাহানারা ইমামরা ফিরে আসেন।
এইসবের একটিও কী আমরা করতে পেরেছিলাম?
তাহলে মানুষ হিসেবে কারা এগিয়ে গেল আমাদের চেয়ে? কারা সফল অভিযাত্রীর দল? আমাদের কী যোগ্যতা আছে ওদের নিয়ে হাসিতামাশা করার?
আল্লাহ বলেছেন কোন শুভ কাজ কখনই কারোর জন্য থেমে থাকবে না। এক দল সেটা করতে অস্বীকৃতি জানালে অন্য দল এসে সেটা সম্পন্ন করবেই। যে করলো না তাদের আল্টিমেট লস ছাড়া কারোর কিচ্ছু যাবে আসবে না।
রাষ্ট্র নির্মাণের কাজ চলছে। বাংলাদেশকে একদিন সংস্কারের মধ্য দিয়ে যেতেই হতো। আফসোস। এই নির্মাণ কাজটা আমরা শুরু করতে পারিনি। আল্টিমেট লুজার হলাম আমরাই!
এখন তাঁদের পাশে থেকে প্রায়শ্চিত্তের চেষ্টা করছি। বিবেকের Damage control যাকে বলে আর কি। যা ক্ষতি হবার হয়ে গেছে, আর যেন না হয় - এই আর কি।
শুনলাম পরিবহন শ্রমিকেরা গোস্যা করছেন। তেনারা রাস্তায় গাড়ি নামাইতে আগ্রহী নহেন। সারা বাংলায় বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে।
একটা ব্যাপার মাথায় রাখবেন, ওটাই তাদের ব্রেড অ্যান্ড বাটার। রাস্তায় বাস না চললে তাদেরও আয় বন্ধ হয়ে যাবে। পেটে টান পড়লে কতদিন গোস্যা ধরে রাখতে পারেন সেইটা দেখা যাবে। এর মধ্যে যদি কোনভাবে অন্য কোন পরিবহন ব্যবস্থা মার্কেটে চলে আসতে পারে - তাহলে গোস্যা ভেঙে রাস্তায়তো গাড়ি নামাবেই - সাথে তাদের বাসে চড়ানোর জন্য লোকজনের পায়েও তারা ধরবে।
মনে নাই উবার-পাঠাও আসার পরে সিএনজি ট্যাক্সিওয়ালারা এইরকম আল্লাদি করেছিল? জনগণ যদি পাশে না থাকে, কারোর বাপের সাধ্য নেই কিছু করার।
আমাদের নবী (সঃ) বলে গিয়েছেন, প্রতিটা যুগেই একটি করে ফেরাউন থাকে, এবং সেই ফেরাউনের জন্য থাকে একটি করে মুসা।
আমাদের যুগে ফেরাউনের অভাব নেই। বাসওয়ালারাও যেভাবে যখন তখন আমাদের বাচ্চাদের-বাবাদের-মায়েদের খুন করে আসছিল, ফেরাউনের সাথে এদের তুলনা করাই যায়। এদের বিরুদ্ধে মুসা হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম। এদের পাশে না দাঁড়ালেতো নরকেও ঠাঁই মিলবে না।
২| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৮ ভোর ৪:৫২
চাঙ্কু বলেছেন: তাদের নিয়ে তামাশা করার যোগ্যতা আমাদের নাই।
৩| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১:২০
রাজীব নুর বলেছেন: মানুষের পিঠ এখন দেয়ালে ঠেকে গেছে। সড়ক সংস্কার যে আপামর মানুষের প্রাণের দাবি, সেটা প্রধানমন্ত্রীকে কেউ বুঝিয়ে বলুক।’
©somewhere in net ltd.
১| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৮ ভোর ৪:২৭
রঞ্জন রয় বলেছেন:
তারা সাহসী সন্তান। না মানতে পারব না। তাদের পাশে দাঁড়ানো উচিৎ প্রবীণদের।