নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

হালাল হারাম ইত্যাদি পুরো ব্যাপারটাই নিয়্যতের উপর নির্ভরশীল।

২৩ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ৩:০৭

অ্যামেরিকায় দেশি স্টাইলে কুরবানী দেয়াটা অনেক ঝামেলার।
প্রথম কথা, আপনি নিজের বাড়ির সামনে, পিছনে কোথাওই গরু/ছাগল জবাই দিতে পারবেন না। আপনাকে দেড় দুই ঘন্টা ড্রাইভ করে দূরের গ্রামাঞ্চলে কোন ranch এ গিয়ে গরু বাছাই করতে হবে। এমন কোন নির্দিষ্ট ranch হতে হবে যেখানে জবাই এবং কাটাকাটির সুব্যবস্থা আছে। নাহলে নিজেকেই কাটাকুটি করতে হবে। একটি পূর্ণবয়স্ক টেক্সান সাইজ আস্ত গরু মেশিনের সাহায্য ছাড়া কাটাকুটি করা অনেক সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। অনেক পরিশ্রমেরও বটে। কারন এদের এক রানে যত মাংস ধরে, দেশে আস্ত বলদের শরীরেও এত মাংস থাকেনা। আস্ত গরু জবাই দেয়া চার-পাঁচজনের ছোটখাটো পরিবারের পক্ষে তাই একটু বেশিই হয়ে যায়। এত মাংস খাবার লোক কোই?
তো দেখা যায় সব ranch এ মাংস কাটার মেশিন নাই। কাজেই যে এক দুইটা ranch এ এই ব্যবস্থা আছে, সেখানে প্রচুর ভিড় হয়। ঈদের আগের দিন গিয়ে গরু বাছাই করতে হয়। গরু পছন্দ হলে সেটাকে মেশিনে তুলে ওজন করা হয়, এবং সেই অনুযায়ী দাম করা হয়। কোন ঠকাঠকি নাই।
এরপর গরু কেনার পরে আপনাকে একটি টোকেন দিবে। সেই টোকেন নিয়ে আপনি সিরিয়ালে দাঁড়াবেন। অধিকাংশ সিরিয়াল ঈদের দিনের আগের রাত থেকে শুরু হয়। যারা লাইনে দাঁড়ান, তাঁরা অবশ্যই ঈদের জামাত মিস করেন। কারন জামাত পড়ে এত লম্বা ড্রাইভ করে লাইনে দাঁড়ালে সেই দিনের মধ্যে আপনার মাংস পাবার সম্ভাবনা শূন্য।
সকাল থেকে শুরু হয় গরু কাটাকাটি। পুরো ব্যাপারটা খুবই সুশৃঙ্খল। আপনার গরু আপনার সামনেই কাটা হবে। তারপর মেশিনে ঝুলিয়ে চামড়া ছাড়ানোর স্থানে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখান থেকে সেটা ঝুলতে ঝুলতে যাবে মাংস কাটার স্থানে। বিদ্যুৎ গতিতে মাংস কাটা হবে। আপনি বালতিতে মাংস ভরতে ভরতে দেখবেন সামনে মাংসের স্তুপ জমে গেছে। তারপর আপনি গাড়িতে ভরে বাড়িতে ফেরত আসবেন। জবাই থেকে গাড়িতে মাংস তোলা পর্যন্ত সময় লাগে বড়জোর ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট, কিন্তু সিরিয়ালেই পুরো দিন বরবাদ হয়ে যায়।
পুরো স্থানটিতে চমৎকার ড্রেনেজ সিস্টেম থাকে। পশুর রক্ত পানির সাহায্যে দ্রুত ধুয়ে ফেলা হয়। আর পশুর বর্জ্য নির্দিষ্টস্থানে ফেলা হয়। পুরো ব্যাপারটা পরিদর্শনের জন্য স্টেট নির্দিষ্ট পরিদর্শক রাখেন। তাঁরা কোথাও কোন অনিয়ম দেখলেই ranch এর মালিককে মোটা অংকের জরিমানা ধরেন। এছাড়া গাড়ির পার্কিং থেকে শুরু করে লোকের (কাস্টমারদের) শৃঙ্খলা রক্ষা পর্যন্ত পুরো দায়িত্বে থাকে পুলিশ।
যাই হোক - এত ঝামেলা থেকে আপনাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসে এখানকার হালাল গ্রোসারি স্টোরগুলো।
এরা আপনার কাছ থেকে বুকিং নিয়ে গরু জবাই দিবে, আপনাকে কেবল নির্দিষ্ট দিনে এসে তাঁদের কাছ থেকে মাংস বুঝে নিতে হবে। অবশ্যই এদের কাছ থেকে একটু বেশি দামে মাংসের ভাগ কিনতে হবে। ব্যাপারটা অন্যান্য যেকোন সাধারণ দিনে মাংস কেনার ঘটনার মতই মনে হবে। নিজের কোরবানির পশু দেখার ভাগ্য আপনার হবেনা। কিন্তু ঐ যে উপরে যে ঝামেলার কথা বললাম, সেটা থেকেও আপনি বেঁচে যাবেন।
আরেকটা সহজ উপায় হচ্ছে, ছাগল/ভেড়া কুরবানী দেয়া। ছাগলের খামার শহরের কাছাকাছি অঞ্চলেই হয়ে থাকে। কাটাকুটি থেকে শুরু করে গাড়িতে মাংস ভরতে খুবই কম সময় লাগে। এবং তারচেয়ে বড় কথা, সিরিয়ালও খুব একটা বড় হয় না। ছাগলের চাহিদা গরুর তুলনায় অতি নগন্য। এক ভাগ গরুতে যেখানে ৩০-৬০ কেজির মতন মাংস পাওয়া যায় সেখানে একটি ছাগলে সর্বোচ্চ মাংস আসে ১০ থেকে ১৫ কেজি। খরচ একই।
দেশের মানুষ শুনলে অবাক হবেন যে এইদেশে ভেড়ার চাহিদা সাংঘাতিক। লোকে ছাগল না কিনে ভেড়া কিনতে ভিড় করে। ভেড়া যত মোটা, তার চাহিদাও তত বেশি। এক আফগান খুব অবাক হয়েছিল শুনে যে আমাদের দেশে বিফের চাহিদা সর্বোচ্চ বলে। সে বলে, "তোমরা বীফ খাও কিভাবে? টেস্টি লাগে?"
আমি পাল্টা প্রশ্ন করলাম, "টেস্টের হিসেব ধরলে তোমরা কোনটাকে কোনটার আগে রাখবে?"
ব্যাটা নির্দ্বিধায় বলল, "প্রথমেই শিপ। তারপরে গোট। তারপরে ক্যামেল। এবং তারপরে বীফ।"
কথাটা কেবল সেই আফগান ভদ্রলোকের একার না। মিডল ইস্ট, ইউরোপ বা আরও অন্যান্য অঞ্চলেও ল্যাম্বের চাহিদা সাংঘাতিক। যারা বিদেশে আছেন, মেডিটেরেনিয়ান রেস্টুরেন্টে "ল্যাম্ব শ্যাকের" টেস্ট সম্পর্কে পজিটিভ রিভিউই দিবে।
বিদেশে ল্যাম্বের এত জনপ্রিয়তা এবং আমাদের দেশে এত অজনপ্রিয়তার কারনটা হলো আমরা ঠিকভাবে ল্যাম্ব রাঁধতে পারিনা। যেমনটা ওরা বিফ রান্না করতে পারেনা। ওদের সবচেয়ে জনপ্রিয় বীফ আইটেম হচ্ছে স্টেক, অথবা ব্রিসকেট। এদের দৌড় গরুর মাংসের কিমা দিয়ে প্যাটি বানিয়ে বার্গার খাওয়া পর্যন্ত। মিডল ইস্টার্ন বীফ শীষ কাবাব অতি জঘন্য বস্তু। বিশেষ করে তাঁদের কাছে যারা আমাদের দেশের বীফ শিক কাবাব খেয়েছেন। আমাদের কালাভুনা, বা সাধারণ ভুনা মাংস খেলেই ওদের চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যেত। কাবাবের আইটেমতো বাদই দিলাম।
দেশে দেখলাম এইবার টেক্সান ব্রামিন বুল বিক্রি হয়েছে ২৮ লাখ টাকায়। এই নিয়ে ফেসবুকে নিন্দার ঝড় এবং ইত্যাদি ইত্যাদি অনেক শুনছি।
এখন আসি এই টপিকে কিছু কথা ডিটেইলে বলতে। একটু মনোযোগ এবং ধৈর্য্য দিবেন প্লিজ।
আপনার উপর কুরবানী ফরজ হলে যেকোন হালাল গবাদি পশু কোরবান করলেই কিন্তু আপনার দায়িত্ব পালন হয়ে যাবে। আপনি আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী দিবেন, ইচ্ছা করলে ছাগল/ভেড়া দিতে পারেন, ইচ্ছে করলে গরু, উট, মহিষ ইত্যাদি।
আপনার সামর্থ্য নেই গরু/মহিষ জবাই দেয়ার, তাহলে ছাগল দিন। যদি ছাগল দিতে না পারেন, তাহলে ভেড়া দিন। লেবুর রস দিয়ে ঘষে বা ভিনেগারে চুবিয়ে রেখে ভেড়ার মাংস ধুলে গন্ধ চলে যায়। ভাল রেসিপির জন্য ইউটিউব দেখতে পারেন। আর যদি ভেড়া দেয়ারও সামর্থ্য না থাকে, তাহলে আল্লার কাছে দোয়া করুন যাতে আগামীবার আপনাকে সামর্থ্য দান করেন একটি আস্ত গরু কোরবান দেয়ার। আল্লাহর কাছে চাইলে কখনও ছোটখাটো জিনিস চাইবেন না। অবশ্যই বড় কিছুই চাইবেন।
আপনার স্ত্রীর বা আপনার সন্তানের মুখ ছোট হয়ে যাবে বলে আপনি দুর্নীতি করে টাকা কামিয়ে পশু কোরবান দিলে আপনার ইহকাল পরকাল সব কালই নষ্ট হয়ে যাবে। খবরদার! এই কাজটি করবেন না। পশু কোরবান আল্লাহর উদ্দেশ্যে, কাজেই আল্লাহকে খুশি করাটাই আপনার লক্ষ্য হওয়া উচিৎ। আর কারোর নয়। বৌকে বুঝান, বাচ্চাকেও বুঝান। ভাল মানুষ হলে ওরা অবশ্যই বুঝবে।
আপনি কোরবানি না দিয়েও তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারবেন লাখ টাকার পশু কোরবান করেও অনেকে যা পারবে না।
শুনেছি দেশের কোন কোন অঞ্চলে নাকি শ্বশুর বাড়ির তরফ থেকে কোরবানির পশু উপহার পাওয়ার রেওয়াজ চলে আসছে বহু বছর ধরে। এই লেখার কোন পাঠক যদি এই কাজ করে থাকেন, তাহলে লজ্জায় নিজের মুখে থুথু ছিটান ভাই। নিজেকে "পুরুষ" না বলে এখন থেকে কাপুরুষ ডাকা শুরু করুন। আপনার উপর কুরবানী ফরজ করেছেন আল্লাহ। আপনার শ্বশুরের দায়িত্ব নয় আপনার হয়ে সেই দায়িত্ব পালন করবেন। কারোর কাছ থেকে খয়রাত নিয়ে ব্যাটাগিরি ফলাতে গিয়ে নিজের পুরুষত্বই বিসর্জন দিয়ে বসছেন আপনি। অন্যের টাকায় কেনা পশু কোরবানি দিলে সেটা জায়েজ হয়না। আপনি এতদিন মহা পাপ কামিয়ে এসেছেন। এখন কাফফারার ব্যবস্থা করেন। সামর্থ্যে না থাকলে বুক ফুলিয়ে বলুন আমি এইবার কুরবানী দিতে পারছি না কারন আমার টাকা নেই। তবুও আল্লাহর শোকর, তিনি আমাকে হারাম টাকা কামানো থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ!
এতে মন ছোট করার কিছুই নেই। বরং গর্ব করুন।
তো যা বলছিলাম, আপনার যদি সামর্থ্য থাকে ২৮ লাখ টাকায় গরু কেনার, তাহলে অবশ্যই আপনি এত দামে গরু কিনতে পারেন। আসলেই কোন সমস্যা নাই। একটি কেন, একশোটা গরু কিনতে পারবেন। সাথে উট, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা, মহিষ যা খুশি, যত খুশি কিনতে পারবেন। আমাদের নবীজিই (সঃ) একবার একশো উট কোরবান করেছিলেন। সমস্ত মাংস উম্মাহর জন্য বিলিয়ে দিয়েছিলেন।
কেউ বলবেন, কী নৃশংস! কিন্তু লক্ষাধিক মানুষের খাবারের জন্য কতটা উটের প্রয়োজন হয় একটু ভেবে দেখুন। রুটি, ফলমূল এবং মাংস ছাড়া তখনকার আরবদের আর কি খাবার ছিল একটু বলুন শুনি।
যাই হোক, হালাল কোরবানির কন্ডিশন দুইটাই, যে টাকায় আপনি প্রাণীগুলো কিনছেন সেটা অবশ্যই হালাল টাকায় হতে হবে। এবং অবশ্যই পশুগুলো আল্লাহর উদ্দেশ্যেই কুরবানীর নিয়্যতে কিনতে হবে। লোক দেখানোর নিয়্যতে যদি কিনে থাকেন, তাহলে আপনার এত টাকা পানিতে যাবে। সেটার কোনই মূল্য নেই আল্লাহর কাছে।
কেউ এত দাম দিয়ে এতগুলো পশু কিনলেই যে দুর্নীতিবাজ, তাঁর কোরবানি কবুল হবেনা ইত্যাদি ট্যাগ দিয়ে দেয়া উচিৎ না। কারোর অন্তরের খবর আমরা জানিনা। কে কিভাবে টাকা পয়সা রোজগার করেন, সেটাও না জেনে নেগেটিভ মন্তব্য দেয়া ঠিক না। এইটা আল্লাহর সিদ্ধান্ত তিনি কার কুরবানী কবুল করবেন, কারটা নয়। আমরা যেহেতু নিজেদেরটা নিয়েই শিওর না, কাজেই বিচারকের মতন মন্তব্য করার অধিকার আমাদের নেই।
হ্যা, কেউ যদি শো অফের উদ্দেশ্যে কোরবানির পশুকে ডিসপ্লেতে রেখে দেন, তাহলে অবশ্যই কাজটি অন্যায়। ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে যেহেতু এই ডিসপ্লের উদ্দেশ্য আমরা জানিনা (যেহেতু মন পড়তে পারিনা) কাজেই এই নিয়েও কোন নেগেটিভ মন্তব্যের আমাদের অধিকার নেই।
এখন আসা যাক গরুর দাম ২৮ লাখ টাকা হবার ব্যবসায়িক পয়েন্ট অফ ভিউতে। ছবি দেখে যা বুঝলাম, এই সাইজের গরু (ব্রামিন বুল) আমাদের টেক্সাসে সর্বোচ্চ তিন হাজার ডলার হবার কথা। তিন হাজার ডলার যদি বাংলার টাকার হিসাব করি, দাঁড়ায় দুই লাখ চল্লিশ হাজার টাকার মতন। ট্রান্সপোর্টেশনে যদি ধরি আরও পাঁচ লাখ গিয়েছে (আমার কোন ধারনাই নাই কত খরচ হতে পারে, কম বেশি হতে পারে) তাহলেও এই গরুতে মোট খরচ আট লাখের বেশি হয় নি। প্রশ্ন হচ্ছে, তিন গুনেরও বেশি লাভে এই গরু বিক্রি কী হালাল ছিল?
উত্তর, জ্বি। হালাল। যতক্ষণ পর্যন্ত কাস্টমারকে ঠকানো হচ্ছে না, কাস্টমার খুশি হয়ে কিনছে, ততক্ষন পর্যন্ত ট্রানজ্যাকশন হালাল। সেটা গরু হোক, জামা কাপড় হোক অথবা শাক সবজি। আপনি ইনজেকশন দিয়ে গরুকে ফুলিয়ে বিক্রি করলে সেই ব্যবসা হারাম হয়ে যাবে। আপনি মিথ্যা ইনফরমেশন দিয়ে (পাকিস্তানী গরুকে বললেন টেক্সান গরু বা এইরকম ছোট বড় মিথ্যা যাই হোক না কেন) গরু বেঁচলে সেটা হারাম হয়ে যাবে। কিন্তু আপনার কেনা দামের চেয়ে লাভ রেখে বিক্রি করলে, সেটা আপনার প্রফিট। আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন, সুদকে হারাম।
তবে এখানেও সাবধান। দেশি ব্যবসায়ীরা এখানেও একটি বড় ভুল করে বসে। ক্রেতার সাথে দামদরের সময়ে তারা বলেন, "কেনা দাম পড়ছে সাতাশ লাখ, লাভ করছি মাত্র এক লাখ। এর নিচে নামলে লস হয়ে যাবে।" - এই যে মিথ্যা ইনফরমেশনটা দিলেন, সেটাও আপনার ব্যবসাকে হারাম করে দিচ্ছে। কেনা দাম বা অন্যান্য খরচ কত পড়েছে, আপনার বলারই বা দরকার কি? কেউ জানতে চাইলে বলবেন, "সেটা বলা যাবেনা। অসুবিধা আছে।" ব্যস, কাহিনী খতম।
কেউ কেউ গত রোজার ঈদে আমার এক লেখায় তর্ক করছিলেন ইসলামে ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে এত বড় প্রফিট মার্জিনের অনুমতি দেয় না। আমি লিখেছিলাম চায়না থেকে এক টাকায় কিছু কিনে এনে আপনি বাংলাদেশে এক হাজার টাকায় বিক্রি করলেও আপনার ব্যবসা হালাল। তাঁরা নিজেদের সপক্ষে কোন প্রমান দিতে পারেন নি। তাঁদের মনে হয়েছে কাজটা ঠিক না, তাই তাঁরা হারাম মনে করছেন। একজন বললেন ৩৩% এর বেশি প্রফিট রাখা ইসলামে হারাম। ভিত্তি কি, জানিনা।
আমি কিছু উদাহরণ দিয়েছিলাম তাঁদের। সেগুলোই এই লেখায় জুড়ে দিচ্ছি। বুঝবেন কেন প্রফিট হালাল।
ধরুন আপনি আফ্রিকায় গিয়ে জংলী আদিবাসীদের কাছ থেকে কেবল কয়েকটি কোকের ক্যানের বিনিময়ে এক বক্স হীরা নিয়ে এলেন। ওদের কাছে কোকের স্বাদ বড় প্রিয়, আর হীরা তাঁদের কাছে চকচকে পাথর খন্ড ছাড়া কিছুই নয়। ওটার কোনই মূল্য নেই তাঁদের কাছে।
আপনি সেই হীরা নিয়ে অ্যামেরিকায় এসে সিগনেটের কাছে চড়া দামে (যেটা এখানকার বাজার দর) বিক্রি করলেন। আপনার ব্যবসা কি হারাম হয়ে গেল তাহলে? না। আপনি জংলীদের থেকে হীরা কেনার সময়ে ওদের ঠকাননি। ওরা যা চেয়েছে তাই দিয়েছেন। এবং সিগনেটকেও ঠকাননি বিক্রির সময়ে। ওরাও আপনার থেকে বাজার দরেই কিনেছে। তাহলে কোন যুক্তিতে হাজারগুন প্রফিট হারাম হবে একটু বুঝান। কোকের দামের ৩৩% প্রফিটে বিক্রি করলে আপনাকে মুমিন মুসলমান বলবে, নাকি আহাম্মক বলবে কেউ?
আবার ধরেন, এক কোটি টাকা দিয়ে নারায়ণগঞ্জে একটি জমি কিনেছেন। ঠিক পরের সপ্তাহে সরকার সিদ্ধান্ত নিল নারায়ণগঞ্জ থেকে ডিরেক্ট একটি হাইওয়ে ফ্লাইওভার একদম গুলশান এক নম্বর পর্যন্ত চলে আসবে। গুলশান থেকে নারায়ণ গঞ্জের দূরত্ব তখন গাড়ি পথে হয়ে যাবে মাত্র দশ মিনিট। সাথে সেই হাইওয়ের উপর দিয়ে মেট্রোরেলও চলবে। আপনার জমি এক মাসেই দশগুন দাম বেড়ে গেল, এখন আপনি কী এক কোটি তেত্রিশ লাখ টাকাতেই আপনার জমি বিক্রি করে দিবেন?
বা এই যে মধ্যপ্রাচ্যে তেল পাওয়া গেল। ওরা কী একেবারে পানির দামে তেল বেঁচে দিবে অ্যামেরিকার কাছে যেহেতু ওটা জমির নিচে এমনিতেই ছিল, তার পিছনে কোনই খরচ পড়েনি সৌদি সরকারের?
ইসলাম আপনার জীবনকে সহজ বানিয়ে দিয়েছে, শুধুশুধু একে জটিল বানাবার চেষ্টা করবেন না প্লিজ।
ব্যবসায় একজন দোকানিকে বস্তুর দাম ছাড়াও অনেক খরচ মেটাতে হয়। দোকানের ভাড়ার খরচ, ইলেক্ট্রিক বিল, কর্মচারীর বেতন, বস্তুর পেছনে যাতায়াত, রক্ষনাবেক্ষন ইত্যাদি খরচ, নিজের লাভ, দোকান চালাতে লাভের একটি নির্দিষ্ট অংক সঞ্চয়ে জমা রাখা যাতে ভবিষ্যতে বিপদে পড়লে সেটা থেকেই উদ্ধার পাওয়া যায়, ইন্স্যুরেন্স, মার্কেটিং ইত্যাদি ইত্যাদি। এবং আয়ের উৎস কেবল একটি, জিনিস বিক্রি। এই বিক্রির টাকা থেকেই যাবতীয় খরচ মেটানো সম্ভব হয়। তাও আবার কিছু নির্দিষ্ট মৌসুম বাদে এই কেনা বেচাও বন্ধ হয়ে যায়। ঐ এক দুই মৌসুমেই বিক্রি করে পুরো বছরের আয় করতে হয়। কাজেই একই বস্তুর হোলসেল-রিটেইলে দামের পার্থক্যের এও এক কারন। সব দোকানিই ঠগবাজ বাটপার নন।
হ্যা, দেশে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মার্কেটে কৃত্রিম সংকট তৈরী করে ক্রেতাদের জিম্মি করে অধিক মুনাফা অর্জনটা অবশ্যই হারাম। ক্রেতাদের দুরবস্থার ফায়দা তুলে জিনিসপত্রের দাম বাড়াবার অভ্যাসটাও হারাম।
গতবছর হিউস্টনে হারিকেন হার্ভির ফলে ডালাসে পেট্রোলের সাপ্লাইয়ে ব্যাপক ধ্বস নেমেছিল। গ্যাস স্টেশন (পেট্রোল পাম্প)গুলোতে পেট্রোল পাওয়া যাচ্ছিল না। আমরা গাড়িতে বসে লাইন ধরে পেট্রোল নিতে গিয়ে দেখি পেট্রোল শেষ। পুরাই কেওস অবস্থা।
সেই সময়ে এক বলদ এক লাফে গ্যালনপ্রতি পেট্রোলের দাম আড়াই ডলার থেকে নয় ডলার বানিয়ে বিক্রি শুরু করে দিয়েছিল। নিলে নাও, না নিলে বাড়ি যাও। সেই দিনই পুলিশ গিয়ে দোকান বন্ধ করে দিয়েছে। সামান্য কিছু লাভ করতে গিয়ে ব্যাটার ব্যবসার লাইসেন্সই বাজেয়াপ্ত হয়ে গেল। এইদেশে আপনি ব্যবসা করতে চাইলে দুর্যোগের ফায়দা লুটতে পারবেন না। প্রাকৃতিক কারনে পেট্রোলের শর্টেজ হলেও আপনাকে বাজার দরেই পেট্রোল বেঁচতে হবে যতক্ষণ না লেজিট কোন কারন ঘটছে।
একই ব্যাপার হোটেল মোটেল ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ে অনেকেই নিজের শহরের বাড়ি ছেড়ে দূরের নিরাপদ শহরের হোটেলে গিয়ে উঠেন। তখন যদি কেউ রুম প্রতি বাড়তি ভাড়া চার্জ করার চেষ্টা করে, তাহলেই বিপদে পরে। পুলিশ এসে সেই হোটেল বন্ধ করে দেয়। আহারে, আমাদের দেশে যদি এই ব্যবস্থা থাকতো! আমরা উল্টো ঈদ উপলক্ষে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেই। লোকে যত বড় বিপদে পরে, আমরা তত তার ফায়দা লোটার চেষ্টা করি। উপরে যেই গ্যাস স্টেশনের কথা বললাম, খোঁজ নিলে দেখা যাবে ব্যাটা কোন বাঙালি ব্যবসায়ী। বাংলাদেশের কূট নীতি এখানে এপ্লাই করতে গিয়ে ধরা খেয়েছে।
তো যা বলছিলাম, হালাল হারাম ইত্যাদি পুরো ব্যাপারটাই নিয়্যতের উপর নির্ভরশীল। কাউকে না ঠকিয়ে আপনি ট্রানজেকশন করলে সেটা হালাল। সামান্য লাভের জন্য সামান্য পরিমান মিথ্যা বলাটাও আপনার কয়েক মণ দুধের মধ্যে এক চামচ গোমূত্র হিসেবে কাজ করবে। আমাদের সমস্যা হচ্ছে, আমরা লোকজনের পাশাপাশি আল্লাহকেই ঠকানোর চেষ্টা করি। আমাদের যে কবে সুবুদ্ধি হবে!

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৮:১৪

অধৃষ্য বলেছেন: শিরোনাম পড়ে বুঝতে পারিনি লেখাটিতে কী থাকতে পারে। এখন বুঝলাম। অত্যন্ত যৌক্তিক কথা।

২৩ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ৯:৩৫

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ! :)

২| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৮:৪১

অগ্নিবেশ বলেছেন: কাফের দেশ যদি খাটি ইসলামিক দেশ থেকে উন্নত হয় তাহলে মনে করতে হবে গোঁড়াতেই গলদ আছে।
এখন বলবেন যে সিস্টেম আছে কিন্ত কেউ মানে না, না মানলে সিস্টেম বদলানো উচিত। কিতাব বদলানো উচিত।

২৩ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ৯:৩৯

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: তাই নাকি ভাই? আল্লাদি মার্কা কথা বলে দিলেন, কিতাব বদলাতে হবে। কোন কিতাব বদলাবেন? যেখানে পাপ করতে নিষেধ করে পুণ্যের প্রতি উৎসাহ দেয়া হয়েছে? সমস্যা কিতাবে নাকি মানুষে যারা সেই কিতাবকে ফলো করেনা? কাফের দেশ কেন উন্নত সেটা জানেন? সেখানে আইনের সঠিক প্রয়োগ আছে। হাতুড়ি লুঙ্গি হেলমেট বাহিনীকে বাদ দিয়ে সাতান্ন ধারায় ছাত্রছাত্রীদের গ্রেপ্তার করে জেলে ঢুকায় না এসব কাফেরদের দেশ। আমাদের দেশে আইনের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করেন। ন্যায় বিচার নিশ্চিত করেন। তাহলে এমনিতেই উন্নত হবে। কিতাব বদলাতে হবে বলে মুখে ফ্যানা তুললে নিজেরই মুখে গন্ধ হবে। ধন্যবাদ।

৩| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৯:২৫

রাজীব নুর বলেছেন: "মৌনতা সম্মতির লক্ষন" এর চেয়ে বেশি যৌক্তিক হলো
"মৌনতা ভীতির প্রকাশ" ।

২৩ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ৯:৩৯

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: মুখ খুললেই জেলে ঢুকায় দিবে ভাই। মৌন না থেকে উপায় কী? :/

৪| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৯:৪০

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: তথ্য বহুল পোস্ট। হারাম বস্তু যেমন শুকর কিন্তু নিয়ত গুণেও হালাল হবেনা। তবে হ‍্যা হালাল জিনিস নিয়তের উপর হালাল হারাম হয়ে থাকে।

২৩ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ৯:৩০

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: অন্য যেকোন সময়ে শুয়োর হারাম, এলকোহলও হারাম। কিন্তু অনেক সময়ে এগুলোও হালাল হয়ে যায়। যেমন জীবন বাঁচানো ফরজ। কোন এক সংকটময় মুহূর্তে, যেখানে আপনি না খেয়ে মারা যাচ্ছেন, যেখানে শুকরের মাংস ছাড়া এক দানা চালও নেই খাবার - সেই ক্ষেত্রে আপনি শূকর বা হারাম প্রাণী খেয়ে নিজের প্রাণ রক্ষা করলে সেটা হালাল হিসেবেই কাউন্ট হবে।
রোগ সারাতে এলকোহলযুক্ত ওষুধ সেবন হালাল।
বললামতো ভাই, ইসলাম আমাদের জীবনকে অনেক সহজ করে দিয়েছে। আল হামদুলিল্লাহ!

৫| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৯:৫৯

শিখণ্ডী বলেছেন: বিবেকহীন মানুষের কাছে নিয়তের অর্থ পরিবর্তিত হয়ে যায়।

২৩ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ৯:৪০

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: এটাই আফসোস। :(

৬| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১০:৪৪

মোঃ এনামুল হক পলাশ বলেছেন: অনেক নতুন কিছু জানতে পারলাম। লেখককে ধন্যবাদ

২৩ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ৯:৪০

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ! :) সাথে থাকবেন।

৭| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ২:১৮

ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: এই ঈদে, ডিপ ফ্রিজের দাম কমে!

২৩ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ৯:৪১

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: বলেন কি ভাই! তাহলেতো ভালই। এই ঈদেই্তো ডিপ ফ্রিজের সবচেয়ে বেশি ডিমান্ড থাকে। :)

৮| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ৯:৪৭

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
সুন্দর লেখা। এমন লেখা পড়তে ভালো লাগে।

২৩ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ১০:১৭

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.