নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

এক পা এগুলো দুই পা পিছিয়ে যাই

১০ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৯:৪৯

লোকে বলে, বিদেশে থেকে বড় বড় কথা না বলে দেশে ফিরে এসে দেশ পাল্টে দেখান।
বাস্তবতা হচ্ছে দেশে ফেরত গিয়ে দেশ পাল্টানোর ক্ষমতা আমার নেই। বরং কাউকে কাউকে অখুশি করার অভিযোগে আমাকে প্রকাশ্যে খুন করে ফেলার সম্ভাবনা প্রচুর। এবং আমি মরলে আমার ছেলেটা হবে এতিম, আমার বৌ হবে বিধবা, আমার মা হবে পুত্রহারা, ভাই বোন হারাবে ভাই। এছাড়া কারোর কিচ্ছু যাবে আসবে না। শুনতে খারাপ লাগলেও এটি প্রমাণিত সত্য।
ড. জাফর ইকবালকে কুপিয়ে গিয়েছিল একটি ছেলে, তাঁর পাহারার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ তখন মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত। এর আগে অভিজিৎ এবং আরও কয়েকজনকে কুপিয়ে হত্যা করা হলো প্রকাশ্যে। কেউ কিচ্ছু করতে পারে নি। আমাকেও কুপিয়ে হত্যা করলে প্রধানমন্ত্রী হয়তো সাগর রুনির কেসের মতন বলবেন, "কারোর বেডরুম পাহারা দেয়ার দায়িত্বতো আমাদের নয়।"
আমাদের দেশে বিগ শট মানুষেরা মরে যায়, বিচার পায় না। আমাদের মতন চুনোপুটি কুকুর বিড়ালের মতন পরে থাকবে। রাষ্ট্রের সময় কোথায় আমার জন্য দুই মিনিট খরচ করে আমার খুনিকে কাঠগড়ায় হাজির করার?
যে কারনে অ্যামেরিকাকে ভাল লাগে তা হচ্ছে এর বিচার বিভাগ।
অনেক কেস হিস্ট্রি পড়েছি এমন, যেখানে খুনি খুন করার পর সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে কোন তথ্য প্রমান না রাখতে। এখানকার খুনিগুলিও কিন্তু স্মার্ট। এরা কাপড় দিয়ে ফিঙ্গার প্রিন্ট মুছে সাফ করে দেয়। ব্লিচ দিয়ে রক্তের দাগ ধুয়ে ফেলে। লাশ গুম করে ফেলে। কোন চাক্ষুস সাক্ষী রাখে না। তারপর এমন অভিনয় শুরু করে যে ইচ্ছা করে দুই তিনটা অস্কার ওদের দিকে ছুড়ে মারি।
কিন্তু দেখা যায় মাথার চুল, অথবা গাড়ির টায়ারের ছাপ, শরীরের ঘাম, কিংবা জুতায় লেগে থাকা ধুলা থেকে তদন্ত কর্মকর্তারা আসামি সনাক্ত করে ফেলেন। সে এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা, ফিকশনাল গোয়েন্দা কাহিনী ফেল। ইচ্ছা আছে, এসব সত্য ঘটনার উপর আধার করে একটি সিরিজ লিখবো। কিন্তু সাধ আছে সাধ্য নাইয়ের মতন ইচ্ছে আছে, সময় নাই অবস্থা হয়েছে আমার। :(
এইসব কেস সল্ভ করতে হয়তো মাঝেমাঝে সময় লাগে প্রচুর। কোথাও কোথাও বিশ তিরিশ বছরও লেগে গেছে এমন নজির আছে। এবং অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় দোষী খুনি সরকারি বড় অফিসার, অথবা পুলিশ কিংবা মিলিটারি সদস্য। তারপরেও এরা ঠিকই বিচার নিশ্চিত করে। এবং সেটাও অতি দ্রুত। এরা এই বিষয়টাই নিশ্চিত করার চেষ্টা করে যে অপরাধ করে এই দেশে পার পেতে পারবে না। তোমাকে ধরে অবশ্যই বিচারের আওতায় আনা হবে।
একটি দেশকে সুসভ্য করার প্রধান শর্ত হলো ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা। আসামি যেই হোক, আইন সবার উর্দ্ধে উঠে বিচার নিশ্চিত করবে। ডাক্তার যেভাবে রোগের চিকিৎসা করেন, মানুষের নয়। গভর্নর সাধারণ পথচারীকে গাড়ি চাপা দিয়ে পালিয়ে গেছে, এবং তারপর তাকে খুঁজে বের করে বিচার করা হয়েছে - এমন ঘটনাও এদেশে আছে।
একুশে অগাস্ট গ্রেনেড হামলার বিচার আমাদের দেশের ইতিহাসে সেইরকম একটি বিচার।
চৌদ্দ বছর লেগেছে (আফসোস), অনেকটা সময় নষ্ট হয়েছে, কিন্তু বিচারতো হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ! সেই সময়ে কে আশা করেছিল একদিন ঐসব দোর্দন্ড প্রতাপশালী ক্ষমতাধর কুচক্রীদের বিচার হবে? বিচার বিভাগকে ধন্যবাদ।
অনেকেই বলবেন, ওরা জড়িত ছিল না, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন তারা।
সেটা আদালত বিচার করেছে। তথ্য প্রমানের ভিত্তিতেইতো বিচার করা হয়েছে। বন্দুক থেকে গুলি ছুটে মানুষকে হত্যা করা হয়। কিন্তু বন্দুক চালানেওয়ালা না থাকলেতো বন্দুক চলতো না। এত বড় ঘটনায় তৎকালীন ক্ষমতাশীলদের কেউ জড়িত ছিলেন না, এইটাতো অবুঝ শিশুও মানতে চাইবে না।
এবং তর্কের খাতিরে ধরেই নিলাম জড়িত ছিলেন না। তারপরেও যেহেতু আপনি সেই সময়ে দেশের মানুষের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিযুক্ত ছিলেন, এবং আপনি সেই কাজে শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছেন, তাহলে সেই অপরাধের দায়ভারতো আপনার কাঁধেও বর্তায়। শাস্তিতো কিছুটা হলেও আপনারও প্রাপ্য।
অনেকেই শাস্তির পক্ষে কিন্তু মৃত্যুদণ্ডের বিপক্ষে। কোমলমতি এইসব মানুষেরা বেশিরভাগই প্রবাসী। অ্যামেরিকারই ক্যালিফোর্নিয়া বা এইরকম কিছু "কোমলমতি" স্টেটে মৃত্যুদন্ড নেই। তারা ভয়ংকর থেকে ভয়ংকরতম সিরিয়াল কিলারদেরও যুগের পর যুগ ধরে জেলখানায় পেলে পুষে বড় করে। ওদের কথা হচ্ছে, "ওরা অমানুষ হলে আমরা কেন অমানুষ হবো?"
কথা ক্ষেত্র বিশেষে সত্য। ক্ষেত্র বিশেষে অসত্য। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, খুনের দায়ে ভুল মানুষকে জেলে ভরে ফেলা হয়, অনেক অনেক বছর পরে প্রকৃত খুনি ধরা পরার পর তাঁদের মুক্তি দেয়া হয়। আগেই মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয়ে গেলে যা অসম্ভব ব্যাপার হতো।
আমরা টেক্সানরা একটু পাষান হৃদয়ের হয়ে থাকি। এত ডিটেইলে চিন্তা ভাবনা করিনা। কাউবয় স্টাইলে ঘোড়ার পিঠে বসে তামাক পাতা চাবাতে চাবাতে বলি, You kill our children, you ain't gonna walk free boy.
যাই হোক, আশা করি এই রায়ের মধ্য দিয়ে দেশের ইতিহাসের আরও সব কলঙ্কজনক অধ্যায়ের বিচার শুরু হবে। প্রকাশ্য জনপথে কুপিয়ে মানুষ হত্যা করে পালিয়ে যাওয়া খুনিদের দ্রুত বিচার করে দেশে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা পাবে।
তবে এমন দিনেই আবার দেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় যুক্ত হলো। টাইমিংটা যেন আগে থেকেই সেট ছিল। সবাই একুশ অগাস্টের বিচার নিয়ে মেতে থাকবে, মাঝে দিয়ে ফাঁকে ফোকরে লক্ষীপুরের গডফাদার তাহেরের পুত্র বিপ্লব আজকে মুক্তি পেয়ে যাবে।
এই সেই বিপ্ল্ব যে আইনজীবী লুরুল ইসলামকে (বিএনপির লোক) খুন করে পিস্ পিস্ করে কেটে নদীতে ফেলে দিয়েছিল। এছাড়া আরও দুটি হত্যা মামলায় (শিবিরের লোক) সে যাবজ্জীবন সাজা খাটা আসামি। একটি স্কুল ছাত্র হত্যা মামলারও সে আসামি, যা পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের "নির্দেশে" (যদিও ওরা শব্দটিকে আদর করে বলে "সুপারিশে") অভিযোগ প্রত্যাহার করা হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, এই কোমলমতি বিপ্লবের পিতার পরিচয় লক্ষ্মীপুরের পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের না হয়ে বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা বা সাধারণ সদস্য জিয়াউর রহমান বা এইরকম কিছু হলে কী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান (যার নিজের স্ত্রী একুশ অগাস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত হয়েছিলেন) ক্ষমা করে দিতেন? রাষ্ট্রপতি প্রয়াত হয়েছেন, তিনি কী করতেন সেটা অনুমান করার সাধ্য আমার নেই, আল্লাহ তাঁর ভুল ত্রুটি ক্ষমা করে বেহেস্ত দান করুন। তবে যেদিন তিনি এমন বিশাল মনের পরিচয় দিয়ে খুনিকে মাফ করে দিয়েছিলেন, সেদিন হুমায়ূন আহমেদ পত্রিকায় একটি কলাম লিখেছিলেন। সময়ের অভাবে খুঁজে বের করতে পারছি না, তবে সারমর্ম হচ্ছে, ওস্তাদজি লিখেছিলেন, নন্দিত নরকে উপন্যাসে মন্টুর ফাঁসির রায় হয়। অতি দরিদ্র সেই পরিবারের একমাত্র ভরসা ছিল রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা। কিন্তু তাঁর উপন্যাসের রাষ্ট্রপতির হৃদয় আমাদের বাস্তব জীবনের রাষ্ট্রপতির হৃদয়ের মতন এত কোমল ছিল না। তিনি ক্ষমা করেন না। উপন্যাসের যবনিকাপাত ঘটে মন্টুর লাশ গ্রহণ করার অপেক্ষার মধ্য দিয়ে।
হুমায়ূন আহমেদ বলেন, সুযোগ পেলে তিনি নন্দিত নরকে আবারও লিখবেন। যেখানে কুসুমহৃদয় রাষ্ট্রপতি মন্টুর ফাঁসি মাফ করে দিবেন। জেলখানা থেকে বেরিয়ে এসে প্রাণ ভরে সে মুক্তির নিঃশ্বাস নিবে।
হুমায়ূন আহমেদের মতন লিখতে আমি অপারগ। আমার লেখা কোন গল্প উপন্যাস নাই এই রিলেটেড। এই ঘটনায় আমার বরং একটি জোক মনে পরে গেল।
শ্বশুরবাড়িতে এসেছেন জামাই। শ্যালক জিজ্ঞেস করলো, "দুলাভাই, আসতে এত দেরি হলো যে?"
দুলাভাই খুবই বিরক্তির সাথে বললেন, "আর বলো না, বৃষ্টিতে কাদার এমন অবস্থা! এক পা এগুই তো তিন পা পিছাই।"
শ্যালক কৌতূহলী কণ্ঠে জানতে চাইলো, "তাহলে এলেন কিভাবে?"
দুলাভাই তৃপ্তির স্বরে বললেন, "উল্টো দিকে হাঁটা শুরু করেছিলাম।"
আমাদের দেশের বিচার ব্যবস্থা হয়েছে এখন এই। এক পা এগুলো দুই পা পিছিয়ে যাই। বিচার বিভাগ ফাঁসি দিলে রাষ্ট্রপতি মুক্তি দিয়ে দেন। অথবা যাবজ্জীবন সাজা কমিয়ে দেন।
সুসভ্য হতে গেলে উল্টো দিকেই হাঁটা শুরু করতে হবে।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১০:৩৬

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন।
হুমায়ূন আহমেদের কথা বলেছেন। তাই আজ ঠিক করেছি নন্দিত নরকে আরেকবার পড়বো। শেষ করেই ঘুমাতে যাব।

১১ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ২:০৬

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: :)

২| ১০ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১১:৫৫

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



তথ্যবহুল লেখা। দেশের বিচার ব্যবস্থার সাম্যক চিত্র তুলে ধরেছেন। বাংলাদেশে পলিটিক্যাল গড ফাদাররা আইনের উর্ধে। আমেরিকানরা আর যাই হোক, রাজনৈতিক বিবেচনায়, রাষ্ট্রপতির বিবেচনায় কিংবা করাপশনের বিবেচনায় বিচার করে না। আর বিচারকরাও টাকা খাওয়ার ধান্দা করেন না। এদেশে রাজনীতি আর বিচার বিভাগ চরিত্রের দিক দিয়ে এক ও অভিন্ন।

১১ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ২:০৭

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত সুষ্ঠু বিচার সম্ভব নয়। আমাদের দেশেতো অবশ্যই নয়।

৩| ১১ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১২:০০

আখেনাটেন বলেছেন: হুমায়ুন আহমেদ যুগান্তকারী কথায় বলেছিলেন। আজব এক দেশের নাগরিক আমরা।

১১ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ২:০৭

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: :(

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.