নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
শুধু বাংলাদেশেরই না, আমাদের পুরো বিশ্বের মুসলিম কমিউনিটির সবচেয়ে বড় দোষের কথা বলি। সেটা হচ্ছে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা "বদনামীর" ভয়ে কিছু মেজর অপরাধ ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করি। সেটার পক্ষে সাফাই গাওয়া হয় কী? "নিজের বাড়ির সমস্যা নিজেরা বসে সমাধান করতে হয়। ঢাকঢোল পিটিয়ে পাড়াপ্রতিবেশীকে জানানোর প্রয়োজন হয়না।"
বাক্যটি আমাকে একবার এক ফেসবুক আলেম ভাই শুনিয়েছিলেন। কারন তখন আমি আমাদের দেশের মসজিদের ঈমাম কর্তৃক এক শিশু ধর্ষণের প্রতিবাদ করেছিলাম। বলেছিলাম এত বড় ঘটনা ঘটে যাচ্ছে আমাদের আল্লাহর ঘর মসজিদে, আর আমাদের ইসলামিক নেতারা ব্যস্ত আছেন আজাইরা বিষয় নিয়ে।
কেউ কেউ বললেন, "এতে ফিৎনা ছড়াবে।"
মিথ্যা অভিযোগ হলে আমি গুজব ছড়িয়ে সমাজে বিশৃঙ্খলা ছড়ালে তখন হবে ফিৎনা। প্রমাণিত সত্যকে ধামাচাপা দিলে বরং ফিৎনা আরও বেশি ছড়ায়।
এছাড়া এইসব ঘটনায় আরও কিছু ব্যাপার খুব মেজাজ খারাপ করে।
ইসলামোফোবরা তখন রসিয়ে রসিয়ে অনেক কথা বলে। ওদের কনসার্ন "শিশু ধর্ষণ" না, ওদের ফোকাস পয়েন্ট মসজিদের ঈমাম।
মুসলিম যারা ধামাচাপা দেয়, তাদেরও ফোকাস পয়েন্ট শিশু ধর্ষণ না। ওদের সব আলোচনা যেহেতু মসজিদের ঈমামকে ইসলামোফোবরা আক্রমন করছে, সেহেতু একে ধামাচাপা দিতেই হবে।
শুরু হয়ে যায় তখন স্ট্যাটিস্টিক্স ঘাটাঘাটি। বিশ্বের কোথায় কোথায় কোন কোন উপাসনালয়ে ধর্মগুরু কর্তৃক শিশু/নারী/পুরুষ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন সব দুইদিনেই জানা হয়ে যায়। এসব ঘটনা দিয়ে প্রমান করার চেষ্টা করা হয় এসবের তুলনায় এই ঘটনা কিছুই না। কাজেই এ নিয়ে লাফালাফির কিছু নেই।
মাঝে দিয়ে যেই শিশু ভিকটিম, পুরো ঘটনায় সে আউট অফ ফোকাস হয়ে যায়।
এইবারে একটি বাস্তব ঘটনা শোনাই। দেখা যাক আমরা এ থেকে কোন শিক্ষা পাই কিনা।
বোস্টন গ্লোব পত্রিকার একটি দল গোপনে একটি অতি সেনসিটিভ বিষয়ের তদন্তে নামে। তাঁদের কাছে তথ্য আসে যে ক্যাথলিক ধর্মযাজকগণ তাঁদের উপাসনালয়ে শিশুদের যৌন নির্যাতন/হেনস্থা বা সহজ কথায় ধর্ষণ করেন। বিষয়টির সত্যতা প্রমান হলে শুধু উত্তর অ্যামেরিকা মহাদেশই নয়, বরং পৃথিবী জুড়ে তোলপাড় শুরু হবে। এবং অ্যামেরিকায় বসে ক্যাথলিক চার্চের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়াটাও অনেক বড় ব্যাপার। ওদের হাত হোয়াইট হাউজ পর্যন্ত শক্তিশালী।
কিন্তু, দেশটি অ্যামেরিকা বলেই এত বড় কাজের সাহস সেই পত্রিকাওয়ালারা করতে পেরেছিল।
নানা ঘটনা দুর্ঘটনা শেষে তাঁরা কেবল ২০০২ সালেই ৬০০ এর বেশি নির্যাতন কাহিনী প্রকাশ করেছিল। কেবল বোস্টন এলাকাতেই ২৪৯ জন ক্যাথলিক ধর্মযাজকদের প্রকাশ্যে দোষারোপ করা হয়েছিল। কেবল বোস্টন এলাকাতেই নির্যাতনের শিকার হয়ে সারভাইভ করা লোকসংখ্যা এক হাজারের বেশি ছিল।
এই ঘটনার ফলে তৎকালীন কার্ডিনাল বার্নার্ড ফ্রান্সিস ল পদত্যাগে বাধ্য হন। তাঁর বিরুদ্ধে প্রমান মেলে যে তাঁর অধীনে যে এতসব যৌনশিকারী ঘুরে বেড়াচ্ছে, তিনি সব জানা সত্বেও ওদের বাঁধা দেয়াতো দূরের কথা, ওদের বিরুদ্ধে কোনই ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।
তবে সমস্যা কী হয়েছিল জানেন? এই কার্ডিনাল ল কে রোমের Basilica di Santa Maria Maggiore চাকরি দিয়ে নিয়ে যায়। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী এবং মর্যাদাময় রোমান ক্যাথলিক চার্চের অন্যতম।
যাই হোক, বোস্টন গ্লোবের এই বোমা বিস্ফোরণের পর গোটা অ্যামেরিকার পঞ্চাশটি স্টেটতো অবশ্যই, গোটা বিশ্বজুড়েই অভিযোগ ওঠা শুরু হয়। সবার অভিযোগ এক, ধর্মযাজকগন শিশুকিশোরদের যৌননিপীড়ন করেন। ক্যাথলিক চার্চের ভিত্তি নাড়িয়ে দিয়েছিল এই ঘটনা। এখনকার #মিটু মুভমেন্টের তখনকার ভার্সন।
ক্যাথলিকদের দোষ কী ছিল জানেন? ঐ যে আমাকে যে ফেসবুক আলেম বয়ান শুনিয়েছিলেন, সেই একই বয়ান অন্তরে লালন। "নিজের বাড়ির সমস্যা নিজেরা বসে সমাধান করতে হয়। ঢাকঢোল পিটিয়ে পাড়াপ্রতিবেশীকে জানানোর প্রয়োজন হয়না।"
যখন শুরুর দিকে এক দুইটা ধর্মগুরু এই কাজ শুরু করেছিল, তখনই যদি ওদের হাত গুড়িয়ে দেয়া হতো, তাহলে সেই কালো দিনটি তাঁদের দেখতে হতো না। বিশ্বজুড়ে এত লাখ লাখ মানুষকে এই দুর্বিষহ ঘটনার শিকার হতে হতো না।
তাঁরা তাঁদের রেপুটেশন নিয়ে ভেবেছিলেন। কিন্তু আপনারাই বলেন, কোনটা রেপুটেশনের জন্য খারাপ?
"ক্যাথলিক চার্চ তাঁদের একজন ধর্মযাজককে শিশু ধর্ষণের অভিযোগে শাস্তি দিয়েছে।" নাকি বোস্টন গ্লোব ইনভেস্টিগেট করে যা বের করেছে তা?
যদি উপরওয়ালার ভরসা করেই থাকেন, তাহলে এইটা নিশ্চই জানেন, আপনি যতই ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন না কেন, তিনি ঠিকই একদিন অন্যায়কে জনসম্মুখে হাজির করবেনই। এবং তখন হায় হায় করেও কূল কিনারা পাবেন না।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ইসলাম কী কখনও কোনদিন বলেছে "মেজর" ক্রাইম ধামাচাপা দিয়ে রাখতে? বরং উল্টোটাই কী বলেনা? প্রকাশ্যে শিরোচ্ছেদ! বা পাথর মেরে মৃত্যু।
কেন? যাতে পটেনশিয়াল অপরাধীর এই শাস্তি দেখে যেন কলিজা শুকিয়ে যায়। যেন সে সেই অপরাধ করার আগে তিনশোবার চিন্তা করে তার পরিণতির ব্যাপারে। ইসলাম কখনই বলেনা "অপরাধকে" চেপে যেতে। কুরআন শরীফে এক্সপ্লিসিট আয়াত আছে, ন্যায়ের জন্য নিজের বিরুদ্ধে গেলেও যাও।
আমাদের খলিফা উমার (রাঃ) অপরাধের শাস্তির ব্যাপারে খুবই কট্টর ছিলেন। অপরাধী মুসলিম হলে ডবল শাস্তি দিতেন। প্রথম শাস্তি অপরাধের জন্য। দ্বিতীয় শাস্তি মুসলিম হয়ে অপরাধ করার জন্য।
সহজ উদাহরণ দেই। আগেও বহুবার দিয়েছি, তবুও এই একটি উদাহরণ দিতে আমার কখনই বিরক্ত লাগেনা। আমাদের দেশের বর্তমান পরিস্থিতির সাথে হুবহু মিলে যায় বলেই।
বিখ্যাত সাহাবী আমর ইবনে আল আস (রাঃ) তখন মিশরের গভর্নর। তাঁর ছেলে লোকাল এক মিশরীর সাথে দৌড় প্রতিযোগিতায় হেরে যাওয়ায় রাগের মাথায় সেই মিশরিকে লাঠি পেটা করেন। দরিদ্র সাধারণ সেই মিশরী খলিফা উমারের (রাঃ) দরবারে বিচার নিয়ে হাজির হন। গভর্ণরপুত্র তাঁকে বিনা কারনে মেরেছে। পিতার ক্ষমতার অপব্যবহার।
উমার (রাঃ) সাথে সাথে পিতাপুত্রকে রাজধানীতে সমন করলেন। আমর (রাঃ) ভাল করেই জানেন উমারের (রাঃ) বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে। তাই তিনি বারবার পুত্রকে জিজ্ঞেস করছেন, "তুই কোন আকাম ঘটাসনিতো?"
পুত্র পিতাকে বারবার অভয় দিচ্ছেন, "না।"
মদিনায় হাজির হলে উমার (রাঃ) সেই মিশরিকে পিতাপুত্রের সামনে আনেন। অভিযোগ পুনরায় শুনেন। এবং তারপর আমরপুত্রের দিকে তাকিয়ে হুংকার দেন, "তুমি কী তোমার দোষ শিকার করছো?"
পৃথিবীতে এক রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এবং আবু বকর (রাঃ) ছাড়া দ্বিতীয় কোন মানুষ ছিল না যে উমারকে (রাঃ) ভয় পেত না। সেই উমারের (রাঃ) সামনে মিথ্যা বলার প্রশ্নই উঠে না। তিনি স্বীকার করলেন।
উমার (রাঃ) নিজের লাঠি সেই মিশরীর হাতে দিয়ে বললেন, "একে ততক্ষন পেটাও যতক্ষণ না তোমার মনে হয় তুমি ন্যায় বিচার পেয়েছো!"
মিশরী আচ্ছামতন গভর্ণরপুত্রকে পেটালো। তারপর সন্তুষ্ট হয়ে লাঠি ফেরত দিতে গেলে উমার (রাঃ) বললেন, "বিচার এখনও শেষ হয়নি। এবারে তুমি ওর বাপকে (আমরকে) পেটাবে। ও ভেবেছে ওর বাপ গভর্নর বলে ও যা খুশি তাই করতে পারবে। ও তাঁর বাবার পদবীর অপব্যবহার করেছে। যে তাঁর পুত্রকে বুঝাতে অক্ষম, সেও অপরাধী। ওকে এবং ওর বাপকে বুঝিয়ে দাও, আল্লাহর সামনে কোন আশরাফ আতরাফ নেই।"
আমর ইব্নে আল আসের সংক্ষিপ্ত পরিচয় এখন দেয়া যাক। সেই জাহেলী যুগে মক্কার কুরাইশ বংশ যখন নানান গোত্রে বিভক্ত, সেই সময়ে আমরের বাবা আল আস ছিলেন বনু সাম গোত্র প্রধান। মানে ধরে নিতে পারেন সেই গোত্রের রাজা। তিনি ছোটবেলা থেকেই রাজকীয় কায়দায় বড় হয়েছেন। বর্তমানেও তিনি মিশরের গভর্নর। সেই তাঁকে কিনা লাঠিপেটা করবে এক সাধারণ দরিদ্র কৃষক??? ক্ষোভে এবং অপমানে তাঁর অন্তর জ্বলে গেল। কিন্তু মুখে টু শব্দটি পর্যন্ত করলেন না।
মিশরীর হাত কেঁপে উঠলো। সে খলিফার পায়ে লাঠি ফেলে বলল, "আমি আমার বিচার পেয়ে গেছি। আমিরুল মুমিনীন! আমি ন্যায় বিচার পেয়ে গেছি।"
ঘটনাটি এই কারণেই বললাম যে উমার (রাঃ) ইচ্ছা করলেই বর্তমান মুসলিম নেতাদের মতন ধামাচাপা দিতে পারতেন। কিন্তু সেক্ষেত্রে আমরপুত্রের ফাজলামি জীবনেও বন্ধ হতো না। এবং উল্টো তাঁকে আল্লাহর দরবারে এই অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়ার জন্য জবাবদিহি করতে হতো।
কিছুদিন আগে আমাদের পাশের শহরের এক মসজিদে এক লোককর্তৃক child molestationএর ঘটনা ঘটে। সেই মসজিদ কর্তৃপক্ষ কী করেছে জানেন? শিশুটির পিতামাতার সাথে যোগাযোগ করেছেন। পিতামাতা বলেছেন, আমরা এই হারামজাদাকে আর অত্র এলাকায় দেখতে চাই না। মসজিদ কর্তৃপক্ষ ধাধিন ধাধিন নাচতে নাচতে সেই অভিভাবকদের কথায় রাজি হয়ে ব্যাটাকে দেশ থেকে বের করে দিয়েছে। পুলিশকে জানানোর বিন্দুমাত্র প্রয়োজন বোধ করেন নি কেউ। "নিজের বাড়ির সমস্যা নিজেরা বসে সমাধান......" বুলশিট।
এই যে হারামজাদাটা এখন অন্য এলাকায় গেল, সে কিন্তু এখন সেই এলাকার বাচ্চাদের সাথে এই আকাম করে বেড়াবে। যেকোন ক্রিমিনাল কেস হিস্ট্রি পড়ে দেখুন। এইটা সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য, এক অপরাধী একবার যদি কোন অপরাধ করে পার পেয়ে যায়, তবে সেই অপরাধ বা তারচেয়েও বড় অপরাধ সে বাকি জীবনে করবেই। ততক্ষন পর্যন্ত করে যাবে যতদিন না পর্যন্ত সে শাস্তি পাচ্ছে। আমাদের এক প্রফেসর বলেছিলেন, "যদি ব্যাংক ডাকাতি করো, তাহলে জীবনে একবারই করবে। প্রথমবার মোটামুটি কেউই ধরা খায় না। কিন্তু তারপরে কয়েকবার করলেই তোমার অপরাধের প্যাটার্ন তখন পুলিশের মুখস্ত হয়ে যাবে। তখন তুমি যত "বুদ্ধি-ম্যানই" হও না কেন, ধরা তোমাকে খেতেই হবে।"
ভাগ্যভাল, সেই মসজিদেরই ঈমাম, যে কিনা একজন কনভার্ট (পূর্বজন্মে খ্রিষ্টান ছিলেন) এমনভাবে ঘটনাটির প্রতিবাদ করেছেন যেভাবে বিশ্বের এক বিলিয়ন মুসলিমের করা উচিৎ ছিল। ঈমাম খুৎবায় দাঁড়িয়ে বলেছেন, "আমার বাচ্চার সাথে যদি সে এই কাজটা করতো, তাহলে আমি তার শরীরের প্রতিটা হাড্ডি ভেঙে দিতাম।"
মসজিদ হচ্ছে আল্লাহর ঘর। একজন মুসলিমের জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ স্থান। আমরা নিজেদের বাড়িতে যতটা শান্তি পাই, তার সমান বা তারচেয়ে বেশি স্বস্তিবোধ করার কথা আল্লাহর ঘর মসজিদে। আমরা আমাদের ছেলেমেয়েদের মসজিদে নিয়ে যাই নিজের ধর্ম শেখাতে। আল্লাহর সাথে কানেক্টেড হতে। সেই মহাপবিত্র স্থানকে যদি কোন জানোয়ার নিজের শিকারভূমি বানানোর চেষ্টা করে, তাহলে আমাদের শরিয়া নিয়ম অনুযায়ী সেই জানোয়ারের প্রকাশ্যে শিরোচ্ছেদ করা উচিৎ। সেখানে আমরা বদনামীর ভয়ে চাপা দিয়ে দেই। কিসের বদনামী? আমাদের মান সম্মান কিসে সেটা আমরা বারবার ভুলে যাই কেন?
আবারও উমারের (রাঃ) উদাহরণ দেই। জেরুসালেমের দরজায় যখন মুসলিম খলিফাকে অভ্যর্থনা জানাতে নগর কর্তৃপক্ষ অপেক্ষারত ছিলেন, তখন তাঁরা দেখলেন কেবল একজন দাসের টানা উটে চড়ে খলিফা আসছেন।
নগরপিতাদের চোখ কপালে উঠে গেল তখনই যখন তাঁরা জানতে পারলেন, উটারোহী নন, বরং জীর্ন তালি দেয়া পোশাকের বিশালদেহী দাসটিই আসলে মুসলিম খলিফা। পালা বদল করে উটে চড়ছিলেন বলেই নগরের দ্বারপ্রান্ত পর্যন্ত দাসের টার্ন পরে গিয়েছিল।
সাহাবীগণ একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগলেন। একজনতো বলেই বসলেন, "ওহে উমার! তুমি আজ আমাদের অপমানিত করলে!"
খলিফা বললেন, "কবে থেকে দামি পোশাক এবং বেশভূষা আমাদের সম্মানের ধারকবাহক হলো? আমাদের সম্মানের প্রতীক হলো তাকওয়া।" বাংলায় বললে খোদাভীরুতা। মানে কোন অন্যায়তো নিজের করা না, সাথে অন্য কোন অন্যায়কেও প্রশ্রয় না দেয়া। সবসময়ে এই ধারণা মাথায় রাখা, উপরে আল্লাহ সব দেখছেন। একদিন তিনি সবকিছুর হিসেব চাইবেন। এবং এই যে অমুক মসজিদে শিশুর গায়ে এক জানোয়ার হাত তুললো, সেই ঘটনায় আমার ভূমিকা নিয়েও আমাকে প্রশ্ন করা হবে। তখন আমি আমার রবকে কী জবাব দিব?
আজকে একটি মলেস্টারকে ছাড় দিলাম। কারন ওটাতো আমার বাচ্চার সাথে ঘটেনি। কিন্তু কালকে যে আমি আমার বাচ্চাকে মসজিদে নিয়ে যাব, এবং সেই মসজিদে এমন মলেস্টার থাকবে না, এর গ্যারান্টি আপনি আমাকে দিতে পারবেন?
বাড়িতে কুরআন শেখাতে আসা হুজুর বা সাধারণ গৃহশিক্ষক কর্তৃক এমন আচরণের শিকার হয়েছেন এমন মানুষের সংখ্যা আমাদের দেশে লাখে লাখ। স্কুলে, কলেজে স্যাররা মাঝে মাঝে ফালতু অজুহাতে মেয়েদের গায়ে হাত দেয়। এমন ঘটনা যে দেখেনি তার উচিৎ নিজের চোখ খুঁচিয়ে অন্ধ করে ফেলা। যে চোখ কিছু দেখেও দেখে না, সেই চোখ রাখবেন কোন অজুহাতে?
দয়া করে কেউ "বিচ্ছিন্ন ঘটনা" হিসেবে বুলি আওড়াতে আসবেন না। আমি সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করি এই শব্দটিকে। এই শব্দ উচ্চারণ করা মানেই হলো অপরাধকে লঘু করে ফেলা। উপরের উদাহরণে উমার (রাঃ) কী বলেছিলেন এই সাহাবী হিজরত করেছে, মিশর জয় করেছে - তাঁর পুত্র সামান্য এক জনতাকে লাঠিপেটা করেছে - এমন বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে এত বড় করে কেন দেখা?
যেহেতু তিনি সেই কাজটিকে "বিচ্ছিন্ন" হিসেবে গণ্য করেননি, সেহেতু তাঁর সময়েই ইসলাম এত শক্তিশালী হয়ে উঠতে পেরেছিল।
আমরা হালকা করে দেখতে শুরু করলে আমাদের পতন হতে বাধ্য।
বা কে জানে, ইতিমধ্যে কতটা পতিত হয়েও গেছি।
০২ রা নভেম্বর, ২০১৮ রাত ২:৪৯
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: জ্বি। কঠিন শাস্তি না দিলে এরা থামবে না।
২| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৮ রাত ২:৩২
ভিন্নচিন্তা ভিন্নমত ভিন্নপথ বলেছেন: @ মঞ্জুর চৌধুরী- জনাব, আপনাদের বাহাদুরি মসজিদের ইমামকে শান্তি/বহিষ্কার করা পর্যন্ত-ই। যে সব মুসলিম নেতারা Custodian of the two holy mosques সেজে প্রতিবেশী মুসলিম দেশের উপর জোট বেঁধে বছরের পর বছর ধরে বোমা হামলা চালিয়ে যায়,অর্থনেতিক অবরোধ করে , নিজের দেশের বিরুদ্ধমতের নাগরিককে নিজের দেশের কনস্যুলেটের মধ্যে খুন করে টুকরো টুকরো করে লাশ পর্যন্ত গায়েব করে ফেলে তখন কোথায় থাকেন আপনারা ? আপনাদের আলেম-উলেমারা ? পীর-মাশায়েখ-শায়খরা ? খুব তো খলিফা উমরের উদাহরণ দিলেন তো বর্তমান মুসলিম বিশ্বে তার প্রাসঙ্গিকতা কোথায় ? খালি অতীতের স্মৃতিচারণ করে বর্তমান মুসলিম বিশ্বনেতাদের জুলুমবাজির সমাধান করতে পারবেন ?
০২ রা নভেম্বর, ২০১৮ রাত ২:৪৮
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: কিসের মধ্যে কী! এই লেখা মসজিদের ভিতরে শিশু ধর্ষণ নিয়ে লেখা, সেখানে সৌদি আরবের সাংবাদিক হত্যা টেনে এনেছেন। সেটা নিয়ে প্রতিবাদ করা হয়েছে, হচ্ছে, এবং হবে। "কোথায় ছিলেন আপনারা" জাতীয় কমেন্ট তাই ফালতু। আপাতত এই লেখা যা নিয়ে লেখা হয়েছে, সেটাতে ফোকাস করুন। ইয়েমেনে শিশু হত্যা নিয়ে যখন লেখা হয়েছিল, ওটাতে গিয়ে এই কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।
৩| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৩:৫৫
ভিন্নচিন্তা ভিন্নমত ভিন্নপথ বলেছেন: @ মঞ্জুর চৌধুরী- জনাব, আপনার পোস্ট যদি মসজিদের ভেতরে শিশু ধর্ষণের ব্যাপারে হয় তবে খলিফা উমরের প্রসঙ্গ টেনে আনলেন কেন ? উমর কি শিশু ধর্ষণের বিচার করেছিল নাকি ?
সৌদী আরবের প্রসঙ্গ এইজন্য এসেছে যে ,তারা সারা সুন্নি মুসলিমদের অলিখিত প্রভু। আল্লাহ্ ও রাসূলের খাদিমরা যেখানে অন্যায় করে চলেছে আপনারা তখন নীরব।
সৌদী সাংবাদিক হত্যা নিয়ে প্রতিবাদ করছে পাশ্চাত্যের সাংবাদিক ও গণমাধ্যম। পুরো আরব বিশ্ব নীরব । মুসলিম বিশ্ব নীরব । আপনারাও।
দাস প্রথা বিলুপ্ত। আপনাদের মানসিক দাসত্ব অব্যাহত।
৪| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ৭:০২
আবু তালেব শেখ বলেছেন: ইমামের বিরুদ্ধে কোন খারাপ বিষয় উম্মোচিত হলে সেটা ধামা দিতে চায় কারা? যারা ইসলামের রীতিনীতি, আইন সম্পর্কে অবগত নন।
৫| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:১২
রাজীব নুর বলেছেন: এই যুগে ধর্মীয় নিয়ম কানুন প্রায় অচল।
সৌদি একটা বর্বব রাষ্ট্র।
৬| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৯
এ আর ১৫ বলেছেন: আপনার কাছে ২টা প্রশ্ন ।
১) কারো পাপের বা অপরাধের দায় অন্যজনের উপর পড়ে না --- এটা কোরানের আয়াতে বলা হয়েছে । ( কেউ যদি আয়াত নাম্বারটা দেন, তাহোল খুব খুশি হব, ধন্যবাদ )
তাহোলে বলুন পুত্রের অপরাধের জন্য পিতাকে কেন শাস্তির আদেশ হযরত ওমর ( রা: ) দিলেন ? মনে করুন একজন খুবই ভালো মানুষ কিন্তু তার ছেলে কোন মেয়েকে ধর্ষন করেছে , তখন কি পিতাকে পু্ত্রের সাথে শাস্তি দেওয়া যায় ?
২) আমরা জানি মুসলমানরা যখন জেরুজালেম অবরোধ করে রাখে বহু দিন , তখন এক শর্তে ইহুদিরা আত্মসমর্পন করতে রাজি হয় এবং সেই শর্তটা হোল তারা খলিফা ওমরের (রা: ) কাছে আত্মসমর্পন করবে । মক্কা থেকে উটের পিঠে জেরুজালেম যেতে বেশ কয়েক সাপ্তাহের ব্যপার । তাহোল কি কারনে একজন খলিফা কোন সিকুরিটি এবং দীর্ঘ পথ চলার পর্যাপ্ত রসদ ছাড়া একা একা একজন ভৃত্যকে নিয়ে সূদুর মক্কা হতে জেরুজালেম রওনা হবেন ? বুঝলাম তিনি মহানুভব তাই তিনি ভৃত্তের সাথে পালা করে উট চালাচ্ছিলেন । যেখানে তার এত শত্রু এবং মুসলমানদের ভিতরে অনেকে তাকে খুন করতে চায়, তখন কি কারনে তিনি কোন বেক আপ প্রটেকশন ছাড়া , একা একা একজন ভৃত্ত নিয়ে , একটা উট নিয়ে জেরুজালেমের উদ্দেশ্যে রওনা হোলেন ?
ধন্যবাদ
০৬ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১:৪১
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ১. পুত্রের অপরাধের জন্য পিতা দায়ী নন, এবং পিতার অপরাধে পুত্র দায়ী নন - এটি হাদিস।
উমার (রাঃ) কেন পিতাকে শাস্তি দিতে চেয়েছিলেন সেটাও লেখায় উল্লেখ আছে। পুত্র পিতার পদবীর ভুল ব্যবহার করছিল, এবং পিতা নিজের পুত্রকে বুঝাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন যে তিনি গভর্নর হলেও তাঁর পুত্রের কখনও অধিকার জন্মায় না জুলুম করার। গভর্নর হবার পরেও তিনি নিজের অধীনস্থ একজন সাধারণ জনতাকে বিচার পাইয়ে দিতে পারেননি।
যেহেতু পিতা এবং গভর্নর দুই পদেই তিনি সেই দায়িত্বে ব্যর্থ, কাজেই তাঁকেও শাস্তি দেয়া হয়েছে।
২. উমারের লাইফ স্টাইলই ছিল এমন। তিনি জীর্ন কাপড় পড়তেন, এবং কখনই বডিগার্ড রাখতেন না। তিনি ঘুমাতেন মসজিদের বারান্দায়, অতি সাধারণ জীবনযাপন করতেন। তাঁর মন্তব্যেই তাঁর এই পার্সোনালিটি প্রকাশ পায়। আমাদের ইজ্জত পোশাকে নয়, আমাদের ইজ্জ্ত তাকওয়ায়।
এবং "মুসলিমদের মধ্যে অনেকে তাঁকে হত্যা করতে চায়" - এই বিচিত্র তথ্য কোথায় পেলেন? আপনি কী উমার এবং উসমানের মধ্যে গুলিয়ে ফেলেছেন?
৭| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৩৯
প্রশ্নবোধক (?) বলেছেন: @এআর, ধর্ম সম্পর্কে আপনার জ্ঞান ওয়ান টু এরও নিচে।
১। ধরে নেন, আপনি প্রলোভন দিয়ে একটা মেয়ের সাথে অনৈতিক সম্পর্ক করলেন। এরপর বিয়ে করলেন না। সে রাগে দুঃখে পতিতালয়ে চলে গেল। আপনার কি মনে হয়, তার পরবর্তী শারীরিক সম্পর্কগুলো থেকে যে পাপ উৎপন্ন হবে তাতে আপনার ভাগ থাকবেনা?
২। ইরানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আহমাদিনেজাদ কিভাবে চলাচল করে জানেন? যাদের এক্সট্রিম তাকওয়া আছে, তাদের কোন ভুতের ভয় নেই। তেমন একটা প্রটোকল নিয়েও থাকেন না। সে আমলটা আপনাদের মোদি-ট্রাম্পের আমল নয়।
৮| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:০১
এ আর ১৫ বলেছেন: প্রশ্নবোধক (?) বলেছেন: @এআর, ধর্ম সম্পর্কে আপনার জ্ঞান ওয়ান টু এরও নিচে।
১। ধরে নেন, আপনি প্রলোভন দিয়ে একটা মেয়ের সাথে অনৈতিক সম্পর্ক করলেন। এরপর বিয়ে করলেন না। সে রাগে দুঃখে পতিতালয়ে চলে গেল। আপনার কি মনে হয়, তার পরবর্তী শারীরিক সম্পর্কগুলো থেকে যে পাপ উৎপন্ন হবে তাতে আপনার ভাগ থাকবেনা?
বুঝলাম আমার নলেজ নীচের দিকে কিন্তু আপনি এত উচু নলেজ নিয়ে আমার কথাটা বুঝলেন না সেটা কি জানতে পারি ?আমার প্রশ্ন ছিল একজনের অপরাধের জন্য আরেক জনকে শাস্তি দেওয়া যায় কিনা ? কোরানের বলেছে যায় না । আপনি যদি ধর্ষন করেন তাহোলে কি আপনার নিরাপরাধ পিতাকে আপনার সাথে আপনার পাপের শাস্তি নিতে হবে ??
২। ইরানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আহমাদিনেজাদ কিভাবে চলাচল করে জানেন? যাদের এক্সট্রিম তাকওয়া আছে, তাদের কোন ভুতের ভয় নেই। তেমন একটা প্রটোকল নিয়েও থাকেন না। সে আমলটা আপনাদের মোদি-ট্রাম্পের আমল নয়।
জী জানি -- তিনি যেখানে যান তার আসে পাশে সিভিল ড্রেসে সিকুরিটি থাকে । এমন কি মালোয়াশিয়াতে দেখেছি যখন মাহাতি মোহাম্মাদ আগের মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি নিজে গাড়ী চালিয়ে শপিং সেন্টার বা মসজিদে যেতেন । তার গন্তব্য পথে বিভিন্ন যায়গায় সিভিল ড্রেসে সিকুরিটি থাকতো কিন্তু মনে হোত কোন সিকুরিটি নেই তার সাথে । যে সমস্ত জায়গায় এই প্রোটকল দেওয়া যেত না সেখানে বাংলাদেশের মত সিকুরিটি থাকত ।
হযরত ওমর (রা: ) সহ তিন জন খলিফা আততায়িয়ের আক্রমণে নিহত হয়েছেন । মক্কা থেকে জেরুজালেম মাস খানেকের পথ কোন সিকুরিটা ছাড়া খলিফা একা একা একজন সহকারি নিয়ে রওনা হয়েছেন --- এমন কাহিণী অবশ্যই প্রশ্ন বোধক । এই কাহিণী বিশ্বাষ বা অবিশ্বাষের সাথে ঈমাণহানী হওয়ার কোন কারন নেই । এই কাহিণী বিশ্বাষ না করলে ঈমাণ চলে যাবে এমন কিছু ভাববার কোন কারন দেখিনা । হয়ত সত্য কাহিণী তিনি সিকুরিটি এবং পর্যাপ্ত রসদ নিয়ে এসে ছিলেন এবং সবাই মিলে পালা করে উটের উপর বসছিল এবং উট চালাচ্ছিলেন ।
একা একা শুধু মাত্র একজনকে নিয়ে চলে এসেছিলেন --- এমন কাহিণীকে নিয়ে কি প্রশ্ন করা যুক্তি সংগত নহে ?
ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১:৪৮
নতুন বলেছেন: এই জন্যই দৃস্টান্ত মুলক সাজা দিতে হয়।