নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
এক বন্ধুর সদ্য ব্রেকাপ হয়েছে। তাঁর অতিরিক্ত মেজাজ খারাপ। কিন্তু মেজাজ খারাপ তাঁর সাবেক গার্লফ্রেন্ডের উপর না। মনের মিল হয়নি, চলে গেছে। এতে মেজাজ খারাপ করার কিছু নেই।
প্রেমিকার সাথে রিলেশনশিপের সংকটকালে বন্ধুর এডভাইজার ছিল দুইজন। নানা পরামর্শ দিয়ে তাঁরা বন্ধুর প্রেমকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছিল। বন্ধু তাঁদের পরামর্শ গ্রহণ করে প্রেমে ধরা খেল। বলে রাখা ভাল, এডভাইজার দুইজনের একজনের জীবনেও প্রেম হয়নি, আরেকজনের জীবনেও প্রেম টিকেনি। বন্ধুর মেজাজ খারাপ এই দুই এডভাইজারের উপরও না। বন্ধুর মেজাজ খারাপ নিজের উপর। কোন আক্কেলে সে ঐ দুই বেয়াক্কেলকে এডভাইজার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল! ওদের পরামর্শ চোখবন্ধ করে গ্রহণ করার আগে এতটুকু নিজের বুদ্ধি খাটানোর প্রয়োজন ছিল। সেই মেয়েটি ছিল তাঁর শৈশবের প্রেমিকা। হাতের তালুর উল্টোপিঠের মতন তাঁকে সে বুঝে। আগের যাবতীয় ঝগড়া ঝামেলা তাঁরা তুড়ি মেরে মিটিয়েছে। এইবারও নিজের বুদ্ধি খাটালে সব মিটে যেত। সেটা না করাতেই আজকে ধরা খেতে হলো।
উপরের ঘটনা কিন্তু ১০০% সত্য। আজকের লেখার টপিকটাও সেটা। রিলেশনশিপে, হোক সেটা প্রেমিক প্রেমিকার, বন্ধুত্বের অথবা স্বামী-স্ত্রীর, কখনই কোন অবস্থাতেই তৃতীয় কাউকে ইনভল্ভ করা উচিৎ না। টেকনিক্যালি বলতে গেলে, তৃতীয় ব্যক্তির নাক গলানোর কারনে ঝামেলা মেটার মাত্র দুইটি সম্ভাবনা থাকে, ক্ষীণ এবং অসম্ভব। বাস্তবে খোঁজ নিলে দেখা যাবে "ক্ষীণ" বলে কিছুর অস্তিত্বই নেই। তার মানে দ্বিতীয় সম্ভাবনাটাই অবশ্যম্ভাবী।
স্বামী স্ত্রীর মাঝে ঝগড়া অতি সাধারণ ঘটনা। সূর্য যেদিন থেকে পূর্বে উঠে পশ্চিমে অস্ত যায়, নদীর পানি যেদিন থেকে সাগরে গিয়ে পতিত হয়, স্বামী স্ত্রীর ঝগড়া, মতবিরোধও ইতিহাসের সেদিন থেকেই শুরু। পৃথিবীর প্রথম মানব, বাবা আদম এবং মা হাওয়ার মাঝে নিষিদ্ধ বৃক্ষের কাছে যাওয়া নিয়ে মতবিরোধ হয়েছিল, ঠিক কি না বলেন? তাহলেই বুঝুন অবস্থা।
স্বামীস্ত্রীর মধ্যে মতবিরোধ হবে, ঝগড়া হবে, মনকষাকষি হবে, কথা বলাবলি বন্ধ হবে, আবার একটা সময়ে সব ঠিকও হয়ে যাবে। স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কটাই এমন। ইম্পারফেকশনের মধ্যেই পারফেকশন। রূপকথার সংসার বলে কিছুর অস্তিত্ব বাস্তবে নেই।
এখন এইসব ঝগড়া ঝামেলা তখনই বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে যখন আপনি তৃতীয় কোন ব্যক্তিকে এই ঝগড়ায় সামিল করবেন। যদি আপনি নিজের বাবা মা, শ্বশুর শ্বাশুড়ি, ভাই বোন প্রমুখদের টেনে আনেন, তাহলে ঝামেলা গুরুতর আকার নিবে, আর যদি বন্ধুবান্ধবকে টানেন, তাহলে সম্পর্কের ইন্নালিল্লাহ হয়ে যাবে। কোন এক কারনে ছেলেদের রক্তে একটি হারামীপনা বয়ে বেড়ায়। অন্যের বৌয়ের বা গার্লফ্রেন্ডের মন তারা খুব ভাল বুঝে। স্বামী যতই সঠিক হোক আর বৌ যতই বেঠিক, অভিযোগ শোনার সাথে সাথে বলবে, "ভাবি, আপনিই ঠিক। ওর একদমই উচিৎ হয়নাই এই কাজটা করা।"
এবং ভাবিও তখন ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলবে, "তুমি আমাকে যেভাবে বুঝতে পারো, আর কেউ সেভাবে বুঝে না।"
উদাহরণ দেই।
অফিসের এক সাবেক কলিগ দীর্ঘদিন প্রেম শেষে নিজের প্রেমিককে বিয়ে করেছে। যথাসময়ে বাচ্চা হয়েছে। বাচ্চা জন্মের কয়েক মাসের মধ্যেই ডিভোর্সও হয়ে গেল। ঘটনা কী?
মেয়েটির অভ্যাস ছিল পার্টি করে বেড়ানো। উইকেন্ডে তাঁকে ঘরে ধরে রাখা যেত না। বারে গিয়ে ড্রিংক করতো, নতুন নতুন "ফ্রেন্ডস" বানাতো, চুটিয়ে আড্ডা দিত। এভাবেই তাঁর প্রেমিকের সাথে পরিচয়, এভাবেই প্রেম এবং পরিণয়।
এখন বিয়ের পরেও মেয়েটা অভ্যাস ত্যাগ করতে পারেনি। স্বামী দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে গেছে। কিন্তু বাচ্চা হবার পরেও যখন মেয়েটি তাঁর অভ্যাস ছাড়েনি, কয়েকমাস বয়সী বাচ্চাকে বাড়িতে রেখে বারে আড্ডা দিতে যায়, তখন আর সে নিজেকে সামলাতে পারেনি।
এখনও মেয়েটি বারে আড্ডা দিয়ে বেড়ায়। সেখানকার পুরুষ "বন্ধুরা" এতে কোনই সমস্যা দেখে না। "দোষ আসলেই স্বামীর ছিল। স্বামীরই বোঝা উচিৎ ছিল, বাচ্চা হলেই কী তাঁকে তাঁর লাইফ স্টাইল বদলাতে হবে?"
এইসব বন্ধু বান্ধবগুলির কারণেই স্বামী বেচারা নিজের পয়েন্ট স্টাব্লিশ করতে পারলো না। এইসব বন্ধু না থাকলে হয়তো মেয়েটি বুঝতে পারতো সন্তান পৃথিবীতে আসার পর দায়িত্ব বেড়ে যায়। রেস্পন্সিবিলিটি বাড়ে। নিজের জীবনধারা পরিবর্তন করতে হয়।
কিন্তু এই সুবুদ্ধি তাঁকে দিলে উল্টো বারের ছেলেগুলো ভিলেন হয়ে যেত। তাঁদের কী? অন্যের বৌয়ের সাথে আড্ডা দিতে কার না ভাল লাগে?
যাই হোক।
একটি ব্যাপার নিপাতনে সিদ্ধ, আমি আমার বৌকে যেভাবে চিনি, বা আমার বৌ আমাকে যেভাবে চিনে - পৃথিবীতে খুব কম মানুষই আছেন এতটা ভালভাবে আমাদের চেনেন। যেই দুই চারজন চেনেন - তারা সেই ঝামেলার পরিস্থিতি সম্পর্কে ১০০% অনবগত। কাজেই, তাঁদের পরামর্শ কোন অবস্থাতেই আপনার জন্য সুফল আনবে না। উল্টো বিগড়ে দিবে।
ধরেন, শাহরুখের বৌ গৌরীর পছন্দ না শাহরুখ ঐশ্বরিয়ার সাথে মেলামেশা করুক। গৌরির অনেক কারন থাকতে পারে। হতে পারে শাহরুখের ছোকছোক করার স্বভাব আছে, যা গৌরীই কেবল জানে। অথবা ঐশ্বরিয়ার কোন একটা আচরণ গৌরির কাছে ভাল লাগেনি। অথবা স্রেফ রূপের কমপ্লেক্সের কারণেই গৌরী চায়না শাহরুখ ঐশ্বরিয়ার সাথে মিশুক। যাই হোক না কেন, সেটা তাঁদের দুইজনের অভ্যন্তরীন ব্যাপার।
আপনি যদি এখন তাঁদের জানের প্রাণের বন্ধুও হন, আপনার উচিৎ না গৌরিকে গিয়ে বুঝানো আসলে সেই ভুল। শাহরুখকে ঐশ্বরিয়ার সাথে বেশি বেশি ফিল্ম করতে দেয়া উচিৎ। আপনি শাহরুখের চরিত্রের গ্যারান্টি দিচ্ছেন। ইত্যাদি।
অথবা শাহরুখকে গিয়ে বুঝানো, কেমন পুরুষ তুই? বৌয়ের এক কথায় এমন সিদ্ধান্ত নিলি? প্রফেশনকে পরিবারে কেন টানিস? বি আ ম্যান! ইত্যাদি ইত্যাদি।
ঘটনা যদি খারাপের দিকে যায়, মানে শাহরুখের ডিভোর্স হয়ে যায় - তখন কিন্তু আপনাকে খুঁজে পাওয়া যাবেনা। বাচ্চাগুলোর একটি সুন্দর স্বাভাবিক পরিবার ছিল, আপনার ইন্ধনে সেটা পুড়ে গেল।
বরং স্বামী স্ত্রীকে নিজেদের আলোচনার ভিত্তিতেই ঝামেলা মিটিয়ে ফেলা উচিৎ। তাঁদেরই সিদ্ধান্ত নেয়া উচিৎ জীবনের প্রায়োরিটির ব্যাপারে। শাহরুখই সিদ্ধান্ত নিক গৌরী খান এবং তাঁর তিন সন্তান তাঁর জীবনে বেশি জরুরি, নাকি ঐশ্বরিয়ার সাথে সিনেমা করা।
গৌরী সিদ্ধান্ত নিক, শাহরুখের প্রফেশনে এইভাবে ইম্প্যাক্ট ফেলাটা কতটুকু যৌক্তিক।
বলিউডের উদাহরণ দিলাম যাতে বুঝতে সুবিধা হয়। কিন্তু নিজের জীবনে দেখেন, আপনি অসংখ্য উদাহরণ পাবেন।
স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া হয়েছে, শ্বাশুড়ি এসে বৌয়ের সাথে ঝগড়া শুরু করে দিলেন, "তোমার সাথে বিয়ের পর আমার ছেলে খাওয়া দাওয়া ঠিক মতন করেনা। শুকিয়ে কাঠি হয়ে গেছে। তুমি ঠিক মতন খাওয়াও না।"
অথচ খোঁজ নিলে দেখা যাবে ছেলে হয়তো নিজেই ডায়েট কসাস হয়েছে। এতদিন তেল চর্বি খেয়ে খেয়ে হার্টের বারোটা বাজিয়ে ফেলেছে। বৌয়ের যেহেতু এমনিতেই মেজাজ খারাপ, তাই শ্বাশুড়ির কথা শুনে ধৈর্য্য হারিয়ে আরও বড় ঝগড়া শুরু করে দিবে। ফলাফল কুয়ার পানি নদী হয়ে একদম সাগরে গিয়ে পতিত হবে।
বন্ধুবান্ধবদের ক্ষেত্রেও তাই। ভাই বোনের ক্ষেত্রেও তাই। মোট কথা, যেকোন দুইটা মানুষের মধ্যেই তাই।
কাজেই, দুইজনের ঝগড়া হতে দেখলে প্রথমেই আপনি উপলব্ধি করার চেষ্টা করবেন আল্লাহ আপনাকে নাক দিয়েছেন নিশ্বাস নেয়ার জন্য। অন্যের ঝামেলায় সেটা গলানোর জন্য নয়। কাজেই নাক দিয়ে সেটাই করুন যা তার কাজ। শ্বাস প্রশ্বাস নিন। সর্দি জমেছে কিনা দেখুন। ময়লায় ভরে গেছে কিনা সেটাও খেয়াল করুন। এক ছেলে সেদিন বলেছিল তাঁর টিভি ইন্টারভিউ নেয়া হয়েছে, আমরা যেন দেখি। টিভিতে দেখি এত্তবড় নাকের ময়লা ঝুলছে। কী বেইজ্জতি! সেটা যেন আপনার ক্ষেত্রে না হয়!
নাক নিয়ে আর যাই করুন না কেন, অন্যের ঝামেলায় সেটা গলাবেন না। তাহলেই সবাই ভাল থাকবে।
০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ২:৪০
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ!
©somewhere in net ltd.
১| ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:৩৫
মোস্তফা সোহেল বলেছেন: আমাদের দেশে নাক গলানো মানুষই বেশি।
মায়ের পোড়ে না মাসির পোড়ে সেই অবস্থা।
ভাল লিখেছেন ভাইয়া।