নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

আবতু ভাগ মিলখা

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১২:৩৫

আমাদের অফিস জিমের জন্ম থেকেই আমি মেম্বার। অফিসের সবার আর্নল্ড শোয়ার্জনেগারের মতন বডি বানাতে একটি ফাইভস্টার জিমের সব ফ্যাসিলিটিজ (সুইমিং পুল এবং সনা ছাড়া) আমাদের জিমে আছে। যন্ত্রপাতি ছাড়াও এখানে নিয়মিত ক্লাস হয়। ইয়োগা, সাইক্লিং, বক্সিং ইত্যাদি ইত্যাদি।
ছোটবেলায় "রকি" সিনেমা দেখে ইচ্ছে জেগেছিল বক্সার হবার। সিলেটে কোন বক্সিং ক্লাব ছিল না। রাস্তাঘাটে মারামারি করেই লোকে বক্সিংয়ের মজা নিত। "ভদ্রলোকের" সন্তান হওয়ার কারনে আমার সেই সুযোগ ছিল না।
তবে খুব দৌড়াতাম। সাইক্লিং করতাম পুরো শহরময়। দুই তিনটা কাঁচা ডিম কপাকপ গিলে ফেলতাম।
আমাকে ব্যায়াম করতে দেখলে আশেপাশের কিছু মানুষ টিটকারি করতো, "এমনিতেই তোমার শরীরে মাংস নাই এক ছটাক, তুমি বেয়াম করলেতো হাড্ডি ছাড়া আর কিছুই বাকি থাকবে না।"
যে যুগে বড় হয়েছি, সেই যুগে তেল চর্বিওয়ালা থলথলে চেহারা ও শরীর না হলে লোকে "রোগা" "আনফিট" বিবেচনা করতো। স্বাস্থ্য বলতে মোটা শরীরকেই গণনায় ধরতো।
ভারী ভারী ডাম্বেল তুলে হাতের মাসলের উপর কাজ করতাম। বাইসেপ, ট্রাইসেপ, ইত্যাদিই ছিল মূল ফোকাস। আমাদের যুগে "সিক্সপ্যাক" এতটা সেনসেশন ছিল না। সিক্সপ্যাক বানানোও কঠিন ছিল। দৌড়, পুশআপ (বুকডন), উঠকবৈঠক, স্কিপিং ইত্যাদিই ছিল ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ। আর ডাম্বেল দিয়ে বাকিটা সারো।
এদেশে আসার পর মাঝে ২৪ আওয়ার জিমে যোগ দিয়েছিলাম মূলত বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে। রাত ১১-১২টার দিকে জিমে যেতাম, ব্যায়াম শেষে গরম পানির জিকুজিতে শুয়ে অথবা স্টিম বাথ নিতে নিতে আড্ডা চলতো। কয়েক মাসের মধ্যে সেখানে অনিয়মিত হয়ে গেলাম।
অফিসে জিম খোলায় তাই প্রথম দিকে খুব উৎসাহের সাথে যোগ দিয়েছিলাম। ভাগ মিলখা ভাগ সিনেমা তখন মাত্র বেরিয়েছে। মনের মধ্যে গান বাজে, "আবতু ভাগ মিলখা, তু বানজা নাগ মিলখা, তু পাগড়ি বাঁধ মিলখা...."
"এখন তুই দৌড়া মিলখা!"
মিলখা সিংকে বলা হলেও আমারও দৌড়াতে ইচ্ছা করে।
কয়েক বছরের গ্যাপ হয়ে গেছে। এখন দৌড়াতে গিয়েই বুঝি নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং না করার পার্থক্য।
একদিন খুব ভাব নিয়ে ট্রেডমিলে দৌড়াতে গেলাম। পাশে এক বুড়ি দৌড়াচ্ছে। চুলের পাক দেখে বুঝা যায় বয়স অবশ্যই পঞ্চাশ পেরিয়েছে। আমাদের দেশে অনেক মহিলা এই বয়সেই লাঠি ছাড়া হাঁটতে পারেনা। ইনি বিদেশিনী বলেই দৌড়াচ্ছে।
তাঁর শরীরের ঘাম, দৌড়ের গতি ইত্যাদি দেখে মনে হলো দেড় দুই মাইল দৌড়ে ফেলেছে। ধরে নিলাম আর কিছুক্ষনের মধ্যেই হাঁপিয়ে গিয়ে অন্য কোন ব্যায়াম শুরু করবেন।
আমি খুব ভাব নিয়ে দৌড় শুরু করলাম। মেশিন সেট করা আছে সমতলে। কয়েক মিটার যেতেই দম ফুরিয়ে যেতে লাগলো। এদিকে পাশের বুড়ি দৌড়েই যাচ্ছে, দৌড়েই যাচ্ছে। মেশিনে সেটিং চেঞ্জ করে সমতল থেকে ঢালু করলাম। এতে দৌড়ানো হবে বেশি, হাঁপানো হবে কম। আরও কয়েক মিটার দৌড়ালাম। দম শেষ। বুড়ির দৌড় শেষ হয়না।
দৌড়ের গতি কমালাম। কিছুতেই বুড়ি মহিলার আগে দৌড় থামানো যাবেনা। দেশের ইজ্জতের ব্যাপার। মহিলা কী মনে করবে, অ্যামেরিকান বুড়ি মাইলের পর মাইল দৌড়াতে পারে, বাংলাদেশী যুবক কয়েক মাইল দৌড়াতেই ফুস! হাহাহা।
বুড়ির হাসির শব্দ বুকে শেলের মতন বিঁধে। মনের পর্দায় লাল সবুজ পতাকা উড়তে থাকে। ঐ পতাকার ইজ্জত রক্ষার দায়িত্ব আমার হাতে। আমি দৌড়াই।
মনে মনে মোটিভেশনাল গানও ধরি, "আবতু ভাগ মিলখা,"
লাভ হয়না। উল্টা "ভাগ" শব্দটার বাংলা মানেটা মনে পড়ে যায়। "এখন তুই পালা মিলখা, এই বুড়ির সাথে টিকবি না মিলখা, তুই অফ যা মিলখা।"
বুড়ি মনে হলো দৌড়ের গতি আরও বাড়িয়ে দিলেন। আমার হৃদযন্ত্র তখন চিৎকার করে বলছে "ফাজলামি বন্ধ কর! নাহলে কিন্তু কার্যক্রম বন্ধ করে দিব। হরতাল! হরতাল!"
আমি তাঁর কথা শুনে দৌড় থামালাম। হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ করে কে অকালে মরতে চায়?
মুখ হা করে নিঃশ্বাস নিচ্ছি ততক্ষনে। পৃথিবীময় এত অক্সিজেন, আমার ফুসফুস তখন সামান্য অক্সিজেনের জন্য হাতড়ে ফিরছে।
টলতে টলতে গেলাম ডাম্বেল আলগাতে। ওটাতে আমি এক্সপার্ট। ক্লাস সিক্স থেকে ডাম্বেল তুলে ব্যায়াম করেছি। দেখি ওটাতে দেশের ইজ্জ্ত রক্ষা করতে পারি কিনা।
দেশে থাকতে পাঁচ কেজি ডাম্বেল (এগারো পাউন্ডের মতন) নিয়ে কেরামতি করতাম। এখানে ১০ পাউন্ডের ডাম্বেল তুললাম। ওজনে যদিও কম, তবু কষ্ট হলো একটু। আগের মতন সহজে লিফটিং হলো না। বুঝলাম কলকব্জায় জং ধরেছে সামান্য। ব্যাপার না। অভ্যাসে ঠিক হয়ে যাবে।
সাদা কালো কলিগদের দিকে তাকিয়ে অবাক। এরা বিশ-পঁচিশ পাউন্ডের ডাম্বেল তুলে তুলে ব্যয়াম করছে। মেয়েরা দশ পাউন্ডেরগুলি নিয়ে ব্যায়াম করে।
এইবারও এদের সাথে প্রতিযোগিতায় গেলাম না। শেষে হৃদযন্ত্রের মতন হাত যন্ত্রও বিদ্রোহ করতে পারে।
ট্রেডমিলে বুড়ি তখনও দৌড়াচ্ছে। গতির নড়নচড়ন নেই।
পাশে দেখি এক ভারতীয় ছেলে এখানে ওখানে টুটা ফুটা ব্যায়াম করছে। আমার চেয়েও দুরবস্থা। সে ট্রেডমিলে গিয়ে দৌড়াদৌড়ির ঝামেলাতেই যায়নি। পাঁচ পাউন্ডের ছোট ছোট দুইটা ডাম্বেল নিয়ে কিছুক্ষন লিফটিং করে হাঁপিয়ে গেল। কিন্তু আয়নার দিকে তাকিয়ে এমন ভাব নিল যেন টাইগার শ্রফের মাসল বানিয়ে ফেলেছে। আহ! একেইতো খুঁজছিলাম! কোথায় ছিলে তুমি? তোমাকে পাশে পেলেই না ব্যায়াম করে আনন্দ।
আমি তাঁর পাশে হৃত্বিক রোশনের ভাব নিয়ে ব্যায়াম করতে লাগলাম। Pec dec ফ্লাই মেশিনে গিয়ে কিছুক্ষন কেরামতি করলাম। রোয়িং মেশিনও কিছুক্ষন ঘাটাঘাটি করলাম। ও এখনও আড়াই পাউন্ডের ডাম্বেল নিয়ে হাপাচ্ছে। বুড়ি এখনও ট্রেডমিলে দৌড়াচ্ছে।
কয়েক মিনিটের মাথায় ছেলেটি গোসল করতে চলে গেল। বুড়ির পাশে আমার যে অবস্থা হয়েছিল, আমার পাশে বোধয় তাঁরও একই অবস্থা হয়েছিল। ওর মনের মিলখা সিংও হয়তো গান গাচ্ছিল, "আব তু নিকাললে মিলখা। পাতলী গালি পাকারলে মিলখা।"
বুঝিয়ে দিল, বলিউডের নায়ক হৃত্বিক রোশন, টাইগার শ্রফ হলেও, ওদের আমজনতাও আমাদের রুবেল, সোহেল রানা, জসিম।
এর পরেও কয়েকদিন ঐ সময়ে গিয়েছি ঐ ভাইয়ের পাশে দাঁড়িয়ে ব্যায়াম করতে। খুঁজেই পাই নাই ভাইজানকে। প্রতিবারই দেখি ঐ বুড়ি ট্রেডমিলে দৌড়াচ্ছে। ভাগ মিলখা ভাগ সিনেমাটা কী সেও সাবটাইটেল দিয়ে দেখেছে নাকি? সিনেমাটাকে দেখি সে সিরিয়াসলিই নিয়ে নিয়েছে।
দুই বছর হতে চললো জিমে যাওয়া হয়না। যাওয়া হয়না বললে ভুল বলা হবে। দুপুরের দিকে শুধু গোসল করতে যাই। ভাবছি আবারও ব্যয়াম শুরু করবো। বুড়ি এখনও সমান তালে দৌড়ে নাকি কে জানে! সে কতটা "বুড়ি" হলে একদিন আমি তাঁকে দৌড়ে হারাতে পারবো, সেটাওতো জানতে হবে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৮:৩৯

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: হা হাহা

ভাগ মিলখা ভাগ!

দারুন রসময় উপস্থাপনায় জীবনের রূল কিছু সত্য তুলে ধরেছেন।
অনভ্যাসে বিদ্যা হ্রাসের মতোই অনভ্যাসে সব কিছুই কমতে থাকে বুঝি!
স্বাস্থ্য গত ফীটনেসের ওদেরতো তাও আইকনিক হিরো আছে - আমাদের হিরোদের দেখলে- থাক আর বল্লাম না!

এখনতো তবু মহল্লার গলিতে গলীতে জিম দেখা যায়। কিন্তু ঐ বুড়ির মতো স্ট্যামিনা ওয়ালা জিমার নেই - এই আর কি;)

জাতিগত স্বাস্থ্য সচেতনতা অভিযান পরিচালনা বুঝি এখন সময়ের দাবি। :)

+++++++

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:০৭

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: সত্য ভাই। ব্যয়াম যে কী পরিমান জরুরি সেটা আমরা উপলব্ধি করিনা। যে যুগে ব্যয়াম করতাম, সুস্থ শরীর, সুস্থ মন নিয়ে আরামে ঘুমাতাম। ব্যয়াম শরীরকে অন্যরকম সুখ দেয়।

২| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৯:৪০

রাজীব নুর বলেছেন: ঋত্বিক এর ব্যায়াম করা ভালো।

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:০৭

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ঋত্বিক এর বডি পাইলেতো কথাই ছিল না। :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.