নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিখ্যাত শিল্পী মৃনাল হকের সাথে কিছুক্ষন

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:৩২

"ইনি কে?"
শিল্পী এক গাল হেসে বললেন, "এনাকে চিনলা না? ইনি হচ্ছেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।"
আমি আরও গভীরভাবে লক্ষ্য করে বললাম, "কিন্তু তাঁর গলা গেল কই? মনে হচ্ছে কচ্ছপের মতন খোলস থেকে বেরুচ্ছিলেন, শুধু মাথাটা বেরিয়েছে আর অমনি সেই মোমেন্ট ক্যাপচার করে আপনি ভাস্কর্য বানিয়ে ফেলেছেন। গলা বের হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেন নি।"
শিল্পী হাহা করে হেসে বললেন, "ভাল রসিকতা করেছো হে। আসলে আমি রবীন্দ্রনাথকে পড়ে, তাঁকে আত্মস্থ করে, অনুধাবন করে তাঁর এই ভাষ্কর্য নির্মাণ করেছি। তাঁর সেই বিখ্যাত কবিতা পড়নি?"
তিনি দরাজ কণ্ঠে আবৃত্তি করে ওঠেন, "মোর গলে দিওনা তুমি পুস্পমাল্যখানি / ভালবাসিলে, ঠাঁই দিও তব, মননে একটুখানি।"
আমি মাথা চুলকে বললাম, "এই কবিতা ভদ্রলোক কবে লিখলেন?"
তিনি চোখ পাকিয়ে বললেন, "তুমি আমাকে চ্যালেঞ্জ করতে চাও? তুমি কী রবীন্দ্র রচনাবলী মুখস্ত করে বসে আছো? তুমি বলতে চাও দীর্ঘ আশি বছরের জীবনে রবীন্দ্রনাথ এমন দুই লাইন লিখতে পারেননি? তাঁর সেই যোগ্যতা ছিল না? নোবেল তাঁকে এমনি এমনিই দেয়া হয়েছে?"
আমি শিল্পীকে আর না রাগাতে বললাম, "না, আসলে আমি মুখ্যুসুখ্য মানুষ। রবীন্দ্রনাথ পড়ার সৌভাগ্য বা বিদ্যা কোনটাই হয়নাই। শুধু জিজ্ঞাসা ছিল, সেই কবিতার সাথে এই ভাস্কর্যের কী সম্পর্ক?"
শিল্পী নিজের রক্তচাপ কমিয়ে বললেন, "তিনি বলেছিলেন, তাঁর গলায় মালা না দিয়ে, তাঁকে মনে ঠাঁই দিয়ে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে। কিন্তু বাঙালি সেটা বুঝলেতো। তাই গলাই রাখলাম না। এখন মালা দিবি কই? হুহু বাবা! বুদ্ধিটা দেখেছো? সব শিল্পী আমার মতন বুদ্ধিমান হলে আজ পৃথিবীর চেহারাই পাল্টে যেত।"
কিছু না বলে উপর নিচ মাথা নেড়ে সামনে এগোই।
"এইটা কে?" আরেকটা ভাষ্কর্যের সামনে দাঁড়িয়ে অবাক হয়ে বলি।
শিল্পী আমার চেয়েও অবাক হয়ে বলেন, "একে চিনলে না? এ হচ্ছে বোম্বের কিং খান, শাহরুখ খুন।"
কোন মিল খুঁজে না পাওয়ায় অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম।
তিনি হেসে বললেন, "শিল্পকর্ম দেখতে হয় শিল্পীর মানসচক্ষু দিয়ে। চোখ বন্ধ করো, গভীর শ্বাস নাও। আমাকে নিজের মধ্যে ধারণ করো। এখন চোখ খোল। বল তুমি কী দেখছো?"
আমি গভীরভাবে সামনের ভাষ্কর্য দেখি। আমার কাছে আগের মতই লাগে। শাহরুখ খানের ভুখা নাঙ্গা সস্তা ডুপ্লিকেট ছাড়া আর কিছুই মনে হয়না। তবুও শিল্পীর সামনে ভাব নিতে বিজ্ঞের মতন ব্যাখ্যা শুরু করি।
"মনে হচ্ছে শাহরুখ খান পেটের পীড়ায় জর্জরিত। এই কারনে তাঁর কপাল কুঁচকে আছে। ঠিক এইসময়ে মিডিয়া এসে উপস্থিত হয়েছে। তাই ক্যামেরার সামনে হেসে দিয়েছেন। কিন্তু কপালের ভাজ দূর হয়নি। আপনি সেটাই তুলে ধরেছেন। ঠিক বলেছি?"
তিনি হতাশ স্বরে বললেন, "তোমাকে দিয়ে হবেনা। তুমি তাঁর চুল খেয়াল করো। দেখে কী মনে হচ্ছে?"
আমি সরাসরি বললাম, "বিড়ালকে ভেজানো হয়েছিল, সে গা ঝাড়া দিয়েছে।"
শিল্পী চোখ বড় বড় করে বললেন, "একজ্যাক্টলি! ব্রাভো! আসলে আমি বুঝাতে চেয়েছি, পুরুষমানুষ বাইরে যতই কিং ফিং হোক না কেন, বাড়িতে বৌয়ের সামনে সবাই ভেজা বেড়াল। এই ছবির মাধ্যমে আমি ভূরাজনীতির যাঁতাকলে নিষ্পেষিত প্রলেতারিয়েত নারী সমাজ দ্বারা শোষিত, নিপীড়িত, কনজুমারিজমের দাসত্বে শৃঙ্খলিত পুরুষ সমাজের দুঃখ কষ্টের কাহিনী ফুটিয়ে তুলেছি। কান পাত, তুমি কী এই শিল্পকর্ম থেকে সেই লক্ষ বছরের হাহাকার শুনতে পাও না?"
কী বললেন পুরোটাই মাথার উপর দিয়ে গেল। আমি বললাম, "আপনি কী ভ্যান গগের স্টারি নাইটের মতন কিছু একটা করছেন?"
তিনি চোখ মুখ খিঁচিয়ে জানতে চাইলেন, "ঐ ব্যাটা আবার কে?"
কথা পাল্টাতে বললাম, "না, তিনি হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির মহিলা হলের সামনের ফুটপাথে চটপটি ফুচকার ঠ্যালা নিয়ে বসেন। নারী মহলে সে বেশ জনপ্রিয়।"
তিনি আবারও চোখ রক্তলাল করে বললেন, "তুমি এক ফুচকাওয়ালার সাথে আমার তুলনা করলা!"
মুখ তেলতেলে করে বললাম, "মিস্টেক হয়েছে ভাই। ক্ষমাপ্রার্থী! জানতে চাইছিলাম শিল্পীদের মধ্যে আপনার আদর্শ কে?"
তিনি গর্বের সাথে বললেন, "মেসার্স ছগির এন্ড কোংয়ের কর্ণধার, জনাব ছগির আলী!"
আমি তাঁর সাথে তাল মিলাতে বললাম, "বলেন কী! কে এই বিখ্যাত শিল্পী?"
তিনি পরম শ্রদ্ধায় নিজের চোখ বুজে বললেন, "ওস্তাদজি সাইনবোর্ড পেইন্টিং করেন। সুনামগঞ্জে যেকোন ভাতের হোটেল থেকে কসাইর দোকান পর্যন্ত যেকোন বিজনেসের সাইনবোর্ড পেইন্টিংয়ের জন্য ওস্তাদজীর সমকক্ষ কেউ নেই।"
সামনের ভাস্কর্যে দেখে জানতে চাইলাম, "জেলের ভিতর ওটা কাকে পুড়েছেন?"
তিনি গর্বিত স্বরে বললেন, "এটি বিখ্যাত অভিনেতা কাজী নজরুল ইসলামের ভাষ্কর্য।"
আমি চোখ কপালে তুলে বললাম, "ইনি অভিনয় করতেন কবে?"
তিনি আমার চেয়েও অবাক হয়ে বললেন, "কেন তুমি 'আজ রবিবার' নাটকে তাঁর অভিনয় দেখোনি? তিতলি ভাইয়া, কংকা ভাইয়া? বড় চাচা? বা 'মফিজ পাগলের' চরিত্রে তাঁর অনবদ্য অভিনয়? টেলিভিশন নামের যন্ত্র কী তোমার বাসায় নেই নাকি খোকা?"
আমি বললাম, "তিনিই যে নজরুল ইসলাম সেটা আপনাকে কে বলেছে?"
তিনি খুবই ক্যাজুয়ালি বললেন, "কেন, বদরুল বলেছে।"
"বদরুলটা কে?"
শিল্পী সিগারেট ধরাতে ধরাতে বললেন, "আমার তথ্য উপদেষ্টা। ভাষ্কর্য নির্মাণে আমার যাবতীয় তথ্যাবলী সেই আমাকে প্রোভাইড করে।"
"ও আচ্ছা।"
কিছু বলার নাই।
শিল্পী অনেক আগ্রহের সাথে বললেন, "তুমি সামনে আসো, আরও বাদবাকি ভাষ্কর্যগুলো দেখো। ঐ যে সামনেই মেসিকে দেখা যাচ্ছে। তাঁর পাশেই প্রিন্সেস ডায়ানা। ওদের দেখো।"
আমি তাকিয়ে "মেসিকে" এবং প্রিন্সেসকে দেখলাম। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম, "থাক ভাই। বাদ দেন। আরেকটু সময় এখানে থাকলে অরিজিনালদের চেহারাই ভুলে যাব।"
যেন খুব উচ্চমার্গের রসিকতা হয়েছে এমনভাবে হোহো করে হেসে শিল্পী বললেন, "হাহাহা, আরে, তুমি নাম নিয়ে চিন্তা করছো কেন? বদরুল বলেছে, "নামে কিই বা যায় আসে?""
আগেরবার রবীন্দ্রনাথের কোটে ধরা খেয়েছি, এইবার চাপাবাজি ধরে ফেললাম। সাথে সাথে বললাম, "জ্বি, ওটা শেক্সপিয়ার বলেছিলেন। বদরুল নয়।"
তিনি বেশ অবাক হলেন। রিকনফার্ম করলেন। "এই কথা শেক্সপিয়ার বলেছিলেন?"
আমি দন্ত বিকশিত করে বললাম, "জ্বি, কথাটা শেক্সপিয়ার বলেছিলেন।"
"শিওর?"
"শিওর।"
"'বিদ্যা' বল!"
আমি বিদ্যার কসম খেলাম।
তিনি বললেন, "ও আচ্ছা। তাহলে শেক্সপিয়ার বদরুলকে বলেছিলেন হয়তো, বদরুল আমাকে বলেছে। তাই বদরুলের নাম নিয়েছি। আমি ভাই কারোর ক্রেডিট মারতে চাই না।"
এমন সময়ে তাঁর ফোনে কল এলো। তিনি রিসিভ করলেন, এবং মুহূর্তেই তাঁর চেহারা ফ্যাকাসে হয়ে গেল। ফোন রাখলে পরে আমি জানতে চাইলাম, "কী হয়েছে?"
তিনি ফ্যাসফ্যাসে স্বরে বললেন, "পুলিশ বদরুলকে দশকেজি গাঁজা সহ এরেস্ট করেছে। এখন তার থেকে তথ্য নিয়ে আমার ঘরের দিকেই আসছে।"
আমি ঘাবড়ে গিয়ে বললাম, "তাহলে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? পালান!"
তিনি অশ্রুসিক্ত স্বরে বললেন, "গ্রেপ্তারের পরোয়া আমি করিনা, কিন্তু পুলিশ আমার গাঁজা জব্দ করলে আমার শিল্পকর্মের কী হবে!"

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১২:০৯

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: নিচেরটা বোধহয় শাহরুখ খান। বেচারা!! ইলেকট্রিক শক খেয়ে ছে বোধ হয় =p~

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ২:০৬

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ওটা কী শিল্পীই ভাল বলতে পারবেন। :)

২| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১:৩৯

মা.হাসান বলেছেন: +++

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ২:০৬

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ :)

৩| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৭:৪৫

রাজীব নুর বলেছেন: কারাগারে কে?
চিনলাম না। বদ্রোহী কবি নাকি?

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৯:২৬

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: কেউ বলে ওমর সানি, কেউ বলে পার্থ বড়ুয়া। শিল্পীর দাবি ওটা কাজী নজরুল ইসলাম। :P

৪| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৮:৪৭

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: হাঃ হাঃ হাঃ। এই মৃণাল হক লোকটা গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল টাইপের। ভাস্কর হবার ন্যুনতম যোগ্যতাও নাই তার।

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৯:২৭

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: মৃনাল হকও ভাষ্কর, হিরো আলমও নায়ক, মাহফুজুর রহমানও গায়ক। :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.