নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
যে দেশের যে অঞ্চলে যেমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটে, সেই দেশের সরকারের উচিৎ সেই অঞ্চলের লোকজনকে সেই দুর্যোগের জন্য আগে থেকেই প্রস্তুত করা। তাহলে সংকট মোকাবেলা করাটা সহজ হয়ে যায়, ক্ষতির পরিমানও কম হয়।
যেমন ধরেন আমি টেক্সাসে থাকি। এখানে ভূমিকম্পের জ্বালা যন্ত্রনা নেই। কিন্তু ক্যালিফর্নিয়ায় ভূমিকম্প হচ্ছে আমাদের দেশে আষাঢ় মাসে বৃষ্টির মতই স্বাভাবিক ঘটনা। আবার ফ্লোরিডায় সামুদ্রিক ঝড় যেমন প্রতি নিয়ত ঘটে, টেক্সাসের দক্ষিণের হিউস্টন, গ্যালভাস্টন ইত্যাদি সামুদ্রিক শহর বাদে (তাও কালেভদ্রে) এমন সাইক্লোন আঘাত হানে না। তবে আমাদের মহা বিরক্তিতে ফেলে টর্নেডো। তাই আমাদেরকে "টর্নেডো চলাকালীন সময়ে কী করণীয়" - এইটা প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। ভূমিকম্প নিয়ে তেমন জোরালোভাবে না ভাবলেও চলে।
আমাদের আগুন নিয়েও ট্রেনিং দেয়া হয়। যেকোন অফসি বিল্ডিংয়ে অফিস চলাকালীন সময়ে নির্দিষ্টদিনে ফায়ার এলার্ম বাজিয়ে প্রতিটা এম্পলয়ীকে ইমার্জেন্সি এক্সিট দিয়ে বের করা হয়। সিইও থেকে চামড়াশি, কোন ছাড় নেই।
এই কারণেই যখন আসলেই আগুন লাগে, তখন আমরা কেউই প্যানিক করিনা। সুবোধ বালক বালিকার মতন নিচে নেমে যাই। ফায়ার সার্ভিসের ট্রাক যখন আসতে দেখি, তখনই বুঝি আসলেই আগুন লেগেছিল। আমরা ভাবছিলাম বোধয় ড্রিল।
এই বিষয়টা কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বিপদের সময়ে মাথা ঠান্ডা না থাকলেই মানুষ ভুল সিদ্ধান্ত নেয়।
হয়তো আগুন লেগেছে সাত তলায়, আপনি আছেন ২২ তলায়। আগুন উপরের দিকে আসছে। আপনি দেখছেন ধোঁয়ায় সিঁড়িঘর চেয়ে গেছে। কিছুই দেখতে পারছেন না। এই সময়ে আপনি আগুনে পুড়ে মরার ভয়ে জানালা দিয়ে লাফ দিলেন। আপনার দেখাদেখি আরও কেউ কেউ ঝাঁপিয়ে পড়লেন।
কিন্তু হয়তো আগুন দশ তলায় পৌঁছানোর আগেই ফায়ার সার্ভিস সেটা নিভিয়ে ফেলেছিল। আপনি শান্ত স্থির থাকলে হয়তো বেঁচে যেতেন।
বুঝাতে পারছি?
আল্লাহ না করুক, কাউকেই যেন এমন মহাবিপদের মধ্যে পড়তে না হয়।
গতকাল অগ্নিকাণ্ডের ব্যাপারে কী কী করতে হবে সেটা নিয়ে পোস্ট দিয়েছিলাম।
আজকে লিখি ভূমিকম্প নিয়ে।
ভৌগলিক দিক দিয়ে আমাদের দেশ ভয়ংকর একটি অঞ্চলে অবস্থিত। আমাদের মাটির নিচে ভূপৃষ্ঠের গঠনে বিশাল ফাঁটল আছে, যেকোন সময়ে প্রকৃতি একটু রুষ্ট হলেই ভয়াবহ দুর্যোগ নেমে আসবে। তার উপর যুক্ত হয়েছে আমাদের নানান অনিয়ম এবং দুর্নীতি - একটা মাঝারিমাত্রার ভূমিকম্প আমাদের গোটা জাতিকে ধূলিস্যাৎ করে দিতে যথেষ্ট। বিষয়টা আসলেই সিরিয়াস।
ভূমিকম্প বিষয়ে অবশ্য কর্তব্য:
১. যে বাড়িতে থাকবেন, সেটি অবশ্যই নিয়মনীতি মেনে নির্মিত কিনা সেটা যাচাই করে নিবেন। যত তলা বাড়ি, তার ফাউন্ডেশন ঠিক আছে কিনা। পিলার বিম ইত্যাদি ঠিক মাপের হয়েছে কিনা, ইত্যাদি সব কিছু আপনাকে অবশ্যই মেনে চলতে হবে।
মিস্ত্রি যদি বলে বালুর সাথে এত বেশি সিমেন্ট মেশানোর প্রয়োজন নেই, কিংবা এইরকম পয়সা বাঁচাবার শর্টকাট বুদ্ধি দেয় - ওর কাছ থেকে এইসব না শুনে অবশ্যই শিক্ষিত ইঞ্জিনিয়ারের পরামর্শে বাড়ি নির্মাণ করুন। দুই চার হাজার টাকা বাঁচানোর ধান্ধায় বিল্ডিং বানানোর মশলায় সামান্য উনিশ বিশ করলেও আপনার বাড়ি ধসে যেতে পারে। ঐ ব্যাটা মিস্ত্রি এমনি এমনি মিস্ত্রি হয়নি। যদি সে এতই পন্ডিত হতো, তাহলে তার নামের আগেও "ইঞ্জিনিয়ার" লেখা থাকতো।
আর এত এত বছর ধরে মেধা খাটিয়ে যে লোকটা ইঞ্জিনিয়ার হন, তাঁর বিদ্যাকে সামান্য মিস্ত্রির বুদ্ধি দিয়ে অপমান করার চেষ্টা করবেন না প্লিজ।
২. ভূমিকম্প হোক বা না হোক, ভারী আসবাবপত্র, যেমন আলমারি, ফ্রিজ, শোকেস ইত্যাদি দেয়ালের সাথে গেঁথে/বেঁধে রাখার চেষ্টা করুন। ভূমিকম্প যেদিন হবে, সেদিন যেন সেগুলো আপনার গায়ের উপর আছড়ে না পরে।
৩. ভূমিকম্প শুরু হলে টেবিলের নিচে আশ্রয় নিন। ছাদ থেকে ফ্যান বা ইট পাথর ধসে পড়লে যেন আপনার শরীরের উপর ডিরেক্টলি পড়তে না পারে। আবার সাবধান, কাঁচের টেবিলের নিচে বসবেন না। তাহলেই মরবেন। জানালা থেকেও দূরে থাকুন। কাঁচ বা বাইরের কিছু এসে আপনার ক্ষতি করতে পারে।
৪. আগুন বা ভূমিকম্প - কোন ক্ষেত্রেই লিফটে উঠতে যাবেন না। গতকাল এফআর টাওয়ারে আগুন লাগার পরে দেখলাম অনেকেই লিফটের সামনে ভিড় করেছিলেন। এইটা করলে বিপদ আরও বাড়বে। সিঁড়ি ব্যবহার করুন। সিঁড়ি দিয়ে নামুন।
৫. রাস্তায় গাড়ি চলন্ত অবস্থায় যদি ভূমিকম্প অনুভব করেন, গাড়ি রাস্তার সাইডে দাঁড় করিয়ে গাড়িতেই বসে থাকুন। অবশ্যই খেয়াল রাখবেন, কোন ইলেক্ট্রিক পোলের পাশে, ফ্লাইওভার বা ওভারপাসের নিচে, ব্রিজের উপরে বা এইরকম বিপজ্জনক স্থানে গাড়ি পার্ক করবেন না।
৬. যদি রান্না করা অবস্থায় ভূমিকম্প অনুভব করেন, তাহলে সাথে সাথে চুলা বন্ধ করে তারপরে আশ্রয় নিন। নাহলে অগ্নিকান্ড ঘটে যেতে পারে।
৭. মাথা ঠান্ডা রাখুন। বিপদের সময়ে কোন অবস্থাতেই মাথা গরম করবেন না। আপনার প্রভাবে আরও অনেকেরই মাথা এলোমেলো হয়ে যেতে পারে। মাথা ঠান্ডা রাখলে অবশ্যই বিপদ ৫০% কমে যায়। বাকিটা কাটানোর চেষ্টা করুন। আল্লাহ চাইলে, ভয়াবহ দুর্যোগেও আপনার কিছু হবেনা। আর আল্লাহ না চাইলে পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ দেশেও অপঘাতে মরবেন। এই বিষয়টা রক্তের প্রতিটা কোষে অনুভব করে ফেললে দেখবেন অন্যরকম শান্ত হয়ে গেছে নার্ভ।
উপরের বিষয়গুলো মাথায় রাখুন। এছাড়াও অনেক আজাইরা বুদ্ধি দেয়া হয়। যেমন পানির বোতল, অপচনশীল খাবার ইত্যাদি মজুদ রাখতে। কিন্তু প্র্যাকটিক্যালি সেটা ঘাট সম্ভাবনা শূন্য। আপনি হয়তো রান্নাঘরে খাবার মজুদ রেখেছেন, আটকা পড়লেন শোবার ঘরে। তখন?
যাই হোক। এখন কিছু দেশি ভাই ব্রাদারদের একটু গালাগালি করা যাক।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলো, লোকে ফেসবুকে লেখা শুরু করে দিল, "আল্লাহর গজব নাজেল হয়েছে। নামাজ পড়েনা বলে এইটা হয়েছে।"
ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটলো, আবারও এক স্ট্যাটাস।
সাইক্লোন হলো, আবারও একই স্ট্যাটাস।
এইসমস্ত উজবুকগুলি ইসলামকে যেভাবে অপমান করছে তারা যদি বুঝতো!
প্রথম কথা, আল্লাহর গজব কী এতই সস্তা? কুরআনে কিছু বর্ণনা দেয়া হয়েছে। নূহ নবীর বন্যা, বা আদ ও সামুদ জাতির বিলুপ্তি। সেখানে কী দেখতে পাই? বিস্তীর্ন জনপদ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এই সমস্ত গাধার দল কী মনে করে আল্লাহর গজব এতই দুর্বল যে "মাত্র" কয়েকজন মানুষকে ওপারে পাঠাতে পেরেছে? আরে ছাগলের দল, যদি আল্লাহর গজব সত্যি সত্যিই নাজেল হতো, তাহলে তুই আমি ফেসবুকে স্ট্যাটাস লেখার সুযোগ পেতাম না। তার আগেই খতম হয়ে যেতাম।
আস্তাগ ফিরুল্লাহ, ইন্নাল্লাহা গাফুরুর রাহিম।
যেকোন দুর্যোগই "গজব" বা পাপের শাস্তি না।
আমাদের নবীর জীবনী পড়লে আমরা কী দেখি? জন্মের আগে বাবা মারা গেলেন, জন্মের পরে মা। কিছুদিনের মধ্যে দাদা। গরিব ছিলেন, অসহায় ছিলেন, এতিম ছিলেন। বিয়ে করলেন, পিতা হলেন, এক সময়ে বৌ মারা গেলেন। একে একে সন্তানরাও মারা যেতে শুরু করলেন। বড় ছেলে ইব্রাহিম যখন মারা যায় তাঁর বয়স কত ছিল? তিন চার বছরের বেশি না। আব্দুল্লাহ যখন মারা যায় বয়স তখন মাত্রই সতেরো আঠারো মাস। সন্তানের মৃত্যু যেকোন পিতার জন্যই কষ্টকর। তাঁকে সেটা সহ্য করতে হয়েছে অসংখ্যবার। বদরের যুদ্ধ জয় তাঁর জীবনের অন্যতম সেরা সাফল্য, অথচ যুদ্ধ শেষে মদিনা ফিরে দেখেন তাঁর কন্যা রূকাইয়ার জানাজা হয়ে গেছে। একজন পিতার পক্ষে কতবার নিজের সন্তানের কবরে নামা সম্ভব? তাঁকে কতবার নামতে হয়েছিল?
মানুষের কষ্টকে বা জীবনের দুর্ঘটনাকে যারা আল্লাহর "গজব" বা "শাস্তি" বলে থাকে, তারা যেন নিজের নবীর (সঃ) জীবনী একবার হলেও পড়ে। আহাম্মকীপনা যদি কিছুটা হলেও বন্ধ হয়।
মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়ানোর পরিবর্তে ফাত্রামি শুরু করে দেয়।
ফেসবুকের লাইক বাটনে লাভ, এংরি, স্যাড ইত্যাদি ইমোশনের পাশাপাশি জুতানোরও একটা ইমোশন থাকা উচিৎ। এইসমস্ত কুলাঙ্গারগুলি সেটাই ডিজার্ভ করে।
০২ রা এপ্রিল, ২০১৯ রাত ৮:৫৬
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: কথা ঠিক
২| ৩০ শে মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৩:৪৫
মাহমুদুর রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ।
০২ রা এপ্রিল, ২০১৯ রাত ৮:৫৬
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: থ্যাংক ইউ।
©somewhere in net ltd.
১| ৩০ শে মার্চ, ২০১৯ দুপুর ২:০৭
রাজীব নুর বলেছেন: সবচেয়ে বড় কথা দূর্যোগের সময় মাথা ঠিক থাকে না। নিজেকে বড্ড অসহায় মনে হয়।